মঞ্চসজ্জাঃ পেছন দিকটায় নীল সিল্কের কাপড় টানা থাকবে, ওটাই মঞ্চের আকাশ। আর অর্ধেকটায় নীল সিল্কের কাপড় থাকবে কুঁচ্কানো, ওটা সমুদ্র। তার পাশে মাদুর বেছানো থাকবে, মাদুরের পাশে একটা হুক্কা আর একটা ফ্লাওয়ার ভেস। (সস্তায় কাম সারতে হবে)
প্রথম দৃশ্যঃ
মাদুরের ওপর বসা থাকবে মানুষ, জোকার, ব্রোকার আর খেকশিয়াল। মানুষ হুক্কা টানছে, ব্রোকার ও খেকশিয়াল ফিস ফিস করে কথা বলছে; আর জোকার উদাশ দৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।
জ়োকারঃ আঠারো… ইনিশ… বিশতম চোখের পানি। ধুর আর গুনুম না।
খেকশিয়ালঃ এইটা আবার কিরাম রসিকতা মামা, কান্নার ভান কইরা হাসাইবার চাও নাকি?
জোকারঃ তুই যা বুঝোস।
ব্রোকারঃ এরাম একটিং করার লাইগা ভালো পিছলা গ্লিসারিন লাগবো, আমার কাছে কিছু খাসা গ্লিসারিন আছে, মেইড ইন ইতালি, সেরাম জিনিশ।লাগলে কইয়ো।
মানুষঃ নারে জো তুই ওগো কথায় কান দিস না, এই লও হুক্কা টান।
জোঃ (জোকার) হুক্কা টাইনা কী আর হইব, ধুমায় কান্না আরো বাইরা যাইবো।এইটা কী তোর ক্ষেতের হুক্কা নাকি?
মাঃ (মানুষ) হু, গরীব মানুষ, হুক্কা টাইনা নেশা করি, আর কোন নেশা করার সামর্থ নাইরে মামা। এই দেখ একখান ফ্লাওয়ার ভেস কিনা রাখছি, ফুল কিনার পয়সা নাই। গোলাপ দেখলে চোখে পানি চইলা আসেরে মামা। গোলাপরে আমি কিরাম ভালো পাই কেউ জানে না।
খেঃ (খেকশিয়াল) ফুল কি ফুলদানীতে রাখার জিনিশ নাকি? এইডা কিরাম কথা কও! ফুল খাবার জিনিশ, প্রত্যেক দিন বাজার থেইকা অর্কিড কিনা খাই আমি। আহা! তুই যদি খাইতি! সেরাম মিষ্টি।
ব্রোঃ (ব্রোকার) ক্যান মামা তোমারে যে গোলাপের ব্যাপারীর ঠিকানা জোগার কইরা দিলাম, গোলাপ খাওনা?
খেঃ ঐ সস্তা জিনিশ খাইতে মন চায় না। অর্কিডের যেই কালার, যে গন্ধ, তার পর মনে কর বিদেশী জিনিশ সেই রকম।
জোঃ খে, আমারে ফুল খাইয়া তোর গুটা দিস। হেইটা খামু। ফুল কিনার তো ক্ষেমতা নাই, গু খাইয়া দেহি ফুলের স্বাদ কিরাম হাহাহাহা… (তার চোখে তখনো পানি)
খেঃ বাজে বকিস না জো। আচ্ছা ব্রো, তুই কি আর কোন ভালো ফুলের কথা হুনছস নাকি?
ব্রোঃ হেইডা কইতেইতো আইলাম, বিলাতি টিউলিপ, চকচকে। পাপড়িগুলা মাক্ষনের মত নরম, মুখে দিলে মোমের মত গইলা যায়, মাগার দাম একটু বেশি পরবো।
খেঃ সাবাস মামা, কত!
ব্রোঃ তিন বোতল গোলাপ জল আর একটা ভালো সানগ্লাস।
খেঃ কুনো বেপার না, পাইয়া যাবি। এর লাইগাই তোরে আমি এত্ত ভালবাসি।আর এই দুইটা অপদার্থ।
এই বলে খে আর ব্রো মুচকি মুকচি হেসে মা আর জো’র দিকে করুনার দৃষ্টি দিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করবে)
দ্বিতীয় দৃশ্যঃ
জোঃ আইচ্ছা তুই তামুক চাষ করস কেন?
মাঃ আমার গুরু আমারে শিখাইছে কিভাবে তামুক খাইতে হয়।
জোঃ তোর গুরু কোন ব্যাক্যল?
মাঃ তারে তুমি চিনবা না, নদীয়ার হাটে সে গান গাইয়া বেড়ায়। খুব ভালো লাগে আমার। তার নাম জন লেলন। সে কইছে, স্বপ্ন দেইখা যাও, কল্পনা কইরা যাও। ক্যান কইছে তারে আমি জিগাই নাই, কথাটা ভালো মনে হইল তাই স্বপ্ন দেখি। তামুক ছাড়া নেশা জমে না।নেশা ছাড়া স্বপ্নের প্রশ্নই আসেনা।
জোঃ তোরে যদি আমি একটা ফুল কিনা দেই তুই কী করবি! খুশিতে চিক্কুর দিয়া লাফাইতে থাকবি নাকি হাহাহাহা…
মাঃ আমি নিমুনা হেই ফুল। পাইয়া গেলে তো স্বপ্নের বিরাট বেলুনটা টুশ কইরা ফাইটা পিচ্চি জীর্ণ হাতের কব্জিতে আইসা পরব। স্বপ্ন মাইরা কী লাভ। স্বপ্ন দেখতেই ভালো লাগে, ফুল পাওয়ার সখ নাই। এই অপ্রাপ্তিটাই মজারে মামা।
জোঃ আইচ্ছা, তুই কী জানিস, লোকে আমারে কেন জোকার কয়!
মাঃ কারণ তুমি হাসির লোক।
জোঃ আমিতো মানুষরে হাসাই না, আমি নিজেই হাইসা খুন হই, কারন দুনিয়াটা বড় মজার জায়গা হাহাহাহা…
মাঃ কিরাম!
জোঃ আমি ভালবাসতাম পোকার কার্ডের হার্টের রাণীকে। সে আমার লগে ফষ্টিনষ্টি করে কইসিলো আমারে বিয়া করব, রাজ প্রাসাদ ছাইড়া আমার ঘরে আইসা থাকবো। এইসব ভুনভান কইয়া সে আমার গান শুনার বাহানা করত। মাগার তার লগে গোপন পিরিত ছিল স্পেডের টেক্কার লগে, তা কী আর জানা ছিলো! আর তার ট্রাম আর ওভার ট্রামে বাদ পড়লাম খেলা থেকে, গৃহবন্দী হইলো রাজা। রাত বাড়লে টেক্কার লগে শয়নকক্ষে সে ডুবে যেত মাছের মত, পাখনা নেড়ে ওরা নাকি সমুদ্র পাড়ি দিত। খুব মজা পাইছি হাহাহা…
মাঃ সে কী তোমারে ভালবাসতো!
জোঃ হাহাহা… তা আজো জানা হয় নাই। এরপর আর কোন পোকারে খেলি নাই। একবার রাতে খুব জ্বর আসলো, জ্বরে মারা যাই এই অবস্থা, আমার পরাণ বাঁচালো আমার আজীবন শত্রু এক কালো সাপ। এত মায়ায় কেউ আমার কপালে হাত রাখে নাই। আমি তারে কইসিলাম, “সাপ তুমি আমার কাছে থাইকা যাও”। সাপ কইল, “না, আমার কাম আসে, কিছু খেকশিয়াল মাইরা আসি, এরা দুনিয়াডারে নষ্ট কইরা ফেলাইতাসে”। সে সত্যই ভাইগা গেলো, পরদিন খেকশিয়াল আমার বাড়িতে আইসা কইল, “আজকে তোর শত্রু সাপটারে লাঠি দিয়া মাইরা ফেলসি, আমারে আইসিলো কামড়াইতে, হাহ!” আমি মেলা হাসছি… এখনো হাসি পাইতাসে হাহাহা…
মাঃ তুমি কান্দো হাসো এক লগে এইটা কীভাবে সম্ভব!
জোঃ তোরে শিখায় দেই, তাইলে তুইও পারবি। এইটার নাম, “কৌতুকীকরণ”। জীবনটা একটা বিরাট ফাঁপা শূন্যতা। মিথ্যা অনেক বেশি আত্বগোপন কইরা থাকে, ঘেঁষে ঘেঁষে আমগো বন্ধু হয়, আমরা জানতেও পারি না একটা মিথ্যারে ভালবাসছিলাম, যখন বুঝি বুকটা ফাইটা যায়। ঝড়কবলিত হইয়া যাই।ঝড় তারা কইরা বেড়ায়। তখন ঐটারে কৌতুক মনে কইরা নিয়া হাসবি। উচ্চস্বরে হাসবি। হাসতে হাসতে চোখের পানি বাইর কইরা ফেলবি, আর বলবি – মজা পাইলাম।
মাঃ তোমার জীবন তাইলে অনেক কৌতুকময়!
জোঃ হাহাহাহা… হ ঠিক ধরসস… … … একশ বেয়াল্লিশ, উপস!(জো তার চোখ মুছবে)
***
(আমার লেখা প্রথম নাটক-প্রায়। মেটাফোর নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের ধারাবাহিকতায় লেখা।)
মন্তব্য
...
--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
হা হা হা... দারুণ তো!
কঠিন লেখা মামা, তুই তো কাঁপিয়ে দিলি!
আমি নিজেই তো কেঁপে গেছি। আমার ফেইসবুকে সর্বশেষ নোটে জ্ঞানী এক ব্যক্তি বলেছেন আমার লেখা ইতরামী ও বদমাইশী। ঠিকই বলেছেন। জ্ঞানী লোকের কথার সাথে দ্বিমত পোষন করি তার সাধ্য কই! আমি লিখতে গেলে অনারা তেড়ে আসেন। মৌলবাদী ধর্মান্ধ লেখকরা মনে হয় আমাকে মেরেই ফেলবেন।
জ্ঞানীরা সঠিক বলেন
ভালা ভালা
কিন্তু আমার গু নিয়া টানাটানি কেলা?
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
গরীবেরা বড়লোকের গু খাইয়া খাদ্যের স্বাদ কল্পনা করে...
হ, খেকুর ক্যারাক্টারটা মিলে নাই। ওর সাথে বরং জোকারের মিল বেশি
বাপরে বাপ! কি গভীর চিন্তায় ফেললেন! অনেক উপলব্ধির নাটক। আরো ছোট ডায়লোগে এটা করা গেলে মনে হয় আরোও ভালো লাগতো! শিওর না। নাটক দেখি অনেক, লিখি তো না
ঠিক, এডিট করলে হয়ত বিষয়বস্তু আরো গাঢ়তা পাবে! প্রথম লেখা নাটকতো তাই বেশ অগোছালো। নাটকের মেইন কথা হল - ফেইক ইট!
প্রচ্ছন্ন একটা বিষাদ!!!! নাটকটা মঞ্চস্থ করা গেলে কেমন হয়??
ভাবনাটা দারুন!
ভাল হয়েছে, সামান্য একটু অগোছাল মনে হয়েছে। কিন্তু লেখা চমৎকার!...আপনার প্রতিভার নানামুখী ধারা দেখে মুগ্ধ!
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
নতুন মন্তব্য করুন