ঐ ছেলেটা
চেয়ারে গা এলিয়ে “ঐখানে” যে ছেলেটা বসে আছে, কে ও? পুরুষ! নাকি তার চেয়েও বেশি শ্রেণীভুক্ত নামসর্বস্ব নব্য ফেরাউনের ক্ষুধার্ত দাস, নাকি সে প্রাণহীন চাবিতে সচল একটি অটো বাইসাইকেল, কে ও! গুপ্তচর! নাকি সে কবি বা প্রায় কবিদের মত বোবা’য় কথা কয়, ডাঙ্গার ফাটলে যে নদী গড়ায় চলে সে কী তার এমাইনো এসিডের সন্তান, নাকি মানুষের, নাকি আদিমতম বাদশাহর (ঈশ্বরের)! সে কী সেই অসর্তক রাতের জলজ কাদার অপুষ্ট বীজ, নিচু নিঃশ্বাসের ছাই! সেকি এখনই বিকট চিৎকারে প্রকাশ করবে জন্মপাপের ক্ষোভ, আজন্ম লুকানো কনফেশন! খুঁড়ে খুঁড়ে সে কী এক গুপ্তধন খোঁজে, ব্যবচ্ছেদ করে আলো আধার,তরু থেকে তরুণীর উরু; হত্যা করে নির্বিচারে মথ, প্রজাপতি, টিউলিপ, নারীর কাঁথা, ফিতে, পায়জামা… তবে কী সে আত্ম ধর্ষনকারী, বাজারে যতটা বিক্রীত তার চেয়েও বেশি সেলফকনজিউমড! সে কী দীর্ঘ পরিচিত এক আজন্ম আগন্তুক! নাকি সে দূরের কেউ, দুর্বোধ্য; ছায়াবহনকারী গভীর ঘুমের ভেতর গাঢ় বাস্তব! ও কী বোধের দ্বন্দে আত্মবিরোধী স্বয়ং একটি প্যারাডক্স, শিল্পের জৈবিক মেটাফোর! কে ঐ ছেলেটা!
একটু শুনিস
তুই কি এখন পাখিদের জান কাঁপিয়ে হাসতে পারিস! হাসের মত পা দুলিয়ে গলা ছেড়ে গাইতে পারিস, আগুন গলায় সুরের পাত্রে মৌসুমী ভৌমিক, রবীন্দ্রনাথ তুলতে পারিস! পারলে দেখি কেমন পারিস কথা উড়া বিকাল বেলা, সেই বিকেলে বন্ধ রাখি চোখ ভেজাবার মলিন খেলা;
পারিস যদি বল কথা বল, গল্প কথা; ঘোড়াদের বারুদ ব্যথা নাকিসব যাচ্ছে তাই রুপকথাদের ভণ্ড কথা। থাক থাক থাক, অনেক হল এবার দেখি চোখটা দেখা...
নীল পাখিটা চুপ কেনরে! কাতর হলি অভাব জ্বরে! ওমা তুই কাঁদছিস নাকি! জল শুকানোর রোদকে ডাকি! যদি ওড়াস চুলগুলো বায়ে, ডানে বসে আমার বসন্ত পরাগ উড়ে যায়;
ঐ দেখ উড়ছে ঘুড়ি সুতা ছিঁড়া বাতাসের বানে, টান টান টান বৈঠা টানে; ধ্যান গেড়েছে কচুরিপানা, মূল কথাটাই হয়নি জানা, আচ্ছা...
তুই কেমন আছিস! দূর কাগজের লেখার খাতায় কোন পদ্যে কেমন থাকিস! পারিস যদি থাকিস ঘাসে, মন মানচিত্রের পূর্বাভাসে, ঝড় ঝড় ঝড় আসবে যখন, দেখব তোকে স্বপ্নখেকো জীবনগ্রাসে!!
দিন আলাপী
ভাঙ্গা বাল্বে মেলে আলোদের ফসিল, ডি.এন.এ., মেলেনা তাদের বংশ পরিচয়,
ধোঁকা দিয়ে ব্যবসায়ী নিয়ে যায় ভাঙ্গা হাড়ি পাতিল, দিয়ে যায় লোকসানে শনপাপড়ি,
মন্দিরের ঘণ্টায় ঘুম ভাঙ্গে মূর্তির, নড়ে চরে সেও মানুষ হতে চায়,
কাটছে কাঁটাতার শহুরে চোর, চোরের বাড়ি জলের জংশন,
মাকড়শার জাল শেখায় সময়ের অঙ্ক, অপেক্ষার জ্যামিতিতে ত্রিভুজরাই এক একটা মানুষ,
দিলারার স্বপ্ন হাসে ঘাসের পরান প্লাবনে, জমদুত কেড়ে নিয়ে যায় বকুলের প্রাণ!
হাসছে প্রাইমারী স্কুলের কাঁটালচাঁপা গাছ, কাঁদছে মিলাদের তবারুক,
উড়ছে বালিকারা ওড়নার পালকে, ঝরছে অনুষ্ঠানের শুকানো মেহেদি,
আমি কেবল হাঁটছি, বৃষ্টির দিনে ভিজে চুপ চুপ ছাতাখানা বগলে নিয়ে।।
নগ্ন বেঁচে থাকা
বেঁচে আছি-
যাচ্ছেতাই,
কুকুর বা কাকে মত ক্ষুধা আর নগ্নতায়,
এক লাল পিপড়া কামড়ে খায়-
আমার নভেম্বরের স্বপ্ন,
আর তোমার নমনীয় স্তন,
খেয়ে যায় আমাদের বেঁচে থাকার বেঁচে থাকা!!
মন্তব্য
হুমম... পড়লাম আপনার কবিতা।
আফসিন, আপনার কয়েকটা লেখা মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়লাম, দেখলাম। কার্টুনের ব্লগটা আমাকে এমনভাবেই নাড়িয়ে দিয়েছে সেখানে কোনকিছু বলার কোন অর্থ পাইনি।
কবিতাগুলোও তাই সমান মন দিয়ে পড়লাম। বুঝার চেষ্টা করলাম আপনার কবিতার প্রেরণা, উদ্দেশ। বেশ কয়েকটি পড়ে একটু সুবিধাও হলো।
প্রথমটা আমার কাছে অসামান্য লাগছে। সেই তুলনায় দ্বিতীয়টি কিছুটা ক্লিশে। "দিন আলাপী" সেদিক দিয়ে হাফ হাফ। যেমন প্রথম পংক্তিরই কমা'র আগের অংশ খুব জোরালো অভিঘাত দেয় পড়ামাত্রই। কিন্তু কমা'র পরের অংশটা বাহুল্য লাগে। কবিতায় কিছু কথা উহ্যও রাখা যায়, নাকি? তাতে আমার মত পাঠকের বড়ো আরাম হয়।
শেষেরটাও ভালো লেগেছে। সৎ কবিতাটা।
এভাবে সরাসরিই বললাম, কারণ আমি আশা করবো আপনি সামনে আরো চমৎকার কবিতা লিখবেন!
শুভকামনা।
হুম... আরেকটা কবিতা দিলাম... অনেক আগের লেখা...
ঝড়
ভীষণ বাতাস, সবাই দৌড়াচ্ছে,
দিগ্বিদিক্,
তুমি আমিও তাই,
ভীষণ ঝড়, সব ছিট্কে দূরে সরে যাচ্ছে,
তুমি আমিও তাই,
উপড়ে যাচ্ছে গাছের গুড়ি, নিয়ে যাচ্ছে তার ছায়াও,
ঝড় শেষে কিছু মানুষ পাথর হয়ে যায়,
তুমি আমিও তাই,
ঝড় শেষে এসেছিল রেডক্রিসেন্ট, অ্যাম্বুলেন্স, সেনাবাহিনী, সাংবাদিক,
আমাদের দেখতে কেউ আসেনি,
ঝড় শেষে ত্রান এসেছিল, এসেছিল বিলাতি শুকনো বিস্কুট, পাজেরোতে চরে মন্ত্রী,
আমাদের জন্য কিছু আসেনি, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম,
তুমি নিশ্চয়ই সেইসব ঝড়ের ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছ,
কিন্ত আমার ছিল খড়ের ছাউনির নড়বড়ে একটা ঘর,
আমি আজও হালকা বাতাসে ভয় পেয়ে যাই,
দৌড়ে পালাই ঝড় ভেবে,
জানো,
আমি এখনো দৌড়ে পালাই,
ঝড় আমার পিছু ছাড়ে না,
আমি কেঁদে বুক ভাসাই,
আমার জন্য আসেনা ত্রান, বিলাতি শুকনো বিস্কুট, পাজেরোতে চরে মন্ত্রী,
তুমিতো আসতে পারতে,
তুমিও কেন এলেনা??
__________________
বাঘবন্দী সিংহবন্দী বন্দী আমার হিয়া...
শিকলও ছিঁড়িয়া দে মরি দেখিয়া, একবার ছাড়িয়ে দে দেখি মরিয়া...
- কফিল আহমেদ
বাহ, এই কবিতার দৃশ্যগুলোও চমৎকার, দুটো পরিবেশের টানাপোড়েন চোখে পড়লো।
অসাধারণ লাগলো! ভাই আপনি আর কি কি পারেন?!!
কিছু বানান মনে হয় ভুল আছে।
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভাই, তোর 'ঐ ছেলেটা' আমার বেশ পছন্দের, আগেও বলেছি কি?
চালিয়ে যাহ! নাড়িয়ে দে সব কাঠামো!
--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
সব কবিতাই অসাধারণ লাগল। আত্মপ্রেমী শব্দের জাগলারদের ঘাড়ে ধরিয়ে এই কবিতাগুলো পড়ানো উচিত।
আরও কবিতা চাই, দিতে হবে
নতুন মন্তব্য করুন