তখন আমার বয়স কতই বা হবে, ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমার বাবার দেয়া লাল ডাইরীটা সামনে ধরে বৃষ্টি দেখছি। বৃষ্টির ফোটাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে লিখে ফেললাম একটা কবিতা। সম্ভবত ঐ কবিতাটাই প্রথম লেখা কবিতা। তারপর মাস খানেকের মধ্য লিখে ফেললাম আরো গোটা দশেক কবিতা। ডাইরীর শেষ কবিতাটা ছিল একটা ফুল নিয়ে, কবিতার নাম "কৃষ্ণকমল"। কবিতার মূল ঘটনা ছিল- একটা ফুল যেটা নাকি প্রতি ১০০০ বছরে একবার ফুটে, ওটা ফুটবে শুনে ওটা দেখার জন্য আমি হন্য হয়ে সমস্ত পৃথিবী ঘুড়েছি, কোথাও পাই নাই। বুড়ো বয়সে এসে দেখি ফুলটা আমার বাড়ির সামনে উঠোনে ফুটে আছে, কিন্তু ফুলটাকে দেখে কোন আনন্দ হল না। কারণ প্রাপ্তিতে কখনই আনন্দ ছিল না। আমার কবিতাখানা কীভাবে যেন আমার বাবা দেখেছিল এবং সেটা আমার বড় চাচাকে দেখানো হল যিনি উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যবইয়ের লেখক। তিনি আমাকে কবিতার ভাব বর্ণনা করতে বললেন। আমার বর্ণনা শুনে তিনি আমার কবিতাগুলো নিয়ে গেলেন। সপ্তাহখানেক পরে শুনি তিনি তার ব্যাক্তিগত প্রেস থেকে কবিতাগুলোর কয়েক কপি বই ছেপেছেন ছোট আকারে। ব্যাপারটা খুবই অস্বস্তিকর, কারণ তখন আমি কেবল ক্লাস সেভেনে পড়ি আর তখন কেবল লেখালিখি শুরু করেছি। এর পর থেকে আর কখনো আমার লেখা আমার বাবা-মাকে দেখাই নাই। স্কুল জীবনে আমি ও আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আরেফ রীওনেন(ছন্মনাম, সে এখন বিভিন্ন ব্যান্ডের জন্য লিরিক্স লিখে) এক সাথে অনেক কবিতা লিখেছি।
কলেজ জীবনেও ক্লাসে বসে অনেক কবিতা লিখেছি, কিন্তু কলেজ জীবনের কবিতাগুলো সব, আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাগরকে রিক্সায় বসে পড়ে শুনাতাম, তারপর ওটা রিক্সা থেকে ছুড়ে ফেলে দিতাম। সেটাতে দারুণ আনন্দ ছিল, তাই কলেজ জীবনে আমার লেখা কোন কবিতা আমার কাছে নেই। আমার বন্ধুদের কাছে কিছু আছে এখনো। আমার কবিতাও আমার মত মরনশীল। লেখালিখিকে আমি প্রচন্ড রকম ভালবাসতে শিখেছিলাম কলেজ জীবনে। আমার লেখা আমার বেশ কিছু বন্ধু পড়ত, বেশির ভাগই বলত- পড়ে শুনা। তাই করতাম।
লেখালিখি যে কী ভয়াবহ জিনিস তা বুঝেছি যখন আমি সুতপা সিরিজ লেখা শুরু করলাম। সুতপার কবিতা লেখার সময় আমার হাত কাঁপত, আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না। আমি কল্পনার মৃত্যুকূপে ঢুকে গিয়েছিলাম। সুতপা খুব সাধারণ একটা চরিত্র এবং অবাস্তব চরিত্রের ছিল। তাহলে কেন এভাবে এত ভালবাসলাম একটা চরিত্রকে। খুব ভালো লিখতে পারিনি কিন্তু খুব আবেগ ছিল লেখায়। সুতপা সিরিজের সব কবিতাই লিখেছি ১৯-২০ বছর বয়সে। টাটকা সব আবেগে ভরপুর ছিল। ১৭ টা কবিতা আর এমনি অনেক লেখা লিখেছি সুতপাকে নিয়ে। ১৮ নম্বর কবিতায় সুতপা মারা যাবে। তখন ভীষণ দোটানায় পড়লাম, লেখক হিসেবে আমি সৎ, সুতপার জীবনের ট্রাজেডী বদলানো সম্ভব নয় অন্যদিকে সুতপাকে মারতেও চাই নাই। ভাবলাম থাকুক না সুতপা একটা অনিশ্চিত পরিনতির পেন্ডুলামে ঝুলে, তাই সিরিজটা শেষ না করেই সিরিজটা লেখা ছেড়ে দিলাম। সেই প্রথম লেখালিখির নেশা ও অদ্ভূত এক আনন্দ পেলাম।
কৈশরের সেই আবেগঘন লেখাগুলো খুব বেশি প্রাণশক্তিরে থৈ থৈ। সুতপা সিরিজের বেশ কিছু কবিতার ভিডিও বানিয়েছিলাম, একটা কবিতার ভিডিও জুড়ে দিলামঃ
ফেইসবুকের কল্যানে বাংলা সাহিত্যের বেশ কিছু অগ্রজ ওখ্যাতিমান কবিদের সংস্পর্শে এসেছিলাম। তাদের উৎসাহে বেশ কিছু কবিতা লিখেছি। কিন্তু এক সময় বুঝলাম এসবে আমার দক্ষতা বা পরিপক্কতা নেই। কবিরা ২১ বছরের একটা ছেলের কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু চাচ্ছে। তখন প্রায় ছেড়েই দিলাম কবিতা পোস্ট করা। নিজের জন্য লিখতাম, এখনো লিখি। তবে পোস্ট করি না। আমি আমার সাম্প্রতিক কবিতাগুলো সবখান থেকে ডিলিট করে দেয়ার স্বীদ্ধান্ত নিয়েছি। (আমার কিছু কবিতা পাওয়া যাবে এইখানে)
***************
এত কথা বলতে ভালো লাগে না। এইবার আমার কিছু খামখেয়ালী আনাড়ী কার্টুন দিয়ে ভাগি।
জন্মদান
আত্মজীবনী
কাহারে ভালবাসিলি মন!
আত্মহত্যা
বন্ধু
আর লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না...
মন্তব্য
সুতপার ভিডিওটা চমৎকার লাগলো, অনেক আবেগভরা কবিতা। সিরিজের অন্য কবিতাগুলো পাওয়ার আশায় রইলাম।
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
ধন্যবাদ!
দারুণ!
ভিডিওটা দেখব পরে, বাফার করতে দিলাম।
হুম...
সেই বইয়ের কপি কি আমাকে একটা দেওয়া যায়?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমার কাছে নেই কোন কপি। আমাদের বাসায় থাকতে পারে।
কলেজের সময়টায় লেখাগুলো আমারো নেই। কে জানে, হারিয়ে গেছে বলেই হয়তো আজো লিখতে পারি।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
আমার লেখা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কলেজ জীবনেই হয়ত সব ভালো লেখা লিখে ফেলেছি। ভালো খারাপ বলতে বুঝাচ্ছি- আগে লিখে শান্তি পেতাম, এখন আমার লেখা আর আমাকে সন্তুষ্ট করে না। মনে হয় ধুর ছাই কী লিখি এইসব!
নতুন মন্তব্য করুন