(বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষিতে সহপাঠি সোনিয়া ওয়াল্টার’কে নিয়ে…)
ইউনিভার্সিটির একটা গ্রুপের আয়োজিত ককটেইল পার্টিতে আমি আর আমার বন্ধুরা প্রায় আধা খোয়া গেছি ঘোরে। সন্ধ্যার দিকটায় কালো একটা সূর্য উঠেছিল আমার ছায়ার সাথে ষাট ডিগ্রী এঙ্গেলে, বাতাসের সাথে আড়াআড়ি দক্ষিণে, হাইপোথেটিকালি। ক্রমশ সেই গলিত অন্ধকারের তীব্র রোদে গুটিয়ে গেলো নগরের সব ইলেকট্রিক আলোক উৎস। সে ছায়া পোহাতে আমরা বসে ছিলাম জানালার পাশে গর্ভের মত আরামী কিছু কারুকাজপূর্ণ সোফায়। আমাদের জন্য গরম খাবার আসছিল। আর বরফকুচির সাথে মিশে-গলে আসছিল (হ্যালুসেনেশন উদ্রেককারী) ককটেইল। বারটেন্ডার ঐ ড্রিংক দিয়ে বলেছিল- এটা খেলে হ্যালুসিনেশন হয়, মানুষ নানা সব জিনিষ দেখে।
এক, দুই… ফের এক চুমুক দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি রুমের ভেতর একটুখানি আলোর প্রবেশ। ক্ষীণ আলোয় ঈষদ দৃশ্যমান হয়ে কালো একটা স্কার্ট ও পাখির মত পশমী গরম-জামা গায়ে দিয়ে দেখি বারের দিকে এগিয়ে আসছে, সোনিয়া। আবার সেই হ্যালুসিনেশন!
(গত চার মাস ইউনিভার্সিটিতে প্রতিটা ক্লাসে দেরি বা আগে যখনই ঢুকেছি দেখেছি সোনিয়া ঢুকছে একই সাথে। যখন খাবার আনতে দোকানে গিয়েছি দেখেছি সোনিয়া আমার পাশের লাইনে। যখনই ক্যাফেতে গিয়েছি বিভিন্ন সময়ে তখনই সোনিয়াকে দেখেছি। ভিন্ন ক্লাস হওয়া সত্ত্বেও রাত নটার সময় বিভিন্ন কারপার্কে গিয়ে দেখেছি সোনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ির দিকে। শেষ পরীক্ষার দিনে পরীক্ষার হলে ঢুকে দেখি আমার পাশে সিটে ও, অতঃপর গাড়ির কাছে এসে দেখি আমার পাশের গাড়িটাই ওর। যখনই যেখানে গিয়েছি হঠাৎ পাশ ফিরে দেখেছি সোনিয়া… এটা একটা কো-ইনসিডেন্সের চেইন, যার প্রতিটা ব্লকে আমি আর সোনিয়া।)
গ্রুপের প্রেসিডেন্ট এসে আমাকে বলল – সোনিয়া একা বসে আছে, ওর সাথে গিয়ে কথা বলা দরকার। আমি বললাম, ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।
এই কথাটা আমি কাউকে বলিনিঃ আমার ধারণা সোনিয়া বলে আসলে কেউ নাই, ও একটা কাল্পনিক চরিত্র। ও তো কল্পনাই, কী কল্পনা নয়? বাস্তব হলে যেখানেই যখন যাই তখন দেখা হবে কেন? হয়ত এভাবে দেখা হতে হতে জেনে যাবো ও “এ বিউটিফুল মাইন্ড” সিনেমার দুটা চরিত্রের মত একটা গাঢ় কল্পনা। একটা প্ররোচক স্বপ্নের প্লট! নাকি এইটা সালমান রুশদির ম্যাজিকাল রিয়েলিটির একটা জলজ্যান্ত প্যারাগ্রাফ, যেখানে লেখা হচ্ছে আমাকে! এই ঘোরের আয়ু কত সাম্রাজ্য-যুগ?
ঐ দূরে ওর পাশে এক সিট ছেড়ে পাশের সোফায় গিয়ে বসলাম। কিছু একটা বলতে গিয়ে কণ্ঠনালির সব বায়বীয় উচ্চারণ লাশ হয়ে বেরিয়ে এলো ছাইয়ের মত নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাস। কী বলবো তাকে? ভাবতে ভাবতে পাশ হেলে জানালা দিয়ে দেখি আকাশ নক্ষত্রের ঝারবাতি আর নেবু পাতার মত গন্ধমাখা কিছু মেঘ। ঐ মেঘগুলোই কী আমাদের যৌথ বিকেলগুলোর জলের সংকলন? ভাবনাটার চারপাশে একটা ক্ষুদ্র কক্ষপথে আমি আমি যখন ঘুরছি এমন সময় উলটো ফিরে দেখি সোনিয়া তাকিয়ে আছে। আমাদের মাঝখানে একটা বসার চেয়ার। ঐখানে বসে আছে যে ভদ্রলোক তার নাম দূরত্ব। আমি হাত থেকে মার্টিনির গ্লাসটা নামিয়ে ওর দিকে উবু হয়ে আসি, সোনিয়া ঝুঁকে আসে সামান্য, আমি নিচু গলায় ওকে বলি – তোমার কোন যমজ বোন আছে?
- না তো!
- তোমার কী শ’খানেক ক্লোন আছে?
- হা হা, উহু।
- তোমাকে যে আমি সবখানেই দেখি!!!
এভাবে বাড়তে থাকে সংলাপ আর ঘোর। আমার জানা হয়না ও কী হ্যালুসিনেশন নাকি বাস্তব! আর কিছুই মনে পরে না ঐরাতের। শুধু মনে পরে আমাদের মধ্যে একটা চেয়ার ছিলো। সম্পর্কহীন আমরা পাশাপাশি বসেছিলাম খুব দীর্ঘ এক রাত…
কারণহীন।।
মন্তব্য
অসাধারণ আফসিন! অনেকদিন পরে লিখলে, কী চমৎকার একটা জাদুবাস্তব লেখা।
মুগ্ধ হয়েছি...!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অনেক ধন্যবাদ স্পর্শ ভাই!
____________________
জ্বলছে মূর্খ ফুল...
কতোদিন পর!
অসম্ভব ভালো লাগলো, নুহিন।
কিন্তু মন ভরেনি। আরেকটু লেখা যেতো না?
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
এর চেয়ে বেশি কিছু যে বলার ছিল না! পড়ার জন্য ধন্যবাদ হে ম্যাডাম!
অনেকদিন পর তোমার লেখা পড়লাম নুহিন।
ভালো লাগলো তোমার কারণহীন লেখাটি।
:::::: :::::::: ::::::::::::::: ::::::::::::::: ::::::::: ::::::::: :::::: ::::::: ::::::::::::
ভবিষ্যতে কি হবে তা ভেবে বর্তমানকে উপেক্ষা করবো কেনো?
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
হুম, লেখাই হয় না। ভাবছি আবার শুরু করবো লেখা।
নুহিনতো, তাই অনেকদিন পর, তাইনা ?
লেখাটি পড়তে পড়তে ভালো লাগলো....
বিশেষভাবে ভালো লাগলো কিছু কথা:
আমাদের মাঝখানে একটা বসার চেয়ার। ঐখানে বসে আছে যে ভদ্রলোক তার নাম দূরত্ব।
সম্পর্কহীন আমরা পাশাপাশি বসেছিলাম খুব দীর্ঘ এক রাত…
কারণহীন।।
----------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো,
গৃহী হয়ে কে কবে কী পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
মৌবানু, লেখালিখি তো বলতে গেলে ভুলতেই বসেছি। তাও ব্যাপারটা খুব বিরক্ত করছিলো তাই লিখে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করলাম। খুব যে কাজে দিলো তাও না। তোমার কবিতা কই?
এই ধরণের লেখা যেখানে আবহ চরিত্র মিলে একটা মায়ার সৃষ্টি হয়, তার দৈর্ঘ্য এতো কম হলে তাড়াতাড়ি সেই ঘোর যায় কেটে। আরো লম্বা করে লিখলে খুশি হতাম। তবে এ পাঠক হিসেবে আমার লোভের কারণেও হতে পারে।
পাঠকদা, আসলে ঘটনা সত্য দেখে শুধুমাত্র ঘটনার নির্যাস লিখেছি সংক্ষেপে। কিছু গল্প মাথায় ঘুরছে। ঐগুলো নাহয় বড় করে লিখবো। পড়ার জন্য ধন্যবাদ
ছোট্ট ভাইটুশ, কী লিখেছিসরে! আউলায় গেলাম! বাহ লক্ষ্ণী ভাই, বাহ!
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
হাহা, দেখতে হবে না কার ভাই আমি ভালো থাইকো আপা।
অনেকদিন পরে লিখলি ভাই। একটানে পড়লাম, পড়ে মুগ্ধ হলাম
আরেকটু নিয়মিত কি হওয়া যায় না?
মামুন ভাই, হবো... নিয়মিত হবো। একটু ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। অস্ট্রেলিয়া আসেন, চা খেতে খেতে লেখালিখি নিয়ে গল্প করা যাবে অনেক...
হ্যালুসিনেইশানটা আমি-ই দেখতে পেলাম যেন। এরকম ঘোর লাগা, স্বপ্নময় কালটা আরেকটু টানা গেলে মন্দ হতো না, নাকি এ যেন ঘোরেই তৈরী হয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাসের সাথে মিলিয়ে গেলো।
অদ্ভুত ভালো লাগা। আরও লেখ, যেমন ইচ্ছে তোমার।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
সব ঘোরই তো ক্ষণজন্মা হয়
অনেক ভালো লাগলো ।
শুভেচ্ছা
প্রখর-রোদ্দুর
ধন্যবাদ!
ভালো লাগলো। এরকম লেখা বার বার পড়তে মন চায়।
...........................
Every Picture Tells a Story
আমি আপনার সবগুলো লিখার ভক্ত হয়ে রইলাম... ঠিক বলতে পারব না তবে তবে কোথায় যেন একটা প্রচণ্ড অমিল আছে সবার সাথে আপনার... (একেই কী ইউনিক বলে?)।
লিখা লিখি জোরসে চলুক
নতুন মন্তব্য করুন