রেস্তোরার জানালা দিয়ে আসা আলোর আঁচ হঠাৎ কমে আসলো; দু একটা পাখি হুড়োহুড়ি করে হাওয়া দাঁপিয়ে উড়ে গেলো। বেরিয়ে দেখি জল ছিটাতে আকাশে প্রকান্ড সব মেঘের মজুদ। ঘড়িতে তখন কেবল চারটা বাজে। রাস্তার পাশের বেঞ্চিতে গা এলিয়ে বসে স্মৃতির কোষাগার থেকে তুলে নিলাম কয়েকটা হলোগ্রাফিক ছবির এলবাম। এতদিন পর ছবিগুলো দেখে ছবির সব মানুষকে পুরপুরি কাল্পনিক চরিত্র মনে হচ্ছিলো। আমার সব স্মৃতিতে কমবেশি কল্পনার ভ্যাজাল মেশানো থাকে। যেমন-
প্রথন ছবি-
আমি আর মরিয়ম রিক্সায় চরে যাচ্ছি বনানীতে। বর্ষার বিকেল, বৃষ্টিতে রাস্তায় কাঁদা জমে আছে, রাস্তার গর্তে রিক্সা ঝাঁকি খাচ্ছে... আমাদের রিক্সা বাশিওয়ালার পাশ কেটে যাচ্ছে, আমরা কথা বলছিলামনা... আনমনে শুধু বাঁশি শুনছিলাম...
এইখানে বাঁশিওয়ালা কল্পনার অতিরিক্ত সংযোজন। হয়ত সেই মৌনতায় কোন এক সুর ছিল, যার দৃশ্যমান ভাষান্তর ঐ বাঁশিওয়ালা।
দ্বিতীয় ছবি-
এবাকাসে মরিয়মের সাথে বসে আমি কফি খাচ্ছি। মরিয়মের খোপার ফুলদানিতে এক জোড়া জবা ফুল, জবার রেনুগুলো ডান পাশে হেলে আছে পঞ্চাশ ডিগ্রী এঙ্গেলে... ওর বাম কানের উপর কয়েকটা মিহি রেনু পড়ে আছে, আমি মনোযোগ দিয়ে দেখছি, ওর কোন কথাই কানে যাচ্ছে না... টেবিলের উপর পড়ে থাকা অলস চায়ের চামুচ শুধু জানে আমার কফির কাপের নিচে কতখানেই চিনি পড়ে আছে অমিশ্রিত...
ছবিগুলোতে জমে আছে অনেক ছেঁড়াখোঁড়া মেঘ, দেয়ালভর্তি গোপন পেরেক, আশ্রিত পদ্য...। বোধের কী একটা গভীর তথ্য পৌঁছেনি ওর কাছে। ওটা একটা “Whisper”-এর মত। জন্মেছে একজন প্রাপকের জন্য, আর অনন্তকাল ছুটে চলছে মন্থর বায়ুর সুড়ঙ্গে করে কিন্তু কিছুতেই পৌঁছাতে পারছে না।
কী ভেবে পকেট থেকে ফোনটা বের করে কানের পাশে ধরি,
- হ্যালো।
- হুঁ, আচ্ছা তোমার সাথে যে রিক্সায় করে গতবার বনানী গেসিলাম রিক্সা ভাড়া কত টাকা নিসিলো তোমার মনে আসে?
- নাহিয়ান! এতদিন পর! ধুর, এত সব মনে নাই।
- ও ভালো কথা তোমার জামাই কী পুলিশের গন ধরপাকড়ে ধরা পরসে?
- কেন? আমার জামাই কি বিনপি করে?
- উহুঁ, তোমাকে অপহরণের দায়ে!
- হাহা, কেমন আসো বলো।
- ফিস আউট অফ ওয়াটার-এর মত আসি।
- ওয়াটার পাঠাবো?
- হুম, খামে ভরে।
- জানো ঢাকাতে বৃষ্টি হচ্ছে! শুনবা?
- হুঁ
- ............... (... জানালার পাশের মুষল বৃষ্টির শব্দ...)
- ক্যানবেরাতেও মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।
ঘন কালো মেঘের আগ্রাসনে ফোনটা কেটে গেলো। ওকে বলা হল না আসল কথাটাই। ফোনটা পকেটে রেখে আকাশের দিকে তাকালাম। ক্ষুধার্ত পাকস্থলীর মত গুঁড় গুঁড় করে মেঘেরা নুয়ে আসলো খুব নিচে। প্রথম ফোঁটা জল যখন কপাল ছুঁলো, বুঝলাম এটা মরিয়মের চিঠি। দেখলাম ওর চিঠির শত সহস্র ফটোকপি ঝরছে আকাশ থেকে। বাতাসের তাপমাত্রা তখন তিন ডিগ্রী, দৌড়ে ঢুকে গেলাম গাড়িতে। গাড়ির কাঁচে গড়াতে থাকা বৃষ্টির ফোঁটাগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকি, মরিয়ম কী জানে কী ভীষণ ঠান্ডা ওর পাঠানো জল! এতে কোন মাছ বাঁচে না।।
মন্তব্য
কত হাজার বছর পর লিখলেন!
সেজন্য পড়ার আগেই মন্তব্য ঠুকে গেলাম।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হুম হাজার বছর পরই লিখলাম তিথিপু। লেখার সময় পাই না।
অপূর্ব সুন্দর।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
অলংকৃত লেখা!!!
অনিমেষ মুগ্ধতা! একটি অভাবিত উপমা ও একটি অধরা রূপক মনে গেঁথে গেল,
১/ ক্ষুধার্ত পাকস্থলীর মত মেঘেরা গুড় গুড় করে নুয়ে আসলো খুব নিচে।
২/ অনন্তকাল ছুটে চলেছে মন্থর বায়ুর সুড়ঙ্গকরে।
ঘন ঘন এমনটি মুগ্ধ হতে চাই!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
অসাধারণ
মুগ্ধ হলাম...
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লিখতে থাকুন ভাইয়া। সবার লিখায় টান ধরেনা, আপনার লিখাটি পড়ে জলজ একটা টান অনুভুত হলো। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা,
পরকীয়া জিনিসটা ভালো না, তবে লেখা ভালো লাগলো, আর ঠান্ডা পানি পাঠানো মরিয়ম এর উচিত হয় নাই।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
ভাই এইটা কেমন মন্তব্য হইল বলেন তো? পরকীয়াই বা কোথায় পাইলেন!?
মন্তব্যের কোন কোন জায়গায় আপনার আপত্তি?
পুরনো প্রেমিকাকে মনে পড়তেই পারে, তবে তাকে ভুলে থাকাটাই শ্রেয়তর। বেচারির স্বামী এগুলো নিয়ে ঘর মাথায় তুলতে পারে, ঝগড়া করতে পারে। আমি তার সংসারে অশান্তির কারণ হতে চাই না। আপাত নিরীহ ফোনকল বা দু'শব্দের খুদে মেসেজও তুলকালাম কাণ্ড ঘটাতে পারে।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
লেখাটা আমার ভালো লেগেছে, আর একটুও মনে হয় নি এজাতীয় কিছু আছে, তাই জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে প**য়া কী রকম এটা প্রবলেম/ইভেন্ট-স্পেসিফিক ইস্যু, কখনও তা অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু স্বাভাবিক-বাস্তবিক মনে হয় আমার কাছে, কখনও এটাকে পুরোপুরি অসমর্থনযোগ্য/ঘৃণ্য মনে হয়!(এটা একান্তই ব্যক্তিগত মতামত!)
ভালো থাকবেন।
আসলে পুরো ব্যাপারটাই কাল্পনিক। তাই ঐভাবে ভাবা হয় নাই।
কী চমৎকার দৃশ্যকল্প!
কত্তদিন পর তোমার লেখা পাওয়া গেল বস!!!
সেলাম ঠুকে গেলাম---
ভিন্ন প্রসঙ্গঃ আর যদি এত দেরী করে লেখা দিয়েছ-- কী মরেছ---জলদি জলদি নতুন লেখা দাও
অনিকেতদা! বহুদিন কথা হয়না। বহুদিনপর আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগলো
মন উদাস হয়ে গেল। চমৎকার লেখা
রে বাবা, সবাই খালি প্রেমের এলিজি লিখে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পুনরায় স্বাগতম
ভাল্লাগছে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন,
ঝর ঝর ঝর ঝর ঝরিছে,
তোমাকে আমার মনে পড়েছে।
ভালো লাগলো।
ও মাই গড।
আপনার গল্প তো ভাই আমাকেই কল্পনায় ডুবিয়ে মারবে দেখছি।
আফসিন, আরেকটু নিয়মিত লিখতে পারেন তো! আপনার একটা গল্প পড়েছিলাম, নাম মনে নেই, অসাধারণ ছিল সেটা। ভাল গল্পের কথা ভাবলেই আরও কিছু গল্পের সাথে ঐ গল্পটাও মনে পড়ে।
থ্যাঙ্ক ইউ ভাইয়া!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
কতো বরষা পরে, নুহিন...
অনেক অনেক ভালো লাগছে।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
নতুন মন্তব্য করুন