কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া কি ঠিক?

ও এর ছবি
লিখেছেন [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১০/০৫/২০১৫ - ১০:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের দেশে একটি আইন রয়েছে, যেই আইন কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। আর তার শাস্তি কম করে হলেও ৭ বছরের কারাদণ্ড।

ধর্মীয় অনুভূতি কাকে বলে? এই প্রশ্নের জবাব জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সময়টা এমন যে, সুস্থ তর্কের সুযোগ কম। কারো বক্তব্যের বিরোধিতা করা মানে যে সকলক্ষেত্রে তাকে ছোট করার চেষ্টা নয়, সে সবাই বুঝতে পারে না। ফলে সুস্থ তর্কের, এবং বিরোধিতার পথে গিয়ে পোক্ত যুক্তি খুঁজে নেয়ার পথ বন্ধ হয়। যা কিছু চোখে পড়ে, তাতে মনে হয় সত্য খুঁজে বের করার জন্য নয়, বরং বিরোধিকে 'পরাজিত' করার জন্যেই সব যুক্তি তর্ক। আমার বিবেচনায় এই সময়ের (বিশেষত অনলাইন জগতের) তর্কের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছে শ্লেষ। যেন, যে বেশি শ্লেষোক্তি করতে পারে, তার বক্তব্যই সঠিক। সচলায়তনে অর্থহীন বক্তব্য আর শ্লেষোক্তি দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করার সুযোগ কম বলে এখানেই এই আলোচনা সুবিধাজনক মনে হলো।

এক বা একাধিক পরম শক্তিতে বিশ্বাস রেখে সেই পরম শক্তির বিধিবিধান মেনে চলাকে ধর্মাচারণ বলা যেতে পারে। কে কোন পরম শক্তিতে আস্থা রাখবে সে যার যার ব্যক্তিগত ব্যপার। কেউ যদি কোনো নির্দিষ্ট পরম শক্তিতে বিশ্বাস রাখেন, আর জানেন যে ওই শক্তিতে সব সৃষ্টি হয়েছে, সব শুভ হচ্ছে আর হবে, তাহলে সেই শক্তির উপর তার শ্রদ্ধা থাকবে। থাকাই যৌক্তিক। এরকম ক্ষেত্রে ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ পরম শক্তিতে যেমন শ্রদ্ধা রাখছেন, তেমনি পরম শক্তির সন্মান রক্ষার ভারটাও সানন্দে গ্রহন করছেন। তার মানে, আমার বিশ্বাস আমার ব্যপার। তুমি তোমার মতো থাকো। কিন্তু আমার বিশ্বাসে আঘাত দিও না।

এইখানে যদি ধরেও নেই, ধর্ম মাত্রই ব্যক্তিগত ব্যপার আর ব্যক্তির স্বাধীনতা আর বিশ্বাসে আঘাত দিয়ে তুমি কাউকে কষ্ট দিতে পারো না। তাহলে আমরা নিশ্চয়ই বলব, পৃথিবীর যেকোনো ধর্মের সকল বিশ্বাসী ব্যক্তির অনুভূতিতে আঘাত দেয়া ঠিক নয়। সেই হিসেবে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান যেমন, তেমনি পেগানদের ধর্মানুভূতিতেও আঘাত দেয়া যাবে না। আঘাত দেয়া যাবেনা সারা পৃথিবী জুড়ে ছোট ছোট ধর্মগোষ্ঠীর মানুষদের বিশ্বাসে। তা সে যে ধর্মই হোক, যা বিশ্বাসই হোক।

ধর্মীয় অনুভূতির উচ্চ অবস্থানকে মেনে নিলে আমাদের অতীত কিন্তু অন্যরকম হতো। অতীতে ধর্মীয় অনুভূতিতে না দিতে চাইলে ডাইনি সন্দেহে পুড়িয়ে হত্যার বিধানকে ধর্মীয় বিধান মেনে চুপ থাকা উচিত হতো? আজকে আমি যদি আমি বিশ্বাস করি আমাদের পাড়ার 'কুলসুম' একজন ডাইনি? যদি আমার ধর্মগ্রন্থের সূত্রমতে 'কুলসুম' ডাইনি সাব্যস্ত হয়? যদি কোনো একদল মানুষ মিলে বিশ্বাস করে একজন নারী ডাইনি, তাহলে কি তারা তাকে পুড়িয়ে মারতে পারবে? অন্তত পুড়িয়ে মারার 'ফতোয়া' দিতে পারবে? মধ্যযুগে কতো হাজার নারীকে ডাইনি বলে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তার কোনো হিসেব নেই। এই ভূখণ্ডেই শিশু কন্যাকে মৃত স্বামীর সঙ্গে একই চিতায় পুড়িয়ে মারা হয়েছে। সেও কিন্তু ধর্মের বিশ্বাসেই। বিধবাদের বিয়ে কি এখনো অন্যায় বলে ধরে নেয়া যাবে? কেবল যৌন সম্পর্ক তৈরির অপরাধে মাটিতে পুঁতে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা যাবে কাউকে? আমি আগ্রহী পাঠককে এরকম ঘটনার উদাহরণ দিতে তৈরি আছি। এই ঘটনাগুলো ঘটেছে এবং ঘটছে সে অস্বীকার করার উপায় নেই।

কেউ যদি আজকে বিশ্বাস করে যে, বাতাস তার 'পরম শক্তির' রূপ। বাতাসেই সৃষ্টির রহস্য লুকানো আর সে বাতাসের পূজা করে, বাতাসের কাছে প্রার্থনা করে থাকতে চায় তাহলে সেটি নিশ্চয়ই তার ব্যক্তিগত পছন্দ হবে আর তার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কিছু বলে তাকে কষ্ট দেয়াও ঠিক হবে না। এখন এই লোকটিই যদি বলে, ধুমপান করে বাতাস দূষিত করলে তার ঈশ্বরের কষ্ট হয় আর তাতে তিনি ব্যথিত হন, তাহলে কি আইনানুযায়ী ধুমপান অথবা বাতকর্ম করলে কমসে কম ৭ বছরের কারাদণ্ড হবে? এই কথাটুকু কৌতুক করার জন্য লেখা নয়, শ্লেষোক্তিও নয়। বরং কারো 'বিশ্বাস' রক্ষা করা যে যৌক্তিক না-ও হতে পারে তা বোঝানোর চেষ্টা।

নিঃসন্দেহে, কেউ এইরকমের 'আজগুবি' বক্তব্য দিয়ে ধর্মানুভূতির কথা বললে আজকের যুগে সে কেবল অন্যের হাসিরই খোরাক হবে। আর মানুষ পুড়িয়ে মরার মতো ধর্মের এসব 'ভয়াবহ অপব্যবহার' এখন আর 'সেরকম' দেখা যায় না। যে লোকটি নিজের ধর্মের সূত্র দিয়ে কাউকে পুড়িয়ে মারছে না, কাউকে হত্যা করছে না, কারো উপরেই কোনো 'চাপ' তৈরি করছে না, তার বিশ্বাস নিয়ে কথা বলে কেন তাকে কষ্ট দেয়া?

এর কারণ ব্যাখ্যা করা খানিকটা সময় সাপেক্ষ আর কঠিন। তবে চেষ্টা করা যেতে পারে।

যুগের হিসেবে ধর্মের 'ভয়াবহতা'র গ্রহনযোগ্যতা বদলেছে। বদলায়। যেমন, আজকে যদি শাস্তি হিসেবে জনসমক্ষে কারো চামড়া ছিলে নেয়া হয় তাহলে বেশিরভাগ মানুষের কাছেই তা খুব অমানবিক মনে হবে। এমনকি খুব বড় অপরাধী হলেও অনেকে বলবে অপরাধীকে দ্রুত মেরে ফেলো, অথবা লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে হত্যা করো। জনসমক্ষে কারো চামড়া ছিলে ফেলা অমানবিক! অথচ, এই কাজটি কয়েকশো বছর আগে অমানবিক ছিল না। রাস্তায় মানুষের সামনেই মানুষ হত্য করা হতো। মানুষ দাস হিসেবে বেচাকেনা হতো। আর মানুষে-মানুষে অথবা মানুষে-পশুতে প্রাণক্ষয়ী লড়াই টিকিট কেটে দেখা হতো উপভোগ্য খেলা হিসেবে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয় যখন এই দেশে জীবিত শিশু পুড়িয়ে মারা হতো স্বামীর চিতায়। সেই চিতার পাশে ওই শিশুটিরই স্বজনেরা থাকতো। তাদের কারো কাছেই ওই বিষয়টা অমাণবিক মনে হতো না। বরং ওই আচরন ধর্মমতে 'প্রয়োজনীয়' আর শিশুটির জন্য অপার 'স্বর্গীয় পুরষ্কার' লাভের উপায় ছিল। এই সময়েও জনসমক্ষে মানুষকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার প্রচলন রয়েছে কোথাও কোথাও। এখনো মানুষের সামনে গলা কেটে মানুষ হত্যা করা হয়।

মানুষ কীরকমের ভয়াবহতা দেখে অভ্যস্থ, আর কোন আচরণকে তারা ক্ষতিকর মনে করেন তার হিসেব যুগে যুগে বদলায়। সেইজন্য, এই যুগের ভয়াবহতাগুলো আমাদের কাছে অনেকটা 'গ্রহনযোগ্য' মনে হতে পারে। প্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। আমরা আমাদের বিশ্বাস এবং সংস্কারে এতো বেশি অভ্যস্থ হয়ে উঠেছি যে, মোহমুক্ত হয়ে কোনো ঘটনার বিচার করার বিবেচনাশক্তি সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের নেই। আমাদের সামাজিক আবহ সেই বিবেচনার অনুমতিও দেয় না। যেমন, সংসারে স্ত্রী স্বামীর অনুগত থাকবেন এটি আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়। অন্তত সংসারে স্বামীর মতামত অগ্রগন্য সে তো প্রায় সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। একজন পরিপূর্ণ মানুষ, যেই মানুষটির বোধ-বুদ্ধি-বিবেচনা কিছু কম নয়, আর মানুষ হিসেবে যার সমান সমান অধিকার পাওয়ার কথা ছিল, আমাদের সামাজিক সংস্কৃতি আর আবহ তাকে মানসিকভাবে দাস বানিয়ে রাখে। আজকে যে স্ত্রীটি সংসারে সমান অধিকারের চর্চা করেন, তিনিও বেশিরভাগক্ষেত্রে ওই অধিকারটিকে 'সুযোগ এবং সৌভাগ্য' বলে বিবেচনা করেন। সাধারণভাবে, কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে নিরূপায় না হলে নারী তার সমঅধিকারের চর্চার ছাড় দিয়েই সংসার এবং জীবন টেনে নিয়ে যান। আর সেরকম আচরণ করাই যে 'উচিত' সেই শিক্ষা আর মানসিকতা আমাদের সমাজ তাকে দিয়েছে। ওই 'উচিত' কাজটি করার সামাজিক পরিস্থিতি আর গ্রহনযোগ্যতাও আমরা তৈরি করে রেখেছি। এটি কিন্তু কেবলমাত্র একটি উদাহরণ হিসেবে বলা। সংসারে নারীর অধিকার বিষয়ে কথা বলা এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য নয়।

ধর্মের বিশ্বাসী মানুষের নানান রকম রয়েছে। যেটা বিবেচ্য, তা হচ্ছে তাদের 'বিশ্বাস' এবং 'চর্চা'। আমাদের দেশের শিক্ষিত শ্রেণির বেশিরভাগই ধর্মে বিশ্বাস করে, চর্চা করে কম। আবার সমাজের একটি বড় অংশ ধর্মের 'ভয়াবহ' রূপটিকে এড়িয়ে একটি 'শোভন' রূপের চর্চা করে। কারো ধর্মে পাথর ছুঁড়ে মানুষ মারার বিধান থাকলে এই 'শোভন' ধর্মানুসারীরা সেই চর্চা করে না, কাউকে করতেও বলে না। তবে কেউ সেই চর্চা করলে এরা সচারচর তার বিরোধিতাও করতে যায় না। আবার কেউ কেউ ধর্মের একটি 'শোভন' রূপ তৈরি করে নিয়েছে। তারা হয়তো পাথর ছুঁড়ে মারা অংশটিকে ধর্মের 'বিকৃত রূপ' আখ্যা দিয়ে সেটিকে সরাসরি বাতিল বলে দেবে। এই শ্রেণি দাবী করবে, তাদের চর্চা করা ধর্মের 'শোভন' রূপটিই আসল ধর্ম। অন্য অংশটি বিকৃত। আর তারা সেই বিকৃত অংশের দায় নিতে যৌক্তিকভাবে রাজি নয় (তাদের দাবী কেন অযৌক্তিক সেটি অন্য একটি আলোচনায় ব্যাখ্যা করবার ইচ্ছে রাখি)।

কিন্তু ধর্মের যে রূপেরই চর্চা করা হোক, যারা বিশ্বাস করছে, চর্চা করছে আর যারা পরিবর্তিত 'শোভন' সংস্করণ চর্চা করছে তারা সকলে মিলে একটি সমাজ তৈরি করে। সেই সমাজে ধর্ম তার চর্চিত, অচর্চিত, শোভন, অশোভন সকল রূপে বিরাজমান থাকে। সেই সমাজ যে আবহ তৈরি করে তা ধর্মকে নানান শেকড় দিয়ে জল সরবরাহ করে কেবল তরতাজাই করতে থাকে। তাতে ধর্মের কোনো আপাত গ্রহনযোগ্য 'শোভন' রূপের প্রতিষ্ঠা আর অশোভন রূপের বিনাশ যেমন হয়না, তেমনি বিনাশ হয় না ধর্মের ভয়াবহ আর ক্ষতিকর অংশটিরও। চর্চায় না থাকুক, সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকে যৌনতার অপরাধে পার ছুঁড়ে মানুষ মেরে ফেলায় আগ্রহী একজন বিশ্বাসী।

যদি পাথর ছুঁড়ে মানুষ হত্যা অমানবিক বলা হয়, তাহলে এইসব বিশ্বাসী মানুষের অনুভূতি আহত হবে। যে যুগে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিরোধিতা করা হয়েছিল সেই যুগে সে ছিল ধর্মের বিরোধিতা, সতীদাহ প্রথার যারা বিরোধিতা করেছিল তারা ছিলেন সর্বাংশে ধর্মবিরোধী। যারা বিধবা বিয়ের প্রচলন করেছিল তারাও মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছিল। আরো অসংখ্য পাশবিক ধর্মাচরণের উদাহরণ রয়েছে, পরিচিত অংশটি কেবল এখালে উল্লেখ করা হলো।

মানুষের আবেগ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এবং সে কোনো বিচারেই এড়িয়ে যাওয়া উপায় নেই। যেসব প্রধান ধর্মগুলোতে কোটি মানুষ বিশ্বাস করে, যাদের প্রত্যাহিক জীবনের অংশ ধর্ম, তাদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়া কি মানবিক, নাকি যৌক্তিক? সাধারণভাবে, বর্তমান সময়ের প্রধান ধর্মগুলোতে (এই সময়ের প্রেক্ষিতে) নৃশংস অমানবিক আচরণ কমই চর্চিত হয়। অন্তত মধ্যযুগের তুলনায়। এই বিপুল মানুষের বিশ্বাস নিয়ে অনর্থক কথা বলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া সাধারণ বিবেচনায় অযৌক্তিক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিশ্বাসী এই বিপুল সংখ্যক মানুষেরা আজকের পৃথিবীর সবচে বড় সামাজিক পরিমণ্ডলটি তৈরি করে। এইসকল মানুষের বিশ্বাস থেকেই এই সমাজের আচরণ নির্ধারিত হয়, সমাজ চালিত হয়। আর এই আচরণ যে আবহ তৈরি করে সে থেকেই পরের শিশুটির মানসিকতা কেমন হবে তা নির্ধারিত হয়। সেইজন্য এই সমাজের আচরণে, বিশ্বাসে যেখানে অযৌক্তিক অবৈজ্ঞানিক কোনো উপাদান থাকবে তা চিহ্নিত করা জরুরি। সে নিয়ে কথা বলা এবং কেন সে অযৌক্তিক সেই ব্যাখ্যাটি এই সমাজের সামনে উপস্থাপন করা জরুরি।

এই সমাজের আনাচে কানাচে এখনো কবরে-মন্দিরে-পাথরে উপঢৌকন দিয়ে নানা ফল পাওয়া উদাহরণ দেখা যায়। খারাপ বাতাস লেগে একসময় অসুখ হতো। পানিপড়া আর তাবিজের রোগ উপশমের উদাহরণ তো এখনো দেখা যায়। দারুণভাবে অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা ব্যবস্থা 'হোমিওপ্যাথি'র প্রচলন রয়েছে অসংখ্য দেশে, কোটি মানুষের মাঝে। শিক্ষিত ধার্মিক অনেকেই মানবেন যে এইসব আচরণ ধর্মের অংশ তো নয়ই, বৈজ্ঞানিকও নয়। কিন্তু সেটি মানার জন্য এইসব শিক্ষিত মানুষকে আজকের মানসিক অবস্থানে আসতে হয়েছে। এই যৌক্তিক বিবেচনার শক্তি তৈরি হওয়ার জন্য তাকে যুক্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাসকে, প্রচলতি সামাজিক আচরণকে যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করতে হয়েছে।

সেইজন্য, বিশ্বাস যাই হোক, যার বক্তব্য যেটিই হোক, সকল বক্তব্য এবং বিশ্বাসকে যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার এবং চর্চা থাকা সমাজের জন্য প্রয়োজনিয়। সমাজের মানুষের মাঝে দুটি গুণ থাকা দরকার, একটি তার সবকিছুকে যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করার অভ্যাস, আর অন্যটি তার পরম লালিত বিশ্বাসও প্রশ্নবিদ্ধ হলে সে মুক্তমনে গ্রহন এবং যাচাই করার মানসিকতা। বলে রাখা ভালো, ধর্মবিশ্বাস ইতিহাসের কোনো অংশেই ব্যক্তিগত আচরণ আর চর্চা ছিল না। এখনো নেই। ধর্ম সবসময়ই গোষ্ঠীগত আচরণ। ধর্ম সবসময়ই সমাজের আবহ নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের যেকোন অংশের যেকোনো গোষ্ঠীর দিকে তাকালেই এই সত্যটি দেখা যাবে। দেখা যাবে কীভাবে সমাজের সকল অংশে ধর্মে 'প্রভাব' রয়েছে।

ধর্মীয় অথবা সামাজিক আচরণের যে অযৌক্তিক অংশ, তার বিরোধিতা করার নানান ধরন রয়েছে। যেমন রয়েছে যৌক্তিক কোমল আলোচনার ধরন, তেমনি রয়েছে কট্টর শ্লেষ আর উপহাসের পথ। যেসব ধার্মিক মানুষ তীব্রভাবে ধর্মানুরাগী, তাদের কাছে ধর্মের বিরোধিতা সে যৌক্তিক হোক বা অযৌক্তিক, সহজভাবে নেয়া সম্ভব হয়না। ধর্মবিরোধীর বিনাশ করার আচরণও ধর্ম থেকে আসে। ধর্মের টিকে থাকার প্রয়োজনেই ধর্মবিরোধীর বিনাশ জরুরি। আর ধর্মবিরোধীর বিনাশের পথ সহজ করে দেয় সমাজের উপর ধর্মের প্রভাব। ধর্মবিরোধীকে মারতে যায় কেবল কট্টর ধর্মানুরাগীরাই, কিন্তু কট্টর ধর্মানুরাগীকে সামাজিক সমর্থন দিয়ে রাখে ধর্মবিশ্বাসী পুরো সমাজ।

যেসব মানুষে ধর্মের অযৌক্তিকতার বিরোধীতা করেন কট্টর বক্তব্য অথবা উপহাসে, তাদের কথা এমনকি 'শোভন' ধর্মানুরাগীদের জন্যেও সহ্য করা কঠিন হয়ে যায়। হাজার বছরের ধর্মাচরণের সংস্কৃতি এর কারণ। ধারণা করতে পারি, যারা কট্টর ভাষা আর উপহাসে ধর্মের সমালোচনা করেন তারা ধর্মের ক্ষতিকর রূপটিকে একবিন্দুও সহ্য করতে আগ্রহী নন। এমনকি এই সমাজের প্রেক্ষিতে অন্তত 'খানিকটা গ্রহনযোগ্য' রূপে সমালোচনা করতেও তাদের আপত্তি আছে। তাদের কাছে বরং, ধর্মাচারণ খানিকটা অপরাধ। এবং সেই অযৌক্তিক অনাচারের সকল রকমের বিরোধিতা করাই উচিত। আমি নিজে মনে করিনা খুব কট্টর সমালোচনা মানুষকে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে আগ্রহী করে। কট্টর সমালোচনা বরং দুটি লড়াকু দল তৈরি করতে প্ররোচনা দেয়। একইসঙ্গে, ধর্মের সমালোচনাকে আমি অন্যায়ও মনে করি না। সমালোচক যেমন বলতে পারেন তোমার ধর্ম অগ্রহনযোগ্য, তেমনি ধার্মিক বলতে পারেন তোমার সমালোচনা অগ্রহযোগ্য। দুইপক্ষই বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে সমাধানে আসতে সম্মত হলে সেটি সবচে ভালো বলে আমি মনে করি।

সামান্য অপ্রসঙ্গিক হলেও বলে রাখি, অন্যের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয় সবচে বেশি ধার্মিকরাই। অন্যের ধর্মের প্রতি সবচে বেশি অশ্রদ্ধা দেখায় ধর্মানুরাগীরা। আমাদের সমাজে বড় বড় ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব প্রকাশ্যে অন্য ধর্মের বিষেদাগার করে। আর তাদের বক্তব্যে, মন্তব্যে সম্মতি দেয় হাজার হাজার শ্রোতা-সমর্থক। আগ্রহী পাঠক চাইলে আমি তার প্রমাণ দিতে পারি। আমাকে না বলেও অনলাইনে সামান্য খুঁজলেই অসংখ্য নজির পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের মুসলমান সমাজের সকল স্তরে, সকল পর্যায়ে অন্য ধর্ম এবং জাতির প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়। নেতিবাচক মনোভাব রাখা হয়। ইহুদী খ্রিস্টান হিন্দুরা এই সমাজের চোখে শত্রুগণ্য হয়। বাংলাদেশ বলেই মুসলমান সমাজের উদাহরণ দেয়া হলো। এর মানে এই নয় যে, অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে মুসলমানদের স্তুতি করা হয়!

অনুল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম বাদে, এই সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি পরিবারে অন্যের ধর্মকে অশ্রদ্ধা করতে শেখানো হয়। কেবল নিজের ধর্মকে 'সত্য' বলে শেখানো হয়। অন্য ধর্ম যে 'অসত্য' তা ধার্মিক মাত্রেই জানেন। অন্যের ঈশ্বর যে 'মিথ্যা', অন্যের ধর্মীয় আচরণ যে 'ভ্রান্ত' সে সকলে জানে এবং মানে। সবচে মজার বিষয় হচ্ছে, অন্যের ধর্মাচরণ যে (সাধারণত পরকালে) কঠিনভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সেটা বিশ্বাস করেন সকল ধার্মিক মানুষ। এই মানুষগুলো হয়তো এই সমাজে সকলক্ষেত্রে প্রকাশ্যে মৌখিকভাবে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে না। কিন্তু যে কোনো ধার্মিক সমাজে সংখ্যালঘু ধর্মের মানুষ মাত্রেই জানেন, তাদেরকে কী চোখে দেখা হচ্ছে। তারা সেই সমাজের মানুষের সামাজিক আচরণেরই বুঝতে পারেন তারা 'ভিন্ন', তারা 'পাপী'। ধর্মীয় বিশ্বাস বিষয়টিই এমন যে একাধিক মেনে নেয়ার উপায় নেই। নিজেরটিতে শ্রদ্ধা রাখতে গেলে অন্যেরটি যে 'ভ্রান্ত' সেটি মেনে নিতে হবে সবার আগে। 'শোভন' ধর্মের বিশ্বাসী বেশিরভাগ মানুষই কোটি মানুষের ধর্মাচরণের বিরোধিতা করা অথবা তার উপহাস করাকে অনৈতিক মনে করেন। অথচ তাদের নিজের ধর্মের মানুষ যে অন্যধর্মের মানুষের অনুভূতিতে কীরকম আঘাত দিচ্ছেন সেই বিবেচনা তারা কখনো করেছেন বলে জানিনি। নিজের ধর্মে আস্থা রেখে আর অন্যের ধর্মকে শ্রদ্ধা করার দাবী যে কীরকম অশ্লীল মিথ্যে, সেটাও তারা ভেবে দেখে না।

বলতে চাইছি, কেউ কোনো বিশ্বাসে শ্রদ্ধা রাখে বলেই সেই বিশ্বাসের অযৌক্তিক আর অন্যায় অংশ সম্পর্কে নিরব থাকতে হবে, এই দাবী অযৌক্তিক। কিন্তু মনে রাখা দরকার, কারো স্বজনকে উপহাস করা নোংরা আচরণ। তেমনি কারো ইতিহাস আর প্রমাণিত সত্যকে বিকৃত করার অধিকার 'মানবাধিকার' অথবা 'বাকস্বাধীনতা' বলে বিবেচ্য নয়। কিন্তু যদি যৌক্তিক ভাবে কোনো ব্যক্তি অপরাধী প্রমাণিত হয় তাহলে তার স্বজনরা আহত হবেন ভেবে সেই সত্য চেপে যাওয়ার অভ্যাসও সমাজকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। ধর্ম বিশ্বাস অথবা অন্য সকল অনুভূতির ক্ষেত্রেও এই যুক্তি প্রযোজ্য। অপ্রয়োজনে, অথবা কেবল আঘাত দেয়ার উদ্দেশ্যে কারো বিশ্বাস অথবা আচরণের সমালোচনা করা ঠিক যৌক্তিক নয়। কিন্তু ব্যক্তির অথবা গোষ্ঠীর আচরণ বা বিশ্বাস যদি ভ্রান্ত হয়, যদি ক্ষতিকর হয়, যদি অযৌক্তিক হয় তবে সে বলার অধিকার তো বটেই, চর্চাও থাকা দরকার।

মুক্তবুদ্ধির বিচারে যে সংস্কৃতি, যে অভ্যাস, যে বিশ্বাস অযৌক্তিক আর ক্ষতিকর, সকল সময়েই তার বিরোধিতা করার প্রয়োজন রয়েছে। যে কেউ তার শিক্ষা এবং যুক্তি ব্যবহার করে ইচ্ছে করলে কোনো পরম শক্তিতে 'বিশ্বাস' রাখতে পারে। কেউ এক মিনিট পূর্বে দেখা কোনো প্রাণিকে সর্বশক্তিমান ভাবলে সেটি তার ইচ্ছে, কেউ হাজার বছরের প্রচলিত কোনো পরম শক্তিতে বিশ্বাস রাখলে সেটিও তার ইচ্ছে। কিন্তু ব্যক্তি বিশ্বাস যখন তার সামাজিক আচরণে প্রভাব ফেলে, আর সেই আচরণ যখন অযৌক্তিক আর ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় তখন তার প্রতিবাদ করা, বিরোধিতা করা সমাজের অন্য মানুষের কর্তব্য। বিশ্বাস যাতে সমাজের চালিকাশক্তি হয়ে না যায় সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন সকল সমাজের। নয়তো, কাল হয়তো কেউ দাবী করবে আগুন তার ঈশ্বর। ফায়ারব্রিগেড তার ইশ্বরকে অপমান করে। কোথাও প্রজ্বলিত আগুন নেভালে তার ঈশ্বর কষ্ট পায়। বরং সকল স্থানে আগুল জ্বালিয়ে রাখা দরকার। অযৌক্তিক ধর্মানুভূতিকে রক্ষা করা সমাজের উচিত হবে তখন সেই অগ্নিপূজারীর দাবীটিও মেনে নেয়া।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গুল্লি
[ কারো বিড়ালানুভূতি আহত হলে দুঃখিত খাইছে ]

প্রতিটি ধর্মের উপস্থিতিই বোধকরি বাকি n-1 সংখ্যক ধর্মানুভূতির জন্য হুমকিস্বরুপ। অনুভূতিহীন একখানা ধর্ম থাকলে বেশ হত। আফসোস, অনেকেই বিজ্ঞানবাদীতা বিহীন বিজ্ঞান চান। এই ক্ষেত্রে সবাই সমস্বরে চুপ।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ও এর ছবি

ধন্যবাদ

এক লহমা এর ছবি

সচলে স্বাগতম।

মুস্কিল হচ্ছে, অনুভূতিকে আদর করে মাথায় চড়াতে লাগে না। তাকে গল্পের সেই তাঁবুর মধ্য মুণ্ডু ঢোকানো উটের মত একটু জায়গা দিলেই একসময় সে আপনাকে তাঁবুর বাইরে ছুঁড়ে ফেলবে। যত বাবা-বাছাই করুন, যত কোমল করেই বলুন, অনুভূতির উট আপনাকে উৎখাত না করে ছাড়বে না।

আসুন রণদীপম-দার একটি চমৎকার লেখায় আমার একটি মন্তব্য আবার পড়া যাক। ধর্মের অনুভূতির মূল প্রোথিত থাকে বিশ্বাসে। সেই বিশ্বাস নিয়েই দু'-এক কথা।

নির্ভুল বিশ্বাসের অব্যর্থ যুক্তিতে
*** *** ***

জিরাফের সাথে দেখা হলে জানাল সে -
মহান তিনি আছেন ঐ উপরের ডালে।
একমাত্র জিরাফই তাঁকে দেখতে পায়, আর তাই -
তিনি ভালবাসেন শুধু জিরাফকে
আর যারা জিরাফের কথা শোনে তাদেরকে। আর তাই -
বাকিদের থাকার কোন মানেই নেই।

চিনি মুখে ডেঁয়ো পিঁপড়ে শপথ নিলে
তিনি আছেন চিনির মধ্যে, আর তাই -
তিনি শুধু চিনি মুখে ডেঁয়ো পিঁপড়ে-কেই
ভালবাসেন। আর তাই -
বাকিদের কামড়ে অস্থির করে দিলে
কোনো দোষ নেই।

পোড়া কাঠ লিখে দিল তিনি থাকেন
আগুনের মধ্যে, আর তাই -
যারা তা মানে না, তাদের
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
পুড়িয়ে ফেলা দরকার কারণ,
একমাত্র তবেই তারা তাঁর
দেখা পেয়ে যাবে।

কোলা ব্যাঙ বলল - ... ...
হাঙর ঘোষণা দিল - ... ...
কাক কা কা করে জানিয়ে দিল - ... ...

সব্বাই সাফ জানিয়ে দিল যে,
পরিস্কার দেখা যাচ্ছে -
সে ছাড়া,
আর যারা তাকেই বিশ্বাস করে তারা ছাড়া,
বাকিদের থাকার কোন অর্থই হয় না।

এই পরিস্কার যুক্তিতে
তারা সবাই বাকি সবাইকে
নিজের নিজের তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিল।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ও এর ছবি

ধন্যবাদ

মাসুদ সজীব এর ছবি

অসাধারণ বিশ্লেষন, সত্যি অসাধারণ। হাততালি

দীর্ঘ বিশ্লেষনমূলক লেখাটাকে কিছু খন্ড খন্ড শিরোনামে ভাগ করে আলোচনাগুলো করলে পাঠকের মনোযোগ হারানোর সুযোগ কমে যেত। যারা ধর্মের নানান অসড়তা, অন্ধতা নিয়ে সমালোচনা করেন, গবেষনা করেন, লেখালেখি করেন তাদের মনে রাখা উচিত কারো ধর্মকে কিংবা ধর্মের প্রবাদ পুরুষদের সরাসরি গালাগালি করে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। যথেষ্ট যুক্তি, প্রমাণ এবং তথ্য থাকার পরেও অনেকের মুখের কিংবা লেখার অশ্রাব্য ভাষার জন্যে তার সকল বক্তব্য ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। এভাবে গালাগালি দুটো ভিন্ন ধারার বিশ্বাসী মানুষকে পরস্পর বিপরীতমুখী দলে বিভক্ত করে দেয় এবং ঘৃনা আর ক্ষোভের প্রচন্ড বারুদ ঢুকিয়ে দেয়। এই পন্থায় ধর্মের সমালোচনা করা আমার পছন্দ নয়। ধর্ম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হোক, আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমেই অসত্য, অন্ধপণা দূর হবে। ধার্মিকদের যেমন যৌক্তিক সমালোচনা মেনে নেওয়ার মানসিকতা এবং শিক্ষা থাকা বাঞ্চনীয় তেমনি অবিশ্বাসীদেরও অন্যের বিশ্বাসের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। কারো বিশ্বাসে ভুল থাকলে আপনি তাকে সুন্দর করে যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুণ। কাজ হলে সেটাতেই হবে, অন্য কোন পন্থায় নয়।

ধর্ম সম্পর্কে আহমদ শরীফের কিছু উক্তি বেশ প্রিয় আমার সেগুলোই উল্লেখ করে যাই।

ধর্ম মানব প্রতিভার এক আশ্চর্য় উদ্ভাবন। ধর্ম মানুষের প্রাণের উচ্ছলতা, কামনার উদ্দামতা, অভিলাষের অদম্যতা, আচরণের আবাধতা, চিন্তার স্বাধীনতা, সম্ভাবনান বিচিত্রতা প্রভৃতি এক নিয়মিত খাতে পরিচালিত করে যান্ত্রিক পরিমিতিতে সীমিত রাখে। ধর্ম দুরাত্নাকে করে নিয়ন্ত্রিত, সু-আত্নাকে রাখে আড়ষ্ট, আনন্দকে করে দুর্লভ, অতৃপ্তিকে করে চিরন্তন, আকাঙ্খাকে করে বোবা, বেদনাকে করে অন্ধ, অনুভূতি হয় নিরবয় আর গতি হয় সীমিত। ধর্মবোধ মানুষের অন্তরে এমন এক জীর্ণতা এনে দেয়, প্রাণশক্তির উৎসমুখে এমন এক বাঁধ নির্মান করে যার কবলমুক্ত হওয়া সম্ভব হয় না কারো পক্ষে। কেবল ধর্মীয় বিশ্বাস কাউকে সৎ ও উন্নত করে না, যদি না সে দায়িত্ববান, কর্তব্যবুদ্ধি ও মর্যাদাজ্ঞান সম্পন্ন হয়।

সচলে স্বাগতম, নামটা জানা হলো না। আপনার কাছ থেকে আরো দারুন বিশ্লেষণমূলক লেখা পাবো আশা করি। লেখার শেষে নামটা লিখবেন। ভালোথাকুন হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ও এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার পরামর্শ মনে থাকবে।

ওডিন এর ছবি

যুক্তিপূর্ণ এবং সুখপাঠ্য একটা লেখা।

সচলের আগের যুগের প্রিয় পোস্টের লিস্টিটা বড় মিস করি। এই লেখাটা সেইখানে আটকে রাখা যেতো।

ও এর ছবি

ধন্যবাদ

Reaz Mohammad Mazumdar  এর ছবি

অন্যের বাড়িতে ঢিল মারলে অপরাধ, চুরি করলে অপরাধ, হত্যা করলে অপরাধ, অবাধ সম্পর্ক রাখলে অপরাধ- এই সব ত আইনের বইতেই থাকে। আমার ত এগুলো মানতেও ভালো লাগেনা। নিষেধ যা, আমার তাই করতেই মন চায়।
সমস্যা আইনে নয় আইনের ব্যাখ্যায় আর না মানার প্রবনতায়।
দ্বিমুখী দ্বান্দিক চিন্তায় মুক্ত মানষ হওয়া সম্ভব হয়না। মুক্ত মানুষ হবার জন্য সাধনা প্রয়োজন হয়। দু পাতা বই পড়ে ব্যখ্যা বিশ্লেষন করতে শিখলেই বুদ্ধ হওয়া যায়না, রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায়না, গুরু নানক হওয়া যায়না, বিবেকানন্দ হওয়া যায়না। খারাপ মানুষের মন পড়ার শক্তি অর্জন করতে না পারলে জগতের সবই ভাল মনে হবে। আর এটাই নির্বোধ ভাল মানুষদের সমস্যা।

ও এর ছবি

দ্বিমুখী দ্বান্দিক চিন্তায় মুক্ত মানষ হওয়া সম্ভব হয়না। মুক্ত মানুষ হবার জন্য সাধনা প্রয়োজন হয়।

আপনার বক্তব্য স্পষ্ট নয়। আমি বুঝতে পারিনি। একটা কষ্ট করে ব্যাখ্যা করলে বুঝতে পারি।

দু পাতা বই পড়ে ব্যখ্যা বিশ্লেষন করতে শিখলেই বুদ্ধ হওয়া যায়না, রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায়না, গুরু নানক হওয়া যায়না, বিবেকানন্দ হওয়া যায়না।

আপনার কথার সারমর্ম কি "তুই বেশি বুঝিস"? আমি অথবা অন্য কেউ কয় পাতা বই পড়েছে সেটা কি গুরুত্বপূর্ণ? বক্তব্য কী আর তাতে যুক্তি আছে কিনা সেইটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা নয়? নাকি যে যতো বেশি পাতা বই পড়েছে তার বক্তব্য ততো যৌক্তিক হবে?

আপনার মন্তব্যের মূল বক্তব্যটি কী? ধোঁয়াশা না করে সোজা বলে দিলেই কিন্তু হয়।

এক লহমা এর ছবি

@Reaz Mohammad Mazumdar: কি বলতে চাইলেন কিচ্ছু বোঝা গেল না!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ও দি আওল আপনার লেখা পড়ে ভাল্লাগলো। সচলায়তনে স্বাগতম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।