পরিক্রমাঃ দ্য ট্রাভেলগ [চতুর্থ পর্ব]

ওডিন এর ছবি
লিখেছেন ওডিন (তারিখ: শনি, ০১/০৫/২০১০ - ৩:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

By the rivers dark
I wandered on.
I lived my life
in Babylon.

-Leonard Cohen

অতিআধুনিক এবং অতিবুদ্ধিমান অন্য অনেকের মতোই আমিও কখনো ছোট মাছ আর সবু্জ-হলুদ সবজি খাই না। তাই আমি যে অন্ধকারে কম দেখি এতে আর অবাক হবার মতো কিছুই নেই। উত্তরকাশীতে পৌঁছালাম সন্ধ্যার অনেক পরে- আর গিয়েই পড়লাম একেবারে টিপিক্যাল ঢাকাইয়া লোডশেডিং এর ভেতরে। আবছা আঁধারে ঠোক্কর খেতে খেতে কোনমতে একটা থাকার জায়গা খুঁজে বের করা হলো।

আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত উত্তরকাশী ছিলো গঙ্গোত্রী আর আরও উত্তরের গন্তব্যগুলোর পথে শেষ বড় শহর। বরুণা আর অসি এই দুটো নদীর মাঝখানের শহরটাকে বুড়ো হিউয়েন সাং ডেকেছিলেন ব্রহ্মপুর বলে। কাশীর মতো এখানেও বিশ্বনাথ (শিবের আরেক নাম) এর মন্দির আছে। এই শহরের নাম উত্তরকাশী (মানে উত্তরের কাশী) হবার কারণটা বেশ ইন্টারেস্টিং। কোন এক সময় দেবতা আর দানবদের মাঝে যুদ্ধে দেবতারা তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না। তখন তারা কাশী ছেড়ে হিমালয়ের এই কোনায় 'কৌশলগত পশ্চাদপসরন' করেছিলেন। এখন বাসের রাস্তা একেবারে গঙ্গোত্রী পর্যন্ত চলে গেলেও এই শহরটার গুরুত্ব খুব একটা কমেনি। কারণ নভেম্বরের শুরু থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত গঙ্গোত্রীর রাস্তা বন্ধ থাকে। সেই সময়টাতে উত্তরকাশীই হচ্ছে এই অঞ্চলের সবচেয়ে 'হ্যাপেনিং প্লেস'।

আমি অবশ্য শহরটা খুব বেশি ঘুরে দেখার সুবিধা করতে পারলাম না। একে তো সন্ধ্যার পর থেকেই ভয়াবহ ঠান্ডা পড়তে শুরু করলো, আর তারপরে সাতটা বাজতেই দেখি রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য। আমার সহযাত্রী ততক্ষনে লেপের নীচে সমাধিস্থ হয়ে গেছেন- আমারো সেইরকমই প্ল্যান ছিলো তারপরেও শাল মুড়ি দিয়ে গঙ্গার (যার এখনকার নাম ভাগিরথী) আশেপাশের ঘাটগুলোতো একটু ঘুরে বেড়ালাম। একটা জায়গায় দেখি আগুন জ্বালিয়ে ঘিরে বসে হারমোনিয়াম খোল করতাল বাজিয়ে বেশ জমজমাট গানবাজনা হচ্ছে। ভাষাটা হিন্দি না- তবে খুব কাছাকাছিই কিছু একটা হবে। কয়েকটা শব্দ বুঝতে পারছি- কিন্তু ভাষা কখনোই সঙ্গীতসাধনার ক্ষেত্রে বড় কোন বাধা না। কতক্ষণ তাদের সাথে বসে মাথা নেড়ে নেড়ে, মাঝে মাঝে তাল ঠুকে সমঝদারের মতো সঙ্গীত উপভোগ করলাম। ভদ্রলোকেরা আবার গানের মাঝেই 'ঘাস' এর কল্কেতে ধুমসে টান দিচ্ছেন। কয়েকবার আমাকেও সাধলেন। হাত জোড় করে বিনীতভাবে তাদের অফার প্রত্যাখ্যান করলাম। কিছু না বললে আবার অভদ্রতা হয় ভেবে বললাম- নো থ্যাঙ্কস- আই ডোন্ট স্মোক। ছোকরামতন একজন আবার আমার দিকে একটু অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকালেন- ভাবখানা এমন - রে তথাকথিত সভ্য শহুরে বর্বর- তুই জানিস না তুই স্বয়ং মোক্ষকেই প্রত্যাখ্যান করলি... ভ্রান্ত দুর্ভাগা পাপিষ্ঠ!

গত কয়েকদিনের পরিশ্রম আর হেজিমনির ফলস্বরুপ রাতের ঘুমটা হলো একেবারে সেইরকম- তাই সকালবেলা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের বাস মিস করলাম। এরপরে ঠিক করা হলো একটা শেয়ার ট্যাক্সিতে আমরা গঙ্গোত্রীর দিকে রওনা দেবো। এইসব জোগাড়যন্ত্র করে যাত্রা শুরু করতে করতেই আমাদের প্রায় দশটা বেজে গেলো।

উত্তরকাশী থেকে গঙ্গোত্রী যাবার পথটাকে শুধু দুটো শব্দ দিয়েই প্রকাশ করা যায়- ভয়ঙ্কর আর সুন্দর। দুপাশে উঁচু পাহাড়, যেগুলোকে মোটামুটিভাবে পর্বতশৃঙ্গ বলে চালিয়ে দেয়া যাবে। গিরিখাতের মাঝে নদী, আর প্রায় পুরো পথটাই এর পাশ দিয়ে, মাঝে মাঝে শুধু কয়েকটা টানেল আছে। একটু পর পরই ভূমিধসের চিহ্ন চোখে পড়ছে।

bhagirathi
ভাগিরথী এবং ভূমিধস

bhagirathi, AKA ganges
যে পথে এলাম...

একটুখানি দূরে গিয়েই একেবারে তাজা একটা পাথরের ধ্বস চোখে পড়লো, বোঝা গেলো এটা প্রাকৃতিক না, ডিনামাইটের কাজ! আর তারপরেই দেখি নদীর পাড় বেঁধে বেশ একটা ভাঙচুরের কাজ চলছে, হেজেমনি দেখে মনে হলো হাইড্রোইলেক্ট্রিক প্রজেক্টের কাজ হতে পারে। বড় বড় করে ছবি তোলা নিষেধ লেখা থাকলেও চটপট কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম।

towards gangotri: taming the river
নদীশাসন

আমরা যতই এগিয়ে যাচ্ছিলাম আশেপাশের দৃশ্য খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছিলো। পথ যখন নিচু উপত্যকার মাঝে- তখন আশেপাশে ঘন বন, কিন্তু যেই আমরা একটু উঁচুতে উঠছি- গাছপালা ক্রমেই কমে যেতে লাগলো। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ডিফরেস্টেশন কি না। কিন্তু আমাদের সারথি পরে বুঝিয়ে দিলেন আমরা এখন প্রায় উচ্চ হিমালয়ের অংশে ঢুকে পড়েছি। গাছপালা এখন থেকে কিছু কমই থাকবে।

ganges
এইখানে একটা সাইনবোর্ড ছিলো- যাতে লেখা এই জায়গাটা সাড়ে আট হাজার ফিট উঁচুতে।

solitude
নিঃসঙ্গতা!

হরশিল নামের গ্রামটায় পৌছলাম দুপুরের ঠিক আগে আগে। প্রায় ছাব্বিশ'শো মিটার উচুতে অবস্থিত এই ছোট্ট জায়গাটাতে প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়ে যাবার কারণ আর কিছু না- দিগন্তজুড়ে বিছিয়ে থাকা পর্বতমালা আর আশেপাশের আপেলের বাগান! পরে জানলাম তিন বা প্রায় চারপাশে পাহাড়ে ঘেরা এইরকম উঁচু উপত্যকাকে বলে 'বুগিয়াল'। এই অঞ্চলে সুবিখ্যাত বুগিয়াল হচ্ছে 'ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স', যেটা এখন একটা ইউনেস্কোর সংরক্ষিত এলাকা।

harsil
হরশিল- গ্রামের ঠিক বাইরে।

হরশিল পার হয়েই পথে পড়লো একটা চেকপোস্ট আর ক্যান্টনমেন্ট। চিনের সীমান্ত খুব কাছে হওয়ার কারণেই মনে হয় এইদিকে সামরিক উপস্থিতি একটু বেশি মনে হলো। আমরা যখন চেকপোস্টে অপেক্ষা করছি তখন দেখি আশেপাশে অনেক বিশালাকৃতির শাদা ময়লাটে পাথর। প্রথমে ভাবলাম মার্বেল্ টাইপের কিছু হবে, কিন্তু ভালোমতো খুঁটিয়ে দেখে বুঝতে পারলাম এগুলো আসলে গত শীতের রয়ে যাওয়া বরফ! এখনো পুরোপুরি গলে যায়নি- ওপরে ধূলোর আস্তর পড়ে পাথরের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

leftover snows from last winter

পথে চোখে পড়লো এক একাকী পথিককে।
loneliness

গঙ্গোত্রী পৌছলাম বেলা দুইটার দিকে- ততক্ষনে দেখি উত্তর আকাশে মেঘ জড়ো হওয়া শুরু করে দিয়েছে। গত কয়েকদিনে এইদিকের আবহাওয়ার ভাবগতিক অল্পস্বল্পবুঝে গেছি, তাই খুব একটা অবাক হলাম না। তাড়াতাড়ি করে ঝোলাবোঁচকা গুছিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়ে পড়লাম।

clouds gathering over gangotri
গঙ্গোত্রীর প্রথম দর্শণ!

৩০৫০ মিটার উঁচু গঙ্গোত্রীতে একটামাত্র প্রধান সড়ক, এর দুপাশের কিছু দোকানপাট, বিশাল একটা পার্কিংলট সহ বাসস্ট্যান্ড, গঙ্গাদেবীর মন্দির আর পুল পেরিয়ে নদীর ওপাশে কিছু আশ্রম আর ধর্মশালার বেশি কিছু না থাকলেও এইরকম গমগমে একটা শহর আমি খুব কমই দেখেছি, বিশেষ করে এটা এইরকম দুর্গম একটা জায়গায়। ইলেক্ট্রিসিটি অবশ্যই আছে- আর প্রথমেই যে জিনিসটা দেখে মন ভালো হয়ে গেলো সেটা হচ্ছে একটা পিজার দোকান! ধন্য সেই শেফ যে গাড়োয়াল হিমালয়ে দশহাজার ফিট ওপরে পিজা বানাচ্ছে! ঠিক করে ফেললাম একটু পরে এসেই গোটাকতক পিজা খেয়ে ফেলতে হবে। (গোটাকয়েক স্লাইস কিন্তু না- এইটা খুব খিয়াল কইরা...)

একটু খুঁজেটুজে চলনসই একটা জায়গায় থাকার জায়গা ঠিক করা হলো- একটা গেরুয়া রঙের তিনতলা বাড়িতে। বাড়ির রঙ পরিবেশের সাথে একেবারে খাপে খাপে মিলে যায়- একেবারে ব্লেণ্ডিং ইন যাকে বলে। এখানেও আমরা দেখলাম একমাত্র অতিথি- তাই তিনতলায় (আদতে একতলা- পাহাড়ের ঢালে বলে বাকি দুই তলা নীচে) একটা রুম উইথ এ ভিউ বেছে নেয়া হলো।

our shelter
এটাই ছিলো আমাদের আশ্রয়স্থল!


আশেপাশে

gangotri
এটা একটা শহরের দিগন্ত!

পৌরাণিকমতে গঙ্গোত্রীতে গঙ্গা নদীর উৎসস্থল, তিনি স্বর্গ থেকে এখানেই মর্ত্যে নেমেছিলেন। কিন্তু গঙ্গার নিচের দিকে নামার প্রবল স্রোতে পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাবার একটা সম্ভাবনা দেখা দেয়। তখন শিব তার জটার প্যাঁচের মধ্য দিয়ে গঙ্গাকে ধারণ করেছিলে (শক অ্যাবজর্বার আরকি খাইছে) কিন্তু জিওগ্রাফিকালি গঙ্গার আসল উৎস এখান থেকে উনিশ কিলোমিটার দূরে প্রায় ৪৩০০ মিটার উঁচুতে গোমুখ হিমবাহ থেকে। ধারণা করা হয় সুদূর অতীতে হয়তো হিমবাহের ব্যাপ্তি এই পর্যন্তই ছিলো- উষ্ণায়ণের কারণে হিমবাহ পেছনে সরতে সরতে আজকের জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে। আর এর পক্ষে প্রমাণও আছে- দেখা গেছে যে এখনও গোমুখ বছরে প্রায় তিরিশ মিটার করে পেছনে সরে যাচ্ছে

bhagirathi, AKA ganges
মন্দিরের ঘাটে- দূরে দেখা যাচ্ছে গঙ্গোত্রী ২, সুদর্শন আর মাতৃ শিখর

দুপুরের পরে যথারীতি বৃষ্টি শুরু হলো। তবে এই ঝিরঝিরে বৃষ্টি আমাদের আটকে রাখতে পারলো না। আমরা অ্যাটলাস ছাতা বাগিয়ে ধরে নগর পরিভ্রমণে বের হয়ে পড়লাম। শহরের ঠিক মাঝখান দিয়ে ভাগীরথি নদী একে দুভাগে ভাগ করে ফেলেছে, ওপরে শুধু একটা পলকা লোহার সেতু, যেটাতে কোন গাড়ি চলে না। তাই শহরের একদিক গাড়ি আর বাসের ভিড়ে ঠাসাঠাসি হলেও অন্যদিকটা অস্বাভাবিক শান্ত আর শুনশান। পাহাড়ের ধাপে ধাপে খুব ছাড়াছাড়াভাবে সব বাড়িঘর- বেশিরভাগই কোনো না কোনো সাধুগোষ্ঠীর আড্ডা, তাই বেশ একটা তপোবন ভাব চলে এসেছে। একটু দূরে গিয়েই দেখতে পেলাম অসাধারণ সুন্দর একটা জলপ্রপাত, যার নাম সূর্যকুন্ড প্রপাত।

surjakunda falls

পাহাড়ি পথ অনেক জায়গায় সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো, কার মাথায় যে এইরকম বুদ্ধি এসেছিলো জানি না- কারণ এই টিপটিপে বৃষ্টিতে মসৃণ পথ ভিজে বেশ পিছল হয়ে আছে। কয়েকবারই উৎরাই নামার সময় পড়তে পড়তে বেঁচে গেলাম, কিন্তু আমার সহযাত্রী একবার পা মচকে ফেললেন। এওপরে বৃষ্টির ধারও একটু বেড়ে গেলো। তাই সেইবেলার মতো নগরপরিভ্রমণ স্থগিত রেখে ফিরে আসা হলো। বৃষ্টিময় কনকনে বিকেলটা কাটালাম ধর্মশালার রান্নাঘরে কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে দ্য টু টাওয়ার্স পড়তে পড়তে, ফ্রোডো আর স্যাম এমিন ম্যুইল এর গোলকধাঁধায় আটকা পড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে- এইদিকে মেরি আর পিপিন এমআইএ! খুবই দমবন্ধকর অবস্থা!

সন্ধ্যাবেলা গঙ্গার ধারে আরেকবার আরতি দেখা হলো। কিন্তু সেই মাহেন্দ্রক্ষনে আমার ক্যামেরার গোলযোগ শুরু হওয়ার কারণে কোন ছবি তোলা গেলো না। ফিরে এসে দেখি কারেন্ট নেই, শুনলাম সন্ধ্যার পরে নাকি মন্দির এবং তৎসংলগ্ন এলাকা ছাড়া সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। আমি বুঝতে পারলাম না এই শীতের জায়গায় তাহলে শুধু দিনের বেলায় লোকজন কারেন্ট দিয়ে করেটা কি?

করার কিছু আর নেই- তাই আমরা পরেরদিনের গোমুখ যাত্রার প্ল্যান কষতে বসলাম, কিন্তু কেয়ারটেকার একটা খুব খারাপ খবর দিলো- আজকে বিকেলের বৃষ্টিতে গোমুখের রাস্তায় ধ্বস নেমেছে। একটা সুইডিশ পর্বতারোহী দলের কু্লিরা তাদের মালপত্র নিয়ে ফেরত এসেছে, তারাই খবর নিয়ে এসেছে। আর সুইডিশরা তাদের কাঁথাকম্বল ছাড়াই নাকি আটকা পড়েছে ভোজবাসায়- গোমুখের পথে প্রায় দশ কিমি ওপরে, ধসের কারণে ওরা নেমে আসতেও পারছে না। কালকে সকালের আগে পরিস্থিতি কি সেটা ঠিকঠাক বোঝা যাবে না। তাই দুশ্চিন্তা করতে করতেই রান্নার আয়োজন শুরু করতে হলো। কেয়ারটেকার নিজেই বাবুর্চি হলেও সব যোগাড়যন্ত্র আমাদেরই করতে হবে।। এরপরে রান্নাবান্নার মাঝখানেই আমার 'নিরামিষ ক্যান, কতকাল আর ঘাসপাতা খামু, ডেজার্ট নাই ক্যান, খামু না'- জাতীয় ঘ্যানঘ্যানানিতে বিরক্ত হয়ে সেই অমিতপ্রতিভাবান বাবুর্চি কেরোসিন স্টোভে যে বিশ মিনিটের মাঝে একটা কেক বানিয়ে ফেললো- সেইটা দেখে আমরা হতবাক হয়ে সেই মহান সৃষ্টি স্বর্গপিষ্টক খেতে 'প্রায়' ভুলে গেলাম!

আমি ঘড়ি পরি না, তাই ঘুটঘুটে অন্ধকারে কখন যে ঘুম ভাঙলো সেটা বুঝলাম না, কিন্তু মনে তার থেকেও বড় প্রশ্নের উদয় হলো- ঘুমটা ভাঙলো কেন? আমার ইনসমনিয়াটাইপের একটা সমস্যা থাকলেও একবার ঘুমিয়ে পড়লে আমাকে জাগাতে পারে এমন শক্তি আমার মাতৃদেবী ছাড়া আর কারো নেই। অন্ধকারের মাঝে কতক্ষণ চেয়ে থাকলাম। আর একটু পরেই কারণটা ধরতে পারলাম, আমার অল্প শ্বাসকষ্ট হচ্ছে! বলতে দ্বিধা নেই- একটু ভয়ই পেয়ে গেলাম। একটা সময় আমার অ্যাটপিক অ্যাজমা ছিলো।শ্বাস নিতে না পারার আতঙ্ক আমার খুব ভালোমতোই চেনা।

অ্যাল্টিচিউড সিকনেস, বা উচ্চতাজনিত অসুস্থতা সাধারণত হয় পঁচিশ'শ মিটার বা আট হাজার ফিট ওপরের জায়গাগুলোতে, এর অন্যতম কারন কেউ যদি হঠাৎ করে একটা উঁচু জায়গা, যেইখানে বাতাসের চাপ অনেক কম সেখানে চলে আসে। কিন্তু সবার সবসময় এটা যে হবে তা কিন্তু না। এমনকি গঙ্গোত্রীতেও এটার কথা খুব একটা শোনা যায় না। লোকজন সাধারণতঃ ট্রেকিং করেই আগেকার দিনে এইসব অঞ্চলে আসতো- ফলে অ্যাক্লাইমেটাইজেশন, মানে উচ্চতার সাথে শরীরকে সইয়ে নেবার যথেষ্ট সুযোগ থাকতো। কিন্তু আজকাল গাড়ির রাস্তা হওয়াতে এমনও হয়েছে যে লোকজন হরিদ্বার বা হৃষিকেশ থেকে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তিনহাজার মিটার ওপরে গঙ্গোত্রীতে চলে আসে- অনেকটা যেমন আমি এসেছি। তাই অনেকের খুব মৃদু কিছু সমস্যা দেখা দেয়। আমারো মনে হয় এইরকমই কিছু একটা হয়েছে।

তীব্র শীতের কারণে জানালা সব বন্ধ। তাই একটু তাজা বাতাসের আশায় একটা খুলে বাইরে উঁকি দিলাম- আর যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও তৈরি ছিলাম না।

সবকিছু একটা অপার্থিব নীলচে আলোয় ঢাকা- কিসের আলো কে জানে- তবে জ্যোৎস্না না এটা আমি মোটামুটি । আমি সবকিছুই একদম পষ্ট দেখতে পাচ্ছি- ঘন পাইনের বন, পেছনে একটা ঝর্না, বাজারের একটা অংশ, মন্দিরের চূড়া, দুরের পর্বতচূড়া আর নদীর অনেকখানিই, কিন্তু সব নীল। মনে হয় একটা নীল রঙের ফিল্টারের ভেতর দিয়ে সবকিছু দেখছি। ঘটনা কি একটু সরেজমিনে দেখার জন্যে তাড়াতাড়ি জুতো পরে মাথায় টুপিটা চাপিয়ে বাইরে এলাম। সাথে সাথে প্রচন্ড ঠান্ডা একটা বড়সড় ধাক্কামতন দিলো। চৌবাচ্চার পানির ওপর পাতলা একটা বরফের আস্তর পড়েছে। তারপরেও টলতে টলতে ধর্মশালার উঠোনে গিয়ে দাঁড়ালাম- যার শেষ হয়েছে একটা ঢালে।

আলোটা তারার আলো। আমি জানতাম না নক্ষত্রের আলো এত তীব্র হতে পারে। আকাশ ভরা সহস্র কোটি তারা। বিশ্বচরাচর যেনো মিটমিটে আলো দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে। আকাশের একপাশ থেকে আরেকপাশ থেকে একটা তারার সরণি বিছিয়ে আছে। আগে কখনো না দেখলেও ঠিকই ধরে ফেললাম এটাই ছায়াপথ, যাকে বৈদিক বুড়োরা বলেছেন আকাশগঙ্গা। আমি জ্যোতির্বিজ্ঞানের কিচ্ছু জানি না, কোনটা ধ্রুবতারা কোনটা লুব্ধক কিচ্ছু চিনি না। আকাশে জিনিসপত্রের মাঝে খালি চাঁদটাকেই চিনি। নিজের অজ্ঞতার জন্য মন খারাপ হলো- খুব অল্প সময়ের জন্যে, তারপরেই মনে হলো কি প্রয়োজন এতো জ্ঞানের? কি দরকার এসবের?

রেলিজিয়াস্ এক্সপেরিয়েন্সের কথা লোকজন প্রায়ই বলে, কিন্তু সেইটা কি জিনিস আমি জানি না। তারপরেও পুরোনো ঢাকার ভ্যাপসা এঁদো গলির আবর্জনা বা ধানমণ্ডির অনেকটা অশালীনরকমের ট্রাফিক জ্যামের থেকে হাজার মাইল দূরে এই ধর্মশালার উঠোনে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয় সেইরকমেরই কিছু একটা হলো।

ব্যক্তিগতজীবনে আমি খুবই প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষ। আমি সহজে কিছু ভুলে যাই না, তা সে ছোটবেলার অন্যায়ভাবে পাওয়া কোন শাস্তিই হোক, বা এই বুড়োবয়সেরই অন্য কোন অপমান। সবসময়ই ভাবি একদিন আমারও দিন আসবে। সব্বাইকে গুনে গুনে সবকিছু আমি ফিরিয়ে দেবো। কিন্তু তারপরেও আমি এই নক্ষত্রের আলোতে স্নান করতে করতে প্রতিহিংসার লিস্টে থাকা সবাইকে ক্ষমা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ক্লাশ ওয়ানের সেই শিক্ষিকাকে- যে বাঁ হাতে লিখতাম বলে আমার হাত মুচড়ে দিয়েছিলো, আমার ছোটবেলার সব দাঁতের ডাক্তারদেরকে- যাদের আমি এখনো অপছন্দ করি, কলেজের প্রিন্সিপালকে- যে জুতোয় পলিশ ছিলো না বলে রোদে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো, ইউনিভার্সিটির সেই ভদ্রলোককে- যে বলেছিলো আমার একটা তুচ্ছ পরিচয়ের কারণে আমি তাদের ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারবো না, মেডিকেল কলেজের সেই শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের- যারা বলেছিলো আমি যদি কখনো পাশ করি তাহলে নাকি পুরো মেডিক্যাল কলেজ ধ্বসে পড়বে।

তাদের সব্বাইকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। কারণ আজকে রাতে- এই তারার উঠোনে- এই অনন্ত ছায়াপথের নীচে- আমি ঈশ্বরের খুব কাছাকাছি।

অ্যান্ড আই কাইন্ড অফ ফিল লাইক গড।

তারপরে অন্ধকার ছায়াঢাকা পথের দিকে হাঁটা শুরু করলাম।


মন্তব্য

কেমন সুর [অতিথি] এর ছবি

খুব ভালো লাগলো।

আর শেষে এসে মনটা খুব ভালো হয়ে গেলো

"লাইক"

ওডিন এর ছবি

"লাইক" এর জন্য অনেক ধন্যবাদ! হাসি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

সবজান্তা এর ছবি

গুরু গুরু

যা বর্ণনা দিলেন, আর কিছু বলারই দরকার নাই। নিরবে পাঁচতারা দিয়া কাইটা পড়ি।

বাকি কথা হিমালয়ে, কোন এক তারা ভরা রাতে চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

ওডিন এর ছবি

বাকি কথা এই মাসের শেষের দিকে কেভেন্টার্সের ছাদে বা অবজারভেটরি হিলের পাশের রাস্তাটাতেও হইতে পারতো কিন্তু। ধিক তোমাদের এই ভুদাই কামলাখাটা জনম। মন খারাপ (আমাদের কইলাম না কারণ আমি এখন পুনঃবেকারভবঃ)

আচ্ছা বাড়ির আশেপাশের প্ল্যান যদি করি?

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

মুস্তাফিজ এর ছবি

অসম্ভব বললে কম বলা হবে। আপনার এই লেখা গুলো সবসময়ই আগ্রহ নিয়ে পড়ি।
গত রাতে জিম করবেট পড়ছিলাম, আর আজ এই লেখা।

আবারো স্মরণ করিয়ে দেই পরেরবার এদিকে বেড়াতে গেলে আগে ভাগে জানাবেন, পিছু নিবো।

...........................
Every Picture Tells a Story

ওডিন এর ছবি

অবশ্যই! আপনি লিড নিবেন তখন- পেছনে আমি থাকবো!

আমিও দিনকয়েক আগে জিম করবেটের ম্যানঈটার্স অফ কুমায়ূন পড়তেছিলাম- একটা পিডিএফ পেয়ে গেলাম। পরের পর্বে রুদ্রপ্রয়াগের কথা লিখবো আশা করি।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

মুস্তাফিজ এর ছবি

রুদ্রপ্রয়াগের উপর লেখাটার অপেক্ষায় রইলাম।

(করবেটের রুদ্রপ্রয়াগের চিতা অবশ্যই পড়ে রাখবেন)

...........................
Every Picture Tells a Story

রাহিন হায়দার এর ছবি

আশ্চর্য! আগের পর্বগুলা মিস হইসিল কেমনে?
সবগুলা একটানে পড়ে ফেল্লাম! দারুণ একটা সিরিজ!!
এই পর্বের শেষের বর্ণনাটা পড়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম, বলাই বাহুল্য।
________________________________
মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো...

ওডিন এর ছবি

কস্কি মমিন! আগের পর্ব মিস কর্ছেন! পুরা ব্লাসফেমি!

এই অমার্জনীয় অপরাধের কারণে আপনাকে আমার খোমাবন্ধুতালিকা হতে বাদ দেয়া হলো।

YOU ARE REMOVED ©জব্দফা মুশতার

দেঁতো হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

তিথীডোর এর ছবি

ব্যক্তিগতজীবনে আমিও খুবই হিংসাপরায়ণ মানুষ।
আপনি অসাধারণ লেখেন, সেটা জানিয়ে দিতে আমার একটুও ভাল্লাগে না....

====================================
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
=====================================

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ওডিন এর ছবি

এই হিংসাহিংসির কারণেই জীবনটা এখনো ধুকপুক করছে। প্রতিহিংসার অদম্য নেশাই আমাদের চালিকাশক্তি।

তবে এক্ষেত্রে আপনার হিংসাটা একটু অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে মনে হয়। চিন্তিত
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ওরে পাগলা, অনেকদিন পরে লেখা দিলা মিয়া, আগের সব ভুলে গেছিলাম, একদিক দিয়ে ভালোই হইল, চামে চিকনে পুরানো লেখা গুলান ঝালাই করে নিলাম, তারপরে শুধু ছবি দেখেই তারা দিয়ে এই কমেন্ট ঝুলাইলাম, বাকিটা পড়ে নিয়ে আবার লিখব।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আহা! এমন বর্ননা পড়ে কিছুক্ষন কিছু মনে করতে পারলাম না, সব নীলচে ধোঁয়াটে লাগল, অসাধারণ, দুর্দান্ত শব্দগুলো এই পোস্টের জন্যে যথেষ্ট নয়। আর মনে হয় না, যে অসাধ্য তুমি সাধন করেছ তা আমি কোনদিন করতে পারব, উল্টা ভাবতেছি, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের মহানুভবতার কথা ফলাও করে কোথাও লিখে রাখব। সবার জানা উচিৎ উনারা কতটা মহান ছিলেন চোখ টিপি

লেখাটা গুরু গুরু গুরু গুরু, কারণ ব্লগারও গুরু গুরু গুরু গুরু, প্রিয়তে ঝুলাইলাম

অফ টপিক: তোমার এই সিরিজের জন্যে একটা ডি-এসএলআর আর একটা ফিশ-আই লেন্স আবশ্যক ছিল, ছবিগুলা খুবি সুন্দর এসেছে, কিন্তু এখানে আবার যাবার সুযোগ করে উঠতে পারবা কিনা জানি না (আসলে হিংসাইতেছি কিনা!), তাই ফিশ-আইতে তোমার ছবিগুলা চিন্তা করে আবার বালতি খানেক লুল ফালাইলাম।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

ওডিন এর ছবি

হুহুহু ...এটা তো কিছুই না সাইব্বাই, আপনে জানেন না আমি কতটা প্রতিভাধর! নিক কেভের গলাবাজি আমার পচা সাউন্ডকার্ড আর উফার দিয়া শুনতে শুনতে ঘন্টা তিনেকে এইটা লেখা- তাইলে বুঝেন একটা ভালো এক্সফাই ফ্যাটালিটি সাউন্ড কার্ড আর বোশের সাউন্ডসিস্টেম থাকলে আমি কি করে ফেলতে পারি! চাল্লু

আর দেরি হইলো কারণ একটু নিউমোনিয়া বাঁধায়া বসছিলাম (পিচ্চিদের অসুখ বইলা হাইসেন না কিন্তু)- একেবারে 'বুকের মাঝে'! চার হপ্তা পরে ডায়াগনোসিস হইলো। বামদিকে মাঝারি সাইজের কনসোলিডেশান!!!! এখন কইতেছে চেস্ট সিটি করতে। বুঝতে পারতেছি না করুম কি না।

তবে ক্যামেরার ব্যপারে আপনার সাথে একমত। কখনো আবার যেতে পারবো কি না জানি না, তবে ইচ্ছা আছে ২০১২ এর সামারে একবার, আরো আগেও হইতে পারে। আর তখন আশা করি সাথে ভালো ক্যামেরা থাকবে, আর না থাকলেও ওস্তাদ ক্যামেরাবাজ থাকবে। আলোকবাবা গুরু মুস্তাফিজভাইয়ের মন্তব্য দ্রষ্টব্য! দেঁতো হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

...অসমাপ্ত [অতিথি] এর ছবি

হু... জায়গাটা আসলেই এত সুন্দর নাকি ক্যামেরার সমস্যা? এত সুন্দর ক্যান!!!

আপনার পুরো সিরিজটা নিয়ে একটা বই অবশ্যই আসা উচিত। অসাধারণ!

ওডিন এর ছবি

ক্যামেরার সমস্যা- কারণ জায়গাটা আরও বেশি সুন্দর! অনেক অনেক বেশি! হাসি

পচা ক্যামেরা আর নির্বোধ ক্যামেরাবাজ কিছুই ধরতে পারে নাই।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

তানভীর এর ছবি

চলুক

একটা দারুণ পোস্ট পড়ে আজকের দিনটা শুরু হলো। যদিও একটু পর পাক্কুদের সাথে খেলা আছে-খেলা দেখতে দেখতে আমারো হয়তো ওই তারার উঠোন, অনন্ত ছায়াপথের কথা ভাবতে হবে চিন্তিত

ওডিন এর ছবি

খেলার অবস্থা সুবিধার না- তাই এখানে আসলাম। বাংলাদেশের ভাবগতিক সুবিধার ঠেকেতেছে না। দেখি ব্যাটিং কেমন করে।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ তানভীর ভাই। হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

বোহেমিয়ান এর ছবি

ব্যাপক!! লেখা , ছবি এবং লেখা!! সব ই ।

আমি ভাবতেছিলাম আপনাকে এই সিরিজ নিয়ে নক করব কীনা, যাক দিলেন অবশেষে!

_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

ওডিন এর ছবি

হুম নানান ঝামেলায় দেরি হয়ে গেলো ভাই।
আপনাকেও ব্যপক ধন্যবাদ- পড়ার এবং অপেক্ষার জন্য! হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

তুলিরেখা এর ছবি

পাগল করে দেবেন নাকি মহাশয়? এরকম করে বলতে হয়, এরকম করে লিখতে হয়?
ঐ বহির্ষদ পিতৃলোকের কথা দেবযান পথের কথা ঐ জ্যোতির্লোকের গল্প এভাবে বলতে হয়? এখন কী করি? বসে থাকতে পারছি না, দৌড়াতে পারছি না, হাঁটতে পারছি না, কেবল পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। আমার এক পর্বতারোহী আত্মীয় নন্দাদেবী অভিযানে গেছিলেন তরুণ বয়সে, তাদের রাতজাগা তুষারমানব দেখার আশায়, ছোটোবেলা সেইসব গল্প শুনে কেবলই বাড়ী থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হতো। বারাক ওবামার স্মৃতিকথায় পড়ছিলাম ভদ্রলোক আফ্রিকা গিয়ে নাইরোবি থেকে বোনকে সাথে নিয়ে সাফারি গেলেন, সেই রাতে প্রান্তরে সেই তাঁবু, বেরিয়ে এসে দেখা সেই নক্ষত্রময় রাত, সেই ছায়াপথ, শহরে শহরে বড় হওয়া তরুণের সেই স্তব্ধ করে দেওয়া অনুভূতি! আপনার লেখা পড়ে কী আর বলবো, কিছুই বলতে পারছি না।

অনেক তারা দিলাম, অনেক অনেক তারা।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ওডিন এর ছবি

ফেরার পরে সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করে হিমালয়ে কি দেখলিরে? নদী, বন, পাহাড়, মন্দির, মানুষ?

আমি বলি- ইয়ে মানে এইতো... তারা। এক রাতে দেখলাম। অনেক তারা। আগে কোনদিন দেখি নাই।

লোকজন অবাক হয়ে তাকায়, ভাবে মাথাটা গেছে। পিছলেটিছলে পড়ে গেছিলো হয়তো।

হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

ফাহিম এর ছবি

হ্যাটস অফ! অনবদ্য লেখার হাত আপনার।

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

ওডিন এর ছবি

তা হয়তো হবে, কিন্তু আপনার দেখার চোখ কিন্তু চরম ঈর্ষাজাগানিয়া!

হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অসাধারণ

------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ওডিন এর ছবি

থ্যাঙ্কস হাসি অনুপ্রেরণা!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

সুরঞ্জনা এর ছবি

কী সুন্দর! কী সুন্দর!!
..............................................................
জগতে সকলই মিথ্যা, সব মায়াময়,
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয় ।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

ওডিন এর ছবি

কোনটা? পিজা? হ্যা পিজাটার স্বাদ ছিলো একেবারে রবীন্দ্রসঙ্গীতের কাছাকাছি। খালি টমেটো আর শস্তা চিজ থাকলেও... ওই জায়গায় সেটাই বা কম কি? হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বর্গের কাছাকাছি গিয়ে আপনার বর্ণ্নাও স্বর্গীয় হয়ে গিয়েছে। অসাধারণ লাগল! এই সিরিজের অন্য লেখাগুলো পড়া হয় নি। সময় করে পড়ে নিতে হবে।

ভার্চুয়াল তারা দেবার ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু থাকলেও সেই তারা এনাফ হত না। সেইরাতের ছায়াপথের সব তারাই আপনার জন্য আলো দিচ্ছিল। না হলে আপনার ভালো লাগাটাকে এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুললেন কীভাবে! একেই কি বলে স্বর্গীয় অনুভূতি?

আমার অভিমানগুলোকে জমিয়ে রাখলাম। যদি কখনও এরকম জায়গায় যেতে পারি, এরকম অবাক বিস্ময়ে কোন দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা যদি হয়, তখন না হয় সবাইকে এক এক করে ক্ষমা করে দিব!

-লাবণ্য-
ফাহ_বেগম@ইয়াহু

ওডিন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পড়া আর মন্তব্য করার জন্য। আমি অবশ্য মনে করিনা যে খুব সুন্দর করে বর্ণনা করতে পেরেছি। ভাষা খুঁজে পাই না- প্রচন্ড অসহায় লাগে নিজেকে।

আমি অবশ্য খুব যে ক্ষমাশীল মানুষ তা না। সেইদিন অক্সিজেনের স্বল্পতায় মোস্ট প্রবাবলি আমার মগজে শর্টসার্কিট হইছিলো। তাই ক্ষণিকের দুর্বলতায় সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। এই ভুল ভবিষ্যতে আর হবে না। চিন্তিত
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নিভৃত সহচর [অতিথি] এর ছবি

খুবই সুন্দর জায়গা! ছবিগুলোও সুন্দর। কোনদিন সুযোগ পেলে ঘুরে আসতে হবে।
আচ্ছা ওডিন, আপনি কি pompuspb?

ওডিন এর ছবি

না, তবে মনে হয় আমি তাকে চিনি। আঁকাআকি করে তো? চিন্তিত কেনো?

আর অবশ্যই ঘুরে আসবেন। যেখানে পারেন, যেভাবে পারেন। কি আছে জীবনে বলেন!

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নিভৃত সহচর [অতিথি] এর ছবি

হ্যাঁ আঁকাআঁকি করে। হিমালয়েও গিয়েছিল। আপনার Avatar-টা দেখে মনে হয়েছিল হয়তো আপনারা একই মানুষ। ভাবলাম ঢিল মেরে দেখি, লাগলেও লাগতে পারে। তবে এই নিক দেখে ওকে যদি চিনে থাকেন তাহলে তো আপনাকে নিয়ে আবার ফাপঁড়ে পড়লাম।

ওডিন এর ছবি

চিনি আর সে আমার সাথে হিমাচলে গেছিলো '০৮ এর ডিসেম্বরে।

আর আমাদের অ্যাভাটার এক না- আলাদা, কিন্তু একই শিল্পীর আঁকা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নিভৃত সহচর [অতিথি] এর ছবি

আমারই দোষ। ভুল ভাইকে মনে করেছিলাম। Cryptic Fate এর সহপাঙ্খাকে চিনি নাই এই লজ্জা কই রাখি।

ওডিন এর ছবি

ধাতব দানবদের অনুসারী হে সহযোদ্ধা! দয়া করে একটা মেইল করেন আমারে।

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নিভৃত সহচর [অতিথি] এর ছবি

মেইল করার তো কোনো উপায় দেখিনা। আর যেখান থেকে মেইল করতে পারবো (আমাদেরগান) সেখানে আপনি আর পদধূলি দেন না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নর্সদেব, এই লেখা নিয়ে মন্তব্য করা নিষ্প্রয়োজন। বইয়ের দাবি আগেই জানিয়েছিলাম, আবারও জানালাম।

দেখার সুযোগ পান অনেকেই, কিন্তু দেখতে পান কমজনই। আবার যারা দেখতে পান তাদের মধ্যে কমজনই বলতে পারেন বা লিখতে পারেন। যারা বলতে বা লিখতে পারেন তাদেরও খুব কমজনই তাদের বর্ণনায় বিষয়টিকে জীবন্ত করে তুলতে পারেন বা শ্রোতা-পাঠককে স্পর্শ করতে পারেন। নর্সদেব এই এতগুলো শ্রেণীর মানুষের মধ্যে কোন গোত্রে পড়েন সেটা আমরা জানি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ওডিন এর ছবি

আমি দ্বিতীয় গোত্রে।

ওপরে একটা গানের আসরের কথা লিখেছি না? অনেক চেষ্টা করেও ঠিকমতো বর্ণনা করতে পারলাম না, অথচ শীতের গভীর রাতে শ্মশানের ধারে এইরকম অপার্থিব একটা 'কনসার্ট' কে কবে দেখেছে?

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

১। বইয়ের দাবি জোরালো কর্লাম...
২। ওডিন ১৮- সুহান ০...
৩। গুরু গুরু

_________________________________________

সেরিওজা

ওডিন এর ছবি

১। জানিনারে ভাই। বই অনেক বিশাল ব্যপার।
২। সতেরো গোল খাওয়ার কথা বলে দেখি মহাবিপদে পড়লাম! ইয়ে, মানে...
৩। উঁহু এইসব না, হ্যান্ডশেকই ঠিকাছে। হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনি খুব যত্ন করে পোস্ট দেন, সেজন্য ভালো লাগে। এতে বড় লেখা হলেও পড়তে ভালো লাগে।

ওডিন এর ছবি

ইয়ে মানে যত্নের ব্যপারটা থাকুক না হয় লইজ্জা লাগে তবে কথাটা অবশ্যই মনে থাকবে।

আর ভালো লেগেছে যেনে খুব ভালো লাগলো ভাই! হাসি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

রানা মেহের এর ছবি

ওডিন
আপনি আমাকে একটা তারা ভরা আকাশের কাছে নিয়ে গেলেন
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ওডিন এর ছবি

অশেষ কৃতজ্ঞতা! আর ধন্যবাদ ।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ! শুধু অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। আপনার ছবি গুলো দেখে আর বর্ণনা শক্তিতে আমি মুগ্ধ। বারবারেই মনে হচ্ছে সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে হিমালয়ে চলে যাই। কি আছে আর এই জীবনে!

===অনন্ত ===

ওডিন এর ছবি

আমার বর্ণনা করার শক্তি নিয়ে আমার বিশাল সন্দেহ আছে, তাই একমত হতে পারলাম না।

তবে জীবন নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনার সাথে আমি ভীষনভাবে একমত! দেঁতো হাসি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটবেলায় এক বছর অন্তরই গরমের ছুটিতে হিমালয় যাওয়া হত। গঙ্গোত্রী যাইনি কখনও, তবে তারার নদী দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল যোশিমঠে। আপনার চমৎকার লেখা আর ছবি দেখে সেসব মনে পড়ে গেল। দেখি আবার কবে সুযোগ হয়...

কৌস্তুভ

ওডিন এর ছবি

সুযোগ করে ফেলেন বস! আমি পয়সার অভাবে আপাতত আটকা পড়ে আছি, নাহলে কবেই আবার ছুট দিতাম। দেঁতো হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

দময়ন্তী এর ছবি

চলুক চলুক চলুক
আপনার লেখাটা পড়ে এমন ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়লাম যে নিজেও গাঁ গাঁ করে একটা ব্লগ নামিয়ে দিলাম৷ হুম্!
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ওডিন এর ছবি

এইরকম ঈর্ষার মাঝেমধ্যে খুব দরকার, আপনার লেখা পড়ে এইটা খুব ভালোমতোই বুঝলাম!

আপনাকে আবার ঈর্ষান্বিত করতে আমি সদাসচেষ্ট থাকবো- যদি এইরকম ভ্রমণকাহিনী আবার পাওয়া যায়- এই আশায়।>হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ধুর ব্যাটা ফাজিল! এই এতোদিন পরে পুস্ট দিলে কি আমার মতো গোল্ডফিশ মেমরির মাইনষের সব কথা মনে থাকে? আবার পড়াইলেন পুরান পুস্টগুলাও...এই আপ্নের ফিকির, নাহ? বদ লুক কোথাকার! জেবনে যাওয়া হবে কিনা জানিনা এইসব জায়গায় তাই বলে কী এইসব ছাঁইপাশ লিখে এখন হাহুতাশ করতে বসাইতে হবে আমারে?... আপ্নে মিয়া লুক্ষ্রাপ! :| রেগে টং

-----------------------------------------------------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে চলে আসি, বলি আমি এই হৃদয়েরে; সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

ওডিন এর ছবি

গোল্ডফিশের কথায় মনে পড়লো- আমারটার নাম ছিলো জেথরো, বেশি পেটুক ছিলো ব্যাটা। একদিন আমার শয়তান কাজিনটা এসে ওকে ইচ্ছেমতো খাওয়ালো- তারপর...

জেথরো! তোরে খুব মিস করি রে। ওঁয়া ওঁয়া

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

আমার একগাদা মাছ! তাই নাম দেয়া হয়নি কখনও! দুটো কচ্ছপ ছিলো বিদেশী! ঐদুইটা মইরা যাওনের পর নামকরণ ছাইড়া দিসি! মন খারাপ(

-----------------------------------------------------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে চলে আসি, বলি আমি এই হৃদয়েরে; সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

হিংসে করি আপনাকে । এমন সুন্দর দেখার চোখের জন্য, এমন ভাল লেখার হাতের জন্য ।
.......................................
তোমারই ইচ্ছা কর হে পূর্ণ ....

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ওডিন এর ছবি

হিংসা করার জন্যেও ধন্যবাদ আপনাকে, তবে যা দেখি- সেইসব যদি আরো ভালো করে লিখতে পারতা্ম- তাহলে হয়তো এত হিংসার জন্যে মনখারাপ হতো। হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

তাসনীম এর ছবি

অসাধারণ ওডিন, প্রিয়তে রাখলাম।

++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ওডিন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তাসনীম ভাই। আপনার প্রশংসা আমার কাছে অনেককিছু! হাসি

আপনার লেখাটায় কোন মন্তব্য করতে পারি নাই। কেন? - মনে হয় বলতে হবে না।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

শরতশিশির এর ছবি

সব্বাই এত্তো প্রশংসা করে ফেললো, তাই ''আমার বলার কিছু ছিলো না, না গো''! হে, হে! দেঁতো হাসি

তবে যদি আমার সংগে বেড়াতে না গেসো তো আমার একদিন কি তোমার একদিনও আস্ত থাকবে না। হু! চোখ টিপি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

ওডিন এর ছবি

হেহ! বেড়ানোর ভয় দেখাইতেছেন - আমারে? দেঁতো হাসি

আর ব্যকগ্রাউন্ড স্কোরের জন্য আবারো থ্যাঙ্কস!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

মামুন হক এর ছবি

আগেও বলছি, এইবারেও বলি আপনি আমার প্রিয় ভ্রমণ কাহিনী লেখক। খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করি, অদ্ভুত একটা আনন্দ নিয়ে শেষ করি আপনার লেখা--প্রতিটিই।

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ মামুন ভাই!
তবে আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতার ঝুলিটা একটু উপুড় করেন না বস! কন্যাদের অজুহাত দিয়েন না, পিচ্চিরা আরেকটু বড় হইলে তো আরো সময় পাইবেন না, দেখবেন কিবোর্ডের ওপর উইঠা বইসা আছে।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

অমিত এর ছবি

ঠিক্না ঠিক্না। এত বেড়ানো ঠিক্না।
লেখা নিয়ে কিছু না বলি আপাতত

ওডিন এর ছবি

আপনি দেখি পুরা আমার নানার মতো করে কথা বলেন-
উনিও ঠিক এইরকম করেই বলেন কি না। দেঁতো হাসি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

এইটা সচলে পড়া সেরা ভ্রমণকাহিনীগুলির একটা চলুক
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

ওডিন এর ছবি
বর্ষা এর ছবি

চলুক

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

ওডিন এর ছবি

হাসি
তবে পরেরটা কি লিখতে হবে ভেবে চিন্তিত
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

যুধিষ্ঠির এর ছবি

প্রথমবার আকাশগঙ্গা দেখি রকেট স্টীমারে বরিশাল যাওয়ার পথে, মাঝরাতে, মাঝনদীতে। আসলেই ওইটা একটা অপার্থিব অভিজ্ঞতা।

একটা প্রশ্ন, গঙ্গার উৎস তো জানি গঙ্গোত্রী হিমবাহ। ওইটা আর গোমুখ কি একই জিনিসের দুই নাম?

লেখা ভালো হইসে, বা আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আর বর্ণনা অসাধারন এইসব আর বললাম না। তবে দেড় মিলি রক্ত বের করে আর পেন্টাগ্রাম এঁকে ক্যামনে জানি অভিশাপ দেয়, ওই পদ্ধতিটা একটু শিখায়ে দিয়েন তো! একটু দরকার আছে।

দময়ন্তী এর ছবি

না না গঙ্গোত্রী আর গোমুখ আলাদা৷ গোমুখ আরও একটু ওপাশে, যেতে হলে গঙ্গোত্রী টাউন থেকে আরও ১১-১২ মাইল হাঁটতে হয়৷ আসলে গঙ্গোত্রী হিমবাহের টার্মিনাস অনেকটা গরুর মুখের আকৃতি বলে এটাকে "গোমুখ বলে৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ওডিন এর ছবি

সেটাই- গঙ্গোত্রী হিমবাহের শেষ অংশটাকেই গোমুখ বলে- গঙ্গোত্রী শহর থেকে প্রায় বিশ কিমি দূরে।

আমি বরিশালে ছিলাম প্রায় পাঁচ বছর, তখন দেখেছি জোছনা রাতে স্টীমারে যাওয়ার জন্য লোকজন একেবারে টিকেট নিয়ে কাড়াকাড়ি করতো। আমি অবশ্য আনফরচুনেটলি রকেটে যে দুইবার চড়েছি, দুইবারই দিনের বেলা।

আর কষ্ট করে ব্ল্যাক ম্যাজিকের কি দরকার? কারে কি করতে হবে বলেন। বয়স হইছে তাই আমি নিজে আজকাল এইসব হাতপামাথা চালানোর কাজ না করলেও আই নো সাম পিপল, হু নো সাম আদার পিপ্‌ল, হু নো সাম গাইজ ... দেঁতো হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

হিমু এর ছবি

গরম পরোটা আর ভুনা গরুর গোস্তের মতো হইসে লেখাটা।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

ওডিন এর ছবি

আচ্ছাহ! দেঁতো হাসি
তাহলে আপনাকেও পুরোনো ঢাকায় দিনভর খাওয়াদাওয়ার নেমন্তন্ন! দেখা যাবে কে কতো খাইতে পারে। আনটিল ওয়ান অফ আস বাইটস দ্য ডাস্ট! দেঁতো হাসি
_________________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

শরতশিশির এর ছবি

নাহ্‌, লেনার্ড কোয়েন এই লেখার যোগ্য রেফারেন্স না। যোগ্য রেফারেন্স ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর হিসেবে হলো এই গানগুলোঃ

+ স্বর্গের পথে মর্ত্যে যাত্রা শুরু

+ যাত্রাপথে - ''ভয়ংকর আর সুন্দর''

+ যখন স্বর্গের কাছাকাছি আর 'মহামতি' মনে হচ্ছিলো নিজেকে

ঠিক আছে না? একমাত্র সাত্রিয়ানিই পারে তোমার হয়ে আমাদের মূহুর্তগুলো বুঝিয়ে দিতে!

খুব ভাল হয়েছে লেখা। 'প্রিয় পোস্ট'-এ চলে গেলো - নট এভরি রাইট-আপ গো'জ দেয়ার, বাই দ্য ওয়ে! হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

ওডিন এর ছবি

এক্কেবারে ঠিক আছে! দেঁতো হাসি

আর আসলেই এগুল ব্যকগ্রাউন্ড স্কোর হিসেবে ছিলো। আমি যেহেতু গান ছাড়া এক সেকেন্ডও চলতে পারি না তাই একটা এম্পিথ্রি প্লেয়ার নিয়ে গেছিলাম, সেইটাতে ভরা ছিলো শুধুই গিটার- সাত্রিয়ানি, এরিক জনসন, স্টিভ ভাই, ভিনি মুর, মাল্মস্টেইন, জেফ বেক আর স্টিভ মোরস দিয়ে!

আর প্রিয় পোস্টের লিস্টিতে আটকানোর জন্য কৃতজ্ঞতা- এবং পুরোনো ঢাকায় দিনভর খাওয়াদাওয়ার নেমন্তন্ন!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নাশতারান এর ছবি

আমি এইসব পড়ি না! Smiley

আমি এইসব দেখি না! Smiley

সূর্যকুন্ড প্রপাত থেকে ঝাঁপ দিয়ে মরে যেতে ইচ্ছা করল।
.
.
.
|| শব্দালাপ ||

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

দ্রোহী এর ছবি

যাক! এ পর্যন্ত যদ্দূর লিখেছেন পড়ে শেষ করলাম। পঞ্চম পর্ব দিয়ে শুরু করে প্রথম পর্ব থেকে চতুর্থ পর্ব অব্দি পড়লাম। মাঝে তৃতীয় পর্ব দুবার পড়া হয়ে গেছে। হাসি

আপনার লেখার হাত মুগ্ধতাজাগানিয়া। হাসি


কি মাঝি, ডরাইলা?

আসিফ [অতিথি] এর ছবি

ভেবেছিলাম পাঁচ পর্ব শেষ করে একটি মন্তব্য করবো। তারা দেখার যে বিবরণ দিলেন তার পরে নিজেকে ধরে রাখা সম্ভব হলো না।

খুব ভালো লাগছে বর্ণনা।

ধন্যবাদ ওডিন। ভালো থাকবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।