পরিক্রমাঃ দ্য ট্রাভেলগ [পঞ্চম পর্ব]

ওডিন এর ছবি
লিখেছেন ওডিন (তারিখ: বুধ, ০১/০৯/২০১০ - ১:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডিসক্লেইমারঃ লেখাগুলোর নাম বদলে দিলাম। দেখা গেলো রবিকবিকে নিয়ে মৈত্রেয়ী দেবীর লেখা এর কাছাকাছি নামের একটা বই আছে। রবির সাথে আগেও আমার ঝামেলার ইতিহাস আছে, পরে আবার এইটা নিয়ে সে হেজেমনি করতে পারে। আর ব্লগের লম্বা নামটাও আর ভালো লাগছিল না।

Babe, I'm a thousand miles away
And I just don't know what to say
Cause Jesus only loves a man who bruises

But darling, we can clearly see
It's all life and fire and lunacy
And excuses and excuses and excuses

-Nick Cave

দ্য ট্রেসপাসার অ্যান্ড দ্য এক্সরসিস্ট

নদীর পাশে অনেকক্ষন বসে থেকে মোটামুটি অপার্থিবরকমের একটা সূর্যোদয় দেখে আর ছোটখাটো একটা মর্ণিংহাইক শেষ করে যখন ফিরে এলাম তখন দেখি ধর্মশালায় একটা চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। উঠোনে ঢুকতেই বুড়ো কেয়ারটেকারের সামনে পড়লাম, সে আমাকে ধমকানো শুরু করলো। তবে আমি তার দেহাতি ভাষার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝলাম না- তাই অরণ্যে রোদনের মতই একটা ব্যপার হলো আরকি। পরে কেয়ারটেকারের পিচ্চি সহকারিটাও আমার ওপর চোটপাট করার চেষ্টা করলো। ওর কথায় যা বুঝলাম, আমার রাতের বেলা একা একা ঘুরতে বের হওয়াটা নাকি মোটেই বুদ্ধিমানের মতো কাজ হয় নাই, এইসব পাহাড়ে নাকি 'ভালু' আছে। আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম এইসব নির্বোধ 'ভালু'টালু আমার ভালুমন্দ কিছুই করতে পারবে না, কারণ আমি ফুড চেইনের অনেক ওপরে।

তবে পিচ্চি এইসব বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে মোহিত না হয়ে যা বললো তা হলো ভালুকেরা সাধারনত মানুষের এতো কাছাকাছি না আসলেও এরা নাকি খুব টেরিটোরিয়াল- সবারই নাকি একটা নির্দিষ্ট এলাকা আছে, এক এলাকার ভালুক অন্যের জায়গায় অনুপ্রবেশ করলে নাকি একটা বিস্ফোরক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। আর এইখানকার লোকাল ভালুক রাতের আঁধারে গাঢ় বাদামি, ইষৎ লোমশ জ্যাকেট পরা মোটকা আমাকে দেখে নাকি ট্রেসপাসার ভালুক হিসেবে ভুল করতে হামলা করে বসতে পারতো! আমি তো সাতসকালেই পিচ্চির এহেন গুলবাজি শুনে একেবারে হতবাক হয়ে গেলাম। আমি যদ্দুর জেনেছি এই এলাকার আশেপাশে ভাল্লুকের নামগন্ধ থাকার কথা না। ফাজিলটাকে জিজ্ঞেস করলাম ইয়েতির ব্যপারে তার মতামত কি? "মিগু"? 'বাচ্চালোগ'দের যে কচমচ করে খেয়ে ফ্যালে? এইবার পিচ্চিটাই মনে হয় আমার অমানুষিক নির্বুদ্ধিতায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। বললো ওইসব ইয়েতিফিয়েতি কিছু নাই। সব নাকি মাতাল 'সাহেবলোগ'দের বানানো গপ্পো!

ব্রেকফাস্টের টেবিলে আলু পরোটার সাথে টমেটো সস নাই ক্যান দেখে আমি একটু চিল্লাচিল্লি করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমার জন্য আরো খারাপ খবর অপেক্ষা করছিলো। গোমুখের পথের অবস্থার তো উন্নতি হয়ই নাই, আবার দুটো জায়গায় নাকি নতুন করে ধস নেমেছে। অন্ততপক্ষে আগামী দুইদিনের আগে গোমুখের ধারেকাছে যাওয়া যাবে না। এইদিকে আমরা উত্তরকাশীর সেই বাস মিস করার জের এখনো টানছি- আমাদের ট্যাক্সিওয়ালা ঘোষনা দিয়ে বসে আছে সে দুইদিন এইখানে অপেক্ষা করতে পারবে না। কিন্তু এইটা বড় কথা না- এইখানে অপেক্ষা করতে হলে যে বাড়তি ভাড়া আমাদের দিতে হবে সেইটা আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটের অনেকখানি বাইরেই চলে যাচ্ছে। আমি কাঁচুমাচু হয়ে প্রস্তাব দিলাম আমরা নাহয় থাকিই দুইদিন। ইমার্জেন্সি ফান্ড যা আছে সেইটা দিয়ে কিছু একটা করা যাবে। কতো ঝামেলা করে এইদিকে আসা। পরে আবার কখনো এখানে আসি নাকি ঠিক তো নাই। কিন্তু আমার সহযাত্রী রাজি হলেন না। ঘোরাঘুরি এখনো অর্ধেকই বাকি আছে, আর আমাদের ফিরে যাবার কোন প্ল্যান এখনো করা হয় নাই। আর প্রায় রোজ দুপুরেই বৃষ্টি হচ্ছে, আরো ধ্বস হতে পারে। তাই ঠিক করা হলো আজকের দিনটা গঙ্গোত্রীতেই বিশ্রাম নিয়ে- আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে কালকে আবার যাত্রা শুরু হবে। আমার মেজাজ খারাপ থাকলেও যুক্তিগুলো অস্বীকার করতে পারলাম না।

দিনের তীব্র ঝকঝকে রোদে শহরটা, বিশেষ করে দোকানগুলো ভালোমতো ঘুরেটুরে দেখলাম। এক দোকানে দেখি গেরুয়া রঙের খুব চমৎকার একটা ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে- দামাদামি করে সেইটা কিনে ফেললাম। এই গেরুয়া জ্যাকেট পরা থাকলে হাজার হোক কেউ আমাকে ট্রেসপাসিং ভালুক বলে ভুল করবে না, খুব বেশি হলে দ্রাবিড়দেশীয় তীর্থযাত্রী মনে করতে পারে। এবং কাকতাল কিনা জানিনা, অনেকটা তাই ঘটলো। রাস্তার পাশে এক বুড়ো বেশ উন্নতমানের 'ঘাস' আর রংবেরঙের কল্কে নিয়ে বসেছিলো, আমি একটু ঝুঁকে পড়ে সেইটা ভালোমতো দেখতছিলাম, কি ব্যপারস্যপার, বুড়োও বেশ আগ্রহ নিয়ে আমাকে ইন্সটলেশন এবং অ্যাসিমিলেশান প্রসেস দেখাচ্ছিলো- কিভাবে কোনদিকে আগুন দিয়ে কোনদিকে টান দিতে হয় আরকি, হঠাৎ পিঠে একটা চাপড় এসে পড়লো। আমি অবাক হয়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখি ভীষন মোটা কালো পাকানো গুম্ফধারী এক ভদ্রলোক বিগলিত হাসিভরা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তবে আমার চেহারা দেখে আস্তে আস্তে তার হাসি মিলিয়ে যেতে শুরু করলো। প্রথম কথা উনিই বললেন- সম্ভবত তামিল বা ওইরকম কোন ভাষায়- আমার হতচকিত মুখ দেখে ইংরেজিতে শিফট করলেন, আর কথাবার্তায় যা বের হয়ে আসলো তা হলো ভদ্রলোক মাদ্রাজবাসী, আর উনি আমাকে তার এক 'কাজিন-ব্রাদার' মনে করেছিলেন। পরে ঢাকায় ফিরে যখন এই বেড়ানোর গল্প করতাম, তখন দেখি সব ঘটনার মধ্যে সবাই শুধু এইটাকেই একেবারে বিনা সন্দেহে মেনে নিচ্ছে। একমাস ঘাসলতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে থাকা অসম্ভব, তবে আমি মাদ্রাজনিবাসী নাকি হতেই পারি, এইটা নাকি খুবই সম্ভব।

ফিরে এসে ঠিক করলাম কিছু কাপড়চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রচন্ড তীব্র রোদ- উচ্চতার কারণে বাতাসও খুব শুকনো, দুইটা জীনস দেখলাম আধঘন্টায় শুকিয়ে একেবারে শক্ত মচমচে হয়ে গেলো। কিন্তু দুপুরের ঠিক পর থেকেই আবার আকাশ কালো, তারপরে যথারীতি বৃষ্টি। ভাবছিলাম বিকেলটা কিভাবে কাটাবো- সেইসময়েই কেয়ারটেকারের সহকারি সেই গুলবাজ পিচ্চি (এর মধ্যে ওর সাথে খাতির জমিয়ে ফেলেছি, নাম সুরেশ, সে আবার অবসর সময়ে ক্লাশ টু'তে পড়ে) খবর নিয়ে এলো- পাশেই একটা গ্রামে নাকি ভূত তাড়ানো হবে- আমি দেখতে যেতে চাই নাকি। আমি জীবনে কখনো ভূত নামের জিনিসটাই দেখিনি- তার ওপর আবার ভূত তাড়ানো। একেবারে খাঁটি বাংলায় 'আবার জিগায়' বলে জুতো পরে নতুন কেনা গেরুয়া জ্যাকেট চাপিয়ে তৈরি হয়ে নিলাম। পিচ্চি আবার রান্নাঘর থেকে পোটলা বেধে কিছু নুন নিয়ে নিলো। নুনের দরকার জিজ্ঞেস করতে ভাঙ্গা হিন্দি আর ইশারা মিলিয়ে যা বললো তাতে বুঝলাম সেখানে জোঁকের নাকি বেশ উপদ্রব। গুলবাজের কথায় ঠিক বিশ্বাস করতে না পারলেও আমি একটু দমে গেলাম। হিমালয়ের এগারো হাজার ফিট ওপরে জোঁক আছে কি না আমি জানিনা, তবে জোঁক আর আমার মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার একটু অভাব আছে- এইটা আমি বরিশালে পাঁচটা বর্ষা কাটানোর সময়ে খুব ভালমতো জেনেছি। তাই ওকে আর কিছু বললাম না।

ঝিরঝির বৃষ্টি আর মৃদু ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে আমরা দেড়জন হাঁটা শুরু করলাম। আর জোঁকবাবাজিদের কোনরকম ইন্টারফিয়ারেন্স ছাড়াই চমৎকার একটা ট্রেইল ধরে মিনিট বিশেকের মাঝেই শহরের মূল সড়ক থেকে সামান্য দূরে (আর নিচে) সেই গ্রামে পৌঁছে গেলাম। দুইটা ছোট্ট ঝর্ণা, একটা পাথরবেছানো রাস্তা, দুইপাশে গোটাছয়েক টালির ছাতওয়ালা বাড়ি- আর শেষে একটা বেশ বড় লম্বা কাচারিঘর টাইপের বাড়ি নিয়ে গ্রামটা। আর গ্রামের পেছনে সাধুদের তিন চারটে আড্ডা আছে। বড় বাড়িটার সামনের খোলা জায়গাতেই বেশ লোকজনের ভীড়। কাঁসর বাজানোর আওয়াজ কানে আসছে। ভীড়ের মধ্যে গিয়ে দাড়ালাম, তারপরে উকিঝুকি মেরে দেখার চেষ্টা করলাম ব্যপার কি।

শুকনামতো একজনকে একটা খাটিয়াতে শুইয়ে রাখা হয়েছে, আর আরো শুকনামতো খুব সাধারণ পাঞ্জাবি-পাজামা পরা বছর চল্লিশেকের এক ভদ্রলোক হাতে একটা ধুনি নিয়ে উচ্চস্বরে চেঁচামেচি করতে করতে খাটিয়ার চারপাশে ঘুরে ঘুরে লাফ দিচ্ছেন। আমি একটু অবাক হলাম, কারণ আমি জটাধারী ভীষণভয়ঙ্কর সাধুটাইপের কাউকে আশা করেছিলাম- সাধারন চেহারার পাঞ্জাবী পরা একজন প্রায় যুবককে না। ভদ্রলোকের আরেক হাতে একটা পাতাসহ গাছের ডাল ছিলো- সেইটা দিয়ে একটু পরপর শুয়ে থাকা লোকটাকে সে 'ঝেড়ে' দিচ্ছিলো। আর ভূতের ভিকটিম ভদ্রলোক মনে হয় ব্যপারটায় বেশ মজা পাচ্ছিলেন- হাসিমুখে বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে সবাইকে দেখছিলেন। আর এর মাঝে চলছিলো উচ্চস্বরে মন্ত্রপাঠ- যদিও আমার চেনা কোন মন্ত্রের সাথে এর মিল নেই। দেখতেই দেখতেই ভূত তাড়ানো শেষ। খাট থেকে ভূতে পাওয়া ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন- সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে কিছু একটা বললেন। জনতা তুমুল হর্ষধ্বনি করে উঠলো। কয়েকজন অতি আবেগপ্রবন হয়ে গিয়ে আবার 'ওঝা'কে জড়িয়ে ধরলো। সবশেষে ওঝাকে একটা পশমের চাদর, একটা পোঁটলা (যদ্দুর মনে হয় সেইটাতে কিছু আলু ছিল) আর বুকভরা ভালোবাসা দিয়ে গ্রামবাসিরা বিদায় দিলো। আর বিদায়ের সময়েও যে হর্ষধ্বনির বহর দেখলাম তাতে বুঝলাম এই এক্সরসিস্ট ভদ্রলোক একজন লোকাল সেলিব্রিটি। সুরেশ আমার অনুমান নিশ্চিত করলো। পরে ওর সাহায্যেই সদ্য প্রেতমুক্তিপ্রাপ্ত ভদ্রলোকের সাথে একটু আলাপ করলাম। উনি হাসিমুখে জানালেন এইরকম নাকি ওনার প্রায়ই হয়। নানারকম আওয়াজ নাকি উনি শুনতে পান। রাতের বেলা নাকি ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করেন। এইরকম ঝাড়ফুঁক করলে নাকি উনি কয়েকদিন ঠিক থাকেন। সমনামবুলিস্ট ভদ্রলোক আবার শখের গায়ক। কথাবার্তার মাঝেই উনি একখান গানও শোনালেন। পরে তার ছোট্ট কুঁড়েতে চা খাবার নেমন্তন্ন করে বসলেন। প্রচুর দুধ দেয়া বিশাল একমগ চা খেয়ে যখন ফেরত এলাম ততক্ষনে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। সাধুবাবা আর কেয়ারটেকার আমাদের চিন্তায় অস্থির। বুড়ো কেয়ারটেকার এইবার আমাদের ভালুক না- 'অপদেওতা'র ভয় দেখালো।

পরদিন আবার ভোর পাঁচটার সময় শীতে কাঁপতে কাঁপতে উঠে পড়তে হলো। আজকের মধ্যে আমাদের উত্তরকাশী পেরিয়ে অন্ততপক্ষে শ্রীনগর পৌঁছতে হবে, তারপরে সেখান থেকে কেদারনাথের দিকে যদ্দুর যাওয়া যায়। ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে যখন দরজা দিয়ে বের হই তখন মন আসলেই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। জায়গাটাকে আমি পছন্দ করে ফেলেছিলাম, মানুষগুলোকেও। সকালবেলা প্রথম কয়েকঘন্টা আমার মাথা ঠিকমতো কাজ করে না- মহান মহান একটা ভাব চলে আসে, মাঝে মাঝে এমনও দেখা যায় আমার লেভিটেশনের মত হয়, মাটির ইঞ্চিদুয়েক ওপর দিয়ে হাঁটছি। তাই বকশিস হিসেবে সুরেশকে আমার শেষ ছয়টা মার্স বারের প্যাকেটটা দিয়ে দিলাম। সে আমাকে শেষবারের মতো হতবাক করে দিয়ে ভাঙ্গা বাংলায় বলে বসলো - 'আবার আসবেন'!

রুদ্রপ্রয়াগের চিতা, আশাভঙ্গ আর Siegreicher Marsch!

সেইদিন সূর্যের মুখ দেখা গেলোনা। আর কিছুদুর যাবার পরেই একেবারে দেশী কায়দায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো- মাঝে একসময় ভিজিবিলিটি এত কমে গেলো যে আমরা কিছুক্ষণের জন্য যাত্রা স্থগিত করতে একরকম বাধ্য হলাম। তারপরে বৃষ্টি একটু ধরে আসলে আবার রওনা দেয়া- তারপরে আবার থামা, এইরকম করতে করতে দুপুরের আশেপাশে বহুল আলোচিত তেহরি ড্যামের কাছে পৌছানো গেলো। আর এই মেঘ আর বৃষ্টির যন্ত্রণায় একটা দেখার মতো জিনিস মিস করলাম। বিশাল তেহরি লেকটা, যেইটা ভাগিরথি আর বালিগঙ্গা নদীতে বাধ দেবার কারণে সৃষ্টি হয়েছে আর পুরোনো তেহরি শহরটা এখন এর তলায়। আমি ভেবেছিলাম আমরা লেকটার পাশ দিয়ে যাবো- কিন্তু আমরা লেকের চারপাশের পাহাড়ের ওপরের একটা বাইপাস রাস্তা ধরে গেলাম- আর মেঘ, কুয়াশা আর অন্ধকারের কারণে কিছুই দেখতে পেলাম না। অনেকটা দূরে যাবার পরে আমরা যখন এক জায়গায় চা খেতে দাঁড়ালাম তখন মেঘ অনেকটা কেটে গেছে, এক স্কটিশ ভদ্রলোকের বাইনোকুলার চেয়ে নিয়ে নীচে ড্যামের কমপ্লেক্স আর এর বিশাল লেকের কিছু অংশ দেখলাম- আর আফসোস করলাম।

সন্ধের মুখে আমরা শ্রীনগর এসে পৌছলাম, এইটা অবশ্য কাশ্মীরের শ্রীনগর না, উত্তরাখন্ডের রাজধানী শ্রীনগর আর এইদিককার সবচে বড় শহর। তাই সরকারি অফিসটফিস থেকে শুরু করে একটা মেডিকেল কলেজও দেখি আছে। আর আছে পোকার উপদ্রব! ভয়াবহরকমের! আমাদের প্রথম কাজ হলো রিসাপ্লাই করা, কারণ কালকে দুপুরের মধ্যেই আমাদের গৌরিকুন্ডে পৌছে কেদারনাথের ট্রেক শুরু করতে হবে। কেনাকাটা শেষে ভালো একটা থাকার জায়গা বেছে নিয়ে অনেকদিন পরে একটা সেইরকম একটা শাওয়ারের পর সেইরকম একটা বিছানায় ঘুমালাম। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এর পরের রাত কাটানো হবে কেদার পর্বতের ছায়ায়!

পরদিন আবারো খুব ভোরে রওনা দিয়ে ব্রেকফাস্ট করা হলো এইখান থেকে পয়তিরিশ কিমি দুরের রুদ্রপ্রয়াগে। মন্দাকিনী আর অলকানন্দার কনফ্লুয়েন্স। এওখান থেকে পথ দুইদিকে ভাগ হয়ে গেছে- বাম দিকে পুল পার হয়ে মন্দাকিনীর পাশের রাস্তা ধরে উখিমঠ, গুপ্তকাশী আর গৌরিকুন্ড হয়ে কেদারনাথ; আর ডান দিকের পথ ধরে অগস্ত্যমুনি, কর্ণপ্রয়াগ, জোশিমঠ হয়ে বদ্রীনাথ। জিম করবেটের বইগুলো পড়ার পর থেকেই আমি সবসময় রুদ্রপ্রয়াগ জায়গাটা দেখার জন্যে খুব আগ্রহী ছিলাম- কিন্তু একেবারে ভীষনভাবে আশাহত হলাম। কোথায় সেই জনমানুষহীন জঙ্গল আর লেপার্ডের হুঙ্কার! একটা ঘিঞ্জি বাজারটাইপ শহর যাকে খরস্রোতা দুইটা নদীর সঙ্গম, পাশের উঁচু পাহাড় আর দালানের ফাঁক দিয়ে দূরের পর্বতশিখরের কিছু উঁকিঝুকিবাদ দিলে একেবারে আমাদের সিঙ্গাইর বাজার হিসেবে চালানো যায়!

এইসব দেখে আমার একেবারে ভয়াবহরকমের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আর যখন শুনলাম মে মাসের দুই তারিখে নাকি জিম করবেটের নামে করা করবেট মেলা হওয়ার কথা ছিলো, যেটাতে নাকি শিকার করা বেশ কয়েকটা লেপার্ডের চামড়াও নাকি দেখানো হয় আর আমরা সেইটা দুই সপ্তাহের জন্য মিস করে ফেলেছি- তখন আরো বিরক্ত লাগলো। আমাদের ড্রাইভার বললো যে জায়গায় করবেট সাহেব সেই কুখ্যাত চিতাটাকে মেরেছিলেন, এখান থেকে প্রায় পাচ কিমি দূরে গুলওয়ারা বলে একটা জায়গায়, সেইখানে নাকি একটা সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে, দেখতে যাবো নাকি? কিন্তু যখন শুনলাম সেইটা এখন একটা বাজারের ভেতরে, সাথে সাথে সেখানে যাবার চিন্তা বাদ দিলাম। কিছু কিছু জিনিস কল্পনায় থাকাই ভাল। তবে পরে যখন অলকানন্দার পুলের ওপর গিয়ে দাঁড়ালাম- তখন আবার মনের মেঘটেঘ কেটে গিয়ে সব পরিষ্কার! এমনকি এইটাও মনে হলো আজকের দিনটা এই দড়ির পুলের ওপর দাঁড়িয়ে নদীর গান শুনতে শুনতেই কাটিয়ে দেই।

rudraprayag

রুদ্রপ্রয়াগ থেকে একটু দূরেই অগস্ত্যমুনি নামের একটা ছোট্ট শহর, মুনি অগস্ত্য এইখানে তপস্যা করেছিলেন। পৌরাণিক সাধুদের মধ্যে আমি দুর্বাসা আর অগস্ত্য এই দুই ভদ্রলোককে আমি আবার একটু ভালো পাই, তারা দেবতাদের ওপরও মাস্তানি করতে ছাড়তেন না। তাই ভাবলাম ভদ্রলোকের তপস্যার জায়গাটা একটু দেখে আসি।
আশি কিমি দূরে সাত হাজার ফিট উচু গৌরিকুন্ডে পৌছলাম বারোটার একটু আগে- আর যথারীতি আমাদের স্কেজুয়ালের মিনিট চল্লিশেক পরে। তাই জায়গাটা ঠিকমতো ঘুরে দেখতে পারলাম না। কুন্ডটা দেখার ইচ্ছে ছিলো- গনেশ এইখানেই শিবের সাথে হেজেমনি করতে গিয়ে তার মুন্ডু খুইয়েছিলেন, কিন্তু এখনই হাঁটা শুরু না করলে সন্ধ্যার আগে কেদারনাথ পৌছনো যাবে না। চোদ্দ কিমি পথ, এগারো হাজার ফিট উঠতে হবে। যদিও থিয়োরেটিকালি মাত্র পাঁচ হাজার ফিট, কিন্তু প্রাকটিকালি কি আমার পক্ষে সম্ভব? জানিনা। বৃষ্টি আসবেই, তারপরে টানা চড়াই, এর পরে বরফ সবেমাত্র গলা শুরু করেছে- তাই রাস্তায় কাদা থাকবেই। তবে যমুনোত্রীর চড়াই ভেঙে মোটামুটি একটা ধারণা এসে গেছে। চোদ্দ কিলোমিটার পথ পাঁচ ঘন্টায় কোন ব্যপারই না। ইয়ারফোন কানে গুঁজে ফরোয়ার্ড মার্চ করলেই হবে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান মেলোডিক ডেথ মেটাল আছে কি জন্যে? Siegreicher Marsch!

ইয়ারফোন কানে গোঁজা ছিলো বলেই মনে হয় সেসময় শ্রীকেদারনাথের অট্টহাসি শুনতে পাইনি। মন খারাপ


মন্তব্য

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এই জিনিস পড়ে লগিন না করলে ক্যাম্নে কী...

আপনে তো ভাই গোল দিয়াই যাইতেসেন। বই না হোক, ই-বুক বাইর করেন একটা; নগণ্য পাঠক হিসেবে এই দাবি করা আমার অধিকার...

রুদ্রপ্রয়াগের বর্ণনা অবশ্য একটু খোট্টাদেহাতী লাগলো।

সুরেশ, সে আবার অবসর সময়ে ক্লাশ টু'তে পড়ে)

তবে এইটা পড়ে বেধড়ক মজা পেলাম...

_________________________________________

সেরিওজা

ওডিন এর ছবি

রুদ্রপ্রয়াগ নিয়া আমি পুরা হতাশ! তবে পরে লোকমুখে শুনলাম সব নাকি এখনও শেষ হয়ে যায়নাই। পরে আবার যদি কখনো যাই তাহলে ভালোমতো দেখতে হবে।

মজা করে বললেও বাচ্চাটার জন্য আসলে আমার কষ্টই লাগতো। কিছু কিছু মানুষ এতো গরীব যে দেখলেও বিশ্বাস করা যায় না। ওর স্বপ্ন হলো বড় হয়ে একটা চায়ের দোকান দেয়া।

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

দ্রোহী এর ছবি

"পরিক্রমা: দ্য ট্রাভেলগ" সিরিজের মুগ্ধ পাঠকের দলে যোগ দিলাম। এবার প্রথম পর্ব থেকে পড়তে শুরু করি।


কি মাঝি, ডরাইলা?

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ, ধন্যবাদ আর আরেকটা ধন্যবাদ! হাসি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

হাসিব এর ছবি

যিগরাইখার মার্শ মানে হৈলো victorious march। জার্মান শব্দ।

ওডিন এর ছবি

হ' গানের নাম জার্মান, ব্যান্ড সুইডিশ আর ব্যান্ডের নাম আবার এলভিশ এ- আমন আমারথ! গানটা আবার দল বেঁধে চার্চ পুড়ায় দেয়ার ব্যপারস্যাপার নিয়া। পুরাই ভজঘট অবস্থা! খাইছে
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

সংসপ্তক এর ছবি

দূদ্রান্তিস! আপনাকে ভালুতে না পাক, লেখা ভালু পাইলাম!
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

ওডিন এর ছবি

আমাকে ভালু'তে পাইলেও আপনে এই লেখা ভালু পাইতেন- কারণ আমাকে ভালু'তে পাইলেও এই লেখা লেখা হইতো- আরেকটু বেশি ইন্টারেস্টিংভাবে! আর আমি ভালুকের চামড়ায় মোড়ানো একটা চেয়ারে বসে এই কমেন্ট লিখতাম। চোখ টিপি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

সংসপ্তক এর ছবি

মানে আপনি ভালু রে পাইতেন?
যদি দুইটা ভালু থাক্তো? তাইলে তো ভালুয় ভালুয় শেষ হইতেন।
সব ভালু যার শেষ ভালু তার।
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

ওডিন এর ছবি

তা অবশ্য ঠিক- তবে স্থানীয় লোকজনের কথা ঠিক কইলে ওই এলাকায় একটা ভালুকই থাকার কথা খাইছে

আর হ' ভালুয় ভালুয় যে ফেরত আসছি এইটাই অনেক। হাসি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

সংসপ্তক এর ছবি

ভা.....নাহ থাক। রেজিস্ট করলাম। এরপর মাইর-ধইর খাওয়ার চান্স আছে।

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আআহ্‌! আজকে ঢুকতে না ঢুকতেই প্রিয় লিখিয়ের প্রিয় সিরিজ!! <ধেই ধেই একপাক ঘুরে নেয়া>
এই পর্ব মারাত্মক হয়েছে ওডিনদা। শুরুর অংশটা পড়ে হাসছি অনেকক্ষণ ধরে, পুরাই সেইরকম সব অভিজ্ঞতা আর বর্ণনা! দুর্দান্ত লাগল! প্রতিটা প্যারাগ্রাফ নিয়েই আলাপ করতে ইচ্ছা করছে... এখানে থাক, ফোন দেবনি। হাসি লেভিটেটিং মুডে ছয়-ছয়টা মার্স বার সুরেশকে (যে কিনা অবসরে ক্লাস টু-তে পড়ে!) দিয়ে দেবার ঘটনা পড়ে ব্যপক আনন্দ পেলাম। দেঁতো হাসি
আর নেক্সট পর্ব যেন এবারের মত দেরি না করে বরং অনেক দ্রুত আসে সেই আশা রাখছি।
চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ওডিন এর ছবি

বেশি মহান হয়ে 'সব' মার্স বার সব দিয়ে দেয়ায় পরে একটু সমস্যায় পড়েছিলাম। ওইসব জায়গায় খাবারদাবারের খুব সমস্যা। এর আগে মনে হয় বলা হয়নাই কিন্তু আমার অনেকদিন ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ ছিলো একটা করে মার্স বার। খাইছে

পরের পর্ব দ্রুত আসবে বলে হয়তো আশা করা যায়। গত দুইটা মাস অনেক অনেক অনেক ঝামেলায় ছিলাম। এখন মোটামুটি সিস্টেমে ঢুকে পড়েছি। ঘুরাঘুরি একটু কমে গেলো এই আরকি। মন খারাপ

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

কৌস্তুভ এর ছবি

অন্নেকদিন বাদে দিলেন, এত দেরি করলে ক্যাম্নেকি?

ওডিন এর ছবি

ইয়ে মানে এই আরকি। ইয়ে, মানে...
আবহাওয়া অনুকূল ছিলো না। খাইছে
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

সুরঞ্জনা এর ছবি

দারুণ লাগলো পড়তে! হাসি

রাস্তার পাশে এক বুড়ো বেশ উন্নতমানের 'ঘাস' আর রংবেরঙের কল্কে নিয়ে বসেছিলো, আমি একটু ঝুঁকে পড়ে সেইটা ভালোমতো দেখতছিলাম, কি ব্যপারস্যপার, বুড়োও বেশ আগ্রহ নিয়ে আমাকে ইন্সটলেশন এবং অ্যাসিমিলেশান প্রসেস দেখাচ্ছিলো..

দেখেই যেহেতু এসেছো.. চিন্তিত
............................................................................................
স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা।।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

ওডিন এর ছবি

আহেম। তবে জিনিসটা বেশ ইন্টারস্টিং ছিলো কিন্তু। চোখ টিপি

তবে মাঝে মাঝে সুগার কিউবের কল্পনাবিলাস করলেও আমি কিন্তু স্ট্রিক্টলি অ্যান্টিড্রাগ মানুষ। অ্যান্টিস্মোকিং-ও হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ধুর মিয়া! এটো তাড়াতড়ি শেষ করলে ক্যাম্নে কী! যে একটু নড়েচড়ে বসলাম ওম্নেই দেখি ফুড়ুৎ! :|

রুদ্রপ্রয়াগে যাবার ইচ্ছা আমারও সেই ছোটবেলার! নামটার মধ্যেই কী থ্রিল! বিবরণ শুনে তাই অনেক মন খারাপ হলো। ঘিঞ্জি জায়গা! বাজার! সো আনরোমান্টিক!

সুরেশকে আমার চ্রম লাইক হইলো, আর মার্স বারের কথা মনে পড়ায় মোচর দিলো অভুক্ত হৃদয়! খাইছে

এতো অপেক্ষা করতে ভাল্লাগেনা ওডিনদা, আপ্নের পিলিজ লাগে পরের পর্ব তাত্তাড়ি দ্যান! হাসি

মাঝে একজায়গায় সামান্য টাইপো: "আমি ভেবেছিলাম আমরা লেকটার পাশ দিয়ে যাবো- কিন্তু আমরা একটা বাইপাস রাস্তা ধরে গেলাম লেকের চারপাশের পাহাড়ের ওপরের একটা বাইপাস রাস্তা ধরে গেলাম- আর মেঘ, কুয়াশা আর অন্ধকারের কারণে কিছুই দেখতে পেলাম না। অনেকটা দূরে যাবার পরে আমরা খন এক জায়গায় চা খেতে দাঁড়ালাম তখন মেঘ অনেকটা কেটে গেছে, এক স্কটিশ ভদ্রলোকের বাইনোকুলার চেয়ে নিয়ে নীচে ড্যামের কমপ্লেক্স আর এর বিশাল লেকের কিছু অংশ দেখলাম- আর আফসোস করলাম। "
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

ওডিন এর ছবি

রুদ্রপ্র্য়াগ গিয়ে আমারো খুব মন খারাপ হয়েছিলো।

আর ধন্যবাদ! ঠিক করে দিলাম! আর আমি তো ভাবছিলাম লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে, ঠিক আছে- রয়েসয়ে। হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখাগুলো বেশ রয়েসয়ে পড়তে হয়, পরের পর্ব একটু চটজলদি দিলে এই হ্যাপাটা পোহাতে হয়না মন খারাপ

এই পর্বটায় মালমসলা একটু কম মনে হয়েছে, রবিবাবুর শাপ টাপ নাকি? হাসি

অদ্রোহ।

ওডিন এর ছবি

মালমশলা আসলে ছিলো না- তাই নাই। পরেরবারে থাকবে আশা করি। রবিবাবুর কুনজর কাটানোর জন্যেই তো এইবার নামই বদলে দিলাম হেহেহে চোখ টিপি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

তাসনীম এর ছবি

দারুণ...তবে এবার অনেক দিন পরে লেখা পেলাম।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ওডিন এর ছবি

আসলে গত কয়মাস একটু ঝামেলায় ছিলাম তাসনীম ভাই। নতুন জায়গা- কাজ- পড়ালেখা এইসব। গত কালকে ছুটি নিছিলাম (ভুয়া সিক লিভ চোখ টিপি ) এই সুযোগে লিখে ফেললাম আরকি।

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

অমিত এর ছবি

এত দিন পরপর হলে তো খউপ খ্রাপ কথা

ওডিন এর ছবি

খুব তাত্তাড়িই লেখার চেষ্টা করবো ভাই। হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

খেকশিয়াল এর ছবি

ওই মিয়া তাড়াতাড়ি শেষ করো, একলগে পড়ুম। এগুলা ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা পড়া যায় না। তবে এই পর্বটা পইড়া ফেললাম কেমনে জানি দেঁতো হাসি, লেখা ব্যাপক!! যে জায়গা ঘুইরা আইছো ধইরা তোমারে ঘাড়াইতে মন চায় (মেগাঈর্ষা)!!
শেষ করো শিজ্ঞির, আগেরগুলা পড়ি নাই, একলগে পড়ুম।

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ওডিন এর ছবি

আইচ্ছা এখনি লিখা শুরু করতেছি-

সুবারেক!!! আমার মখমলের কিবোর্ডটা দে, চা বানা! কড়া! এক্সট্রা পাত্তি দিস। আর রামস্টাইনের নয়া সিডিটা ছাড়! জোরে

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

সবজান্তা এর ছবি

আমি কিন্তু গম্ভীর। চারপাশের মানুষজনের মতো আমার মধ্যে ঈর্ষা আসতেছে না। আসতেছে আনন্দ।

কপাল মেগা বিট্রে না করলে, সামনের বছর এই সময় নাগাদ এইসব জায়গা আমাদের ঘোরা হয়ে যাবে দেঁতো হাসি


অলমিতি বিস্তারেণ

ওডিন এর ছবি

আমেন টু দ্যাট, কমরেড। উত্তম জাঝা!
আমেন টু দ্যাট!

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

সবজান্তা এর ছবি

আচ্ছা, এই গেলো আমাদের প্ল্যানের কথা। যেহেতু মন্ত্রগুপ্তির ব্যাপারস্যাপার আছে, বাইরের লোকজনের সামনে বেশি না বলাই ভালো চোখ টিপি

লেখাটা জব্বর। যদিও গত পর্বের সেই তারা ভরা রাতের মতো "ভোদাই" বানায়া দেওয়া কোন সিন এইখানে নাই, তথাপি, এইটাও মারকাটারি। আপনার ভ্রমন কাহিনী লেখার স্টাইলটা দারুণ... যেমন থাকে জায়গার বর্ণনা, ভৌগলিক বিবরণ, তেমনই থাকে নিজের অভিজ্ঞতা।

আপনার থিকা সিরিয়াসলি ভ্রমন কাহিনী লেখা শিখতে চাই। সিরিয়াসলি হাসি


অলমিতি বিস্তারেণ

ওডিন এর ছবি

অ্যাঁ কে কারে কি বলে!!!

আমি অবশ্য অনেক ভ্রমণকাহিনী বা ভ্রমণসাহিত্য পড়ি, ( এখনও একটা পড়তেছি ইনফ্যাক্ট- ড্যালরিম্পল এর ফ্রম দ্য হোলি মাউন্টেইন।) সেইসব থেকে যা বুঝলাম- আমি জায়গার বর্ণনা তেমন দিতে পারিনা, ভৌগলিক বিবরণও তেমন আসে না। খালি নিজের অভিজ্ঞতা আর চিন্তাভাবনাগুলো লিখে যাই। আমি মনে করিনা এইটা "ভ্রমণকাহিনী", ভ্রমণব্লগ হিসেবে হয়তো ঠিক আছে। হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

মুস্তাফিজ এর ছবি

ক্যামনে লেখেন রে ভাই!!!
পরের পর্ব দেরীতে দেন অসুবিধা নাই, কিন্তু শেষ যেন না হয়।

...........................
Every Picture Tells a Story

ওডিন এর ছবি

তার আগে আমারে কন ক্যামনে এইসব মারাত্মক সব ব্যানার বানান? অ্যাঁ

শেষ হবে- ভেবছিলাম এইবারই- কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখি আজব একটা ব্যপার হয়- একটু একটু করে অনেক কিছু মনে পড়ে যা ভেবেছিলাম ভুলে গেছি। হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

বাউলিয়ানা এর ছবি

ফুটুক এত কম!

পর্ব এত দেরী করে আসে কেন?

ওডিন এর ছবি

পরের পর্বে খালি ছবিই ছবি থাকবো! এনশাল্লাহ! হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

আসিফ [অতিথি] এর ছবি

মেজাজটা খারাপ করে দিলেন!

এখন অপেক্ষায় থাকতে হবে কবে পরবর্তী পর্ব নাজেল হবে তার জন্য।
খুব ভালো লাগছিলো আপনার ভ্রমণের বর্ণনাটা। তাড়াতাড়ি বাকি পর্বগুলি দেন ভাইডি।

ওডিন এর ছবি

অচিরেই নাজেল হবে ভাইডি। জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। হাসি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

মূলত পাঠক এর ছবি

পাঠকের মুগ্ধতা জানাই। অনবদ্য লেখার স্টাইল আপনার।

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ পাঠকদা। হাসি

আপনার কলেজ স্ট্রিটের অপেক্ষায় এখনো ...
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

দময়ন্তী এর ছবি

দারুণ দারুণ দারুণ! চলুক
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ওডিন এর ছবি

থেঙ্কিউ থেঙ্কিউ থেঙ্কিউ হাসি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

তিথীডোর এর ছবি

আপনাকে হিংসে করা ছেড়ে দিয়েছি...
তাত্তারি পরের পর্ব আসুক!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাইফ তাহসিন এর ছবি

একি হল? এর মাঝেই শীত নিদ্রার অজ্ঞাত বাসে আমাদের ওডিন মিয়া পালায়া গেছে? তাইলে ক্যামনে কি? মডু দাদাগো ডাইকা কওন লাগব দেখি যে ওদিন মিয়ারে আবার হাচল বানায়া দ্যাও, তাইলে আবার ফাটাফাটি লেখা আসতে শুরু করব।

লেখার কথা আলাদা কইরা কি কমু, একবার পইড়া মন ভরে নাই, আরেকবার পইড়া তারপর আবার কমেন্টামু

ওরে দুষ্টু, ব্যাপক হিংসায় যে কমেন্টাইতে পারতেছি না, ভাবছিলাম, ২য় বার পড়ার পর হিংসা কাটায় উইঠা বেধরক কিছু কমেন্ট ছাড়ুম কিন্তু জিহবা যেন জড়ায় গেছে তালুর সাথে, হ্যাটস অফ টু ইউ, আর কেদারনাথের হাসি তো আমার মাথা থিকা বাইর হইতেছে না যতক্ষন না ৬ লম্বরি ট্রাভেলগ পড়তেছি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মেঘের দেশের মেয়ে এর ছবি

তন্ময়, আমি ভাষাহীন, হতবাক। এতদিন মাঝেমাঝে সচল এর পাতায় ঘুরতে আসতাম। আজ তোমাকে খুঁজে পেয়ে আর এক নিঃশ্বাসে সব কটা পর্ব পড়ে ফেলে মন্তব্য করতে বাধ্য হলাম। সহপাঠী হিসেবে গর্বিত। জয়তু কমরেড ।

ওডিন এর ছবি

খাইছে!!!! শশশ চুপ চুপ চুপ (হতচকিত হয়ে এদিক ওদিক তাকানো)
এইটা হইলো আমার গোপন ব্লগার আইডেন্টিটি, অন্য আরো অনেকগুলার মতো। চুপচাপ থাকো। মুভেনপিকে আইসক্রিম খাওয়ামুনে দেঁতো হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।