পরিক্রমাঃ দ্য ট্রাভেলগ [ষষ্ঠ পর্ব]

ওডিন এর ছবি
লিখেছেন ওডিন (তারিখ: শনি, ২৮/০৫/২০১১ - ৩:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"....there were shops selling robes, shops selling telescopes and strange silver instruments Harry had never seen before, windows stacked with barrels of bat spleens and eels' eyes, tottering piles of spell books, quills, and rolls of parchment, potion bottles, globes of the moon...."

-'Harry Potter and the Philosopher's Stone'

হট ওয়াটার স্প্রিং ছাড়া গৌরিকুন্ড শহরটার উল্লেখযোগ্য ব্যপার হলো একটা লম্বা সরু গলি, যেটা শহরটার প্রায় মাঝখান দিয়ে চলে গিয়ে শহরটাকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। আর যেইটার সাথে একমাত্র আমাদের শাঁখারিবাজারেরই তুলনা করা যায়। সেইরকমই সরু আর দু'পাশে পুরোনো নোনা ধরা দোতলা তিনতলা সব দালান, আর সবগুলোর নীচেই নানারকম জিনিসপত্রের দোকান। খাবারের আর মুদির দোকান, মিষ্টির দোকান, বিশাল সব কড়ায় দুধ টগবগ করে ফুটছে, ফুল, ধূপ আর পূজার জিনিসপত্র, কাঁসর ঘন্টা-প্রদীপ-লন্ঠন-কুপি, জামাকাপড়, টেলিফোন করার দোকান, এমনকি একটা ইন্টারনেট ক্যাফেও পর্যন্ত চোখে পড়লো। আর মানুষ। নানা রকমের আর নানা ধরণের। আর একটা অন্যরকম গন্ধ। মানুষ, ঘাম, গোবর, ফুল, ধূপ আর কি কি কে জানে, সব মিলেমিশে আজবরকমের একটা গন্ধ যেটা মনে হয় একমাত্র পুরোনো শহরের আরো পুরোনো গলিগুলোতেই পাওয়া যায়। আর গলিটা ধীরে ধীরে ওপর দিকে উঠে গেছে। বুঝে গেলাম এইটাই চড়াইয়ের শুরু। কিন্তু কেদারনাথ যাওয়ার বিখ্যাত ট্রেইলের শুরুটা এইরকম, এইটা আমার কাছে খুবই মজা লেগেছিলো। মনেই হচ্ছিলো না যে এটা পুরনো ঢাকা, বা কাশির কোন গলি না, খালি রাস্তার ওই আস্তে আস্তে ওপরদিকে চলে যাওয়া ছাড়া। একেবারে হ্যারি পটারের পাতা থেকে উঠে আসা ডায়াগন অ্যালি মনে হচ্ছিলো গৌরিকুন্ডের এই গলিটাকে।

আর ডায়াগন অ্যালির মতই চমক থাকলো গলির শেষ প্রান্তে। ধুম করেই গলিটা শেষ হয়ে গেলো, আর ছায়াছায়া অল্প অন্ধকার গলি পেরিয়ে, মনে হলো যেনো একটা গিরিখাতের ভেতর দিয়েই, একেবারে হঠাৎ করে আমরা বের হয়ে এলাম একেবারে মন্দাকিনী'র পাশে। নদীর অংশটা এইখানে একটা বেশ বড় জলপ্রপাতের মত, আর পাশ থেকে পাথরে বাঁধানো বেশ চওড়া একটা পথ উঠে গেছে। দুপাশে উঁচু পাইন আর আরো নাম না জানা সব গাছে ছাওয়া। দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। এইখান থেকেই কেদারনাথ ভ্যালির চোদ্দ কিলোমিটারের ট্রেইল এর শুরু।

একটু সামনে এগিয়ে গিয়েই দেখতে পেলাম কুলি আর ঘোড়া ভাড়া করার জায়গা। আমাদের জিনিসপত্র বলতে শুধু দুজনের দুইটা ব্যাকপ্যাক, আর সাধুবাবার কাছে এক্সট্রা একটা ঝোলা, তাই কুলির দরকার নেই। কিন্তু আমরা একটা ঘোড়া ভাড়া করে নিলাম, যাতে হয়রান হয়ে পড়লে এর ওপর ব্যাকপ্যাকগুলো চাপিয়ে দেয়া যায়। আর আরো বেশি হয়রান হয়ে পড়লে নিজেরাও সেটার ওপর চড়ে বসতে পারবো। তবে, যথারীতি আমার কাছে প্রানীটাকে বিশেষ রিলায়েবল মনে হলো না। হাবভাব কেমন জানি সুবিধার না, হুদাই খালি পা দাপাদাপি করছে, তাই আমি আমার বোঁচকাবুচকি নিয়ে ওর থেকে একটু তফাতেই হাঁটা শুরু করলাম। আর হাতে থাকলো সেই বিখ্যাত লাঠি।

আমাদের সাথে লোকজন বেশি না থাকলেও অনেক লোককে নীচে নেমে আসতে দেখলাম। আসলে বেশিরভাগ লোকজন রাতে গৌরীকুন্ডে থেকে ভোরে যাত্রা শুরু করে দুপুরের মধ্যে কেদার পৌছে যায়, তারপরে পূজোটুজো শেষ করে আবার নেমে আসে। কিন্তু আমরা প্ল্যান করেছি কেদারনাথে এক বা সম্ভব হলে একাধিক রাত থাকার। তাই এই দুপুর বেলায়ই চড়াই ভাঙ্গা শুরু হলো। বেশ ছায়াছায়া পথ, তাই হাঁটতে খারাপ লাগছিলো না।

আগেই বলেছি, হিমালয়ের এই অংশটায় বছরের এই সময় দুপুরের পর থেকেই বৃষ্টি পড়া শুরু হয়। আজকেও তাই হলো। আমরা হাঁটা শুরু করার আধ ঘন্টার মাঝেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি । তবে বৃষ্টিটা সমস্যা না করলেও এর সাথে কনকনে বাতাস একেবারে হাড়ে বিঁধে যাচ্ছিলো। তাই তাড়াতাড়ি গঙ্গোত্রীতে কেনা সেই গেরুয়া জ্যাকেট বের করে গায়ে চড়ানো হলো। চড়াই ভাঙ্গার সময় হাতে ছাতা নিয়ে হাঁটা ঝামেলা, তাই আমরা প্লাস্টিকের শিট কিনে রেখেছিলাম আগেভাগেই, সেইটার মাঝেই সুইস নাইফ দিয়ে কেটে নিয়ে একটা পনচো এর মতন জিনিস বানিয়ে পরে ফেললাম। ঝামেলা শুরু হলো একটু পরেই। বাঁধানো ট্রেইলের ভাল অবস্থা দেখে মনের খুশিভাবটা আস্তে আস্তে কমে যেতে লাগলো, কারণ বৃষ্টির পানি, কাদা, ঘোড়ার ইয়ে আর গলে যাওয়া বরফ- সব মিলেমিশে বেশ গুরুতররকমের একটা হেজেমনির সৃষ্টি হয়েছে। । পথ ভয়াবহরকমের পিচ্ছিল- তিনচার কদম পরপরই পা পিছলাতে লাগলো। ঘোড়াগুলোও দেখি বেশি সুবিধা করতে পারছে না, আর অশ্বারোহীদের অবস্থা আরো খারাপ, তাঁরা একবার সামনে ঝুকে আবার পেছনে হেলে আরেকবার পাশে ঝুলে পড়ে নিজেদের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এর মধ্যেই পথের ডানদিকে মন্দাকিনীর খাদ শুরু হয়ে গেছে, সরাসরি শ দেড়েক ফুটের গভীরে এখনও নদীটাকে দেখা যাচ্ছেনা অবশ্য। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যতো কষ্টই হোক, ঘোড়ায় চড়া যাবে না। শেষে ঘোড়ার পা পিছলে পড়ে মরেটরে গেলে একটা আফসোস থেকে যাবে, নিজের পায়ের ওপর ভরসা করে পিছলে পড়ে মরাও ভালো।

এখন পরে লেখার মাঝেমাঝে যে ছবিগুলো গুঁজে দিচ্ছি সেগুলো পরদিন নেমে আসার পথে তোলা, পেছনে ফিরে ফিরে। তাই বর্ননার সাথে আবহাওয়ার মিল নাও পেতে পারেন হাসি

ascenension

টানা চড়াই ভাঙ্গায় যে ক্লান্তি লাগছিলো না, তা না। কিন্তু এই ট্রেইলে একটু পরপরই ছোট ছোট দোকানের মতো আছে, আর ওইখানে চা থেকে শুরু করে খাবারদাবার সবই পাওয়া যায়। তাই একটু পর পরই বিশ্রাম নিয়ে হাঁটাহাটি চলতে লাগলো। এর সাথে সলটেড কাজু দিয়ে মুখও চালালাম। কিন্তু ঝিরঝিরে বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ নেই, আর এর সাথে এখন যোগ হয়েছে কুয়াশা। দৃষ্টিসীমা অনেক নিচে নেমে এসেছে। পাশের মন্দাকিনীর শব্দ ছাড়া আর কোন চিহ্ন নেই। আর দুপুরও প্রায় মাঝামাঝি চলে এসেছে। তাই আমাদের ঘোড়ার সহিসটা বারবার তাড়া দিতে লাগলো। তবুও আমরা খুব দ্রুত হাঁটতে পারছিলামনা। আগেই বলেছি, আমাদের সমতলের মানুষদের ফিটনেস লেভেল এইরকম হাই অলটিচিউড কন্ডিশনে সব উলটেপাল্টে যায়। ঘন্টাখানিকের মধ্যেই আমাদের দম ফুরিয়ে গেলো। কোনমতে লাঠিতে ভর দিয়ে, কোন কোন সময় পাশের পাথর ধরে নিজেদের টেনে তুলতে লাগলাম।

mandakini

এইভাবে মোটামুটি যখন আমরা সহ্যের প্রায় শেষ পর্যায়ে, তখন দুপুর দুইটার দিকে গৌরিকুন্ড থেকে সাত কিমি দূরে নয়হাজার ফিট উঁচুতে রামওয়াড়া নামের একটা গ্রামে পৌঁছলাম। এইখানে অনেকগুলো দোকান আর ধর্মশালাগোছের জায়গা আছে। গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের একটা রেস্টহাউজও আছে। পরিষ্কার বিছানা, গরম পানি সহ বাথরুম আর আঙ্গিনা থেকে অতিদুর্ধর্ষ ভিউওয়ালা। কিন্তু আমাদের এইখানে থাকার প্ল্যান নেই, তাই একটা হটশাওয়ার আর বারান্দায় বসে চা খাওয়ার ইচ্ছা মনে পুষে রেখেই অতি দুঃখের সাথে চলে আসতে হলো। আমরা চা খেলাম আর আগুনে নিজেদের সেঁকে নিলাম একটা বড়সড় তাঁবুর রেস্টুরেন্টে। লোকজনের সাথে ইংরেজি-বাংলা-ইশারা-ভাঙ্গাহিন্দী মিশিয়ে কিছু আড্ডাবাজি করা হলো। আবহাওয়া। তীর্থযাত্রা। অর্থনীতি। ক্রিকেট। বাংলাদেশ। কতদুর। কয়দিন লাগে যেতে। এর কয়দিন আগে আবার ওয়ার্ল্ড কাপে বাংলাদেশ ভারতকে সাইজ করে দিয়েছে, সেই সূত্রে আমি আবার একমগ চা অন দ্য হাউজ পেলাম।

বিকেল শুরু হয়ে গেছে-বৃষ্টিও আর নেই। তাই আড্ডাবাজি বন্ধ রেখেই বোঁচকা নিয়ে বের হয়ে আবার নিজেদের টেনে তোলা শুরু করলাম। কুয়াশা (মানে মেঘ আরকি) এখনো কাটেনি, এর মধ্যেই হাঁটা শুরু করলাম। কিছুদুর গিয়েই প্রথমবারের মতো পথের ওপর জমে থাকা বরফ দেখতে পেলাম। পাশের মন্দাকিনীর ওপরের অংশও বরফে ঢাকা, তবে এর নীচে দিয়েই বিপুলবেগে নদীটা বয়ে চলেছে, আর যেহেতু একট টানেলের মতো হয়ে গেছে নদীর ওপরে, স্রোতের গমগমে শব্দে কান পাতা দায়।

mandakini

mandakini

আরেকটু দূরে গিয়ে দেখা গেলো পুরো একটা হিমবাহের অংশই রাস্তার ওপর দিয়ে গড়িয়ে পাশের নদীতে পড়েছে, , শুধু রাস্তার ওপরের অংশটুকুই কেটে পরিষ্কার করা। এইখানে পথ ভয়াবহরকমের পিচ্ছিল, আমার গ্রীপওয়ালা কেডস কোনোমতে সামলে নিলেও সাধুবাবার নরম কাপড়ের কনভার্স এইরকম অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিলো না, বেচারা একটা ছোটখাটো আছাড় খেলেন, তেমন কিছু না হলেও ধকলটা গেলো তার হাতঘড়ির কাঁচের ওপর দিয়ে।
path

আরেকটু দুঃসহ চড়াই ভাঙ্গার পরে আমরা একটা সমতলমতো জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। এইখানে একটু নেমে আবার বাঁদিকে যেতে হবে। ট্রেইলটা একটা হেয়ারপিন-বেন্ড। আশেপাশে একটু পরিষ্কার হয়ে গেলো, কুয়াশা কেটে গেছে মনে হয়। একটু একটু বিকেলের রোদও এসে চোখেমুখে লাগছে। (পরে অবশ্য বুঝেছিলাম যে আমরা আসলে মেঘের লেভেল পেরিয়ে এসেছি হাসি )। এখন পথের ডানপাশেই মন্দাকিনী চলে এসেছে- ইচ্ছে করলেই একটু নেমে ওপরের বরফের স্তরটা পেরিয়ে ওপাশে চলে যাওয়া যায়। আর বামদিকের উঁচু দেয়ালও অনেকটা নেমে এসেছে। ঘাস, আর কিছু খুব হাল্কা ঝোপজাতীয় গাছ ছাড়া আর কোনকিছুর চিহ্ন নেই। পুরোপুরী আলপাইন ভেজিটেশান।

আর দিগন্তজোড়া পর্বতশ্রেনী! প্রায় চার ঘণ্টা কুয়াশা মেঘ আর বৃষ্টির মধ্যে হাঁটার সময় আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরেই ছিলো, এখন আকাশছোঁয়া বিশালতা নিয়ে আমাদের তিনদিকেই ঘিরে রেখেছে। সত্যিকার অর্থেই মিনিটদশেক শ্বাসরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ওইদিকে আমার সঙ্গী পুরোপুরি মহাভারত-ফেজে চলে গেছেন, হাঁপাতে হাঁপাতেই একের পর এক সংস্কৃত শ্লোক আউড়ে যাচ্ছেন। কোন পৌরাণিক হিমালয়-মাহাত্ম্যই হবে হয়তো।

valhalla! just beyond the mountains

এতক্ষণ আমরা কিছু কিছু ফিরতি পথের লোকজনের দেখা পেয়েছি, এখন পথে আর কোন জনমনিষ্যিই নেই। আর রামওয়াড়ার পর থেকে রাস্তার ধারে তেমন দোকানপাটও দেখছিলাম না, তাই সহিসের তাগাদায় এইবার দ্রুত পা চালাতে হলো। পথ মোটামুটি সমতল, দূরে একটা হালকা চড়াই দেখা যাচ্ছে। একটা উঁচুমতন জায়গায় এসে জানলাম এইখানটাকে নাকি বলে 'দেও দেখনি', এখান থেকে কেদারনাথ প্রায় চার কিলোমিটার দূরে হলেও পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে নাকি মন্দিরের চূড়ো দেখা যায়। আমরা অবশ্য কিচ্ছু দেখতে পেলাম না, পাহাড়ের ফাঁকে মেঘ আটকে থাকার কারণে।

আরো প্রায় দেড় ঘন্টা হালকা চড়াই ভাঙ্গার পড়ে আমরা একটা আবার একটা বাঁক ঘুরলাম, আর তখন সবচেয়ে চমৎকার ব্যপারটা হলো। একেবারে ধাক্কা দেয়ার মতো। আর সত্যি বলতে কি, এই অভিজ্ঞতাটা আবার নেয়ার জন্যেই আমি আবার কেদারনাথ যেতে চাই। এবং বিকেলে নয়, সকালবেলা।

মোড়টা ঘুরতেই স্টেজের পর্দা ওঠার মতো আমাদের সামনে হঠাৎ করেই খুলে গেলো পুরো কেদার উপত্যকাটা। তিনদিকেই আকাশছোঁয়া পর্বত, আর মাঝখানে বিশাল মাঠের মত উপত্যকা। পথ সোজা চলে গেছে, আর পাশেই অগভীর খাদের মাঝে মন্দাকীনি বয়ে চলেছে। মাঠটা ঘাসে ছাওয়া, অনেক কালো কালো শিলাখন্ড ভীড় করে আছে, আর ছাড়া ছাড়া ভাবে তুষার জমে আছে এখনো। কেদারনাথ গ্রামটা খুব বেশী বড় না, তবে বেশ ছড়ানো। পুরো ভ্যালিটা জুড়েই ছোটছোট বাড়ির মত স্থাপনা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে। আর পেছনে দুর্দান্ত একটা ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে আকাশছোঁয়া দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছে আটাশ হাজার ফুট উঁচু কেদার পর্বতশ্রেনী।

kedarnath valley

এইবার হতবাক অবস্থাটা অবশ্য বেশীক্ষন থাকলো না, কারন এমনিতেই আমরা অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, তাই প্রায় ছুটে চলা শুরু হলো। শহরের বাইরেই ঘোড়ার আস্তাবল, ওইখানে আমাদের ব্যাগবাহনকে ফেরত দিলাম। আমি এইবার একটু সাহস সঞ্চয় করে ঘোড়াটার থুতনী নেড়ে দিলাম। ব্যটাও দেখি আমার হাত আবার একটু চেটে দেয়ার চেষ্টা করলো। বলতে ভুলে গেছি, আমি এর মধ্যে ঘোড়াটার নাম রেখে ফেলেছি- জীমূতবাহন। প্রথমে বুসফালাস হিসেবে ঠিক করলেও এই দেবভূমির পৌরাণীক মাহাত্ম্যের কথা ভেবে রামওয়াড়া আসার আগেই ম্যাসাডোনিয়ান নাম থেকে একটু স্থানীয় নামে সরে এসেছি।

village of kedarnath

এইখানেও মন্দাকিনীর অপর পাড়ে ছোট্ট শহর, যাকে অবশ্য বহুগলিবিশিষ্ট একটা বড় গ্রামই বলা যায়। পুল পার হয়ে জমজমাট বাজারের মত একটা জায়গায় এসে পড়লাম। চারপাশে অস্থায়ী শামিয়ানা সহ তাঁবু খাটিয়ে সব দোকানপাট, কিছু পাকা দালানও আছে। আরে আছে অনেক খাবারের দোকান, ধুমসে খাবারদাবার তৈরী আর খাওয়াদাওয়া চলছে, এইসব দেখে আমাদেরও খিদে পেয়ে গেলো। কিন্তু আগে থাকার জায়গা খুজে বের করতে হবে। মিশনের মাধ্যমে আমরা আগেই একটা ধর্মশালা ঠিক করে রেখেছিলাম। মন্দিরের মূল ফটকের একটু বাইরেই সেটার খোঁজ পাওয়া গেলো। কাঠের দোতলা বাড়ি, নীচতলায় মুদির দোকান, আমরা থাকছি দোতলায়। তীব্র শীতে কাঁপতে কাপতে দোতলায় উঠেই একটা ধাক্কামতন খেলাম। ওপরে পুরোটাই একটা ঘর, আর প্রায় পুরোটা জুড়েই একটা বিশাল খাটে বিছানা পাতা। ঘটনা সেইটে না- ঘটনা হলো খাটের একপাশে ছাদসমান উঁচু করে রাখা বিশাআআল এক কম্বলের স্তুপ। আর সেইটে থেকে ভয়াবহ বোঁটকা গন্ধ ভেসে আসছে। আর এইগুলো যদি আমাদের ওপর ধসে পড়ে তাহলে একেবারে কম্বলসমাধিস্থ হয়ে যাবার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে! আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। কিন্তু কি আর করা, বরফ ঠান্ডা জলে (মানে বরফেই আরকি- নরম বরফ) হাতমুখ ভালোমতো ধুয়ে গেলাম মন্দির দর্শন করতে।

পৌরাণিকমতে কেদারনাথের শিবমন্দির পান্ডবদের হাতে তৈরী, যদিও এখনকার মন্দিরটা বানানো হয়েছে ষোল শতকে, দাক্ষিণাত্যের কোন এক রাজা এটা সুপারভাইজ করেছিলেন। এখনো সেইখানকারই রাওয়াল বংশের লোকজন বংশপরম্পরায় আর পূজো করেন। আর শীতের সময় দেবতাকে রীতিমতো দোলায় চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আরও নিচের উখিমঠ বা উষামঠে। মন্দির আর এর সাথে পুরো শহরই তখন বন্ধ থাকে। আবার এপ্রিলের মাঝামাঝি বা শেষে এই মন্দির খোলা হয়। লোকজন আর তাঁদের দেবতাও উঠে আসেন এইখানে। এইরকম চলে নভেম্বর পর্যন্ত।

kedar temple, at dawn

আমরা মন্দিরের চারপাশটা ঘুরে দেখলাম। ভেতরের উঠোনে দুই তিনটা জায়গায় লোকজন জড়ো হয়েছে। বেশ আগুনটাগুন জ্বেলে ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ চলছে, এক জায়গায় আবার খোলকরতাল জ্বালিয়ে বেশ গানবাজনাও হচ্ছে। কনকনে শীত থাকলেও আকাশ মারাত্মকরকমের পরিষ্কার, আর কোটি কোটি তারায় ঝলমল করছে। আমরা জ্যাকেটচাদরটুপিকম্বল সব গায়ে চাপিয়ে উঠোনের এক কোনে বসলাম। গান, মন্ত্রপাঠ, ধোঁয়া সব মিলিয়ে একেবারে অতিপ্রাকৃত একটা পরিবেশ। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি। নানা রঙের নানা বয়সের নানা শ্রেনীর মানুষ। অনেকে খুব মোটা শাল আর কম্বলে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছে। অনেকের বলতে গেলে কিছুই নেই, একমাত্র কম্বলটাও শতচ্ছিন্ন। একজনকে দেখলাম শার্ট আর একটা পাতলা সোয়েটার পরা- বেচারা হয়তো জানতো না যে এই অ্যালটিচিউডে কিরকম ঠান্ডা হবে। হয়তো একটা ঝোঁকের মাথায় চলে এসেছে। কিন্তু শুধু কি ঝোঁক? ইনফ্যাচুয়েশান? জানিনা। আমি আমার জ্যাকেটের ওপর শালটা আর ভালমত মুড়িয়ে গুটিসুটি মেরে বসলাম।

কি অপার্থিব একটা রাত!

The music and voices are all around us.

Choose, they croon, the Ancient Ones
The time has come again

Choose now, they croon
Beneath the moon
Beside an ancient lake
Enter again the sweet forest
Enter the hot dream
Come with us

Everything is broken up and dances.

Awake- Jim Morrison


মন্তব্য

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

অ্যাতই দেরি করে করে পর্ব দাও যে আগে যে কোথায় এসে থেমেছিল গল্প ভুলে যাই!

যাক, দারুণ আরেক পর্ব ট্রাভেলোগের জন্যে প্রথমেই আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
তারপর লেখায় তো চ্রম - হাততালি চলুক (গুড়)

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ওডিন এর ছবি

জানতে হলে পড়তে হবে মুহুহুহুহু দেঁতো হাসি

আর সেগুলো রিভাইজ করার জন্য আগাম থ্যাঙ্কস দিয়া রাখলাম হাসি

তিথীডোর এর ছবি

কদ্দিন পরে লিখলেন? চিন্তিত
তবু তো লিখলেন.... হাসি
চলুক (গুড়)

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ওডিন এর ছবি

ইয়ে মানে মাত্র ছয় মাস! খাইছে

মহামতি স্টিফেন কিং বলেছেন-

the muses are ghosts, and sometimes they come uninvited.

কালকে আমার ভূতুড়ে মিউজকে পাকড়াও কর্তে পেরেছিলাম, এক ধাক্কায় বসে এইটা, আর একটা ওয়েবসাইটের জন্য একটা বিশাল ইংরিজি প্রবন্ধ লিখে ফেলেছি! দেঁতো হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লেখা পড়ে, ছবি দেখে আর এমন ভ্রমণের সুযোগ পাবার জন্য তোমাকে হয়তো হিংসাই করা উচিত। কিন্তু ভেবে দেখলাম আসলে আমার হিংসা করার যোগ্যতাও নেই। একটা অনুরোধ, অক্টোবরের মধ্যে সিরিজটা শেষ করো, আর জানূয়ারীর মধ্যে বইটা বের করে ফেলো।

লেখাতে বার বার "মন্দাকিনী" শব্দটা পড়ে এই গানটার কথা মনে পড়লো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ওডিন এর ছবি

বই! অ্যাঁ

পড়ার আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ পান্ডব'দা। তবে আপনার কাছ থেকে বরাবরের মতই একটু সমালোচনা আশা করছিলাম। এতে সাহসটাহস একটু বাড়ে।

আর অক্টোবরের আগে অবশ্যই শেষ করবো, অবশ্য আগামী হপ্তায়ও হইতেপারে। আর বেশী বাকি নাই। এমনিতেই ব্যপারটা মহাভারতের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।

আর আরেকটা কারণ হইলো সেপ্টেম্বরের জন্য একটা নীলনকশা প্রায় তৈরী। অচিরেই জানতে পারবেন সব।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার কাছ থেকে আরো কথা শোনার আশা করেছিলে? তোমার লেখা পড়তে পড়তে আমি জায়গাগুলো, তার পরিবেশ, উষ্ণতা-শীতলতা টের পাচ্ছিলাম। ছবি না দিলেও সেগুলো বোঝা যাচ্ছিলো। তাই বিস্তারিত কিছু বলিনি। ভ্রমণ বর্ণনায় বেশিরভাগ মানুষ কী খাইলাম, কই ঘুমাইলাম এসব আর জীবনে যেসব জিনিষ ব্যবহার করে নাই সেগুলোর বর্ণনা দিতে দিতে কলমের কালি শেষ করে ফেলে। অথচ সেখানকার প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য, মানুষগুলো কেমন, তাদের বিশেষত্ব, তাদের আচরণ-সংস্কৃতি-বিশ্বাস এগুলো পাঠককে জানানো বেশি জরুরী। এই ব্যাপারে তোমার প্রচেষ্টা থাকে, তবে আরেকটু বেশি বললে আমাদের উপকার হয়। ঠেলেঠুলে পাঠককে তাড়াতাড়ি কেদারনাথ-বদ্রীনাথে পাঠানোর দরকার নেই। আস্তে আস্তে পাঠাও।

তোমার লেখায় আরেকটা জিনিষ থাকে যেটাতে ভবিষ্যতে কেউ ঐ পথে পা বাড়ালে যেনো তাদের কাজে লাগে। একই ব্যাপার হিমুর সেই বিখ্যাত পোস্টটাতেও দেখেছি। এই ব্যাপারটা আরেকটু খোলাসা করে বলতে পারো।

বাংলা ভাষায় বিখ্যাত লেখকেরা ভ্রমণের উপর যুগান্তকারী সব আবর্জনা লিখে গেছেন। ঐসব আবর্জনার ভার থেকে পাঠককে নিঃশ্বাস নেবার সুযোগ করে দেবার জন্য তোমার বই বের করার ব্যাপারে আমি জোর দিচ্ছি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ওডিন এর ছবি

হু, এইবার ঠিক আছে হাসি

আমি অবশ্য চেষ্টা করি আমার নিজের কাছে যেই ব্যপারগুলো ইন্টারেস্টিং লেগেছে সেইগুলো লিখতে। গৌরিকুন্ডে একটা কুন্ড আছে- সেইটা তো সবাই জানেো, কিন্তু আমাকে যেমন আকর্ষন করেছে গলিটা, তাই সেইটার কথাই ডিটেইলস লিখলাম আরকি। আর প্রচেষ্টা অবশ্যই জারি থাকবে। এই লেখাই তো আর শেষ ট্রাভেলগ না। ভূটান গেছিলাম না খাইছে

আর হয়তো আর কি কি দেখলাম, কেমনে গেলাম, থাকার জায়গার নাম, কোথায় খেতে হবে, কোথায় ঘুমোতে হবে, কোথায় ভালো শপিং করা যায়- এইসব লেখা যেতো, কিন্তু ওইযে আপনি বললেন... হাসি

বই লেখার কথা জানিনা কিন্তু

বাংলা ভাষায় বিখ্যাত লেখকেরা ভ্রমণের উপর যুগান্তকারী সব আবর্জনা লিখে গেছেন।

এইটা এক্কেবারে ঠিক কথা দেঁতো হাসি এখন যেমন উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের লেখাগুলো পড়ছি, ভদ্রলোক লেখেন ভালোই, বেটার দ্যান মেনি আদারস, কিন্তু এত ফ্ল্যাশব্যাক আর ফাস্ট ফরওয়ার্ড থাকে যে খেই হারিয়ে ফেলছি।

তবে যদি কখনো কিছু লিখতে হয়, আমার বেঞ্চমার্ক থাকবে ড্যালরিম্পল এর 'in xanadu' মার্কোপোলোর রুট ধরে ওভারল্যান্ড ট্রাভেল করা নিয়ে লেখা। কিযে সুন্দর! হাসি

কালো কাক এর ছবি

দারুণ !!!!!!! পড়ার সময় মনে হচ্ছিল আপনার সাথে সাথে চলেছি !!!

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ কালো কাক! যাবেনই তো আমার সাথে, ওডিন এর চোখ আর কান বলে কথা! দেঁতো হাসি

ফাহিম হাসান এর ছবি

চমৎকার ল্যান্ডস্কেপ দেখে ভালো লাগলো।

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ ফাহিম্ভাই! ছবিগুলো সব একটা নাইকন পয়েন্ট এন্ড শ্যুট দিয়ে তোলা। জায়গাগুলোর সৌন্দর্যের কণামাত্রও মনে হয় ধরতে পারে নাই। মন খারাপ

পাগল মন এর ছবি

অসাধারণ বর্ণনা আর অসাধারণ সব ছবি দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

ওডিন এর ছবি

আপনার মন ভাল করে দিতে পেরেছি বলে নিজেরই ভালো লাগছে। পড়ার আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ পাগল মন। হাসি

সুরঞ্জনা এর ছবি

এক নিঃশ্বাসে পড়লাম।

আরো প্রায় দেড় ঘন্টা হালকা চড়াই ভাঙ্গার পড়ে আমরা একটা আবার একটা বাঁক ঘুরলাম, আর তখন সবচেয়ে চমৎকার ব্যপারটা হলো। একেবারে ধাক্কা দেয়ার মতো। আর সত্যি বলতে কি, এই অভিজ্ঞতাটা আবার নেয়ার জন্যেই আমি আবার কেদারনাথ যেতে চাই। এবং বিকেলে নয়, সকালবেলা।

মোড়টা ঘুরতেই স্টেজের পর্দা ওঠার মতো আমাদের সামনে হঠাৎ করেই খুলে গেলো পুরো কেদার উপত্যকাটা। তিনদিকেই আকাশছোঁয়া পর্বত, আর মাঝখানে বিশাল মাঠের মত উপত্যকা।

আহ! কি চমৎকার প্রাণখোলা বর্ণনা। হাসি

অবশ্যই এই সিরিজটা একদম খাঁটি ঢাকাইয়া পরিব্রাজকের লেখা একটা ভ্রমণকাহিনী হবে। সেই বই সবার বাড়িতে বাড়িতে বুকশেলফ এ রাখা থাকবে, ছোটদের হিমালয়ের গল্প শোনানোর সময় তাদের মায়েরা এই কাহিনী পড়ে শোনাবে, আর ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মনে মনে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করবে যে, অবশ্যই তন্ময় কৈরীর মতো হিমালয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াতে হবে। হাসি

চলুক

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

ওডিন এর ছবি

আহা! তাই য্যানো হয়! তোমার মুখে রসোগোল্লা মিহিদানা চমচম ইত্যাদি নানারকম সুখাদ্য টপাটপ করে পড়ুক। আর সবশেষে এক কার্টন টলবেরন শয়তানী হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এই ব্যাটা ডাক্তার, গুগল মেরে গোটাকতক ছবি তুলে দিয়ে খুব কেদারগিরি দেখাচ্ছিস ?? !! লেখার রস গেলো কোথায় শুনি ?? ...

হেরো পটারের বই পড়িনি, তবে মুভিতে ডায়াগন এলি দেখে দারুণ লেগেছিলো।...

পনচো বানাতে পারেন আপনি ?? একটা বানায় দিয়েন তাহলে...

ঘোড়ার নাম দিলাম রোজিন্যান্ট আর সাধুবাবার নাম দিলাম অবিনাশবাবু দেঁতো হাসি

[পরের পর্বে সুদাসলে রস ফিরে পেতে চাই।]

ওডিন এর ছবি

রস সব চড়াই ভাঙ্গতে গিয়া শুখায়া গ্যাছেগা। এখন সব শক্ত খটখটা বাখরখানি মন খারাপ

পনচো বানানো কোন ব্যপার হইলো নাকি, একটা চারকোনা চাদর/কাপড়/করোগেটেড শিটের মাঝামাঝি মুন্ডু গলানোর মতো একটা গোলমতো ফুটো করলেই হয় হাসি

আমার আবার একটু নামকরনের বাতিক আছে, তোমারে কখনো কইছিলাম গোল্ডফিশ জেথ্রো, কাছিম হাইনরিখ আর কুত্তা 'চাক্কু'র কথা? চিন্তিত

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

এই সিরিজটায় কখনো মন্তব্য করা হয় নি মনে হয়। কিন্তু কী যে পছন্দের একটা সিরিজ, আহা হাসি

ওডিন এর ছবি

খাইছে! বলেন কি দেঁতো হাসি

পড়া আর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

নৈষাদ এর ছবি

সবসময়ের মত চলুক চলুক

ওডিন এর ছবি

হাসি

ধন্যবাদ নৈষাদ'দা

সংসপ্তক এর ছবি

তুরুপ হইয়াছে চলুক

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

ওডিন এর ছবি

নাকি! দেঁতো হাসি

তয় আঁন্নেরটার ধারেকাছেও না। শিজ্ঞির পরের পর্ব দ্যান মিয়া। আমার মতো দেড়যুগ লাগায়েন না হাসি

অপছন্দনীয় এর ছবি

অসাধারণ সব ছবি আর অসাধারণ সব বর্ণনা! তবে মন্দিরের ছবিটায় হতচ্ছাড়া সেল ফোন টাওয়ার সব বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে...

আর ইয়ে, ব্যাপারটা একটা কেন, এক ডজন মহাভারতের কাছাকাছি গেলেও যাবে, সমস্যা কোথায়? পাঠক হিসেবে দাবী জানিয়ে গেলাম, একাধিক মহাভারত সাইজের জন্য।

( বাংলাদেশ ভারতকে সাইজ করেছে বলে এক মগ চা অন দা হাউজ? ওটা পাকিস্তানের পাহাড়ী এলাকা হলে, আর আগেরদিন বাংলাদেশ পাকিস্তানকে সাইজ করলে উল্টো নিজের মুন্ডুটাও অন দা হাউজ দিয়ে আসতে হতে পারতো... ভাগ্যিস হাসি )

ওডিন এর ছবি

সেলফোন টাওয়ার থাকায় একটা সুবিধাসো হইছিলো, ঢাকায় ফোন করে পুলাপানরে হিংসায় জ্বালায়পুড়ায় দিতে পেরেছি! দেঁতো হাসি

আর এইটা শেষ করে দিতে হবে, কত জায়গা নিয়ে লেখা এখনো বাকি আছে! দন্ডকারন্য, চাঁদপুর, ছাগলনাইয়া, ভুটান, ... পেজেস টু রাইট বিফোর আই বাইট দ্য ডাস্ট! দেঁতো হাসি

( তা অবশ্য ঠিক, তবে ক্রিকেট জিনিসটা অ্যামন, আর তামিম যা ব্যাটিং করছিলো, পাকিস্তানেও এইরকম হইতে পারতো কিন্তু। হাসি )

সবজান্তা এর ছবি

ভালো ভালো কথা তো সবাই বলে ফেলসে। একই কথা বলে আর কী হবে দেঁতো হাসি

আমি একটা মজার ব্যাপার খেয়াল করলাম। যদি ভুলে না যাই, এই একই পথের কথা বলা আছে মহাপ্রস্থানের পথে, বইটাতে। এতো বছর পরের দুইটা বর্ণনা, তবু দারুণ লাগলো। আপনার লেখাটা পড়েই বইটা আবার বের করলাম... দারুণ !

ওডিন এর ছবি

তাই নাকি? হাসি আমি বইটা অনেক অনেকদিন আগে পড়েছিলাম। এখন হাতের কাছে নাই, কে জানি নিছে। পরে মিলায়া দেখতে হবে আশি বছর আগে আর পরের কি চেঞ্জ হইলো। হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মহাপ্রস্থানের পথের কথা মনে পড়লেও আমি ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেছি। ভ্রমণকারীর মানসিকতা যদি তীর্থযাত্রীর মতো হয় তাহলে অনেক খুঁটিনাটি মানবিক জিনিষই চোখ এড়িয়ে যায়। এই দিক দিয়ে ভবিষ্যত নরকবাসী ভ্রমণকারী বরং অনেক সৎ আর মানবিক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দময়ন্তী এর ছবি

ওদিকটায় এখনও যাওয়া হয় নি, যেয়ে ফেলতে হবে|
চটপট শেষ করেন লেখা| হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

দ্রোহী এর ছবি

সুহানের কথা সত্য। ওডিনের লেখার স্বভাবসুলভ রসের অনুপস্থিতিটুকু টের পেলাম। মন খারাপ

ব্যাপার না, সপ্তম পর্বে নিশ্চয়ই পুষিয়ে যাবে।

ওডিন এর ছবি

কি আর কমু দ্রোহীদা, আসলে মজার তেমন কিছু ঘটেনাই মন খারাপ আর এত ক্লান্ত ছিলাম যে আশেপাশে একটু ঘুরে ইন্টারেস্টিং জিনিসগুলো খুঁজে দেখবো, সেইটাও করা হয়নাই।

রানা মেহের এর ছবি

ছবিগুলো এসে লেখার স্বাদ অনেকটা নষ্ট করে দিয়েছে।
পড়ছি বৃষ্টি আর কুয়াশার কথা আর দেখছি রোদ ছবি। কেমন লাগে বলুন?
আর আপনার বর্ণনাই এতো জীবন্ত থাকে, ছবি খুব জরুরী নয় আসলে

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ওডিন এর ছবি

আমার সেইরকম মনে হয়ছে, কারণ ছবিগুলো পরের দিন সকালবেলা নামার সময় তুলেছিলাম। কিন্তু আবার ভাবলাম ছবিগুলো না দিলে হয়তো ব্যপারটা ঠিকভাবে বোঝানো যাবেনা, তাই দিলাম আরকি।

ব্যপারটা মাথায় থাকলো হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

উল্‌স্‌! অন্নেক দিন পর পড়লাম এই খুপ্প্রিয় সিরিজটা!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।