কিরণের দাদু

ওডিন এর ছবি
লিখেছেন ওডিন (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০১/২০১২ - ১১:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাসখানিক আগে ছোটভাইয়ের কল্যানে একটা কিন্ডল হাতে আসায় পড়ার নেশাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিন ধরে তাই অবসর সময়ে নিউক্লিয়ার অস্ত্র দিয়ে শহরজনপদ ধ্বংস করার আর ওয়াশিংটন ডিসিতে বায়োলজিকাল হামলার কাজ মুলতবি রেখে শুধুই পড়ছি। সিরিয়াস কিছু না, কমফোর্ট রিডিং যাকে বলে। পুরোনো সব সাইন্স ফিকশান আর ভূতের গপ্পো। তো এই গল্পটা পড়তে পড়তে মনে হলো এইটাকে কনটেমপরারি সময়ে ঢাকার পটভূমিতে এনে ফেলতে পারলে কেমন হয়? তাই গতকাল সন্ধ্যা আর রাতে একাডেমিক পড়ালেখা ফাঁকি দিয়ে এইটা অনুবাদ করে ফেললাম। স্টিফেন কিং-এর লেখা আমার খুবই পছন্দের একটা গল্প। যদি ভালো লাগে তাহলে সমস্ত কৃতিত্ব মূল লেখকের। যদি খারাপ লাগে তাহলে সব দোষ আমার। আর কোন চাচামিয়ার সবল হৃদযন্ত্র যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে আমি কোনভাবেই, আবার বলছি, কোনভাবেই দায়ী নই! হাসি

______________________________________________________________


কাশেম খন্দকার খুব মনোযোগ দিয়ে তার শাদা টয়োটা ভ্যানটা ব্যাক করার চেষ্টা করছিলো, সেইসময়ই সে বাচ্চাটাকে দোকানের দরজা ঠেলে বের হতে দেখলো। বছর পাঁচেকের মতন হবে বয়স, মুখে এমন একটা ভঙ্গি যেটা কাশেমের খুবই পরিচিত। ছেলেটা কান্না আটকানোর খুব চেষ্টা করছে, কিন্তু দেখে মনে হয় না চেষ্টাটা খুব একটা সফল হবে।

একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো কাশেম, নিজের উপর সেই ঘিনঘিনে ভাবটা আবার চলে এসেছে, যদিও প্রত্যেকবারই সফলভাবে কাজগুলো শেষ করার পরে অপরাধবোধটা একটু একটু করে কমে আসে। প্রথমবার সে প্রায় এক সপ্তাহ ঘুমোতে পারে নি, সারাটা সময় ভেবেছে জুনায়েদ চৌধুরীর কথা, বাচ্চাগুলোকে ওর কি জন্য দরকার এটা ভেবে। জিজ্ঞেস করেওছিলো একবার, ‘তোমার এত চিন্তা করার কি দরকার কাশেম- এনে দিবে, ক্যাশ নিয়ে যাবে- এত ভাবনাচিন্তা বন্ধ কর’- হেসেছিলো চৌধুরী, আর যদি নিজের ভালো চাও, এইরকম প্রশ্ন আর করো না- বলছিলো ওর চোখদুটো।

আর কখনো এ নিয়ে কথা বলেনি কাশেম, তবে চিন্তা করাও বন্ধ করেনি সে। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময়- ছটফট করতে থাকতো ও তখন, শুধু ভাবত যদি আর একটাবার সুযোগ পেত সে- নতুন করে সবকিছু শুরু করার। দ্বিতীয়বারও একইরকম খারাপ লাগাটা ছিলো, তিনবারের বার একটু কমলো সেইটা, আর চারবারের বার তো বাচ্চাটার পরিণতির কথা ওর মাথায়ই আসেনি, শুধু জানতো কাজটা শেষ করতে হবে। আজকেও চিন্তাটা জোর করে দূরে ঠেলে দিলো কাশেম, একটা বাজেরকম ঝামেলায় আটকানো সে, আর সামনের ওই ছোটখাটো ছেলেটা এই ঝামেলা থেকে বের হবার খুব বড় একটা উপায়।

আবারো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভ্যান থেকে নামলো সে, বাচ্চাটার দিকে ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো। যা ভেবেছিলো ঠিক তা না, সাতের কাছাকাছিই হবে বয়স, তবে খুব পাতলা আর ফ্যাকাশে ছেলেটা। তীব্র ফ্লুরোসেন্ট আলোর নীচে আরও বেশি ফ্যাকাশে লাগছে- কোনো অসুখবিসুখে ভুগছে নাকি? চোখে আতঙ্কের ছাপ। ভয়েই মনে হয় এমন হয়ে গেছে ছেলেটা, ভাবলো কাশেম। ভয় জিনিসটা ভালই চেনে সে, এই দুই বছরে ভ্যানের রিয়ারভিউ মিররে এই একটা জিনিস অনেকবারই দেখেছে।

ছেলেটা একটু পর পরই চোখ তুলে তাকাচ্ছে ওর আশেপাশের লোকজনের দিকে, কিন্তু কেউ ভ্রুক্ষেপও করছে না- শেষ সময়ের শপিং নিয়েই ব্যস্ত সবাই- সোওয়া আটটা বাজে, একটু পরেই দোকানের শাটারগুলো নামানো শুরু হবে। কয়েকজন মাঝবয়সী মহিলা বের হয়ে আসছে পাশের দোকানটা থেকে- হাতভর্তি কাগজের ব্যাগ, চেহারায় আত্মতৃপ্তির ছাপ- হয়ত চমৎকার একটা শপিং এর শেষে এইরকম হয়। স্পাইডারম্যানের ছবিওয়ালা টিশার্ট পরা বাচ্চাটা অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে- সে চাইছে কেউ ওকে দেখুক, বুঝতে চেষ্টা করুক যে কোথাও কোন একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে, কেউ তাকে জিজ্ঞেস করুক সে হারিয়ে গেছে কি না- ‘এইযে বাবু, আম্মু কোথায় তোমার,’ - এইরকম কিছু একটা।

কাশেম খন্দকার ছেলেটার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছিলো তখনই এক তরুন দোকানের দরজায় এসে দাঁড়ালো। কোন সেলসম্যান মনে হয় । এক হাত পকেটে- সিগারেটের প্যাকেট খুঁজছে। অস্ফুট স্বরে একটা গালি দিয়ে উঠল কাশেম, মনে হয় হাতছাড়া হয়ে গেল। তবে ভালো যে লোকটা ওকে ছেলেটার সাথে কথা বলতে দেখে নাই- নাহলে সর্বনাশ হলেও হতে পারত। একটু পিছনে সরে এলো সে, সেলফোন বের করে কথা বলার অভিনয় শুরু করলো। নজর রাখতে লাগলো লোক আর ছেলেটার দিকে। এদিকে বাচ্চাটার চোখে পানি চলে এসেছে- যদিও এখনও পুরোদমে শুরু করেনি কান্না। পাশ থেকে এক তরুনী ডেকে উঠলো লোকটাকে- হাসিমুখে এগিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে সে আলাপ জুড়ে দিলো মেয়েটার সাথে। মেয়েটাও হাত পা নেড়ে হড়বড় করে কি সব বলা শুরু করলো। কাশেমের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেল। যদিও দৃশ্যটা দেখতে ভালই লাগছে- তবে সে এইরকম একটা জীবনমরণ সমস্যার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে আর এইসব পোলাপান কি না চামবাজি করে বেড়াচ্ছে- এটা সে মেনে নিতে পারলো না! মনে মনে আরও কয়েকটা গালি দিলো সে।

আর এইসময় সে সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললো। বাচ্চাটা ফোঁপানো শুরু করেছে, যেকোন সময় চিৎকার শুরু করবে আর তখন লোকজন ব্যপারটা খেয়াল করবে। যা করার এখনই করতে হবে। যদিও একটু দূরেই দুইজন দাঁড়িয়ে, তারপরেও এইটুকু ঝুঁকি নিতেই হবে। ব্যপারটা কাশেমের ঠিক পছন্দ না কিন্তু আর চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে সে যদি শাহরিয়ারের টাকাগুলা শোধ না করে তাহলে যা হবে সেটা সে আরও পছন্দ করবে না।


ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলো কাশেম খন্দকার। নকল পিটার ইংল্যান্ডের শার্ট, সাধারণ খাকি প্যান্ট আর তার চেয়েও সাধারণ চেহারার মাঝবয়সী একটা মানুষ- যাকে কেউ কখনো হয়তো দ্বিতীয়বার ফিরেও দেখবে না। ঝুঁকে বাচ্চাটার দিকে তাকালো সে, মায়াভরা চোখ দিয়ে।
‘বাবাকে হারিয়ে ফেলেছো?’
‘ন-নাহ – দাদু, দাদুকে’
এখন ফোঁপানো শুরু করলো সে। মেয়েটা ফিরে তাকালো এইদিকে, চোখে জিজ্ঞাসা- ‘সব ঠিক আছে’- একটু হেসে ওকে আশ্বস্ত করলো কাশেম। একটা হাত আলতো করে ছেলেটার কাঁধে রাখলো সে। তারপর একটু ডানদিকে সরিয়ে আনলো- তার ভ্যানের কাছাকাছি। আড়চোখে লক্ষ্য রাখলো প্রেমিকযুগলের দিকে, যেরকম আলাপে মগ্ন- পিছনে বোমা ফাটলেও মনে হয় টের পাবে না ওরা।

‘দাদু কোথায়? কতক্ষন দেখি না, কোথায় গেল?’
‘এইতো আঙ্কেল, এইখানেই তো ছিলো। চলো এখনি নিয়ে যাচ্ছি’
উজ্জ্বল হয়ে উঠলো বাচ্চাটার মুখ, আশা নিয়ে কাশেমের দিকে তাকালো সে-
‘সত্যি, সত্যি আঙ্কেল?’
‘অবশ্যই সত্যি, এইরকম হারানো দাদুদের খুজে বের করাই তো আমার কাজ’ আবার মিষ্টি করে হাসলো কাশেম।‘ তোমার দাদু কি রকম জামা পরেছিলেন?’
‘স্যুট, দাদু বাইরে বের হলে বেশিরভাগ সময় স্যুটই পরে’- বাচ্চাটা এমনভাবে বলছে যেন কাশেম খন্দকা্রের এই ইনফরমেশন গুলো জানা খুব জরুরী।
‘কালো স্যুট পড়েছেন নাকি? এইরকম কাকে তো যেন দেখলাম মনে হল’।
আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো বাচ্চাটার মুখ- একটু হাসলো বলেও মনে হয়। ‘কোথায়?’ হঠাত করে আবার দরজার দিকে রওনা দিলো সে। কাশেম অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালো- তার ইচ্ছে করছিলো তখনি পিচ্চিটাকে ধরে জোর করে ভ্যানে ঢুকিয়ে ফেলে। কিন্তু লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষন করবে এমন কিছু করা যাবে না । এটাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। হাত তুলে পার্কিং লটের দিকে দেখালো সে। গোটা পঞ্চাশেক গাড়ি সেখানে। ‘ওইযে- ওইদিকে মনে হয় দেখলাম তাকে’

‘কিন্তু দাদু ওইখানে কেনো যাবে- ওই লাইটগুলার কাছে?’ পিচ্চি এমনভাবে জিজ্ঞেস করলো যেনো হয় কাশেম নাহয় তার দাদু, অথবা দুজনেরি মাথা খারাপ।‘আমি কি জানি?’ কাশেম বললো- তার মগজ এখন ঝড়ের গতিতে কাজ করছে-‘বুড়ো মত লোক, কালো স্যুট, সবুজ টাই-’
‘উঁহু, দাদুর টাই নীল, আমার সবচে’ পছন্দের রঙ’
‘উমম- তা নীলই হবে হয়তো, এই সোডিয়াম লাইটে রংটং ঠিক বোঝা মুশকিল, এসো উঠে পড়ো- তোমাকে নিয়ে যাই তার কাছে’ –

‘আঙ্কেল, আপনি ঠিক জানেন তো- দাদু গাড়িগুলার দিকে কেনো যাবে? আমাদের তো গাড়ি নাই। ’
‘দেখো বাবু, আমি কি জানি, আমার কাছে মনে হলো যাকে দেখলাম, তোমার দাদুই হবে হয়ত তাই-নিজেই একটু খুঁজে দেখ- আশেপাশেই কোথাও আছে’ বলে কাশেম হাঁটা ধরলো উল্টোদিকে। টোপ গেলেনি ছেলেটা, আর বেশিক্ষন এখানে থাকাও যাবে না- ওই ছেলেমেয়ে দুটো আবার ঘুরে ঘুরে দেখছে।
‘দাঁড়ান আঙ্কেল, দাঁড়ান’ দৌড়ে এলো ছেলেটা- ‘দাদুকে বলছিলাম খুব তেষ্টা পেয়েছে, বললো আমাকে একটা ড্রিঙ্কস এনে দেবে- মনে হয় ওইদিকেই কোথাও গেলো।’

কাশেম হেসে ঘুরে দাঁড়ালো, ‘আরে, আমি কি আসলেই তোমাকে একলা রেখে যাবো নাকি। চলো’


এইরকম মলিন শাদা রঙের টয়োটা ভ্যান ঢাকা শহরে হাজারখানিক আছে। সামনের উইন্ডস্ক্রিন বাদে সবগুলো জানালা কালো, কাঁচের সাথে একদম মাথা ঠেসে না ধরলে ভিতরে কি আছে দেখা অসম্ভব। ভ্যানের দরজা খুলে দিলো সে- ‘উঠে পড়ো’- খানিকটা চিন্তা করে ঢুকে বসলো ছেলেটা। 'আচ্ছা? কি নাম তোমার, আঙ্কেল ' আমাকে সবাই কিরণ বলে।' খুব মৃদুস্বরে জানাল ছেলেটা।

'আচ্ছা! গ্ল্যাড টু মিট ইউ, কিরণ সাহেব' কাশেম কোনমতে একটু মিষ্টি হাসিও দিতে পারলো- আর তখন নিজেই একটু শিউরে উঠলো- এই ভয়াবহ কাজগুলোতে দেখি ও অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে!


কাশেম খন্দকারের সাদাসিধে লাইফের সমস্যা একটাই- একটু আধটু তাসের নেশা। শুধু তাস নয়, যেখানে বাজি ধরা হয় সেইরকম তাস। এইজন্য ওর বায়িং হাউসের চাকরি গিয়েছে, পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া ফ্ল্যাটটাও আর নেই। এখনও তাকে জেলে যেতে হয়নি কিন্তু শাহরিয়ার সাহেবের সাথে ঝামেলায় জড়ানোর চাইতে জেলে যাওয়া মনে হয় অনেক ভাল ছিলো।

সেই রাতে একটু বেসামাল হয়ে গেছিলো কাশেম। সে জানে খেলা শুরুর প্রথম প্রথম হেরে যাওয়া ভাল। জুয়ায় হেরেছো, পয়সা শেষ, বাড়ি যাও, কয়েকটা টকশোর বকবকানি শোন, ঘুমিয়ে পড়। কিন্তু প্রথমে কিছু জিতলেই সমস্যা- আরো জিততে হবে। সেই রাতে কাশেমের দেনা দাড়ালো দুই লাখের কাছাকাছি। সে নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলো না- বিশ হাজার না, পঞ্চাশ হাজার না- একেবারে দুই লাখ টাকা! এত টাকা জুয়ায় হেরেছে ভেবে কেমন যেন একটু মজাও পাচ্ছিলো সে, কিন্তু তার ফূর্তি উবে গেল পরদিন যখন তাকে শাহরিয়ারের সামনে ধরে নিয়ে আসা হলো।

‘দিয়ে দিবো সব- আমি- দুই দিনের- খুব বেশি হলে আর একটা সপ্তাহ’ তোতলানো শুরু করেছিল সে। গর্জে উঠেছিলো শাহরিয়ার- ‘কুনখান থিকা দিবা তুমি? মনে করসো তুমার মত পিছলা লোকরে আমি চিনি না? ধার করবা? ধার করার মত কেউ কি আর বাকি আসে তুমার? সাহস থাকলে তো অনেক কিছুই কইরা আনতে পারতা- সেইটাও ত নাই তুমার। আর যদি কোনমতে দুইশ টাকাও পাও, কি করবা অইটা নিয়া?’
‘আপনার কাছে দিব- তক্ষনি দিয়া দিব’ চোখভর্তি পানি তখন কাশেমের।
‘না! ওইটা দিয়াও তুমি জুয়া খেলবা- আর আমারে অজুহাত দেখাইবা। তুমারে চিইনা গেছি আমি কাশেম খন্দকার’।

কান্না আর ধরে রাখতে পারেনি সে। তখন শাহরিয়ার কয়েকটা কাগজ ঠেলে দিয়ে বলেছিলো ‘দেখ কাশেম, তুমার জন্য আমি খালি এইটুকু করতে পারি, এই ব্যাটা- কিসব ওষুধ না হাবিজাবির ব্যবসা করে- একজন লোক খুঁজতেছে, যে সবরকম কাজকাম করতে পারব, দরকার হইলে বেআইনী কাজও- আর তুমারে দিয়া এখন তো সবই পসিবল-নাকি?’ বলে বিশ্রীভাবে হেসে উঠেছিলো সে।

কাশেম দেখা করেছিলো জুনায়েদ চৌধুরীর সাথে, ফারমাসিউটিক্যালের সাথেও কি এক ‘অরগান’ এর ব্যবসা করে ওই লোক, বুঝে উঠতে পারে নি সে সবকিছু, শুধু অফারটা শুনেছিলো, আর টাকার অঙ্কটা- তার দেনার থেকেও অনেকখানি বেশি- আর সেইদিন থেকেই এই জীবন শুরু।


কাশেম আস্তে আস্তে পার্কিং পেরিয়ে বড় রাস্তার কাছে দাঁড়ালো, তারপর সামনের নিরব রাস্তাটায় ঢুকে পড়লো। ‘এদিকে কেনো আসলাম আমরা’- ছেলেটার প্রশ্ন। ‘ওইযে গাড়িগুলো দেখছো- ওইদিকেই কোথাও উনাকে দেখলাম মনে হয়’ দ্রুত জবাব দিল সে। একটু যেন ভরসা পেলো ছেলেটা। আবারও মন খারাপ করা অনুভুতিটা ঘিরে ধরলো কাশেমকে। সে তো কোন অসুস্থ খুনি বা দানব না- শুধু একটা সাধারণ মানুষ যে একটা খুব বাজেরকম ঝামেলায় পড়েছে। আর এইবার দুই লাখ না- অঙ্কটা এবার তিনের ওপরে- আর আজকের পরে তাকে এইরকম আরও দুই বার বের হতে হবে। তারপরে আর এইসব না- সে নিজেকে প্রবোধ দিলো- তবে এই প্রবোধ দেওয়া অবশ্যই প্রথমবারের মতো না।

শুনশান রাস্তাটায় ভ্যান পার্ক করলো ও। দুইপাশে উচু দালান- বেশিরভাগি অফিস আর এখন রাত সাড়ে আটটার পর একদম নির্জন। একটু আওয়াজ হলেও সেইরকম সমস্যা হবে না মনে হয়। কাশেম সাবধানে গ্লাভ কম্পার্টমেন্ট থেকে স্টীলের একজোড়া হ্যান্ডকাফ বের করল আর পিছনে ফিরে বললো ‘আঙ্কেল, পিছনের বাক্সটা থেকে আমার চশমাটা একটু দাওতো, আমি আবার চশমা ছাড়া ভালো দেখতে পাই না’। ছেলেটা হাত বাড়িয়ে বাক্সটা খোলার চেষ্টা করতেই কাশেম ওর হাতে হ্যান্ডকাফটা আটকে আরেক দিক আটকে দিল ভ্যানের সামনের সিট দুইটার পিছনে আড়াআড়ি করে বসানো রডটার সাথে। প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে পারেনি ছেলেটা- তারপরই একটা বিকট চিৎকার করে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো- যদিও বাঁধা থাকায় কাশেমের বাম হাত কামড়ে দেয়া ছাড়া বেশি কিছু করতে পারলো না।

কাশেম বাচ্চাটাকে একটু হাল্কা ভাবেই নিয়েছিল- এইরকম অপুষ্ট দূর্বল একটা বাচ্চা আর কিইবা করতে পারে, আগেরগুলাকে ধমক দেয়াতেই কাজ অনেকখানি হয়ে গিয়েছিলো - কিন্তু এটা যে এইরকম প্রতিরোধ গড়ে তুলবে তা সে ভাবেনি। তীব্র ব্যথায় চোখে অন্ধকার দেখলো সে- কিছু চিন্তা করার আগেই ছেলেটার দিকে একটা ঘুষি চালালো। বুকে আঘাত পেয়ে সিটের ওপর গিয়ে পড়লো সে। কাশেম দেখলো ছেলেটার মুখে তার রক্ত লেগে আছে, স্পাইডারম্যানের টিশার্টও ভিজেছে কিছুটা। সে তার হাতের দিকে দেখলো, কামড়ে তার হাতের উল্টোপিঠের অনেকখানি ছিঁড়ে নিয়েছে ছেলেটা- কবজি থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত। রক্ত চুইয়ে পড়ছে- যদিও খুব বেশি না। রুমাল বের করে হাতটা বেধে নিলো সে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ড্রেসিং করতে পারলে ভাল হোত- যেকোন কিছুর কামড়ের মধ্যে মানুষের কামড়টাই নাকি সবচে খারাপ- কোথায় যেন পড়েছিলো সে। ভ্যান স্টার্ট দিলো আবার, ডেলিভারী দিতে হবে মিরপুর, কিন্তু ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে যাবে সে না। বেড়িবাঁধের রাস্তাটা ধরবে-বোট্যানিকালের পেছনের অংশ দিয়ে মিরপুরে ঢুকে যাবে। রাতের বেলা বেশ নিরিবিলি থাকে এলাকাটা।


ছেলেটা ঝিম মেরে পড়ে আছে। কাশেম একটু চিন্তায় পড়ল- আবার কিছু হয়ে গেলো না তো। মরেটরে গেলে তো আরেক বিপদ। নাহ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে বলেই তো মনে হচ্ছে। মনে মনে সে প্রশংসা করলো বাচ্চাটার, শুকনা প্যাকাটির মতো হলেও ভালই ফাইট দিয়েছে। এর ভাগ্য হয়ত অন্যরকম হলেও হতে পারত। কি আর করা। দুনিয়াটাই এইরকম, ও একটু কম বয়সেই বুঝলো আরকি।
খুব রিলাক্স মুডে ড্রাইভ করছে কাশেম। আশুলিয়ার মোড়ে এসে বেড়িবাঁধের রাস্তা ধরলো সে। নভেম্বর এর শেষ- হাল্কা কুয়াশায় মোড়া চারদিক। হাতে ব্যথা থাকলেও এখন তার বেশ ভালো ভালো লাগছে, ভাবছিলো -কালকে আরেকবার নাহয় গিয়েই দেখা যাক তাসের আড্ডায়- চিন্তার সুতা কেটে গেল ছেলেটার কর্কশ কন্ঠে-

‘কপালে খারাবি আছে তোমার’
আবার ফোঁপানো শুরু করেছে ছেলেটা- একটু হাঁপাচ্ছেও মনে হয়- কে জানে যক্ষাফক্ষা আছে নাকি-
যাক এইসব ভাবনার সময় এখন আর-
‘দাদু যদি তোমাকে খুঁজে পায়- খুব খারাপ হবে’

এবার বিরক্ত হলো কাশেম, ‘চোপ থাক পিচ্চি- একটা কথাও না’
এবার হাতের হ্যান্ডকাফটা ধরে সে মারল একটা হ্যাঁচকা টান- কর্কশ আওয়াজ করে উঠল সেটা।
‘থাম এবার, অনেক হইছে- এইরকম করে কোন লাভ নাই, ছুটবে না ওইটা’

কিন্তু ছেলেটা আবার জোরে টান দিলো- আর এইবার এমন একটা শব্দ হলো যেটা কাশেমের মোটেও ভালো লাগলো না। সে খেয়াল করলো রডটা একটু বাঁকামতন হয়ে গেছে।

আজব, সে ভাবলো, একে তো এইটার এইরকম ধারালো দাঁত, তারপরে গায়েও তো মনে হয় মোষের মতো শক্তি, দেখে এমনেই মনে হয় অসুখে ভুগতেসে- তাহলে যখন ভাল থাকে তখন এর কি অবস্থা?

‘থামবি’ একটা হুঙ্কারই ছাড়ল কাশেম।
‘না’ বলেই আরেকবার টান। আর এইবার কাশেম বিস্ময়ের সাথে দেখলো রডটা আসলেই আরেকটু বাঁকা হয়ে গেছে- কেমনে সম্ভব এইটা? ভয় – নিজেই নিজেকে উত্তর দিলো সে। ভয়ের জন্যই এটা করতে পারছে সে। বিপদে পড়লে লোকজন অনেক কিছু করে ফেলতে পারে- সারভাইভাল মেকানিজম- কিন্তু এর থেকে ভয় পাওয়া বাচ্চারাও তো ছিলো- ওইগুলা তো কখনো এইরকম করতে পারে নাই।

কাশেম গ্লাভ কম্পার্টমেন্ট থেকে একটা সিরিঞ্জ বের করে ছেলেটার সামনে নাড়ালো- ‘এটা কি দেখেছিস- তুই কি চাস যে তোকে সুঁই দেই?’ এইবার ভয় পেয়ে মাথা নাড়ল ছেলেটা। একটু স্বস্তি পেলো কাশেম- যতই শক্তি দেখাক, একটা বাচ্চাই তো। অন্যসব বাচ্চাদের মত এটাও ইঞ্জেকশন দেখলে ভয় পায়। তবে সে নিজেও এটা ব্যবহার করতে চায় না- উপরের কড়া নির্দেশ- ঘুমের ওষুধ দিলে ‘অরগান’ নাকি ‘ড্যামেজ’ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

কাশেম নরম গলায় বললো- ‘দেখ তুমি যদি টানাটানি বন্ধ কর, তাহলে এই সুঁইটা আমি আবার রেখে দিব, ঠিক আছে?
‘আচ্ছা’- ছেলেটা খানিকক্ষন ভেবে বললো।
‘খুব তাড়াতাড়ি তোমার মাকে দেখতে পারবে।’
‘আমার মা নাই’- এবার প্রায় ফিসফিসিয়ে- কিন্তু কাশেম মনে হয় না কথাটা শুনতে পায়।
সে ভ্যানের একটু স্পীড একটু বাড়িয়ে দেয়।


হাল্কা কুয়াশা পড়েছে, তার সাথে চাঁদের আলো মিশে অনেকটা অপার্থিব একটা দৃশ্য। হেডলাইটের আলো খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। একজোড়া ফগল্যাম্প মনে হয় কিনতে হবে…

‘দাদুর অনেক শক্তি, তুমি তো জানো না’
কাশেমের ভাবনার জাল ছিড়ে যায়।
হুম, একা একা টয়লেট সারতে পারে বুইড়া -ভেবে একটু হাসল কাশেম
‘দাদু আমাকে ঠিকই খুঁজে নিবে- দেখবা’
‘আচ্ছাহ, তাই নাকি’- এবার অনেকটা মজাই পাচ্ছে সে
‘দাদু আমার গন্ধ টের পায়’

অবশ্য কাশেম বিশ্বাস করলো। সে নিজেই বাচ্চাটার গায়ের গন্ধ পাচ্ছে। এমনিতেই আতঙ্কের একটা কিরকম জানি আঁশটে গন্ধ আছে- সে নিজেই তার আগের ‘এক্সপিডিশন’গুলাতে ব্যপারটা বুঝতে পেরেছিলো, কিন্তু এই ছেলেটার গায়ের গন্ধ একটু অন্যরকম- ঘাম, কাদামাটি আর খানিকটা ব্যাটারী এসিডের মতন- কেমন অপার্থিব একটা গন্ধ। সবমিলিয়ে কেমন আজব জানি এবারের বাচ্চাটা। এখন আর এসব ভালো লাগছে না ওর। কোনমতে কাজটা শেষ করতে পারলে হয় এখন।

উত্তরার পেছনে চলে এসেছে কাশেম, আর মিনিট পনেরোর মধ্যেই পৌছানো উচিত। এইদিকে রাস্তায় ভীড় নেই বললেই চলে। আবার সে ভাবতে লাগলো গাড়ির জন্য ফগল্যাম্প কেনা দরকার কি না-

‘দাদু কিন্তু উড়তেও পারে’
‘হাহ’ – এইবার আরো বেশি মজা পেল কাশেম- ‘স্পাইডারম্যানের মত নাকি?’
‘তুমি জানো না-স্পাইডারম্যান উড়তে পারে না, কিন্তু আমার দাদু ঠিকই পারে’
‘শোন- অনেক হইসে! এইবার চুপ করবি পিচ্চি- নাহলে কিন্তু সুই দিয়ে-’

কথা শেষ করার আগেই ইঞ্জিনের মৃদু শব্দ ছাপিয়ে একটা নতুন শব্দ শোনা যায়- অনেকটা পাখির ডানা ঝাপটানোর মতন-
‘দাদু’ উল্লাসে চিৎকার করে ওঠে ছেলেটা।
‘রাখ তোর দাদাদাদু- চুপ, একদম চুপ!’ চিৎকার করতে গিয়ে গলা ভেঙ্গে যায় কাশেমের। ভয় পেতে শুরু করে সে, অস্বাভাবিক- জান্তব একটা ভয়। পেছনে তাকায় সে, ছেলেটার এখন একান-ওকান জোড়া একটা হাসি- আবছা আঁধারেও ওর খুব শাদা, ঝকঝকে, বড় দাঁতগুলো দেখা যাচ্ছে। বড় শব্দটা মনে হয় ঠিক না, লম্বা - হলেও হতে পারে- বিশেষ করে উপরের পাটির পাশের দুইটা দাঁত-

দাদুকে বলছিলাম খুব তেষ্টা পেয়েছে
কিন্তু দাদু ওইখানে কেনো যাবে- ওই লাইটগুলার কাছে
দাদু আমাকে ঠিকই খুঁজে নিবে- দেখবা
দাদু আমার গন্ধ টের পায়
দাদু কিন্তু উড়তেও পারে

ধপ করে ভ্যানের ছাদের ওপর ভারি কিছু একটা এসে পড়ে।
‘দাদু’- আবারও তীব্র উল্লাসে চিৎকার করে ওঠে ছেলেটা।
জোরে ব্রেক কষে কাশেম, পুরনো ব্রেকগুলো তারস্বরে প্রতিবাদ জানায়।
একটা নিকষ কালো ছায়া উইন্ডশিল্ড অন্ধকার করে দেয়, তারপরেই পাথর হয়ে যাওয়া কাশেম শুনতে পায় তার পাশের দরজায় আঁচড়ানোর শব্দ-

দাদু কিন্তু উড়তেও পারে

‘আমাকে ধরে এনেছে দাদু!’ তারস্বরে চিৎকার শুরু করলো ছেলেটা ‘দুষ্টু লোকটা আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে, খারাপ লোক, খুব দুষ্টু লোক!’
তুই বুঝবিনারে পিচ্চি, বলতে চাইল কাশেম, সিরিঞ্জটা বের করে আনলো সে, আমি খারাপ না, দুষ্টুও না, শুধু একটা সাধারণ মানুষ, একটা খুব বাজেরকম ঝামেলায় পড়েছি।

‘দুষ্টু লোক, দাদু- খুব দুষ্টু লোক’

একটা হাত, অবশ্য অস্বাভাবিক লম্বা কালো ধারালো নখওয়ালা জিনিসটাকে যদি হাত বলা যায়, ডানদিকের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকলো আর কাশেমের হাত থেকে সিরিঞ্জটা ছিনিয়ে নিয়ে গেলো, সাথে হাতের খানতিনেক আঙ্গুলও। তারপরেই পুরো দরজাটাই দুমড়ে টেনে খুলে ফেললেন এই গল্পের তৃতীয় প্রধান চরিত্র। কাশেম শুধু দেখল খুব লম্বা একজন লোক, দুইপাশে কালোমতন দুটো ডানাই হবে হয়তো, - তবে খেয়াল করার মত ব্যপার হল যে লোকটা পরেছে স্যুট জাতীয় কিছু একটা, আর তার টাই গাঢ় নীল রঙের- ছেলেটা ঠিকই বলছিলো তাহলে।

লোকটা কাশেমকে টেনে গাড়ি থেকে টেনে নামালো, ধীরে ধীরে দুই কাঁধ ধরে মুখের সামনে নিয়ে এলো ওকে, ধারালো নখগুলো ওর শস্তা শার্ট ছিঁড়ে কাঁধের মাংসে ঢুকে যাচ্ছে- কাশেম এখন সেই গন্ধটা খুব তীব্রভাবেই পাচ্ছে- মাটি, ঘাম আর… আর…।

‘আমার নাতিটা একটা ট্রান্সফর্মারের খেলনা চেয়েছিলো-’ খুব নিচুস্বরে বলছে লোকটা, যেন একটা শপিং মলে দাঁড়িয়ে আলাপ করছে কাশেমের সাথে- ‘ওইযে- সবসময় টিভিতে দেখায়- রোবটগুলা গাড়ি হয়- প্লেন হয়- খুব শখ ওর- অন্য বাচ্চাদের মতই, তুমি কেনো ওকে এত কষ্ট দিলে? কি ক্ষতি করেছি আমি তোমার? তোমার উচিত ছিলো ওকে একা থাকতে দেওয়া, তোমার উচিত ছিলো আমাদের একা থাকতে দেওয়া।’

কাশেম এখনও চিৎকার করছে, কিন্তু সে নিজে সেটা শুনতে পেলো না- বরং সে শুনলো স্নেহময় পিতামহ তাঁর পৌত্রকে জিজ্ঞেস করছেন পিপাসা পেয়েছে নাকি। ছেলেটা বলছে খুব, অনেক। পাজি দুষ্টু লোকটা তাকে এত্তখানি ভয় পাইয়ে দিয়েছে, ওর গলা শুকিয়ে একদম কাঠ। খুব খারাপ লোক। অনেক তেষ্টা। কাশেম লোকটার লম্বা বুড়ো আঙ্গুলটা পলকের জন্য দেখতে পেলো, তারপরেই তার থুতনির নীচে ধারালো নখটা অনুভব করলো- আস্তে আস্তে বসে যাচ্ছে। এরপরে আর কিছুই বুঝতে পারলো না সে।

শুধু দৃষ্টি ঝাপসা হতে হতে একদম অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার আগে সে দেখতে পেলো ছেলেটাকে- আঁজলা পেতে কিছু একটা ধরার চেষ্টা করছে সে, আর লোকটা পরম স্নেহে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে- ওর দুই চোখে টলটল করছে গাঢ় মায়া।

_______________________________________________

মূল গল্পঃ ‘পপসি’
লেখকঃ স্টিফেন কিং
সংকলনঃ নাইটমেয়ার্স এন্ড ড্রিমস্কেপস


মন্তব্য

শিশিরকণা এর ছবি

আমি ভাবছিলাম দাদু সুপারম্যান। দেঁতো হাসি

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ওডিন এর ছবি

সুপারম্যানই তো দেঁতো হাসি কালো সুট আর নীল টাই পড়া

খেকশিয়াল এর ছবি

দারুণ কমরেড! দারুণ হইছে! পপসি আমি অনুবাদ পড়ছিলাম। তোমার রূপান্তরটা বেশ মজা পাইলাম। বন্ধু নাভেদও এইটার অনুবাদ করছিলো, সচলেই। এইবার অভিশপ্ত বিলাইয়ের কাহিনী চাই দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ওডিন এর ছবি

খাইছে! কই সেই অনুবাদ! লিঙ্ক দাউ দেঁতো হাসি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ইয়াপ! কই সেই অনুবাদ? লিংক চাই!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

খেকশিয়াল এর ছবি

http://www.sachalayatan.com/naved/20827

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তাপস শর্মা এর ছবি

জাস্ট হ্যাটস অফফ ম্যান... এককথায় চমৎকার...

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ তাপস'দা। এইটা আমার জীবনের দ্বিতীয় অনুবাদ-অপচেষ্টা। এখন আরেকবার পড়ে দেখলাম- কিছু কিছু জায়গায় ক্যামন জানি ঠেকছে। দেখি, পরেরবার আরো পলিশড হবে বলে আশা করা যায়। হাসি

সত্যপীর এর ছবি

ঝরঝরে অনুবাদে একদম পাঁচতারা হাততালি

..................................................................
#Banshibir.

ওডিন এর ছবি
রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

উত্তম জাঝা!

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ ভ্রাতঃ

উচ্ছলা এর ছবি

একটানে পড়ে শেষ করলাম। একটানে পড়ার মতই এই লেখাটা।

কোথায় পলিশ করতে হবে, গরীব মানুষ আমি বুঝলাম না ইয়ে, মানে...

আমার কাছে তো এটাকে 'পারফেক্ট' মনে হল হাসি

ওডিন এর ছবি

ইয়ে মানে রিভাইজ করতে গিয়ে দেখলাম অনেক জায়গায় ক্যামন ক্যামন জানি লাগছে হাসি

'পারফেক্ট' বলার জন্য ধন্যবাদ

জিজ্ঞাসু এর ছবি

দারুণ !!

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

ওডিন এর ছবি

থ্যানক্স!

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

জটিইইইইইইললল!! পুরা 'লেট দ্য রাইট ওয়ান ইন' কেইস, কিন্তু তার থেকে অনেক অনেক মারাত্মক! একবারের জন্যেও আমার কিন্তু মনে হয়নি যে বিদেশি কিছু পড়ছি! তবে ঢাকার জন্যে অ্যাডাপটেশনে একটু গোলমাল আছে এখন মনে হচ্ছে, আশুলিয়ার দিকটাও কি আর নয়টার দিকে শুনশান হয়? রাজশাহীতে এনে ফেলা উচিত! শয়তানী হাসি (শয়তানী হাসির ইমোটা কাজ করছে না!)

এইবার সেই অরিজিনিয়াল গল্পটা দাও! সেই যে রাত দুপুরে একা ডাক্তার, শুনশান হাসপাতাল করিডর, আর একটা 'বাকেনেকো'...!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ওডিন এর ছবি

পুরো জায়গাটা বনানীর পুরোনো এনএসইউ এর আশেপাশে ভেবে লেখা। শুনশান অফিস বিল্ডিং মার্কেট সব খাইছে

আমার কল্পনাশক্তির অভাব। মৌলিক লেখা আমাকে দিয়ে হবে না মোস্ট প্রবাবলি মন খারাপ

তাসনীম এর ছবি

চমৎকার লাগলো। আমি অরিজিন্যালটা পড়িনি, কিন্তু তোমার লেখা টান-টান হয়েছে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ তাসনীম ভাই হাসি

হিমু এর ছবি

এটা একটা টেলিফিল্ম হলে মন্দ হতো না। কাশেমের ভূমিকায় আসিফ নজরুল ভাইয়া আর দাদুর ভূমিকায় মতিউর রহমান ভাইয়াকে দারুণ মানাতো।

বাপ্পীহা‌য়াত এর ছবি

আর কিরণ চরিত্রে আমাদের ধুগো দেঁতো হাসি

ওডিন এর ছবি

কোন মতিউর, নিজামী অর আযমি? দেঁতো হাসি

ফাহিম হাসান এর ছবি

খাসা হয়েছে, বেশ ঝরঝরে।

ওডিন এর ছবি

থ্যাঙ্কস ফাহিম ভাই! হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চাল্লু হয়েছে বেশ। বিদেশী গল্প আমাদের দেশে নিয়ে এসে অনুবাদ করা হলে সেইগুলা দারুণ লাগে হাসি

[ফেসবুক মেসেজ দেইখেন।]

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ প্রিয় গল্পকার!

আর আরেকটা ব্যাডভেঞ্চার গল্পের অপেক্ষায়... হাসি

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

দারুণ হয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ, পড়ার জন্য হাসি

সাফি এর ছবি

সুস্বাদু

ওডিন এর ছবি
ধূসর জলছবি এর ছবি

খুব ভাল লাগল । চলুক

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ, পড়ার জন্য হাসি

guest writer এর ছবি

এক কথায় অসাধারণ।মূল গল্প আমি পড়িনি,তাই ভাল লাগার মাত্রা আরও বেশি।
বাকি সচলরা যেসব গল্পের অনুবাদ দাবি করেছে সেগুলোর অনুবাদও যদি সময় সুযোগ মত করে ফেলেন তবে আমাদের মত কিছু আমজনতার সুবিধা হয়।
আমাদের আর বিদেশ যাবার সংগতি বা এদেশে বসেই ইংরেজি বইয়ের পাঠ্যাভাস গড়ে তোলা কোনটাই হবে না।

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার জন্য! হাসি

আর বই পড়তে বিদেশ যেতে হয় নাকি? সোপা/পিপাকে মধ্যমা দেখিয়ে ই-বই নামাতে থাকেন। আর ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি বাংলার পাশে ইংরেজি পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরী। আরেকটা নতুন দিগন্ত খুলে যাবে, তাই না? বাংলায় তো আর সব বিদেশি বই পড়তে পাবেন না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যাক, একই দিনে তোমার আর কৌশিকের গল্প পাওয়া গেলো! ভ্রমণাভিজ্ঞতা পাচ্ছিনা অনেক দিন হয়। ঠিক করে বলতে গেলে তোমার নিয়মিত লেখা পাই না অনেক দিন হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ওডিন এর ছবি

ভুটান আর লাদাখ নিয়ে লিখবো ভেবেও শুরু করতে পারছি না, খুব ঝামেলা যাচ্ছে কাজ নিয়ে, আর পরীক্ষাও সামনে। তবে অগাস্ট থেকে আবার পুরোদমে শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি। লেখালেখি/ঘুরোঘুরি সব হাসি

আশালতা এর ছবি

সব্বাই যে বলে ওডিন ভালো লেখে, খুব ভুল কথা বলে। ওডিন ম্রাত্মক ভালো লেখে। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

ওডিন এর ছবি
সবজান্তা এর ছবি

আরে কমরেড! জোস!

ঢাকার বাইরে থাকার কারণে আপনার লেখাটা ওইসময় পড়া হয় নাই- আজকে অফিস শেষে, অফিসে বসে পড়লাম। এখন বাসায় এসে মন্তব্য করতেসি।

আপনার অনুবাদ পড়ার পর জাস্ট কৌতুহল থেকে মূলটা নামিয়ে চোখ বুলালাম। সংলাপের ক্ষেত্রে আপনি মনে হয় ফরম্যাটটা একটু পালটে নিয়েছেন, যেটায় গল্পটা আরো ভালো লেগেছে কারণ ইংরেজি সংলাপের স্টাইলের সাথে বাংলা সংলাপের স্টাইলে যে তফাৎ সেইটা পুরোপুরি মূলানুগ অনুবাদে একটু বিরক্তিকর লাগে। এছাড়া চরিত্রের নাম বদলিয়ে যে দেশিয় একটা আমেজ আনছেন, সেইটা, অনুবাদ হওয়া সত্বেও গল্পটার সাথে পাঠকের দূরত্ব কমিয়ে আনছে

আরো অনুবাদ আসুক। অনেকদিন পর স্টিফেন কিং পড়া হইলো আপনার কল্যাণে। ডাংকে।

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ কমরেড! হাসি

এইটাকে সেগুনবাগান প্রকাশনীর ভাষায় বলতে পারো 'রূপান্তর'। তবে তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে অনুবাদ ট্যাগ টা না দিয়ে, লেখার শেষে আন্ডারস্কোরের নিচের তিনটে লাইন না লিখে কিচিকিচি ফন্টে 'বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে' লিখে দিলে পুলাপানের কাছে ইট্টু ভাব নিতে পারতাম। খাইছে

আলভী মাহমুদ এর ছবি

ভালো লেগেছে চলুক

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ, পড়ার আর মন্তব্য করার জন্য হাসি

জি.এম.তানিম এর ছবি

ডড়ড়াইসি!

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।