মৃত জাহাজের নগরী

ওডিন এর ছবি
লিখেছেন ওডিন (তারিখ: রবি, ৩০/০৯/২০১২ - ৯:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকে ভোর থেকে একটু একটু মন খারাপ।

দিন এগিয়ে যায়, সাথে সাথে মন খারাপ ভাবটা আরো বাড়ে। খবর শুনি। খবর দেখি। খবর পড়ি। ফোনে কথা বলি। মন খারাপ ভাবটা আরো জেঁকে বসে। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করি - কি অবস্থা বাড়ির, সবাই ঠিকঠাক আছে তো। সে আশ্বস্ত করে- এখনো পর্যন্ত সব ঠিকই আছে। আমাদের দিকে কোন ঝামেলা নাই। আর ওইদিকে আমাদের আত্মীয়স্বজনও খুব বেশি নাই।

তা হবে। ওরা পয়সাওয়ালা। পড়ালেখাওয়ালা। গ্রীনকার্ডওয়ালা।

বন্ধু ঠাট্টা করে বলে- চইলা যা। এইখানে থাকলে দেখবি একদিন তোরেও পুড়ায়া দিছে। আর তুই যেভাবে মানুষজনের অনুভূতিতে আঘাত করে বেড়াস।

আমি পাল্টা ঠাট্টা করি - গিয়া কি করুম, হিউস্টন শহরে ভাতের হোটেল দিমু? দ্য নিউ ফরাশগঞ্জ ভাতের হোটেল? আমি তো ট্যাং আর পিনাট বাটার-জেলি স্যান্ডউইচ ছাড়া আর কিছু বানাইতে পারি না রে।

প্রসঙ্গ পালটে যায়। প্রক্সি দিয়ে কিভাবে ইউটিউব দেখা যায়- ওই আলাপে চলে যাই আমরা। আরো অনেক ব্যপার নিয়ে আলাপ চলে, আমার এই বন্ধুটার আবার 'গপ্পোবাজ আন্টি' দের মতো স্বভাব আছে। একবার ফোনে কাউকে ধরতে পারলে সহজে ছাড়তে চায় না। গাজিপুরের ইলেকশান নিয়ে কথা হয়।

একসময় কথা শেষ হয়, আমি তারপরেও মন খারাপ করে বসে থাকি।

ফেইসবুকও এর জন্য অনেকখানি দায়ী মনে হয়। আগে সারাদিন ব্যস্ত থাকতাম, দিনের মধ্যে একবারও ফেইসবুকে ঢোকার সময় পেতাম কি না সন্দেহ। আজকাল আপাতঃঅবসর চলছে। সুযোগ পেলেই ফেইসবুকে ঢুকে বসে থাকি। লোকজনের কথাবার্তা দেখি। কথাবার্তা বলি।

লোকজন খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্যপারটা নিচ্ছে। ঠিকই তো আছে। কি অত্যাচারটাই না চালাইলো আমাদের রোহিঙ্গা ভাইদের ওপরে। খুব ভাল হইছে। আমি চেয়ে চেয়ে দেখি। সমর্থনে কমেন্ট আসে।

যাঁরা চুপচাপ- তাঁরা নীরবে লাইক দিয়ে যান। আসলেই তো।

খুব লেখাপড়া জানা, খুব মানবিক মানুষজন। আলোকিত মানুষ মনে হয় বলে এদের। । ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ উত্তাল ঘোর অন্ধকার সমুদ্রের আলোকিত সব জাহাজ।

আমি ঠাট্টা করি ফেইসবুক বন্ধুদের সাথে। আমার প্রিয় স্মার্টফোনটার আজকে দুই বছর হলো। ওর একটা ছবি তুলে দেয়ালে পোস্ট করি।

খবর পড়ি। এইবার পটিয়াতে শুরু হয়েছে।

আমি গান শুনি। হোয়ার ডেড শিপ ডুয়েলস। ভিডিওটা কেমনে কেমনে জানি ইউটিউবের ফাঁক গলে এমনিতেই দেখা যাচ্ছে। প্রক্সি লাগে না।

ইন ফ্লেইমস এর গান। গোথেনবার্গ সিনের একটা উল্লেখযোগ্য ব্যান্ড।

ফেইসবুকে শেয়ার দিই।
গান শুনি।
আশেপাশে তাকাই।
মনে হয় আমার চারপাশের নিকষ অন্ধকারে সব মৃত জাহাজের সারি।

নিথর।
নিঃস্তব্ধ।

এই শহরটাকে হঠাৎ করেই খুব অসহ্য লাগতে থাকে।

___________________________________________________

তিরিশে সেপ্টেম্বর, রাত নয়টা পঞ্চাশ


মন্তব্য

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

সকালে বিডি নিউজে খবরটা দেখে নিজের প্রতি কুকঁড়ে গিয়েছিলাম ঘৃণায়।
আসলেইতো আমি কিছু করছিনা, ঢাকা শহরে বসে ব্লগ পড়ছি, আর পিশাচগুলো উল্লাস করছে, উল্লাসের শব্দগুলো আমার ভেতরে শুধুই ক্ষোভের সৃষ্টি করছে, আমি আর একটা পিশাচ হয়ে উঠতে পারছি কই, এইগুলারে মারার জন্য?
ধিক্কার দিই শুধু নিজেকেই।

খেকশিয়াল এর ছবি

মন খারাপ

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অতিথি লেখক এর ছবি

এই দূরদেশে বসে খবর পড়ে খুব অস্থির লাগছে। ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি এটা ভেবে যে কিভাবে এত অমানুষ হয়ে উঠছি আমরা মন খারাপ

ইমা

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আমি জলিল ভাইকে নিয়ে "মজা লসস" প্রোডাকশনের ভিডিও দেখি, শেয়ার করি। কী আনন্দ! হাসি

নৈষাদ এর ছবি

আরে কী সব জাহাজ-ফাহাজ। নির্বাচনের আর টি-২০র অ্যানালাইসিস দেখেন।

স্যাম এর ছবি

মন খারাপ

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

চারপাশটা অসহ্য লাগছে।

তারেক অণু এর ছবি
আখতার সৈয়দ এর ছবি

প্রৌঢ় (৩০ বছর বা তদুর্দ্ধ)
তদূর্ধ্ব বানান ভুল করেছেন।
শুধুমাত্র ঠিক করে নিন। প্রকাশ অপ্রয়োজনীয়

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

মন খারাপ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নীড় সন্ধানী এর ছবি

............................... মন খারাপ

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আমরা অধীর প্রতিক্ষায় বসে থাকি কবে আমরা 'সংখ্যালঘু' হবো, আমাদের বোধোদয় হবে! তার আগে আমরা কেউই বুক টানটান করে বলতে পারি না, এই বাংলাদেশ প্রতিটা নাগরিকের। বাঞ্চোৎ ধর্মব্যবসায়ীদের নয়। আমরা চিৎকার করে বলতে পারি না, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক- সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু থিওরির মায়রে বাপ।

ওডিন এর ছবি

কিচ্ছু বলার নাই।

প্রিয় ব্লগার আর সচলসূত্রে খুঁজে পাওয়া বাল্যবন্ধুর ব্লগের একটা লিঙ্ক দিয়ে গেলাম শুধু ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।