আমার এক বন্ধু আগামী মাসে ব্যাংকক যাচ্ছে ঘুরতে। এটা তার দ্বিতীয় বিদেশ ভ্রমণ, এর আগে ইন্ডিয়া গেছে একবার। প্রতিবারই আমাকেও জিগ্যেস করে যাব না কি, কেন যেন কিছুতেই ওর সাথে সময়ে মেলেনা। আমিও অবশ্য গত তিন বছরে বেশ কয়েকবার বাইরে গিয়েছি। যথারীতি সে সেময় আমার বন্ধুর সময় মেলেনি। তিন বছর আগে, ২০০৮ সালে আমরা একসাথে পাসপোর্ট করতে গিয়েছিলাম অবশ্য। সেই পাসপোর্ট করার অভিজ্ঞতা নিয়েই পরে একটা লেখা লিখেছিলাম যেটা তখন কোথাও আর পাবলিশ করা হয়ে ওঠে নি। খুব শীঘ্রই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নেব বলে ভাবছিলাম, তখন লেখাটার কথা মনে পড়লো। ২০০৮ সালে আমার পাসপোর্ট 'অর্জনের' কাহিনী এটা। নতুন পাসপোর্টের লাইনে দাঁড়াবার আগে সচলের পাঠকদের সাথে পুরোনো লেখাটা শেয়ার করছি।
*********************************************************************************************************************
৩০ মার্চ ২০০৮, রবিবার, সকাল ১১ টা।
সকালের ক্লাস মিস দিয়ে পাসপোর্ট ভবনে গিয়েছিলাম পাঁচজন - আমি, আমার তিন বন্ধু আর আমার বড় বোন। গত সপ্তাহের রবিবার আসতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। সেদিন অবশ্য দুইটা কাজ করেছিলাম- এক হল সাধারণ পাসপোর্টের জন্য প্রত্যেকে আড়াই হাজার টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দেওয়া আর দুই নম্বরে তথ্য ও অনুসন্ধান থেকে নিজেদের কাগজপত্র গুলো ঠিক আছে কি না দেখিয়ে নিয়েছিলাম। ছাত্রদের নাকি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.ডি -র ফটোকপি হলেই চলে। তার ওপর আমি ভোটার আই. ডি -র ফটোকপিও দিয়েছি। সব দেখে কাউন্টারের ভদ্রলোক বলেছিলেন এটুকুই যথেষ্ট। এই সপ্তাহে তাই আমরা গিয়েছিলাম ফর্ম জমা দিতে। বারটায় একটা ক্লাস আছে্ আশা ছিল ধরতে পারবো।
বাকি সবার ফর্ম সুন্দরভাবে জমা নিয়ে নিলেন কাউন্টারের ভদ্রলোক। আমারটাও এগিয়ে দিলাম। এক নজরে সব দেখে, দুই তিনটা টিক মার্ক দিয়ে তিনি নিজের সাক্ষর দিয়েই দিচ্ছিলেন, হঠাৎ কি দেখে যেন থামলেন। তারপর সেই অর্ধসমাপ্ত সাক্ষরটুকু কেটে দিয়ে জানালেন এই ফর্ম এখানে জমা নেওয়া যাবে না। আমার বর্তমান ঠিকানা এ সমস্যার কারণ। আমি বুয়েটে পড়ি, আহসানউল্লাহ হলে থাকি - বর্তমানে সেটাই ঠিকানা। আর যেহেতু আহসানউল্লাহ হল লালবাগ থানার অধীনে ফলে এই ফর্ম জমা দিতে সদরঘাট ডি. সি. অফিসে যেতে হবে। কোথায় আগারগাঁও পাসপোর্ট ভবন, আর কোথায় সদরঘাট! আমি একটু বলতে চেষ্টা করলাম যে, এটা হল সেন্ট্রাল পাসপোর্ট ভবন, এখানে তো সব এলাকার ফর্ম একসেপ্ট করা উচিত ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তাতে কি আর চিড়ে ভেজে? কি আর করা, সবাই সান্তনা দিল, আমি কিছুটা মনক্ষুন্ন হয়ে শেষে ক্লাস করতে বুয়েটে ফিরে এলাম।
৩১ মার্চ ২০০৮, সোমবার, সকাল ৮ টা।
১০ টায় ক্লাস আছে, তার আগেই সদরঘাট ডি. সি অফিসে পাসপোর্ট জমা দিয়ে ফিরে আসবো ভেবে বের হলাম। এরপর থেকেই শুরু হল আসল খেল।
সদরঘাট ডি. সি অফিসটা বের করতে একটু সময় লাগলো। গিয়ে দেখি অফিস তখনও খোলেনি। পাসপোর্টের ফর্ম জমা দেওয়ার কাউন্টারে অবশ্য তখনই কিছু লোক লাইন ধরেছেন। আড়াই হাজার টাকার পাসপোর্টের লাইন কোনটা জানতে চাইলে ওই অফিসেরই একজন কর্মচারী জানালেন যে এই অফিসে কেবল আর্জেন্ট পাসপোর্ট (৫০০০ টাকা ও এর ওপরে) এর ফর্ম জমা নেওয়া হয়, ফলে আমাকে আসলে সদরঘাট পোস্ট অফিসে যেতে হবে। পোস্ট অফিস নাকি বেশ কাছেই, রিকশাওয়ালাকে বললেই নিয়ে যাবে। কি আর করা, ডি. সি অফিস থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিলাম। রিকশাওয়ালাও সদরঘাট নদীবন্দরের ঠিক বাইরের একটা পোস্ট অফিসে আমাকে নিয়ে গেল। গিয়ে শুনি অফিস নয়টায় খুলবে। তখন ৮:৪০ বাজে, তাই ভাবলাম দাঁড়াই কিছুক্ষণ। পাশ দিয়ে একজন ভদ্রলোক যাচ্ছিলেন, নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে এই পোস্ট অফিসেই সবাই পাসপোর্ট জমা দেয় কি না। জানা গেল, আমি আসলে আবার ভুল জায়গায় এসেছি। পাসপোর্ট জমা নেয় সদরঘাট জি. পি. ও তে। জি. পি. ও টাও নাকি বেশ কাছেই, রিকশাওয়ালাকে বললেই নিয়ে যাবে!
আবার রিকশা নিলাম। জি. পি. ও তে গিয়ে দেখি সেখানে পাসপোর্টের ফর্ম গ্রহণ শুরু হয়েছে্। আমার ফর্মটা কাউন্টারের ভদ্রলোককে দিলাম। হায় কপাল! আমার বর্তমান ঠিকানা দেখে তিনি বললেন, লালবাগ থানা তো নিউমার্কেট জিপিও-র আন্ডারে। এই ফর্ম ওখানে দিতে হবে। এমনকি একটা চার্টও তিনি আমায় দেখিয়ে দিলেন, যেখানে কোন থানা কোন জিপিও-র অধীনে তা স্পষ্ট করে লেখা আছে্। মনে মনে আগারগাঁও এর লোকটাকে যা খুশি তাই বললাম। শুধু শুধু না দেখেশুনে ব্যাটা আমাকে এই সদরঘাটে পাঠিয়েছে, যেখানে ঘরের পাশের নিউমার্কেটে গেলেই কাজ হয়ে যেত।
ঘড়িতে তখন নয়টা দশ। আমার রোখ চেপে গিয়েছিল। একটা রিকশা নিয়ে এবার রওনা দিলাম নিউমার্কেটের দিকে। এই সকালটা বরবাদ হতে দেবই না....
নিউমার্কেট জিপিও-র ভদ্রলোককে আমার করূণ কাহিনীর আভাস দিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফর্মটা দিলাম। তিনি অবশ্য এসব পাত্তা না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে ফর্ম দেখলেন। শেষে জানালেন, আমার ফর্মে দুইটা সমস্যা আছে। এক হল আমার ভোটার আই.ডি টা নাকি এটাস্টেড করে দেওয়ার কথা। আমি বললাম পাসপোর্ট ভবনে তো এ ব্যাপারে কোন ঝামেলা হয় নি। এ বলায় অবশ্য লাভ হল না। দ্বিতীয় সমস্যাটা যেমন গুরুতর তেমনি দুঃখজনক ও বিরক্তিকর। আমার পাসপোর্টের জন্য আগারগাঁও এর সোনালী ব্যাংকে যে টাকা জমা দিয়েছি সেটা নাকি ভুল হয়েছে। টাকা এই জিপিওর আন্ডারে নির্দিষ্ট ব্যাংকে দিতে হবে (ইনিও চার্ট দেখালেন)।
এখন উপায় ? তিনি জানালেন, করণীয় হল আবার আগারগাঁও এ গিয়ে পাসপোর্ট ভবনের তিন তলা থেকে টাকা ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করা এবং সেটার অ্যাপ্রুভমেন্ট টাকার রশিদে লিখিয়ে আনা! আর এটাস্টেড করার ব্যাপারটা তো আছেই।
অবশেষে সেদিনের মত হাল ছেড়ে দিয়ে আমি ক্লাসে গেলাম....
৩ এপ্রিল ২০০৮, বৃহষ্পতিবার, সকাল।
বৃহষ্পতিবার বুয়েট বন্ধ। সকাল সকাল সেই আগারগাঁও পাসপোর্ট ভবনে তৃতীয়বারের মত গেলাম। অনুসন্ধান থেকে জানা গেল আমার আসলে দ্বিতীয় তলায় যেতে হবে। গেলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো বটে, তবে কোন ঝামেলা ছাড়াই কাগজপত্র সই করিয়ে ফেরত পেলাম। টাকা ট্রান্সফার হয়ে যাবে। আই.ডি গুলো এটাস্টেড করিয়ে দুপুরের আগেই নিউমার্কেট জিপিও তে পৌঁছালাম, ফর্ম জমা দিলাম। আমাকে একটা সাময়িক রিসিট দিয়ে জানানো হল আগামী মঙ্গলবার জিপিও তে এসে পাসপোর্টের মূল রিসিট নিয়ে যেতে।
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে...
৮ এপ্রিল ২০০৮, মঙ্গলবার,সকাল ১০ টা।
সকালে একটা ক্লাস হয় নি। দুপুরে পরীক্ষা আছে্ তাই পড়ছিলাম। এমন সময় ফোনটা এল। নিউমার্কেট জিপিওর কাউন্টারের ভদ্রলোক ফোন করেছেন (বোধহয় দয়াপরবশ হয়েই)। আমাকে গিয়ে দেখা করতে বললেন - কি নাকি সমস্যা হয়েছে।
পড়াটড়া ফেলে ছুটলাম। গিয়ে শুনি আমার ফর্মটা মূল অফিস ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে।
কেন?
প্রথমত, আমাকে নাকি আগারগাঁও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারের সই ও আনতে হবে। (আবার যাও আগারগাঁও!!)
দ্বিতীয়ত, আমার জাতীয় পরিচয় পত্র নাকি গ্রহণ যোগ্য নয়!! (এর কোন গ্রহণযোগ্য কারণ অবশ্য বলা হয় নি।)
ফলে আমাকে নাকি এখন সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জাতীয়তা সনদ আনতে হবে।
অবশেষে আমি হাল ছেড়ে দিলাম।
আমি বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের একজন ছাত্র। আমার বিশ্ববিদ্যালয় আই.ডি টিই আমার জাতীয়তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট হওয়া উচিত, কেননা সেটি অর্জন করতে আমাকে আমার এ যাবৎকালের অর্জিত অন্যান্য সকল সার্টিফিকেট ও সনদপত্র জমা দিতে হয়েছে। আমার ঝকঝকে নতুন ভোটার আই.ডি তে আমার মা বাবার নাম, আমার জন্মতারিখ, আমার বর্তমান ঠিকানা এমনকি ব্লাড গ্রুপও লেখা রয়েছে। কার্ডটিতে কর্তৃপক্ষের সাক্ষর আছে এবং বলা হয়েছে এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পত্তি। সরকারী অফিস যদি নিজেদের সম্পত্তিকেও অস্বীকার করে তাহলে আমি নতুন করে জাতীয়তা সনদ দিলে কোন এক ছুতোয় যে সেটাকেও অস্বীকার করবে না তার নিশ্চয়তা কী?
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও নিরক্ষর। বহু মানুষ আছে যাদের কোন ধারণাই নেই পাসপোর্ট কোথায় করতে হয়। আমি যেটুকু শিক্ষা অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসেছি আশা করি তা একটি পাসপোর্ট বানানোর নিয়মকানুন বোঝার জন্য যথেষ্ঠ। অন্তত আমার এতদিন তাই ধারণা ছিল। তবে বাস্তবতা থেকে যেটুকু ঠেকে শিখলাম, তাতে বোঝা গেল আসলে এখানে কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল নিয়ম তাই বোঝার কোনো উপায় নেই। বহুবছর ধরে শুনে আসা সরকারী অফিসের ভিতিকর চিত্র যে আজও বদলায় নি, আজও,যে বহু মানুষকে এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টার আর এক অফিস থেকে অন্য অফিসে ছুটে বেড়াতে হয় সামান্যতম কাজ আদায়ের জন্য তা জানার পর এরকম হাজারো ভুক্তভোগী মানুষের মত আমারও একটাই প্রশ্ন, এই গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার উপায় কী?
উপল মাহবুব
লেভেল-৩ টার্ম-২
তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
********************************************************************************************************************
মন্তব্য
কত বড় সাহস! পাসপোর্ট করতে চায়!
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এখন অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। যদিও আমার প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। প্রায় ঝামেলাহীন।
কিছুদিন আগে মেশিন রিডেবেল পাসপোর্ট করালাম। বাংলাদেশের কোন সরকারী জায়গায় এত সুঅভিজ্ঞতা আমার আগে হয় নি, ভবিষ্যতে হবে নাকি সন্দেহ আছে। ন'টার দিকে গিয়েছি, সাড়ে দশটার মধ্যে কাজ শেষ! আর্মি দের তত্তাবধানে হচ্ছে বলেই নাকি এত সুব্যবস্থাপনা!
অনলাইন ফর্ম ফিলাপ করেন, তাহলে সময় কম লাগবে। আর ওয়েবসাইটে দেয়া নির্দেশিকা ঠিক মতন পালন করলে সমস্যা হবায় কথা না। আশা করি এবার ভাল অভিজ্ঞতা হবে। বেস্ট অব লাক!
আমার বন্ধুরাও সেটাই বললো, তাই তো সাহস করে আবার (মেয়াদ শেষ হবার আগেই) বেলতলায় যাচ্ছি
'নানা অলসতা আর গড়িমসির কারণে' লিখি লিখি করেও লেখা হয় নি এই যাত্রাও পুরোনো লেখা চালিয়ে দিলাম। আশা করি সামনেই নতুন কিছু পোস্ট করবো।
অনলাইনে কিভাবে ফরম ফিলাপ করতে হয়, প্রসিডিউর টা জানালে উপকৃত হব।
http://www.passport.gov.bd/PassportEnrolment.aspx
এখানে ফিল-আপ করলে, পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ডাটা-এন্ট্রির সময়টা বাঁচে। তবে ওদেরকে বলতে হয় অনলাইন ফরম এর কথা; আমার সময় বোধহয় কেবলই এ পদ্ধতি চালু করেছিল,ওদের কর্মচারীরাও অনেকে জানত না। আমায় ডাটা-এন্ট্রির লাইনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছিল। তবে এখন হয়তো এমন হবে না।
নানা অলসতা আর গড়িমসির কারণে এখনো করি করি করেও পাসপোর্ট করা হয়নি। এইবার টার্ম ফাইনালের পর ঠিকঠাক করেই ফেলব। তবে আপনার হ্যাপার কথন পড়ে তো ভড়কে গেলাম
অনেকদিন বাদে এলেন বোধহয় ভাইয়া?
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
'নানা অলসতা আর গড়িমসির কারণে' লিখি লিখি করেও লেখা হয় নি হাসি এই যাত্রাও পুরোনো লেখা চালিয়ে দিলাম। আশা করি সামনেই নতুন কিছু পোস্ট করবো।
তিক্ত অভিজ্ঞতা বটে | সে জন্য দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই করণীয় নেই | গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার উপায় জানা নেই একমাত্র সমবেদনা জানানো ছাড়া |
একান্ত ব্যক্তিগত পরিচয় দেওয়া কেন হল স্পষ্ট নয়, না দিলেই কি নয়?!
আর পাসপোর্টের ভোগান্তি এখন অনেকাংশে কমে গেছে। নির্ভাবনায় অগ্রসর হওয়া যেতে পারে।
পরিচয় যেটা দেওয়া হয়েছে সেটা অবশ্য তিন বছর আগেকার। আসলে লেখাটা পত্রিকায় পাঠানোর ইচ্ছা ছিল, তাই লেখার শেষে নিজের পরিচয় লিখেছিলাম। এখানে সম্পূর্ণ লেখাটা অবিকলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
হুম, আমিও আশা করছি এবার বেশী ভোগাবে না।
ও আচ্ছা আচ্ছা, এবার স্পষ্ট হল। দু:খিত।
হুমম, কম ভোগাবে।
বাংলাদেশে যে জিনিসটা সব থেকে সহজলভ্য সেটা হচ্ছে পাসপোর্ট! তবে আপনাকে তড়িকা জানতে হবে
love the life you live. live the life you love.
প্রথমবার ওয়ান-স্টপ পাসপোর্টের কথা শুনে নিউমার্কেট পোস্ট অফিসে ফর্ম জমা দিতে গেলে যখন বলল সদরঘাটে গিয়ে জমা দেন, সাথে সাথে অভিযান সমাপ্ত করে ফেলি। পরে আমার নিজের শহর থেকে সহজেই পাসপোর্ট হয়ে যায়। যদিও আমার নিষেধ না শুনে বাবা ভেরিফিকেশনে আসা পুলিশকে চা-নাস্তার টাকা না দিলে কী হতো কে জানে!
টোফেলের কয়দিন আগে সেই পাসপোর্ট হারিয়ে ফেললাম। আগারগাও অফিসে গিয়ে আর্জেন্ট পাসপোর্ট তুলতে চাইলে জানানো হলো, যেখান থেকে প্রথমটা করিয়েছি সেখান থেকেই করাতে হবে, কারণ মূল অফিসে ওই পাসপোর্টের রেকর্ড নেই!!! অথবা আগের পাসপোর্টের কথা গোপন করে নতুন করে করাতে পারি।
আমার শহরের পাসপোর্ট অফিসের মূল কর্তাকে ফোন দিলাম, ইন্টারনেট থেকে নাম্বার যোগার করে। পুরো ঘটনা খুলে বলতেই চমৎকৃত হলাম। ভদ্রলোক আমাকে বললেন, যদিও গেজেট প্রিন্টিং-এর জন্য কিছুটা সময় লেগে যায়, তবুও তিনি আমারটা যেন ৫ দিনের মাঝে হয়ে যায়, সেটা দেখবেন। কিন্তু ওই অফিসে গিয়ে কাউন্টারে বসা ভদ্রলোকদের কে আমার অ্যাপ্লিকেশনের কথা বললে তারা শুরু করলেন যথারীতি হাইকোর্ট দেখানো, ত্রিশ-চল্লিশ দিন তো লাগবেই, এটা লাগবে, সেটা লাগবে। বড় কর্তাকে ফোন দিয়ে দেখা করলে, তার নির্দেশে বেচারারা আমার অ্যাপ্লিকেশন জমা নেয় নিতান্ত অনিচ্ছায়। তারপর পাসপোর্ট যেদিন হয়ে গেলো, আমার বাবা আনতে গেলো, তখন আবার শুরু হলো ঘুরানো, আপনার ছেলেকে আসতে হবে, পাসপোর্ট এখনো হয়নি ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার বড় কর্তাকে ফোন, আবারো নিতান্ত অনিচ্ছায় মাঝারি এবং ছোট কর্তারা বাবার কাছে পাসপোর্ট তুলে দেন। উনার নাম আমার মনে নেই, কিন্তু সরকারী অফিসারদের মাঝে এত সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখে আমি চমৎকৃত। কিন্তু বেশিরভাগ লোকের সমস্যা কী, সেটা আমি বুঝতে পারি না!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
এখানে যেটুকু লেখা হয়েছে তার পরও আমার আরও একটু ভোগান্তি হয়েছিল অবশ্য। এর পরের ঘটনাগুলো মোটামুটি এরকম।
আমার রোখ চেপে গিয়েছিল, ভাবলাম জাতীয়তা সনদ না এনে শুধু পরিচয়পত্র দিয়েই আমাকে পাসপোর্ট করাতেই হবে। খোঁজ নিয়ে জানলাম নিউমার্কেট জি.পি.ওর পাসপোর্টগুলো সব ঘুরেফিরে সেই সদরঘাট ডি.সি অফিসেই যায় এবং সেখান থেকেই অ্যাপ্রুভ হয়ে আসে। আমার ফুপুর পরিচিত একজন (ম্যাজিস্ট্রেট পদবী ছিল বোধহয়) ছিলেন সদরঘাট ডি.সি অফিসে, যোগাযোগ করে তার কছে গেলাম। তিনি নিজে পাসপোর্টের কাজ দেখেন না, পাঠালেন আর একজনের কাছে। আমার পুরো ঘটনা সেখানে খুলে বললাম। কিন্তু তাতেই বা কী, সেখানেও আমাকে জানানো হল জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে কাজ হবে না। জাতীয়তা সনদ লাগবে। আমার তখন সেজাজ প্রচণ্ড খারাপ। সেই ভদ্রমহিলাকে রীতিমত চার্জ করলাম কেন জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণযোগ্য হবে না সে জবাবদিহি করতে। তারপর রেগেমেগে বের হয়ে আসলাম অফিস থেকে।
শেষ চেষ্টা হিসেবে আগারগাঁও মূল অফিসে গেলাম আর একবার (এমনিতেও যেতে হচ্ছিল সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারের সই আনতে)। সেখানেও একজন পরিচিত বের হল। গেলাম তার কাছে। তিনি বললেন কেন আমাকে এমনটা বলা হচ্ছে সেটা তার জানা নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই নাকি আগারগাঁও অফিস থেকে পাসপোর্ট হয় (আমার বোন ও বন্ধুদের সেভাবেই হয়েছিল)। তবে সদরঘাট ডি.সি অফিস চাইলে তার কিছু করার নেই। তবে সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের সনদ না এনে আমি যদি আমার আবাসিক হল থেকে একটা সনদ আনি তাহলেও নাকি হবে।
অবশেষে আমি সেই পথেই এগোলাম। হল থেকে একটা সনদ নিলাম। তারপর পাসপোর্টের ফর্ম জমা দিলাম, যেদিন প্রথম জমা দিয়েছিলাম তার প্রায় একমাস পর। সেবার আর আটকায় নি....
জটিল অভিজ্ঞতা হয়েছে দেখছি আপনার। তা'ও দালালের খপ্পরে না পড়েই এতো! আমি এযাবত তিনবার পাসপোর্ট করেছি, শুধু পাতা ফুরিয়ে যায় বলে। তিন নাম্বার পাসপোর্টেরও পাতা প্রায় শেষ, ৩-৪টা বাকী আছে। এবার মেশিন রিডেবল একটা বানাতে হবে। জানিনা কি ভোগান্তি আছে কপালে। রিজিওনাল পাসপোর্ট উপ-পরিচালক আমার বন্ধুর বন্ধু, কথাবার্তায় সহৃদয় বলেই মনে হলো। দেখি কোনও ঝামেলা হলে ব্যাটাকে ধরতে হবে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের প্রজেক্ট ডিরেক্টর লে. কর্ণেল ভদ্রলোক আমাদের এলাকার মানুষ। ব্যাক্তিগতভাবে চিনি। দারুন এফিশিয়েন্ট পাবলিক।
আসলে আমাদের সব খাইছে ব্যুরোক্র্যাসিতে। ২ টাকার ল্যাম্প জ্বালাতে ২০০ টাকার তেল। ব্যুরোক্র্যাসির এমন ঘুল্লি যে শুকনো মাঠেও পায়ে বল দিলে এরা প্যাচপ্যাচে কাদা করে ফেলতে পারবে। ২ পারসন আওয়ারের কাজ করতে ২ পারসন ডেইজ লাগায়। আমাদের ব্যুরোক্র্যাসি এমনই এফিশিয়েন্ট।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ভাই, দালালের খপ্পরেও পড়েছিলাম। লেখাটা তো পত্রিকায় পাঠাবো ভেবেছিলাম তাই ওই পার্টটা লিখি নাই। আমার বন্ধুর পরিচিত দালাল অবশ্য। আমার বন্ধুরা তিনজন মিলে টাকা জমা দিতে গিয়েছিল, আর ওই বেটা আমাদের ফর্মগুলো চেক করছিল। আমি আর আমার বোন দাঁড়িয়ে ছিলাম। বেঁটেমত এক লোক চারপাশে ঘুরাঘুরি করছিল, হঠাৎ দেখি কোথা থেকে বেশ ক'জন পুলিশ এসে হাজির। আশেপাশে আরও কয়েকজন দালাল আর পাসপোর্টপ্রার্থী ছিল, গণহারে সবাইকে ধরতে শুরু করলো! বেঁটে পুলিশটা আমার হাতও ধরেছিল, কিন্তু সাথে আমার বোনকে দেখেই বোধহয় আবার ছেড়ে দিল। এদিকে আমার ওই বন্ধু (যার পরিচিত দালাল) ঠিক তখনই ফিরে এসেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে সে কোনমতে আমাদের ফর্মগুলো উদ্ধার করতে চেষ্টা করলো, কিন্তু উল্টো ওকেও পুলিশগুলো টেনে নিয়ে ভ্যানে তুলে ফেললো। আমাদের তো তখন কঠিন অবস্থা। ফর্ম গেলে হয়তো কোন সমস্যাই হতো না, কিন্তু বন্ধুকে কি করে উদ্ধার করি? পুলিশগুলোকে কিছুক্ষণ বোঝানোর চেষ্টা করলাম, লাভ হলো না, বললো থানায় গিয়ে বলতে। শেষে তাই করলাম। ভ্যানের পিছুপিছু থানায় গেলাম। সেখানে এক অফিসার বেশ ধমকিধামকি দিল। অন্য এক অফিসার আবার বুয়েট পাশ, পরে বি.সি.এস দিয়ে ঢুকেছেন থানায় - তিনিও কিছুক্ষণ গল্প করলেন। পরে ফোন নম্বর নিয়ে ওই বন্ধুকে ছেড়ে দিলেন আর আমাদের ফর্মগুলো ফিরিয়ে দিলেন! আমরা পরের দিন এসে স্বাভাবিকভাবেই ফর্ম জমা দিই। এর পরের ঘটনা তো জানেন। তবে, প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম প্রথমদিন। এ জন্যই পরে যত কিছুই হয়েছে, কোন দালালের কাছে যাই নি!!
ভাই, প্রথমত এসব ব্যাপারে আগে করেছে এরকম কারো কাছ থেকে জ্ঞান নিয়ে করলে বেশ ভালো উপকার হয়। আমার ধারনা আপনি তা করেননি, করলে আগারগাও-সদরঘাট-নিউমার্কেট দৌড়াদৌড়ি করতে হত না। আর পাসপোর্টের জন্য আমিতো জানতাম যে এলাকার চেয়ারম্যান/কমিশনারের কাছে থেকেই সার্টিফিকেট নিতে হয়, আর সব কিছুই সত্যায়িত করে দিতে হয় ( যদিও এ ব্যাপারগুলো আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়)।
আমার পাসপোর্ট, আমি আর্জেন্টের টাকা (৫০০০) দিয়েও পেয়েছি প্রায় দেড় মাস পরে। তবে সে এক বিশাল ইতিহাস।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
ভয় পাওয়ার কিছু নাই। আমার অভিজ্ঞতায় সরকারী কাজে এর চেয়ে আরো ভোগান্তি হয়। সেগুলো সব বিরাট ইতিহাস: বাসায় ছিল না কেরোসিন...
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ভাই আপনার আসলে আমার সাথে যোগাযোগ করার দরকার ছিল। আমার এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতাগুলি সচলায়াতনে প্রকাশিত হয়েছে। আপনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা খুবই দুঃখজনক এবং এর জন্য যারা দায়ী তাদেরও শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
এই পাসপোর্ট নিয়ে একটা কানাডিয়ান পাসপোর্ট সম্পর্কিত ইংরেজী মেইল প্রকাশ করি। যদিও এটা একটা চেইনমেইল টাইপ জিনিষ, তবে পুরোই সত্য। পাসপোর্ট করতে গেলেই টের পাবেন। যুক্তরাস্ট্রে ব্যাপারটা আরো হাস্যকর, প্রসেসটা প্রায় একই।
Actual letter to the Canadian Passport office
Dear Mr. Minister,
I'm in the process of renewing my passport, and still cannot believe this.
How is it that Radio Shack has my address and telephone number and knows That I bought a t.v. Cable from them back in 1997, and yet, the Federal Government is still asking me here I was born and on what date.
For Christ sakes, do you guys do this by hand?
My birth date you have on my social insurance card, and it is on all the Income tax forms I've filed for the past 30 years. It is on my health Insurance card, my driver's license, on the last eight goddamn passports I've had, on all those stupid customs declaration forms I've had to fill out before being allowed off the planes over the last 30 years, and all those insufferable census forms that are done at election times; and yet you ask the same question every time you need something. If that date ever change due to something, I will be more surprised than you that is for sure.
Would somebody please take note, once and for all, that my mother's name is Maryanne, my father's name is Robert and I'd be absolutely astounded if that ever changed between now and when I die!!!!!!
SHIT!
I apologize, Mr. Minister. I'm really pissed off this morning. Between you and me, I've had enough of this bullshit! You send the application to my house, then you ask me for my fuckin' address. What is going on? You have a gang of Neanderthal assholes workin' there!
Look at my damn picture. Do I look like Bin Laden? I don't want to dig up Yasser Arafat, for shit sakes. I just want to go and park my ass on a sandy beach.
And would someone please tell me, why would you give a shit whether I plan on visiting a farm in the next 15 days? If I ever got the urge to do something weird to a chicken or a goat, believe me, I'd sure as hell not want to tell anyone!
Well, I have to go now, 'cause I have to go to the other end of the city and get another fuckin' copy of my birth certificate, to the tune of $60!!! What happened to the original one they issued and I submitted that every time I had to get something. Does your people just happen to throw that out?
Would it be so complicated to have all the services in the same spot to assist in the issuance of a new passport the same day??
Nooooo, that'd be too damn easy and maybe make sense. You'd rather have us running all over the fuckin' place like chickens with our heads cut off,
Then find some asshole to confirm that it's really me on the goddamn picture - you know, the one where we're not allowed to smile?! (fuckin'Morons)
Hey, you know why we can't smile? We're totally pissed off!
Signed - An Irate fucking Canadian Citizen.
P.S. Remember what I said above about the picture and getting someone to confirm that it's me? Well, my family has been in this country since 1776 when one of my forefathers took up arms against the Americans. I have served in the military for something over 30 years and have had security clearances up the yingyang.
I was aide de camp to the lieutenant governor of our province for ten years and I have been doing volunteer work for the RCMP for about five years.
However, I have to get someone 'important' to verify who I am - you know, someone like my doctor...
WHO WAS BORN AND RAISED IN
COMMUNIST F**KING CHINA!!!!!!
ভাই, এটা পড়ে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল
নতুন মন্তব্য করুন