শাহীন রেজা নূর। শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনের ছেলে। উনার ভাই জাহিদ প্রথম আলোতে আমার সহকর্মী ছিলেন। শাহীন ভাই প্রজন্ম ৭১ এর প্রধান সংগঠক। মূলত শহীদ বুদ্ধিজীবি পরিবারের সন্তানরাই এই সংগঠনটির জন্ম দিয়েছে। সোমবার পাবলিক লাইব্রেরি অডিটরিয়ামে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শপথ অনুষ্ঠানে কথা হয়েছিল শাহীন ভাইর সঙ্গে। আমার কিছু জানার ছিল। এই আলাপচারিতায় একটা দিকনির্দেশনার ইঙ্গিতও পাবেন অনেকে।
অনুষ্ঠানে তার বক্তৃতাতেই শাহীন ভাই পরিষ্কার করে দিয়েছেন ১৯৭৩ সালের আইন নং-১৯ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আর কোনো পথ খোলা নেই। তিনি প্রচলিত আইনে রাজাকার-আলবদরদের বিচার করতে যারা উস্কে দিচ্ছেন তাদের সমালোচনা করেছেন। এ ব্যাপারে আমার মনোভাবের সঙ্গে তার কোনো অমিল দেখলাম না।
পরে একান্তে যখন কথা বললাম (ব্যাপারটা কঠিন, কারণ একটু পর পর কেউ না কেউ এসে হাত মেলাচ্ছিলেন তার সঙ্গে), তার কণ্ঠে একটু হতাশাও দেখলাম। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনে ব্যর্থতার পেছনে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কথা উল্লেখ করেছিলেন শাহীন ভাই। আওয়ামী লিগের একাংশের দিকে স্পষ্টতই ইঙ্গিত ছিল। সেইসঙ্গে সেক্টর কমান্ডারদের ফোরামের ব্যাপারে আশাবাদ জানিয়েছিলেন। আমি এগোলাম সে লাইনেই। শাহীন ভাইর কথা হচ্ছে এ সরকারের একটা অংশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। বিশেষ করে সেনা প্রধান ও প্রধান নির্বাচনী কমিশনার এ প্রসঙ্গে স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন তাদের অবস্থান। অন্যদিকে সবসরকারের আমলেই ফায়দাভোগী কয়েকজন উপদেষ্টা এর বিপক্ষে। উনার আশঙ্কা মার্শাল ল জারি করার জন্য একটা অস্থিতিশীল অবস্থা উস্কে দেওয়া হতে পারে বলে।
সেক্টর কমান্ডার ফোরামের ব্যাপারে যতটা উচ্ছ্বসিত শাহীন ভাই, মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ নিয়ে ততটাই উদ্বিগ্ন দেখা গেল তাকে। ৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছিলেন। শাহীন ভাই জানালেন তাদের আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। অনুমতি মেলেনি সরকারের। বদলে ১৫ ডিসেম্বর একটা কনভেনশন করার কথা ভাবছেন তারা। এত প্রতিবন্ধকতাতেও একটা ব্যাপারে আশা ছাড়েনি প্রজন্ম ’৭১। জনসচেতনতা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটা নেহাত রাজনৈতিক কোনো দাবি নয়। জন দাবি। সারা দেশজুড়ে যেরকম সাড়া মিলেছে তাতে আশায় বুক বাঁধছেন তারা।
এ আন্দোলনের ভবিষ্যত কি, তা নিয়েও কিছু কথা হয়েছে। এ সরকারের কাছে বিচার না পেলে এ সরকারের আমলেই বিচারের ভিত্তিপ্রস্তরটা গড়তে চাইছে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি। এ ব্যাপারে ওই জনসচেতনাতাই অবলম্বন মানছেন তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি মনে করে বিচার করতে তারা অক্ষম, তাহলে আগামী নির্বাচনে দলগুলোর মেনিফেস্টোতে এই অঙ্গীকারটা আদায় করে নিতে চায় প্রজন্ম ৭১। যারা ক্ষমতায় যাবেন, তারা স্পেশাল ট্রাইবুনাল বসিয়ে বিচার করবেন। পাশাপাশি জামাতে ইসলামী ও তাদের রাজাকার-আলবদর মুখোশ জনগন ও নতুন প্রজন্মের কাছে খুলে দিতে হবে। তারা কি করেছে যুদ্ধকালে তার প্রমাণাদি যত বেশি সংখ্যক প্রকাশ করতে হবে। সত্যিকার ইসলাম ও তাদের ইসলাম যে এক নয়- সেটা বোঝাতে হবে ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের। জনসচেতনতা তৈরির জন্য পাড়ায় মহল্লায়, স্কুলে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে একাত্তরের চেতনা।
একগাদা হতাশাকে ক্ষীন আশায় মুড়িয়ে নিয়ে ফিরে এলাম।
ছবি : ফিরোজ আহমেদ
মন্তব্য
তাও তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন জেনে ভাল লাগল।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমি কাল গিয়েছিলাম
শপথ করলাম সবার সাথে
অন্তত নিজেকে আরেকবার মনে করিয়ে দেবার জন্য যে
আমিও আছি
সত্যিই কী তাই? সরকারের কেউই কিন্তু এ পর্যন্ত বলেনি যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সরকারেরই দায়িত্ব এবং তারাই এর বিচার করবে অথবা করবে না।
'যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনভিপ্রেত', 'যে কেউ চাইলে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন' বা 'যুদ্ধাপরাধীরা ঘৃণার পাত্র' -- এগুলো হচ্ছে দায়িত্ব এড়ানোর জন্য বক্তৃতাবাজী মাত্র।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
আমি নতুন প্রজন্মের হয়েও এখনো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে পারছি না । আর কত দিন? আর কত কাল এই দেশে ওরা আমার দেশের পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবে ?
নতুন মন্তব্য করুন