নোটন কিংবা কাজলের গল্প

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি
লিখেছেন অমি রহমান পিয়াল (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০৬/২০০৭ - ১২:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাহিত্যের কোন চরিত্রটার সঙ্গে নিজের মিল পাই! কিংবা কার মতো নিজেকে ভেবে সুখ পাই? প্রশ্নটা করা হলে চোখ বুজে উত্তর দেবো- ধ্রুব। শীর্ষেন্দুর দূরবীনের। একুশ বছর আগে যখন উপন্যাসটা পড়ি নিজেকে ধ্রুব ভাবার অনেক কারণ ছিল। রিনা নামে যে মেয়েটা তখন আমার জীবনে, তার প্রতি আমার আচরণে রেমির প্রতি ধ্রুবর সঙ্গে বেশ মিল। সুদর্শন আমি কোনোকালেই নই, কিন্তু কাজিনরা আমার জন্য পাগল ছিল। হয় তো এটিপিকাল গুড বয় বলেই। মানে পড়াশোনায় গুড, চলাফেরায় পাঙ্ক। আরলি আর মিড এইটিজে ঢাকার স্মার্ট মেয়েদের কাছে টানার জন্য সেটা ছিল এনাফ এক্স ফ্যাক্টর auto। দুরবীনে নোটন নামে একজন ছিল। মেয়েটা ধ্রুবর প্রতি খুব দুর্বল ছিল। দুজনের যখন দেখা হয়, নোটন তখন হাফ গেরস্ত। এক করুণাভরা মন নিয়ে তার ঠোটে ঠোট রেখেছিল ধ্রুব বিরান স্টেশনে।

কাজল আমার সম্পর্কে খালা লাগে। লতায়-পাতায়। ঢাকায় এসে একই বাসায় থাকার সুবাদে, গ্রাম একই বলে একটা নৈকট্য ছিল। কাজল ছোট থেকেই ছেলেঘেষা, প্রচুর প্রেমপত্র, প্রচুর প্রেম। সব বলত আমাকে। আর বলত সে আমাকে ভালোবাসে! শুধু খালা বলে এগুতে পারছে না। আমি হাসতাম।

অফিসে আমার ডেস্ক বদলেছে। এখন আমার স্পেসিফিক কোনো পিসি নেই। কোনো মতে ব্লগিং হয়তো সম্ভব, কিন্তু ম্যাসেঞ্জার একদম আউট অব রিচ। বাসায় নেট নেই পিসি নষ্ট বলে, ঠিক করানোর সামর্থ্য আপাতত নেই। তারপর রোববার দিন আমার লেট নাইট। বাসায় ফিরেছি রাত দুটায়। গ্রামীন সিমটা বন্ধ ছিল। খুলেই দেখি এসএমএস, কিরে তোর ফোন বন্ধ ক্যান? বলতো আমি কে? ভুত কিঙবা পেত্নী না, কিংবা দুটোই হতে পারি। আমার জবাব- ডরাইসি। সঙ্গে সঙ্গে ফোন। এ কথা সেকথার পর পরিচয় দিলো। কাজল। শুনলাম বিয়ে করেছিস। আমি খুবই খুশীরে। তোর বউকে দেখতে যাব। জানিস আমি খুব ভালো ছবি তুলি। ইত্যাদি। শোন তোর অফিস কই? ঠিকাছে আমি কাল আসব, তোকে তুলে নিব। তোর সঙ্গে দেখা করার জন্য পাগল হয়ে আছি। তোর বউটা কেমন? খুব সুন্দর ? তুই সূখী তো? আমি হু হু হু করে যাই। আমি কিন্তু আগের মতোই আছি, একটু বদলাইনি।

বিকাল থেকে ফোন শুরু। তুই ফ্রি হবি কখন? কলম্বো টেস্ট কাভার করছি, মিনিটে মিনিটে আপডেট। বাংলাদেশ মিনিটে মিনিটে উইকেট হারায় তাই। দম ফেলার জো নেই। বললাম, ঠিকাছে তুই থাক বেইলী রোডে। আমি আসব। জলদি আয়, এখানে বসতে ইচ্ছে করেনা, ছেলেরা খুব ডিস্টার্ব করে।

সাতটায় পৌছলাম। কাজল দাঁড়িয়ে। সামনে বাইকে ছেলের পাল। সে খুব হেসে হেসে কথা কইছে। আমি বিব্রত। চুল কালার করা, ভ্রু নেই, সেখানে লাইনার। আটসাট চুস। কে বলবে কাজলের মেয়ে কলেজে পড়ছে, ছেলে কলেজে উঠবে! এলি? ভেতরে গিয়ে হাকডাক। এই রাজু, এ কি খাবে দ্যাখো। বড় লোকের বউ, তার খাতিরই আলাদা।

নানা কথা হলো। স্বামীর সঙ্গে থেকে থাকেনা, আলাদা ঘরে শোয়। বিদেশ যাবে। এক বয়ফ্রেন্ড টাকা পাঠাবে, এক বয় ফ্রেন্ড নিয়ে যাবে। সুইডেন বা নরোয়ে। আমি হেল্প করতে পারব কীনা। শুরু থেকেই একটা ব্যাড ভাইব, আমি তীব্র অস্বস্তিতে ভুগি। তখনো হু হু করি। মুক্তার নাম্বার চায়। কথা বলিয়ে দিই। ফের স্মৃতিপাত। আমি তাকে বলেছিলাম, সুচরিতার মতো দেখতে। এক বিয়েতে আমার কোলে ঝুপ করে বসে চুমু খেয়ে দৌড় দিয়েছিল, মার হাতে ধরা পড়ে মার খেয়েছিল। শিবলী কই, মিলন কই, ফারুক কই। তোর বউর জন্য সকালে এই গয়না, সেই গয়না কিনেছি।

সিগারেট খেতে হাসফাস করি। বের হই। আরেক জ্বালা। পিচ্চি পিচ্চি পোলাপাইন এসে হাই কাজল। তুমি নাম্বার বদলাইছ, ফোন দিলানাতো আর। অস্বস্তিবোধ তীব্রতর হয়। আরেকটু নিরিবিলি আরেক জায়গায় বসি। পিয়াল তোকে একটা প্রশ্ন করি? আমি তোর খালা না হলে তুই আমাকে বিয়ে করতি? চুপ থাকি। আমি খুব খারাপ হয়ে গেছি নারে? রা করিনা।

চল উঠি। দাড়া গাড়ি আসবে। বলি, না চল তোকে রিকশায় করে বাড়ি দিয়ে আসি। রিকশায় উঠতে না উঠতে তিনটা ফোন। আজকে আসতে পারব না, ব্যস্ত খুব। রিকশা ঘুরে, কাজল আমার হাত ধরে। আবার প্রশ্ন, তুই খুব সুখী, তাই নারে? উত্তর দিই না।

কাজলের এই অবস্থানে আমার কোনো ভূমিকা আমি খুঁজে পাই না। তারপরো নোটন আর কাজলকে একই রকম লাগে। আমি কেবল ধ্রুব হতে পারি না।


মন্তব্য

উৎস এর ছবি

নেট নাই ভালই হয়েছে, একটু বিরতি দিয়ে লিখে "ফাটায়া" ফেলছেন।

নজমুল আলবাব এর ছবি
অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

সত্য কইতাছেন তো? তাইলে ঠিকাছে

.............................

তুমি হাসো, আমি কাঁদি, বাঁশি বাজুক, কদম তলেরে...


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ড্যাবস!
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অমিত এর ছবি

ধ্রুব, পুতুল নাচের ইতিকথার "কুমুদ "(নাম ঠিক তো??)আর অপু। এইসব ক্যারেকটারের মধ্যে যে "থ্রোয়িং ইট অল অ্যওয়ে" অ্যাটিচুড, এই চার্ম থেকে এখনও বের হতে পারি নি।

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

একদম ঠিক কথা অমিত। তারাশঙ্করের কবির মতো নির্বিকার, সমরেশের অনিমেষের মতো বিপ্লবী আর ধ্রুবর মতো কেয়ারফ্রি হইতে মন চাইছে সবসময়। এরা সবাই কিন্তু প্রেমিক

................

তুমি হাসো, আমি কাঁদি, বাঁশি বাজুক, কদম তলেরে...


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

নজমুল আলবাব এর ছবি

অনিমেষ থাইকা অর্করে বেশি ধরছে মনে। আর উর্মিমালা...

অমিত আহমেদ এর ছবি

জটিল!

************************
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

সৌরভ এর ছবি

এইরকম একটা লেখা আমার লিখার খুব শখ।
জটিল।

------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ঝাক্কাস!!

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

কর্ণজয় এর ছবি

bejai...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রেম ছাড়া কি আর দিনবদলের গান গাওয়া যায়, কমরেড?

--------------------------
আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

উৎস এর ছবি

সত্যই বলছি। সেইরকম বুনট আছে, কম-বেশী লিখলে নষ্ট হয়ে যেত।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অনেক রাখঢাক কাহিনী।
পাঠককে বঞ্চিত করা হয়েছে। মামলা হবে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হ, আসল কথা বলাই ভাই কইছে।
_________________________________
<স্বাক্ষর দিমুনা, পরে জমিজমা সব লেইখা লইলে!>

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।