বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কি আসলেই রহস্যময়?

অনিশ্চিত এর ছবি
লিখেছেন অনিশ্চিত [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০৩/০৯/২০০৮ - ১০:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলবারমুডা ট্রায়াঙ্গেল

যেহেতু রহস্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ সীমাহীন, তাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে লেখা কাহিনীগুলো সবসময় মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে লেখা বইগুলোতেও আগ্রহজাগানিয়া কিছু কৌতুহলোদ্দীপক কাহিনী রয়েছে, যেগুলো দ্বারা দাবি করা হয়- বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পৃথিবীর রহস্যময় স্থানগুলোর অন্যতম। কিন্তু ইতোমধ্যেই যে প্রমাণিত হয়েছে, কিছু প্রকৃতিগত ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য ছাড়া এই ট্রায়াঙ্গল অন্য সব এলাকার মতোই স্বাভাবিক- সেই খবর বোধকরি খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেনি।

এটা ঠিক, পৃথিবীর সবচাইতে অভিশপ্ত স্থানগুলোর মধ্যে বারমুডা টায়াঙ্গল বা ত্রিভুজকে চ্যাম্পিয়ন বলে মনে করা হয়। কারণ এ যাবৎ এখানে যতো রহস্যময় ও কারণহীন দুর্ঘটনা ঘটার কথা শোনা গিয়েছে, অন্য কোথাও এতো বেশি এরকম দুর্ঘটনা ঘটে নি বলে দাবি করা হয়। এ জন্যে স্থানীয় অধিবাসীরা এ এলাকাটির নামকরণ করেছে পাপাত্মাদের ত্রিভুজ।

বারমুডা ত্রিভুজের অবস্থান হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগরে। মোট তিনটি প্রান্ত দ্বারা এ অঞ্চলটি সীমাবদ্ধ বলে এর নামকরণ করা হয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা বারমুডা ত্রিভুজ। এ অঞ্চলটি যে তিনটি প্রান্ত দ্বারা সীমাবদ্ধ তার এক প্রান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোরিডা, একপ্রান্তে পুয়ের্টো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুদা দ্বীপ অবস্থিত। ত্রিভুজাকার এই অঞ্চলটির মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৪৪ লাখ বর্গ মাইল। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর আংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।

এ অঞ্চলের রহস্যময়তার একটি দিক হলো, কোনো জাহাজ এই ত্রিভুজ এলাকায় প্রবেশ করার কিছুণের মধ্যেই তা বেতার তরঙ্গ প্রেরণে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং এর ফলে জাহাজটি উপকূলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। একসময় তা দিক নির্ণয় করতে না পেরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। মার্কিন নেভির সূত্র অনুযায়ী, গত ২০০ বছরে এ এলাকায় কমপে ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং ২০টি বিমান চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৮ সালের মে মাসে হারিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ডুবোজাহাজের ঘটনাটি সারা বিশ্বে সবচাইতে বেশি আলোড়ন তুলে।

১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই পাচটি বোমারু বিমান প্রশিক্ষণ চলাকালীন হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাবার মুহূর্তে বৈমানিকদের একজন অতি নিম্ন বেতার তরঙ্গ পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার এই বেতার বার্তাতে বারবার একটি কথাই বলা হচ্ছিলো, ‘সামনে প্রচণ্ড কুয়াশা। আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় যে যাচ্ছি তাও বুঝতে পারছি না। আমাদেরকে উদ্ধার কর।’ এ বার্তা পাওয়ার পরপরই মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি উদ্ধারকারী টিম এ অঞ্চলের দিকে রওয়ানা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তারাও নিখোঁজ হয়ে যায়। এভাবে এ এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে মনে করা হয়। সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হারিয়ে যাওয়া এসব যানগুলোর কোনো ধ্বংসাবশেষ পরবর্তীকালে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায় নি।

এর রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন সময়ে বেতার তরঙ্গের অনুপস্থিতির কথা বলা হলেও এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। মার্কিন সামরিক বাহিনী এ এলাকায় বেশ কিছু গবেষণা চালিয়েও তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। অনেকে মনে করেন, নাবিকদের ভাষ্য অনুযায়ী এ এলাকায় মাঝে মাঝে বেতার তরঙ্গ হয়তো হারিয়ে যায়, তবে তা সবসময়ের জন্য নয়। কারণ পৃথিবীর কোনো এলাকায় স্বাভাবিক বেতার তরঙ্গের প্রবাহ হারিয়ে যেতে বা নিশ্চিহ্ন হতে পারে না। তা হলে সারা পৃথিবীর বেতার সিস্টেমই ধ্বংস হয়ে যাবে।

এর মধ্যে সবচাইতে বিজ্ঞানসম্মত যে ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে তা হলো, এলাকাটির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে স্বাভাবিকের চাইতে কুয়াশা অনেক বেশি এবং এর ঘনত্বও তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে নাবিকেরা প্রবেশের পরই দিক হারিয়ে ফেলে এবং তাদের মধ্যে একপ্রকার বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। হয়তো এ বিভ্রান্তির ফলেই তারা যথাযথভাবে বেতার তরঙ্গ পাঠাতে পারে না। প্রমাণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, আধুনিককালে যে সমস্ত জাহাজ জিএসএম প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে, তাদের একটিও এ সমস্যায় পড়েনি।

সমাজমনস্তত্ববিদদের মতে, অশিক্ষার ফলে কুসংস্কারে আবদ্ধ আশেপাশের মানুষেরা বিভিন্ন কল্পকাহিনী তৈরি করছে ও বিশ্বাস করছে। এর মধ্যে অস্বাভাবিকতা কিছুই নেই, যা আছে তা হলো কল্পনা। যে সংখ্যক জাহাজ ও বিমান হারিয়ে গেছে বলে দাবি করা হয়, তা হিসেব করলে দেখা যাবে পৃথিবীর অন্যান্য অনেক অঞ্চলে বিমান বা জাহাজ হারানোর সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়, বরং কোথাও কোথাও বেশি। কিন্তু প্রথম থেকেই জায়গাটি অতিপ্রাকৃত বলে আখ্যা পাওয়ায় এখানকার হারানোর ঘটনাগুলো সহজেই আলোচনায় উঠে আসে। মরুভূমিতে, আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে কিংবা আমাজন এলাকায় প্রতি বছর যতো সংখ্যক হারানোর ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়, তার সংখ্যা কিন্তু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে হারানোর সংখ্যার চাইতে অনেক বেশি। তার চাইতে বড় কথা হলো, আধুনিক প্রযুক্তি আসার ফলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে এসব নিখোঁজ সংবাদ দিন দিন বিরল খবরে পরিণত হয়েছে। এখন প্রতিদিন শত শত জাহাজ এই এলাকা দিয়ে চলাচল করে কিন্তু কোনো ধরনের রহস্যময়তার খবর পাওয়া যায় না। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল যদি সত্যিই রহস্যময় হয়েও থাকে, তবে তার সব রহস্য পরাজিত হয়েছে প্রযুক্তির কাছে।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতো আরেকটি আগ্রহ-উদ্দীপক কাহিনী হচ্ছে- ফ্লাইং সসারের আগমন। অনেকে মনে করেন, এ এলাকাটি উন্নত গ্রহের প্রাণীদের পৃথিবীতে অবতরণ স্থান। এ ধারণার কারণ হিসেবে তারা কিছু নাবিকের কথা বলে থাকেন যারা নাকি এ এলাকায় মাঝে মাঝে উড়ন্ত সসারের আনাগোনা দেখতে পান। তবে এটি এখনো নিছক কল্পনা হিসেবেই চিহ্নিত। এর কোনো সত্যতা এখনো পাওয়া যায় নি।

তবে গবেষকরা হারিয়ে যাওয়া যানের ধ্বংসাবশেষ না পাওয়ার যে ব্যাখ্যাটি তারা দিয়ে থাকেন সেটি হলো, আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে একটি অন্যতম গভীর স্থান হচ্ছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এমনকি আধুনিক ও প্রশিক্ষিত ডুবুরি সরঞ্জাম দিয়ে এই অঞ্চলে উদ্ধার কাজ চালানো এখনো দুরূহ। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির কারণে ধ্বংসাবশেষ কোথায় আছে তা হয়তো জানা সম্ভব, কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করা ততোটাই কঠিন। ফলে এ এলাকায় কোনো ধ্বংসাবশেষ নাও পাওয়া যেতে পারে।

তাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে লেখা কাহিনীগুলো পড়ে উত্তেজিত, চমৎকৃত বা রহস্যাবৃত হওয়ার কিছু নেই। এর প্রতিটি ঘটনারই জাগতিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে একদিক দিয়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কাহিনী আমাদের কাছে মূল্যবান বলে বিবেচিত হতে পারে। রূপকথার রাজারাণীদের দিন কবে ফুরিয়েছে! বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কিংবা ফ্লাইং সসার বা একেবারেই সাম্প্রতিক মঙ্গলগ্রহে নারীর ছবি বিষয়ক কাহিনীগুলো সে জায়গা নিতে পারে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হতে পারে আগামীদিনের রূপকথার ঝুলি।

(ছবিটি নেওয়া হয়েছে উইকিপিডিয়া থেকে)


মন্তব্য

অনিশ্চিত এর ছবি

এই লেখার সাথে একটি ছবিও যুক্ত ছিলো, সেটি তো দেখছি না। সম্পাদনা করতে গিয়ে দেখি সম্পাদনা করার পারমিশন আমার নেই। এখন কী করা? মডারেটরদের কেউ কি বিষয়টি দেখবেন?

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ছবিটা এ পাঠান।



অজ্ঞাতবাস

অনিশ্চিত এর ছবি

পাঠিয়েছি। প্লিজ একটু চেক করেন। ধন্যবাদ।

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ছবি ফিক্স করা হইলো



অজ্ঞাতবাস

অনিশ্চিত এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার লেখায় বিশাল একটি কমেন্ট করেছিলাম। কিন্তু কী সব এরর দেখালো। পুনরায় আর লিখতে ইচ্ছে করলো না। তবে লেখাটি প্রিয় পোস্টে তুলে রেখেছি।

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

নজমুল আলবাব এর ছবি

ভাল লেগেছে লেখাটা। অনেকটা এর কাছাকাছি লেখা পড়েছিলাম রহস্য পত্রিকায়। অনেক আগে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অনিশ্চিত এর ছবি

রহস্য পত্রিকা কি এ ধরনের লেখা ছাপে? বরং তারা রহস্যধরেরাখাসম্পর্কিত লেখা ছাপতে পছন্দ করে। আর সেবা প্রকাশনীর সর্বাধিক বিক্রির তালিকায় যে বইগুলো থাকার কথা তার মধ্যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বইটি অন্যতম।

এই লেখাটি আমি লিখেছিলাম অন্য একটি পত্রিকার জন্য। সেটিকে পরিমার্জন করে এখানে প্রকাশ করা হলো।

আপনাকে ধন্যবাদ।

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

অনিশ্চিত এর ছবি

আম্মো। ওইটা পইড়াই তো উৎসাহিত হইছিলাম।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে একটা তথ্যচিত্র দেখেছিলাম, আপ্নআর লেখাও ভালো লেগেছে ।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

অনিশ্চিত এর ছবি

আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে তথ্যচিত্রটি কোথায় দেখেছিলেন জানাতে পারবেন? সম্ভব হলে দেখে নিতাম।

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

দৌবারিক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। এত রহস্য আর ভালো লাগে না।

অনিশ্চিত এর ছবি

কিন্তু এখনো কত রহস্য রয়ে গেছে এই পৃথিবীতে। কোনো কিছু ঘটলে আমরা কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা না করে চোখ বুঁজে রহস্য নিয়ে ভাবালুতা করতে পছন্দ করি।

আপনাকে ধন্যবাদ।

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হু... ছোটবেলায় সেবার বইটা পড়েছিলাম... তখন এইসব পইড়া হ্যাভি মজা পাইতাম...

লেখার সাথে সোর্স দিলে ভালো হইতো...
ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনিশ্চিত এর ছবি

ধন্যবাদ, নজরুল ইসলাম। আমার বাসায় টিভি নেই বলে আপনার নাটক দেখতে পারি না। তবে বন্ধুদের মুখে প্রশংসা শুনি।

সোর্স দিতে চেয়েছিলাম একবার। কিন্তু পরে মনে হলে মূল লেখার চাইতে অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই আর দিই নি। সোর্স না দেওয়ার আরেকটি কারণ আছে। আসলে ইন্টারনেট থেকে অনেক লেখা বের করে পড়ছিলাম। পড়ার পর সেগুলো ফেলেও দিয়েছি। ফলে লেখার সাথে সূত্রগুলো যোগাড় করা সম্ভব হয় নি। তবে আবার খুঁজলে পাওয়া যেতো না, তা নয়। আলস্যের কারণে সেটি করা সম্ভব হয়ে উঠে নি।

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধূরো... ব্যাপার না...
আমার নাটক তো আমি নিজেই দেখি না। টিভি থাকা সত্ত্বেও...

সোর্সের কথা বলছিলাম এমনি। এইরকম তথ্যনির্ভর লেখায় সোর্স উল্লেখ থাকলে ওজন বাড়ে আরকি।

ভালো থাইকেন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনিশ্চিত এর ছবি

আপ্নের নাটক আপ্নে দেখ্বেন ক্যাম্নে? শুটিং হওয়ার আগেই তো পড়া শেষ। বার্বার দেইখ্যা লাভ আছে?

সোর্সের বিষয়টি উল্লেখ করার জন্য ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে সতর্ক থাক্বো।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

অভিজিৎ এর ছবি

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে যতটা 'রহস্যময়' ভাবা হয় ততটা আসলে নয়। এটাকে 'রহস্যময়' করে পাবলিকের সামনে হাজির করা হয়েছে। এ ব্যাপারটির পুরোধা ছিলেন 'চার্লস বার্লিৎস' নামের এক লেখক। ১৯৭৫ সালে 'রার্মুডা ট্রায়েঙ্গেল' নামের বইয়ের মাধ্যমে এই অখ্যাত লেখক একেবারে জিরো থেকে হিরো হয়ে ঊঠলেন। এই বইটেই প্রথম বলা হয়েছিলো যে, এই বিশেষ অঞ্চলে নাকি রহস্যজনকভাবে বহু জাহাজ ও বিমান যাত্রী সহ নিখোঁজ হয়েছে। নিঁখোজ হবার আগে ওই সমস্ত জাহাজ বা বিমান থেকে নাকি যে সমস্ত বার্তা পাঠানো হয়েছহিলো তাতে জানা গেছে তাদের কম্পাসের কাটা নাকিবন বন করে ঘুরতে শুরু করেছিলো। এই ধরণের আরো কথা বইয়ে বলা আছে...

বারমুডা ট্রায়েঙ্গেল বইটি গোটা পৃথিবী জুরে এত আলোড়ন তুলেছিলো যে, একাধিক রাষ্ট্র বার্মুডা ট্রায়েঙ্গেলের রহস্য অনুসন্ধানে এগিয়ে আসে, এগিয়ে আসে বহু বিজ্ঞানী। আমেরিকা আর রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বহু অনুসন্ধান চালানো হয়। বার্মুডা অনুসন্ধান কর্মকান্ডের নাম দেয়া হয়েছিলো 'পোলিমোড' প্রোগ্রাম।

এই প্রোগ্রাম থেকে জানা গেছে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী বার্মুডা অঞ্চল দিয়ে প্রতি বছর গড়ে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার জাহাজ চলাচল করে। প্রতি বছর গড়ে ওই সমস্ত জাহাজ থেকে দশ হাজার সাহায্যবার্তা পাঠানো হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বরং ঐ অঞ্চলে নিখোজ জাহাজের সংখ্যা বিস্ময়কর ভাবে কম। বিমান সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানান গিয়েছে যে সমস্ত বিমান সংস্থার বিভিন্ন বিমান ওই অঞ্চল দিয়ে যাতায়াত করে, গত বারো বছরে তাদের কোন বিমানই ওই অঞ্চলে নিখোঁজ হয়নি।

এ ছাড়া যে সসস্ত ঘটনার পেছনে অপার্থিব লেভেল আটা হয়েছে সেগুলো আসলে সেই অর্থে অপার্থিব ছিলো না। সামুদ্রিক ঝড়ে সমুদ্র উত্তাল থাকলে অনেক সময়ই জাহাজ ডুবি হয়। যেমন ক্রেক্বিন ক্রুজার থেকে পাওয়া বার্তা (লগ বুক) থেকে জানা গিয়েছে সে সময় জাহাজটির প্রপেলার নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। ডুবে জাওয়ার আগ পুরযন্ত সেখান থেকে সাহায্যের আবেদন জানানো হয়। কিন্তু কমাস 'বন বন' করে ঘুরবার মত কোন ইঙ্গিত সেখানে ছিলো না।

এছাড়াও আরো অনেক ব্যাপার স্যাপার আছে। আমি অনেক আগে (আশির দশকে) 'বিচিন্তা' নামের একটি সাপ্তাহিকীতে বারমুডা ট্রায়েঙ্গেলের রহস্য নিয়ে লিখেছিলাম। সেখানে রকিব হাসানের বইটা থেকে অনেক কিছু উদ্ধৃত করেছিলাম - অবশ্যই সেগুলোর অসারতা দেখিয়ে। আপনার লেখা দেখে সেটি আজ মনে পড়ে গেল...



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

অনিশ্চিত এর ছবি

লেখার চাইতেও মন্তব্য ধারালো। অনেক উপকৃত হলাম। মুক্তমনাতেও বোধহয় এ ধরনের একটা লেখা ছিলো- অবশ্য আমি দেখেছিলাম অনেকদিন আগে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

রাফি এর ছবি

ভাসাভাসা জ্ঞান ছিলো; অনেক কিছু জানলাম।
ধন্যবাদ।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অনিশ্চিত এর ছবি

ধন্যবাদ, রাফি।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক আগে সেবা থেকে প্রকাশিত শামসুদ্দিন নওয়াব-এর আজব-১ সিরিজের বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বইটা পড়েছিলাম অনেক আগে। আর বেশ ক'মাস আগে দেখলাম ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর নেকেড সায়েন্স সিরিজের একটা ডকুমেন্টারি। আপনার জন্য একটা লিংক দিলাম।
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

অনিশ্চিত এর ছবি

লিংকটি দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ কিছু বিষয় আগের চেয়ে অনেক পরিষ্কার করে জানা হলো। কিছু দ্বিধা দূর হলো। হাসি

"নীল_অপরাজিতা"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।