মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে, এক শীতের দিনে, বৃদ্ধনিবাসে ভর্তি করা হলো ৮০ বছরের দেখতে শক্তসামর্থ এক বুড়োকে। ডাক্তার বৃদ্ধনিবাসের পরিচালককে পইপই করে বলে দিলেন, মানসিকভাবে ভালো রাখলে ইনি আরো বছরখানেক বাঁচবেন। শক্ত আঘাত পেলে যে কোনো সময় মারা যেতে পারেন। তার এখন খুব আনন্দদায়ক সময় কাটানো দরকার।
কিন্তু মানসিকভাবে বৃদ্ধকে কে ভালো রাখবে? এখানে সবাই-ই তো বৃদ্ধ! আর এক বৃদ্ধ আরেক বৃদ্ধকে কতটুকুই বা সময় দিয়ে ভালো রাখতে পারবে! বৃদ্ধনিবাসের পরিচালক তাই বুদ্ধি করে বৃদ্ধের ছেলেমেয়েদের বললেন এমন কাউকে এখানে নিয়ে আসতে যে বৃদ্ধকে ভালো রাখতে পারবে।
ছেলেমেয়েরা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে বৃদ্ধের তরুণ বয়সের খুব প্রিয় একজন বান্ধবীকে নিয়ে আসলো যার বয়সও ৭০-এর বেশি, কিন্তু এখনো বেশ সুস্থ। ছেলেমেয়েরা বৃদ্ধাকে ডাক্তারের কথাগুলো জানালো এবং অনুরোধ করলো বৃদ্ধকে যেনো সময় দেয়, হাসিঠাট্টা করে এবং উদ্বেগমুক্ত জীবনযাপনে সহায়তা করে।
বৃদ্ধের সঙ্গে বৃদ্ধার দেখা নেই চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তাই বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে চিনতে পারলেন না। যা হোক, বৃদ্ধা ওই বৃদ্ধের পছন্দ-অপছন্দ জানতেন বলে খুব দ্রুত তাদের সখ্য গড়ে উঠলো। একটি আনন্দময় জীবন কাটাতে শুরু করলেন তিনি। এমন জীবন যেখানে বৃদ্ধার মোহময়ী স্নেহে-ভালোবাসায় বৃদ্ধের মনে কোনো হাহাকার থাকলো না।
মাস তিনেক পর একদিন বিকেলে হঠাৎ হালকা জ্বর আসলো বৃদ্ধের। ডিনার করিয়ে, ওষুধ খাইয়ে বৃদ্ধা তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রাত ১০টায় আবার আসবেন বলে বিদায় নিলেন। এদিকে কিছুণ পরেই জ্বর সেরে গেলো বৃদ্ধের। ঘুমও আসছিলো, কিন্তু বৃদ্ধার প্রতীক্ষায় না ঘুমিয়ে বসে রইলেন বিছানায়।
ওদিকে বৃদ্ধা ভাবলেন বৃদ্ধ নিশ্চয়ই ঘুমুচ্ছে। তাই তিনিও আর দেখতে গেলেন না।
১০টা পেরিয়ে ১১টা... ১২টা... ১টা বাজলো। আস্তে আস্তে ৩টা... ৪টা... ৫টা...
পরদিন সকালে বৃদ্ধার ঘুম ভাঙলো শোরগোলে। জানলেন বৃদ্ধ মারা গেছেন। বিশ্বাস হলো না তার- হঠাৎ এভাবে মারা যাবে কেনো? তড়িঘড়ি করে বৃদ্ধের ঘরে ছুটে গেলেন। দেখলেন, বিছানার ওপর বালিশে হেলান দিয়ে নিথর বসে আছেন তিনি। চোখে তার অবারিত হাহাকার। দু-চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ হাট করে খোলা দরজার দিকে। চোখ দুটো যেনো অপো করছে। বৃদ্ধনিবাসের কেউ কিছু বুঝেনি। সবাই ভাবছিলো- বয়স হয়েছে তো! তাই! কিন্তু একমাত্র বৃদ্ধাই বোধহয় জানেন কেনো মারা গেলেন তিনি... ওই চোখ অপেক্ষা করছে কার জন্য... কীসের জন্য... অপেক্ষার কীরকম কষ্ট নিয়ে মারা গেলেন তিনি... শুধু অপেক্ষা, নাকি প্রতীক্ষাও ছিলো সে চোখে...
মন্তব্য
-
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধন্যবাদ ধুসর গোধূলি।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
ভাল লাগল।
ধন্যবাদ, একজন অতিথি।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
সুন্দর লিখেচেন, খুব ভাল লাগল, বিষ্ন্নতা ছুয়ে গেল!
***************************************************
When I'm right nobody remembers; when I'm wrong nobody forgets!
When I'm right nobody remembers; when I'm wrong nobody forgets!
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
ভাল লাগল । তারা দিলাম
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ধন্যবাদ, এনকিদু।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
সুন্দর তো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ধন্যবাদ, রানা মেহের।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।
দৃশা
ধন্যবাদ, দৃশাপু।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
নতুন মন্তব্য করুন