একসময় হঠাৎ করে জিনতত্ত্ব সম্পর্কে পড়ালেখা করতে ইচ্ছে করলো। লেখাটি সে সময়কারই। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র নই। ফলে অনেক কিছুই বুঝতে পারি নি। বিভিন্ন বিজ্ঞান সাময়িকী, উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেটের বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনে যা বুঝেছি, তাই পড়তে পড়তে লিখে ফেলেছিলাম। ভুল থাকতে পারে। লেখাটির কোনো অংশে ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য থাকলে তা জানানোর অনুরোধ করা হলো। কৃতজ্ঞতা স্বীকারসহ সংশোধন করা হবে।
রাজনীতির মতোই বিজ্ঞানীরা জিনতত্ত্বের ইতিহাস নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। এ ব্যাপারে একদলকে উদারপন্থী বলা যায়, আরেকদলকে রক্ষণশীল। উদারপন্থীদের মতে, অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের বংশগতিবিদ্যার দুই সূত্র আবিষ্কারের পর থেকেই এই বিদ্যার আনুষ্ঠানিক ভিত্তি শুরু। মেন্ডেল ১৮৬৬ সালে সূত্র দুটো আবিষ্কার করেন। সে হিসেবে বলা যায়, জিনতত্ত্বের ইতিহাস শুরু হয় ১৮৬৬ সালে।
অপরদিকে রক্ষণশীলরা বলেন, যে কোন বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক উৎপত্তির সময়কাল বিবেচনা করলে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের (৩৮৪-৩২২ খ্রিস্টপূর্ব) হাত দিয়ে এই বিজ্ঞানের উৎপত্তি। কারণ এই ধরনের বিষয় নিয়ে তিনিই প্রথম কিছু কথাবার্তা বলেছিলেন, যদিও তাঁর হাইপোথিসিস বা অনুমিত সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তী সময়ে ভুল প্রমাণিত হয়েছিলো। কিন্তু আলোচনা উত্থাপনকারী হিসেবে অ্যারিস্টটলই এর ইতিহাস সৃষ্টি করেন বলে তারা যুক্তি দেন। অবশ্য এই বিজ্ঞানীদের কেউ অ্যারিস্টটলকে এখন পর্যন্ত জিনতত্ত্বের জনক বলে অভিহিত করেননি, বরং তাঁরা তাঁকে ‘জিনতত্ত্বের প্রথম চিন্তাবিদ’ হিসেবে সম্মান জানিয়েছেন।
বংশগতিবিদ্যা সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের ধারণা ছিলো, যৌনমিলনের সময় নারী ও পুরুষের রক্তের মিশ্রণ ঘটে এবং সেখান থেকেই সন্তানাদির জন্ম হয়। পরবর্তীকালে অবশ্য তার শিষ্যরাই এই মতবাদ বাতিল করে দিয়ে বলেন, নারী ও পুরুষের মিলনকালে পুরুষের দেহ থেকে নির্গত বীর্যরসই সন্তানের জন্ম দেয় এবং এই বীর্যরস পুরুষের প্রতিটি অঙ্গেই উৎপন্ন হয়। তাঁরা এটাও মনে করতেন, পুরুষের সন্তান গর্ভে ধারণ করা ছাড়া এ ব্যাপারে নারীর আর কোনো কৃতিত্ব নেই। তাঁদের আরো ধারণা ছিলো, বীর্যরস নারীদেহে প্রবেশ করে নিজে নিজেই বিকশিত হয় এবং সেখানে আস্তে আস্তে সন্তানের অবয়ব সৃষ্টি হতে থাকে।
১৬৭৭ সালে বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ভন লিউয়েন হুক যে মতবাদ প্রকাশ করেন, তা প্রকারান্তরে অ্যারিস্টটলের ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে মানুষের দ্রুত সন্তরণশীল শুক্রাণুকে পালাক্রমে বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, শুক্রাণুকে নারীর গর্ভাশয়ে অনুপ্রবিষ্ট করানোর মাধ্যমেই সন্তানাদির জন্ম হয়। তৎকালীন অনেক বিজ্ঞানী সন্তান জন্মদানে নারীর নিস্ক্রিয়তার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি কিন্তু উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে তারা এ ব্যাপারে কিছু বলা থেকে বিরত থাকেন। এরও কিছুদিন পর বিজ্ঞানী ম্যালিয়াস এ ব্যাপারে লিউয়েন হুকের বক্তব্য সমর্থন করলে তা আরও শক্ত ভিত পায়। পরবর্তী সময়ে এন গ্রু, রেগনিয়ার দ্যা গ্রাফ, অ্যাসেনিয়ার প্রমুখ বিজ্ঞানীরা তাদের ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ প্রকাশ করেন। প্রাণীর বাইরে উদ্ভিদ যৌনজীবন নিয়ে প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানী আর ক্যামেরিয়াস, ১৬৯৪ সালে।
সন্তান জন্মদানের ব্যাপারে সর্বপ্রথম ‘যুক্তিযুক্ত বৈজ্ঞানিক মতবাদ’ হিসেবে মেনে নেওয়া হয় ১৭৫৯ সালে বিজ্ঞানী সি এফ ওলফের (১৭৩৮-১৭৯৪) একটি মতবাদকে। তিনি বলেছিলেন, নারীদেহের ডিম্বাণু ও পুরুষের শুক্রাণু দুটোই সমস্বত্ব ধরনের জীবিত পদার্থের তৈরি একপ্রকার জেলিবিশেষ। এতে কোনো পূর্বগঠিত দেহ নেই। তাঁর এই মতবাদকে এপিজেনেসিসের ভ্রুণতত্ত্বীয় মতবাদ বলা হয়।
প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ বা ডারউইনবাদের প্রবক্তা চার্লস ডারউইন মনে করতেন, প্রাণীর দেহের সব অঙ্গে একপ্রকার ক্ষুদ্রাকার দানা রয়েছে যা ওই অঙ্গের বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করে। তিনি মনে করতেন, ওই দানাগুলো বিভিন্ন অঙ্গ থেকে নির্গত হয়ে সন্তাণের চরিত্রলক্ষণে সঞ্চারিত হয়। তিনি দানাগুলোর নামও দিয়েছিলেন- প্যারজিন। সে কারণে তাঁর এই মতবাদকে প্যানজেনেসিস মতবাদও বলা হয়।
এই সময়কালে এ ধরনের আরও অনেক মতবাদ প্রচারিত হয়। কিন্তু একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো সাযুজ্য ছিলো না। কারো হাতেই ছিল না কোনো জোরালো প্রমাণ। ফলে সে সময় এ ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভবপর হয়নি। ১৮৬৬ সালে ধর্মযাজক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল বংশগতিবিদ্যর সূত্রগুলো প্রকাশের পরই মূলত এই সম্পর্কিত তত্ত্বগুলো সুনির্দিষ্ট অবয়ব পেতে শুরু করে।
মেন্ডেল তাঁর বাগানের মটরশুঁটি গাছের ওপর বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়ে সূত্রগুলো প্রণয়ন করেন। স্থানীয় ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি জার্নালে’ এগুলো প্রকাশিত হলেও দীর্ঘ তিরিশ বছর সেগুলো উপেক্ষিত থাকে। তবে পরবর্তী সময়ে সেগুলোকে মেন্ডেলের সূত্র নামে অভিহিত করা হয় এবং জেনেটিক্স বা জিনতত্ত্ব একটি আলাদা শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
১৮৮২ সালে জার্মান বিজ্ঞানী ওয়াল্টার ফ্লেমিং অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে স্যালামান্ডার লার্ভার কোষে প্যাঁচানো ও বিভক্ত কিছু সুতার মতো অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। এগুলোকেই পরবর্তীকালে ক্রোমোজোম বলা হয়। পরের বছরই চার্লস ডারউইনের জ্ঞাতিভাই ফ্রান্সিস গ্যালটন নির্বাচিত বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেন সুপ্রজননসংক্রান্ত মতবাদ আবিষ্কার করে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, জার্মানির বিজ্ঞানী কার্ল করেন্থ, অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী ও নিবন্ধকার এরিখ সেরমার্ক ও হল্যান্ডের বিজ্ঞানী হুগো দ্যা ভ্রিস তিনজনই আলাদাভাবে পরস্পরের অজান্তে এই বিষয়টি গবেষণা করেন এবং তাদের প্রত্যেকের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয় ১৯০০ সালের শুরুতে। তাঁদের গবেষণার ফলাফল ছিল হুবহু এক এবং তাঁরা প্রত্যেকেই বিস্ময়ে লক্ষ করেন যে, তাঁরা যে সূত্রগুলো আবিষ্কার করেছেন, সেগুলো বহু আগেই মেন্ডেল আবিষ্কার করে ফেলেছেন। তাঁরা তখন মেন্ডেলের সূত্রগুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করে সেগুলো প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।
আমেরিকার জীববিজ্ঞানী টমাস হান্ট মরগান ১৯১০ সালে ড্রসোফোলিয়া ম্যালানোগ্যাস্টার নামক মাছির ওপর পরীক্ষা চালিয়ে বুঝতে পারেন যে, কোষের একটি নির্দিষ্ট অঙ্গাণুতে জীবের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। কোষের প্রতিটি অঙ্গাণু আলাদা-আলাদাভাবে পরীক্ষা করে তিনি নিশ্চিত হন- ক্রোমোজোমই এই বৈশিষ্ট্যের ধারক। ক্রোমোজোমের ভেতর যে সূক্ষ্ম দানা রয়েছে সেগুলোই বংশগতি সম্পর্কে মেন্ডেলের বর্ণিত বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। ১৯১১ সালে ডেনিশ বিজ্ঞানী উইলহেলম জোহানসেন ওই দানাগুলোর নাম দেন জিন।
এই সময়ের অনেক পর ১৯২৬ সালে আমেরিকার ক্যানসাস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জোসেফ হারমান মুলার ফলের মাছির ওপর এক্স-রে পরীক্ষা চালিয়ে জেনেটিক পরিব্যক্তির কারণ বের করেন। ১৯৩২ সালে অ্যালডোস হাক্সলে ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন যেখানে সর্বপ্রথম জেনেটিক প্রযুক্তিবিদ্যায় ডিসটোপিয়ান ভিউর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
১৯৪৪ সালের আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, যেহেতু ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিয়িক অ্যাসিড বা ডিএনএ প্রোটিন দ্বারা গঠিত, তাই প্রোটিনই বংশগতির মূল বৈশিষ্ট্য বহন করে। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানী অসওয়ার্ড এভরি, কলিন ম্যাকলিওড এবং ম্যাকলিন ম্যাকার্থি নিউমনোকক্কাস ব্যাকটিরিয়ার ওপর গবেষণা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, প্রোটিন নয় বরং নিউক্লিয়িক অ্যাসিড দিয়ে গঠিত ডিএনএ-ই প্রাণীর বংশগতির উপাদান।
এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে ডিএনএর ওপর বিভিন্ন পরীক্ষা চালিয়ে এর গাঠনিক ভিত্তি বের করার চেষ্টা চালানো হয় বেশ কয়েকবার। অবশেষে ১৯৫৩ সালে আমেরিকার জেডি ওয়াটসন, এমএইচএফ উইলকিন্স এবং ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এফএইচসি ক্রিক ডিএনএর রাসায়নিক গঠন বর্ণনা করে জিনতত্ত্বকে হঠাৎ করেই কয়েক দশক এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁরা বের করেন যে, ডিএনএতে চারটি উপাদান বিদ্যমান- এডিনিন, গুয়ানিন, থায়ামিন ও সাইটোসিন। তাঁরা এর পর্যায়ক্রমিক বিশ্লেষণ করে দুটি শৃঙ্খলের সাহায্যে এর বিন্যাস দেখান। মূলত এর পর থেকে অন্য বিজ্ঞানীরা এর প্রয়োগ ও ব্যবহার ব্যাপক আকারে শুরু করেন।
তারপর থেকেই দ্রুত এই শাখার উন্নতি হতে থাকে। ১৯৬৯ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল টিম প্রথম জিন শনাক্ত করে এর আচরণ ব্যাখ্যা করেন। ১৯৭৩ সালে আমেরিকান প্রাণরসায়ণবিদ স্ট্যানিল কোহেন এবং হারবার্ট বয়ার আফ্রিকান ব্যাঙের ওপর একপ্রকার ব্যাকটিরিয়ার জিন প্রবেশ করিয়ে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে পরীক্ষা চালান। এই পরীক্ষাটিকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলত সে সময় থেকে জেনেটিক কোম্পানি স্থাপনের চিন্তাভাবনাও করেন অনেকে। ফলশ্রুতিতে ১৯৭৬ সালে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে প্রথম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি স্থাপিত হয়।
১৯৮০ সালে বিজ্ঞানী মার্টিন কলিন এবং তাঁর সহকর্মীরা এক প্রাণীর জিন অন্য প্রাণীর দেহে স্থানান্তর করিয়ে সর্বপ্রথম ট্রান্সজেনিক ইঁদুর তৈরি করেন। আমেরিকার খাদ্য ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর ব্যাকটিরিয়ার মাধ্যমে পচনশীল বস্তু থেকে মাদক উৎপন্ন হওয়ার কারণ হিসেবে ইনসুলিন ও জিনের বৈশিষ্ট্যকে দায়ী করে। ১৯৮৪ সালে লিচেস্টারশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালেক জেফ্রিস জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তকরণে ডিএনএ ব্যবহার আবিষ্কার করেন এবং পরবর্তী বছর থেকেই পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরু করে। বলা বাহুল্য, এই উদাহরণগুলোর সবই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিঙের ফসল। এছাড়া বিখ্যাত খেলোয়াড় ওজে সিম্পসনের জোড়াখুনের মামলার ব্যাপারটি নিষ্পন্ন করতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিঙের সাহায্য নেওয়া হয়।
তবে সবচাইতে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৭ সালে। স্কটল্যান্ডের রজলিনবার্ন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী আয়ান ভিলমুট ক্লোনিঙের মাধ্যমে একটি ভেড়া উৎপন্ন করেন। একটি স্ত্রী ভেড়ার শরীর থেকে কোষ নিয়ে সেটিকে বহুবিভাজিত করে তিনি ডলি নামের ভেড়াটি উৎপন্ন করার মাধ্যমে জিনতত্ত্বের এ পর্যন্ত সেরা উদ্ভাবনটি করেন। তিনি যে পদ্ধতিতে ভেড়া উৎপন্ন করেন, সে পদ্ধতিতে যে কোনো প্রাণী এমনকি মানুষও উৎপন্ন করা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। তবে এর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে প্রচুর। বিশেষ করে এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার হার এতো বেশি যে, উৎপন্ন প্রাণী খুব বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে না। নৈতিকতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য অবস্থার কথা বিবেচনা করে মানুষ ক্লোন এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ রয়েছে।
মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে আমেরকির সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রেমের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে আপনাদের। ঘটনাটি ১৯৯৮ সালের। প্রথমদিকে ক্লিনটন এটা অস্বীকার করলেও মনিকার বিখ্যাত নীল জামায় লেগে থাকা রক্ত (নাকি বীর্য?) থেকে সংগৃহীত ডিএনএর বৈশিষ্ট্য ও সাবেক প্রেসিডেন্টের ডিএনএর বৈশিষ্ট্য এক হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
সম্প্রতি সময়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে ডিএনএ নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের বাঁচিয়ে তোলার জন্য ডিএনএর সাহায্যে ব্যাপক পরীক্ষা চালিয়ে কিছু প্রাণীকে নতুনভাবে নতুন পরিবেশ-উপযোগী করে তোলা হয়। আমাজন নদীর তীরে বসবাসকারী একদল মাছির ওপর এরকম একটি পরীক্ষা চালানো হয়। অপরদিকে মানবদেহের ক্যান্সার নির্ণয় ও তার প্রতিকারে ডিএনএর ভূমিকার ওপর গবেষণা শুরু হয় এবং নিউক্লিয়াসের ভেতরে অবস্থানসাপেক্ষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের ম্যাপ তৈরির কাজ শুরু হয়।
জিনপ্রযুক্তি যেভাবে দ্রুত উন্নতি করছে, তাতে এক দশক পরেই কী ঘটবে তা কল্পনা করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, খুব শিগগিরই ক্যান্সার ও এইডসের মতো ভয়াবহ রোগগুলোর ডিএনএ ম্যাপিং-এর কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং এর ফলে এগুলোর প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব হবে। অনেক বিজ্ঞানী আরো আশাবাদী। তাঁরা মনে করেন, আগামী শতকে হয়তো মানুষ চাহিদা অনুসারে সন্তান জন্মলাভ করার প্রক্রিয়া শুর করবে এবং প্রত্যেকেই চাইবে তাদের সন্তান যেনো তাদের সীমাবদ্ধতাগুলো পরিহার করে রোগমুক্ত শরীর নিয়ে জন্মলাভ করতে পারে। টেলিডুপ্লিকেশন পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা তো ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। শরীরের প্রতিটি বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণ করা বা ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করার চেষ্টাও আজ পরীক্ষাগারে চলছে। সন্তান জন্মদানের ব্যাপারে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা এখনই কমেছে অনেকটা, আগামীতে হয়তো মানুষই এ ব্যাপারে সর্বেসর্বা ভূমিকা পালন করবে- এই ধারণা পোষণ করতে শুরু করেছেন অনেকেই।
মন্তব্য
বিজ্ঞানবিষয়ক লেখার সংখ্যা সাধারণতঃ কম থাকে, আপনার তথ্যবহুল (সদর্থে) এবং সাবলীল এই লেখাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
ছোটোবেলায় একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ম্যাগাজিন আসতো (কলকাতায়), "উৎস মানুষ", চেহারা খুব চমকপ্রদ নয় কিন্তু সারবস্তু প্রচুর ছিলো। তাতে একটা ধারাবাহিক নাটক প্রকাশিত হতো, গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের জীবনের কাহিনী ঘিরে। সেটার কথা মনে পড়ল অনেকদিন পর।
উৎস মানুষ আমিও পড়তাম। এখন বোধহয় বের হয় না। কী জানি!
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
বিজ্ঞান লেখক হিসেবে আপনার উদ্ভাসনকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশা করি আগামীতে আরো বেশি বেশি লেখা পাবো। আর এই জেনেটিক বিষয়টাকে সম্ভবত খুব বেশি সংক্ষিপ্ত করে ফেলেছেন। ফলে কে কী করেছেন এরকম চমৎকার একটা ক্রমতালিকা পেলেও বিষয়গুলোর আরেকটু গভীরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছি। যদি পরবর্তীতে লিখে যান, অনুসন্ধিৎসু পাঠক হিসেবে নিশ্চয়ই আরো বেশি তৃপ্ত হবো।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনার কথা ঠিক। এর ইতিহাস এতো বিস্তৃত যে, তুলনায় এই লেখা অনেক ছোট। কিন্তু আমি পড়তে গিয়ে যে নোটগুলো রেখেছিলাম তারই আলোকে লেখাটি তৈরি করা হয়েছিলো। ক্রমতালিকার ব্যাপারে খোঁজ করে দেখবো। যদি পাওয়া যায় জুড়ে দিবো।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। উৎসাহিত বোধ করছি।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
লেখাটির যে বৈশিষ্ট্যটি আমাকে মুগ্ধ করেছে সেটা হলো, জিনতত্ত্বের ইতিহাস। মানব সভ্যতায় কোনো বিষয়ে একটি জ্ঞানের সুনির্দিষ্ট কাঠামো কীভাবে গড়ে উঠে, কোনো অজ্ঞাত বিষয়ে মানুষ ক্রমে ক্রমে কীভাবে প্রথমে ধারণা করতে শুরু করে, তারপর ভুল ধারণাগুলোকে বাতিল আর নতুন ধারণার সংযোজন করে এবং সঠিক জ্ঞানের ধারাকে পুষ্ট করে সেই ইতিহাসই দারুণভাবে ফুটে উঠেছে লেখায়। পাঠ্য বইয়ে যে জ্ঞান আমরা দশ মিনিটে আহরণ করি, কত কত ধাপ আর সময়ের ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে সেই দশ লাইনের উপসংহারে মানুষ পৌছেছে সেটা জানতে পারাও এক দারুণ অভিজ্ঞতা বটে।
অনিশ্চিত অতিথির কাছে এইরকম আরো আরো পোস্টের আবদার করি। হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট নিয়েও লিখবেন আশা করি।
অসংখ্য ধন্যবাদ, ফারুক ভাই। চেষ্টা করবো আপনার আব্দার মেটাতে। কিন্তু আমি বিজ্ঞানের ছাত্র নই। ফলে বিষয়গুলো ঠিকভাবে উপস্থাপন করছি কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। নিজস্ব জ্ঞান বৃদ্ধি আর লেখা তৈরি করা দুটো ভিন্ন বিষয়। ফলে কতোটুকু পারবো বুঝতে পারছি না। যা হোক চেষ্টা করে যাবো। ভালো থাকবেন।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
এই লেখাটা পড়ে একজন মৌখিকভাবে জানিয়েছেন (তিনি আবার কম্পুকানা, যে কারণে না লিখে মৌখিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন) যে, এক অর্থে অ্যারিস্টটলকে প্রায় সব বিষয়েরই জনক বলা যায়। কারণ হেন বিষয় নেই, যা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান নি। এই একই কারণে আবার তাঁকে জনক বলা যায় না। কেবল যে বিষয়গুলো নিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি কথা বলেছেন, সেগুলো ছাড়া বাকিগুলোকে 'খামাকা' অ্যারিস্টটলকে না টেনে আনাই ভালো।
মন্তব্যকারীর নাম আসাদ। তাঁর পক্ষে মন্তব্যটা আমিই পোস্ট করলাম।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
ক্রেইগ ভেন্টারের একটা বক্তৃতার ভিডিও দিলাম।
লেখাটা আরও আগেই পড়া উচিত ছিল। বংশগতিবিজ্ঞান এর একটা ভাল টাইমলাইন হয়ে গেছে লেখাটা। এছাড়া শেষে ভবিষ্যতের দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে এথিক্স সংক্রান্ত পড়াশোনা বা গবেষণার সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র মনে হয় হবে জেনেটিক্স। কারণ এটা দিয়ে স্বয়ং এথিক্স এর স্রষ্টাদেরই বারোটা বাজিয়ে দেয়া যাবে। "Gattaca" (গ্যাটাকা) সিনেমাটা দেখেছেন? জেনেটিক্স এর মাধ্যমে নবজাতক নিয়ন্ত্রণের ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে বেশ ভাল প্রেডিকশন আছে মুভিটাতে। সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হতে পারে, মানুষ কর্মদ্যোম হারিয়ে ফেলবে। যেমন কেউ যদি আপনাকে বলে, কোনকিছু করে কোন লাভ নেই, আল্লাহ সব ঠিক করে রাখছে তাহলে আপনার মধ্যে এক রকম নিস্পৃহতা তৈরি হবে। জেনেটিক্স নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলে এমনটা হতে পারে যে, চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রয়োজন হবে না। পরীক্ষা নয় জেনেটিক গঠনই হয়ে যাবে মানুষের যোগ্যতার চাবিকাঠি। মানুষ মনে করবে, বাবা-মা র মর্জিমাফিক জন্ম নেয়াটাই তার সবচেয়ে বড় অর্জন, আর অর্জন করার কিছু নেই।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
বিজ্ঞানলেখকেরা বিলুপ্তির পথে, ইনি আর লেখেন না কেন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন