সামহোয়্যার ইনের শালীনতাবাদী আন্দোলনের সময় একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছিলো যে শালীনতা বিষয়ক নীতিমালার ক্ষেত্রে একটা চলমান সমস্যা হলো এই বিষয়ে কোনো আদর্শ অবস্থান না থাকা-
আদতে আমাদের এইসব বিতর্কের সূচনায় এটা মনে রাখা উচিত ছিলো যে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব জীবনদর্শনে একটা আদর্শ অবস্থান থাকে- তবে সেই আদর্শ অবস্থান যে সবার জন্যই আদর্শ নয় এই সহজ সত্যটা অস্বীকার করতে চাওয়াতেই সব সমস্যার উদ্ভব-
গত কাল সুমন রহমানের পোষ্ট " এসো আমার ব্লগে এসো" প্রেক্ষিতে এই বিষয়টা শুরু হয়েছে- অরুপ কোনো এক প্রতি মন্তব্যে সুমন রহমানকে ইস্পাতের অন্তর্বাস পড়ে ফেলার উপদেশ দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হওয়া বিতর্কে নীতিমালার বিষয়টা প্রকাশ্য হয়।
আমার বক্তব্য ছিলো সামহোয়্যারের উপলব্ধি পরবর্তী অবস্থান থেকে- আমার ধারনা ছিলো বিষয়টা সুমন রহমান যথেষ্ট অবগত যে এই শালীনতা, ব্যক্তিগত আক্রমন এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করলে একটা সিদ্ধান্ত জানানো যায় যে- শালীনতা বিষয়টা মানুষের ব্যক্তিগত অনুভবের জায়গা- ব্যক্তিগত আক্রমনের জায়গাটা স্পষ্ট এখানে বক্তার বক্তব্যের ধরণ আর ব্যবহৃত শব্দাবলী দিয়ে এইটুকু উপলব্ধি করা সম্ভব যে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু আসলে ব্যক্তির নিজস্ব জীবনযাপন নাকি তার লিখিত বক্তব্য-
এবং আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে বিষয়টা যখন মানুষ তার লেখক সত্ত্বা এবং তার নিজস্ব জীবনকে পৃথক ভাবতে শিখবে-
মানুষের মৌলিক বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে তার সাহিত্যে- তবে ক্ষতিকারক সাহিত্য- প্রগতিশীলতার বিপক্ষে যেতে পারে এমন সাহিত্যও সৃষ্টি হয়, কারণ হিসেবে দায়টা ব্যক্তির জীবনদর্শণের উপরে বর্তায়- তবে ক্ষতিকারক ব্যক্তিগত অনুভুতি ধারণ করা এবং এটার প্রচার কিংবা প্রসারের স্থানে বিতর্কটা সব সময়ই ব্যক্তির বক্তব্যকেন্দ্রীক হওয়া বাঞ্ছনীয়-
তার কৃতকর্ম এবং তার জীবনযাপণের ধরণটাকে প্রশ্ন না করে বরং তার বিশ্বাসকে প্রশ্ন করা ভালো- একই ভাবে যদি কারো ব্যক্তিগত বিশ্বাসটা অন্যকোনো ব্যক্তির কাছে পশ্চাতপদতা মনে হয়, যদি মনে হয় সেটা প্রগতিশীলতার বিপরীতে চলে যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে সমালোচনার ধার বাড়ানো যেতে পারে- তবে মানুষ কেনো কখন কোন কথায় আক্রান্ত বোধ করবে এটা বলা মুশকিল- এ কারণেই একটা নীতিমালার অবতারণা- সবসময়ই বিষয়টা এমন একটা জায়গায় এসে থামে-
উদ্ভুত বিতর্কে আমার অবস্থান যেখানেই হোক না কেনো আমার কাছে মনে হয়েছিলো সুমন রহমানের অবস্থানটা মধ্যবিত্ত্বতার আদর্শ উদাহরণ-
মধ্যবিত্ততা একটা সামগ্রীক সামষ্টিক বোধ- যেখানে ধরেই নেওয়া হয় একটা আদর্শ অবস্থান সম্ভব- আমার নিজস্ব অভিমত হলো এমন একটা আদর্শ অবস্থান গ্রহন করা অসম্ভব- সামাজিক ভাবে স্বীকৃত শালীনতা বলে কোনো বিষয় আসলে থাকতে পারে না-
সুমন রহমানের আমার মন্তব্যের প্রতি মন্তব্যে তার বক্তব্য ছিলো আমার উক্তি তার কাছে অহেতুক মনে হয়েছে- বেহুদা উক্তি করেছি যা আলোচনার যৌক্তিক আবহটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে- তবে আমার নিজেরও মনে হয়েছে সুমন রহমানের বক্তব্যটা বেহুদা- এই একটা বিষয়ে আমরা পরিস্কার - আমাদের অবস্থান আয়নার প্রতিবিম্বের মতো-তার অরুপের মন্তব্য নিয়ে কৃত আলোচনাকে আমার বেহুদা মনে হয়েছিলো- অরুপের ব্যবহৃত " ইস্পাতের অন্তর্বাস" ধারণাটা সুমন রহমানের কাছে অশালীন মনে হতে পারে- মনে হতে পারে ব্যক্তি আক্রমন- তাই তিনি নীতিমালার ধারা উল্লেখ করে আপত্তি জানিয়েছেন- তবে তার এই মৃদু আলোচনা আমার কাছে সুখের চুলকানি মনে হয়েছে- এই মধ্যবিত্ত যৌক্তিকতাকে প্রমাণের জন্য তার কসরত আমার কাছে অসাড়ের আঙ্গুলে কি বোর্ডের চুলকানি কমানোর প্রচেষ্টা মনে হয়েছিলো-
মধ্যবিত্ততাকে আড়াল করে যদি এই পরামর্শের বিষয়টা বিবেচনা করি তাহলে আপনি আক্রান্ত বোধ করতেই পারেন, আপনার প্রতি শাররীক আক্রমণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে একটা আদালতে অভিযোগও দায়ের করতে পারেন- এবং আপনার সব সময়ই মনে হতে পারে এই বক্তব্যটা এবং আপনার অবস্থানটা যৌক্তিক- কারণ আপনি ধরেই নিয়েছেন আপনি যে অবস্থানটা গ্রহন করেছেন সেটা একটা আদর্শ অবস্থান এবং এমন একটা আদর্শ অবস্থানের উপস্থিতি বাস্তবে সম্ভব- তবে ইস্পাতের অন্তর্বাসের অশালীনতা এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের তুল্যতা সুমন রহমানের মধ্যবিত্ত চেতনার চুলকানি-
তার অন্য একটা বক্তব্য আমার কাছে আপত্তিকর মনে হয়েছে- তিনি সামহোয়্যারে আমাদের কৃতকর্মের প্রতি আঙ্গুলি না উঠিয়ে আমাকে কৃতার্থ করেছেন- তবে তার বলবার ভঙ্গিটা অনুকরণ করে আমি যদি বলি যে আমি আপনাকে বলতে পারি তবে বলবো না আপনি যে নিজের পশ্চাতদেশ ভাড়া দিয়ে থাকেন- তার সাস্থ্য কামনায় আপনার ইস্পাতের অন্তর্বাস ব্যবহার করা উচিত-
সামহোয়্যারেও এই অশালীনতা নির্ধারণের যৌক্তিক ভ্রান্তিটা সব সময়ই প্রকট ছিলো- এবং এখানে যারা আছেন বর্তমানে তার অন্তত এই বিষয়ে পরিস্কার একটা ধারণা রাখেন যে এই শ্লীলতা নির্ধারণের ব্যক্তি মানসের ভুমিকাটাই প্রধান।
সামহোয়্যার ইনে অশালীনতার চর্চাকারী আবং পৃষ্ঠপোষকতাকারী সবার কাছেই এই ব্যক্তি মানসের জায়গাটা স্পষ্ট ছিলো- তবে আপনি নতুন করে জুতা আবিস্কারের আনন্দে বিগলিত হয়েছেন-
তবে আপনার অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে আপনি শালীনতা ও অশালীনতা বোধ জনিট সামাজিকতার চর্চাকারী ও রক্ষক মধ্যবিত্ততায় ভুগেন- এবং এটা যে আসলে ব্যক্তিগত অনুভুতির বিষয় এই বিষয়টা সম্পর্কে আপনি অনবগত-
অরুপের বিষয়টা মুখ্য নয় তবে মধ্যবিত্ততাজনিত বিভ্রম থেকে বের হয়ে এসে বলতে পারতেন আপনার নিজস্ব বিবেচনায় ইস্পাতের অন্তর্বাস নামক উপমাটা আপনার কাছে অশালীন এবং ব্যক্তিগত আক্টমনের জায়গা মনে হয়েছে-অরুপ ভিন্নমত পোষণ করতে পারে- সে তার অবস্থানটা পরিস্কার করতে পারতো-
আমি যেখানে অরুপের সাথে নিজস্ব ঘনিষ্ঠতার চর্চা করেছিলাম যে বিষয়টা বুঝাতে কবি সভার যৌক্তিকতা চর্চাকারী আপনি সেটা অনুধাবনে ব্যর্থ- তবে এটা আমারও ব্যর্থতা-
আমি বিতর্কে অংশগ্রহন করার সময় এটা বুঝতে পারি নি যে আপনি এখনও ততটা পরিপক্কতা অর্জন করেন নি যে বুঝবেন ব্যক্তিগত অনুভবগুলো কোনো সামাজিক আদর্শ নেই- আপনার এইসব শালীনতা এবং অশালীনতার অনুভব সব সময়ই একটা ঘোলাটে জায়গায় গিয়ে সমাপ্ত হয়- এবং অধিকাংশ সময়ই এই বিষয়গুলো শব্দ ব্যবহারের ধরন এবং এর ব্যবহারে ভিত্তিতে এবং পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে মুল্যায়িত হয়-
তবে আমি দুঃখিত লেখালেখির সৃজনশীলতার বিপরীতে আপনার যান্ত্রিক মানবিকতা বিষয়টা আমি মেনে নিতে পারি নি- আপনি অনেকাংশে গণিতবিদের মতো আচরণ করছেন যারা একটার পর একটা সমস্যা সমাধানের আগে সমস্যা সমাধানের যৌক্তিকতাকে প্রশ্ন করেন
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন