প্রেস ক্লাবের সামনে একদিন একটা শ্লোগান দেখলাম, কাঠ কয়লায় লেখা শ্লোগান-
"মর জনগণ না খেয়ে ভাত ফখরুদ্দিনের আশীর্বাদ"
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিনলিপিতে এটাই বোধ হয় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংযোজন হবে- এই সরকার এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে যার ফলে অনেক মানুষই জীবিকা হারিয়েছে- তবে উপদেষ্টারা বড় বড় গলায় বলেছেন দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নের কথা- আমাদের শুনিয়েছেন আশার বানী- অবশ্যই নির্বাচন হবে যথা সময়ে- আমাদের সংবিধানের সবকটা বিধান মেনে চলতে হবে বলেছে নির্বাচন কমিশন- তবে এসবের আগেও রোড ম্যাপ ঘোষিত হলো- সেখানে বলা হলো ডিসেম্বর ২০০৮ হবে জাতীয় নির্বাচন- প্রয়োজনে আরও আগে হবে-
মজুতদার বিরোধী অভিযানের কুফল পাওয়া গেলো খুব তাড়াতাড়ি- দেশে পন্যের সরবরাহ কমে গেলো- বাজারেও সরবরাহ কম- চাহিদা আছে তাই দাম বাড়ছে আর বাড়ছে- লাগামহীন ঘোড়ার মতো বাড়তি দামের পাগলা দৌড় থামাতে এলিট ফোর্স নামানো হলো- নামালো হলো মিলিটারি- প্রতিদিন সকালে গিয়ে বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মিলিটারি ভ্যান- হয়তো কোনো একদিন কিংবা ২ দিন এটার সুফল পাওয়া যায় তবে দীর্ঘ মেয়েদে সেনা চৌকি স্থাপনের ঝক্কি সরকার নিতে পারে না- তাই এক সপ্তাহে দাম ৩টাকা কমলেও সেটা কখনই আগের দামে ফেরত আসে না- সিপিডির রিপোর্ট আসে - আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে তাই দেশের বাজারের অবস্থা সঙ্গীন-
এবার কি হবে? ভাত না খেয়ে মারা যাবে কতজন? আসলেই কি মধ্যবিত্ত চাল কিনে খেতে পারবে? ও এম এসের চালের দাম ২৫ টাকা কিন্তু এই চাল যখন সংগ্রহ করা হয়েছিলো তখন সব মিলিয়ে দাম পড়েছিলো ২১ টাকা- এসব সংবাদ আমাকে আশ্চর্য করে না- বরং দেখতে পাই আমাদের সরকারেরা কখনই প্রজাতন্ত্রী সরকার ছিলো না- কখনই জনগণের ন্যুনতম চাহিদা পুরণের তাগিদ তারা বোধ করে নি- চাল গম সংগ্রহের ক্ষেত্রেও এই কথা বলা যায়-
ধরা যায় দেশের চিনি কলগুলোর কথা- একটা সময় চিনিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলো বাংলাদেশ- দেশের চিনিকলগুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো- তাই সরকার চিনিকল বন্ধ করে দিলো- এমন কি উৎপাদিন চিনি বিপননের কোনো ব্যবস্থা নেই তাই উৎপাদন কমিয়ে দিলো-
চমৎকার ঘটনা- তবে এর পরের পরিস্থিতি- ভারত থেকে আমদানীকারকেরা চিনি আমদানি শুরু করলো- দেশীয় চিনির চেয়ে সে চিনির দাম কম- বাজারে দেশী চিনি মার খেলো- উৎপাদন কমলো আরও-
একটু পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে ১৯৮৩র পরবর্তী সরকারগুলোতে একটা রাষ্ট্রীয় লক্ষ্য ছিলো বিরাষ্ট্রীয় করণ- এরশাদের এই উদ্যোগের সুফল পেয়েছিলো তার সংসদের ভাঁড়েরা= তারা প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছে- রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত নেতা হয়েছে- তবে আমলাতন্ত্রের ভেতরে কেনো এই প্রাইভেটাইজেশনের ভুত চাপলো-
যারা সচিবালয়ে বসে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতি তৈরি করেন বা পর্যালোচনা করেন তাদের ভেতরে প্রজাসেবার মানসিকতার অভাব কেনো? তারা স্বার্থ দেখেন পুঁজিপতির- তারা প্রাইভেটাইজেশন করলে লাভ হয় একজন মানুষের সে সরকারের জমি ইজারা নিজের মতো করে ব্যবহার করতে পারে- চিনি কল প্রাইভেট হলো- এই চিনি কলের সব যন্ত্রাংশ নিলামে উঠলো- পরবর্তী ঘটনা- সেই জমি ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে বিশিষ্ঠ শিল্পপতি অমুক সাহেব গ্রুগ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে তুললেন-
বিপরীত চিত্র হলো- চিনি কলের আশে পাশের জমিতে আগে চুক্তি ভিত্তিতে আখ চাষ করতো চাষীরা- তাদের আখ কেনার কেউ থাকলো না- ফলে অর্থকরী ফসল হিসেবে আখ গুরুত্ব হারালো- এখনও যে কয়টি টিমটিমে বাতির মতো চিনিকল চালু আছে- সেসবের চিনি মজুত হচ্ছে - কেউ কিনছে না- আর যেসব চাষী এখানে আখ সরবরাহ করতো তাদের বকয়ো পাওনা দিচ্ছে না সরকার-
মালোয়শিয়া থেকে চিনির কাঁচামাল এনে প্যাকেটে ভরে বেচছে মানুষ- বিশিষ্ট শিল্পপতি- এখন কথা হলো এই একটা কিংবা এমন কয়েকজন মানুষের জন্য ২০ জায়গার কৃষকের পেটে লাথি পড়লো-
বাংলাদেশের পাট শিল্প পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করা হয়েছে- এক দিকে চালু পাট কলগুলো বন্ধ করে কিংবা প্রাইভেট কোম্পানি করা হয়েছে- সেই সাথে সে পাটকলের আশে পাশে উৎপাদিত পাটের দাম না দিয়েই সরকার কল বন্ধ করে দিয়েছে আর নতুন মালিক পাট চাষীদের সাথে সংশ্লিষ্ঠ নয় তাই তারাও চাষীর ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেয় নি- পাটের দাম না পেয়ে কৃষক আত্মহত্যা করেছে- আর কম দামে পাট কিনে সে পাট রপ্তানি করেছে কয়েক জন শিল্পপতি- এভাবেই অনেক মানুষের হাতে পয়সা জমেছে- তারা ক্ষমতাবান হয়েছে- রাজনৈতিক হয়েছে- তবে কথা হলো বাংলাদেশ সরকার কেনো সরকারী উদ্যোগে পাট সংগ্রহ করে সেটাকে রপ্তানি করে নি- অবকাঠামো বিবেচনা কোরলে সরকারের তুলনায় বলিষ্ট কোনো ব্যবসায়িক প্রতিদন্ডী নেই- তারা ইচ্ছা করলেই ন্যায্য দামে পাট কিনে সরকারকে লাভবান করতে পারতো- কৃষকেরাও নিরাপত্তা পেতো- পাট চাষের উৎসাহ পেতো- তবে এই প্রক্রিয়ার ভেতরে না গিয়ে এখন এমন অবস্থা যে ফরিদপুর মাগুরা যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো পাট চাষ হতো সেখানের কৃষকেরা আর পাট চাষ করে না-
যারা করেছে তারাও সরকারের কাছে পাট বেঁচতে পারে নি- সরকারের এক কথা আমাদের কলগুলোর তেমন চাহিদা নেই তাই আমরা পাট কিনবো না- আর পাটের দাম বাবদ যাদৃচ্ছিক যেটা নির্ধারণ করা হতো সেটা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম- এমন কি চাষের খরচ উঠে না- এই দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় এটা আমার বিশাল একটা প্রশ্ন- এমন একদল অযোগ্য মানুষ সচিবালয়ের কতৃত্ব নিয়ে বসে আছে- যারা জীবনে সর্ষে ক্ষেত দেখে নি তবে তারাই কিনা সর্ষের দাম নির্ধারণ করবার যোগ্যতা রাখে-
এই পাট যেহেতু কোনো প্রতিদন্ডী নেই তাই মজুতদার নিজের মর্জিমতো দাম দিয়ে কিনে নেয়- কৃষক পাটের রশি গলায় বেধে মরে যায়- আর আমাদের শিল্পপতির গাড়ীর বহরে নতুন একটা গাড়ী যুক্ত হয়-
এবার কি হবে আমি জানি না- দেশে মজুত চাল নেই- বাজারে সরবরাহ করবার জন্য সরকার মরিয়া হয়ে চাল আমদানি করছে - তবে পরিস্থিতি খাদ্য উপদেষ্টা তপন চৌধুরি পদত্যাগ করবার আগে ভিন্ন ছিলো- সরকার নিজ উদ্যোগে চাল আমদানি করবে না- তারা বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানি উৎসাহিত করছিলো-
সরকার জনগনের সম্পত্তি এই কথা বার বার বললেও আদতে সেই জনগনকে গুটিকয় বেনিয়ার হাতে ছেড়ে দিয়ে সরকার দুরে বসে তদারকি করছে- বেসরকারী উদ্যোক্তারাও চাল আমদানি করতে চাইছে না- তারাও নানা রকম সাবসিডি আর সুবিধা চায় -তেলা মাথায় তেল ঢালতেই হবে এটাই আমাদের সরকারী নীতি- যাই হোক যখন হাতে পায়ে ধরেও এমন ঘটনা ঘটলো না সরকার ঘোষণা দিলো তারা আমদানি করবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চাল- এখন বিভিন্ন দেশের সাথে আলোচনা চলছে- তবে সরকারের মজুত চালে আর ১ মাস চলবে- এই ১ মাসের ভেতরেই চালের যোগান আসতে হবে বাজারে-
এবার বন্যা আর সিডরে আমাদের মোট উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক পুরণ হবে- অর্থ্যাৎ আমরা যেই ৯৬ শতাংশ চাল দেশের বাজার থেকে কিনতাম সেটা অর্ধেক হয়ে গেছে- এবং এই বছর এবং আগামী ৬ মাস আমাদের এই অর্ধেক চালেই কাটাতে হবে- এখন কথা হলো ৪ মাসের মতো চাল আমাদের আছে- সেটা বাজারে আসবে আর ২ মাসের চাহিদা পুরণ করবার জন্য সরকার কি উদ্যোগ নিবে? সরকারের নিজস্ব চাল কল আছে- গোডাউন আছে- তবে সরকার যখন চাল সংগ্রহ করতে চায় তখন সেখানে সে যে দামে চাল সংগ্রহ করবে ঠিক করে সেটার সাথে চালের বাজার দরের অন্তত ১০০ টাকার তফাত- তাই কৃষকেরা এবং চাল কলের মালিকেরা বাইরে চাল বিক্রী করে- সরকারের মজুত চাল থাকে না-
দেশে দুর্যোগ আসে- তখন সরকার চালের যোগান দিতে পারে না- চালের দাম বাড়তে থাকে- এই বিষয়ে বিস্তারিত বলা যেতো তবে পরে কোনো দিন এসবের বিস্তারিত বলা হবে- আজ শুধু এটুকুই বলি
আমাদের সরকারের নীতিমালায় এমন কিছু বৈশিষ্ঠ্য আছে যা সব মানুষের পক্ষে নয় বরং গুটিকয় মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে এই সরকার- এই গুটিকয় মানুষের স্বার্থ কেনো রক্ষা করে সরকার এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট-
সরকার বুলি ঝাড়ছে হ্যান কারেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা তবে সেটা বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না- অবশেষে সরকার তার উদ্ধত ভাব কমিয়ে নতজানু হয়ে বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছে- আপনাদের অনেক সুবিধা দেওয়া হবে আমনার বাজারে পন্য আনেন- তারা নিজেদের সুবিধা মতো দাম নির্ধারণ করছে - তবে এটা সিন্ডিকেট নয় বলেছেন আই এফ আই সির চেয়ারম্যান- এটা মুনাফার চেষ্টা- ব্যবসায়ির মনোবৃত্তি- এবং তিনি এটাও স্পষ্ট করেছেন ব্যবসায়ীর কাছে মানবিকতা আশা করা বৃথা- এরা সবাই শাইল্যাক-
শেষ করি আরও একটা শ্লোগান দিয়ে-
জয় হোক বিপ্লবি কম্যুনিষ্ট পার্টির-
তত্ত্বাবধায়কের কথার গরমে জিনিষপত্রের দাম চরমে-
অবশ্য এ দেয়াল লিখন মুছে ফেলেছে কেউ- শহরের সৈন্দর্য্য নষ্ট করে এমন প্রতিবাদী দেয়াল লিপি- সেখানে হলদে রংয়ের প্রলেপ পড়েছে-
কাজী নজরুল ইসলাম এভ্যুনিউর দেয়ালে দেখলাম দেয়াল লিপি= হয়তো এটাও মুছে যাবে- আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হয় এমন দেয়াল লিপি মুছে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
মন্তব্য
জনগণ যে কেন শুধ শুধু ভাত খেতে চায়! ফখরুদ্দিন বাবুর্চির পোলাও খেতে অসুবিধে কী!?
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
তাও কথা কেনো মানুষ ভাত খাবে- ওদের কি পোলাও নেই?
আশংকার কথা হলো সরকার সাবসিডি না দিয়ে মিলিটারি দিয়ে পাহারা দিয়ে কি ব্যবসায়ীদের আটকে রাখতে পারবে-
কিংবা সরকারে সকল পদক্ষেপ দেশের ১ শতাংশেরও কম মানুষের হাতে আরও অনেক সম্পদ তুলে দেওয়ার একটা ফন্দি ফিকির কেনো?
ঠিক। আগে সম্পদ, টাকাকড়ি ৫% এর হাতে ছিলো এখন সেটা যাচ্ছে ১% এর হাতে। সত্যিই সেলুকাস!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
অশনি সংকেত...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইমেজ নষ্টকারী এই থ্রেডটি অবিলম্বে মুছে ফেলা হউক ।
শাবাশ! চিকা তাহলে মরে নাই।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
নতুন মন্তব্য করুন