সমস্যাটা অস্বচ্ছতার এবং এই দায় যেমন প্রজ্ঞাপন দাতা হিসেবে রাষ্ট্র এবং এর নির্বাহী কার্যে যুক্ত মানুষের অযোগ্যতা, তেমন ভাবেই এটা গনমাধ্যমের উপরেও বর্তায়- গনমাধ্যম সরকারী প্রজ্ঞাপন জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটা মাধ্যম এবং এখানে পেশাদারিত্ব এবং স্বচ্ছতা অপরিহার্য- তবে বিভিন্ন সরকারী বিজ্ঞপ্তিগুলো বেশীরভাগ সময়ই অবোধ্য কিংবা দুর্বোধ্য কিংবা অসম্পূর্ণ কিংবা অস্বচ্ছ- এবং এই অহেতুক জটিলতা কিংবা অস্বচ্ছতার ধারাবাহিকতা মেনেই বিবেচনা করছি সদ্য প্রকাশিত হওয়া উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তটি- আদালতের আইনী কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলা আদালত অবমাননা এই বিষয়টিকে-
“আদালতে চলমান কোনো আইনগত কার্যধারা সম্পর্কে কোনো তথ্য কিংবা প্রতিবেদন প্রকাশ আদালত অবমাননার সামিল হবে-“ এই বিশেষ বাক্যটিকে আমার হঠাৎ করেই দুরহ মনে হচ্ছে
- আদালত অবমাননার জায়গা কোথায় এখানে- আগামীকাল শেখ হাসিনার মামলার শুনানী এটা লেখা কি আদালত অবমাননা গন্য হবে? কিংবা বিচারক আজকের মামলা -- তে --- ধারা মতে এই রায় দি্যেছেন- এই সংবাদ প্রকাশ আদালত অবমাননা হবে? বস্তুনিষ্টতা বলে একটা আরও বেশী অবোধ্য শব্দ আছে বাংলা অভিধানে যা আসলে কোনো কিছুই প্রকাশ করে না- কিংবা সেটাও আদতে ধোঁয়াটে একটা শব্দ- তাই চলমান মামলা সংক্রান্ত তথ্য- মন্তব্য বা সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়বে না-
আদালত অবমাননা অধ্যাদেশ ২০০৮ এ বলা হচ্ছে- ইচ্ছাকৃত ভাবে অথবা লিখিত, মৌখিক, আকার-ইঙ্গিতে বা দৃশ্যমান কোনো মাধ্যমে আদালতের রায়, আদেশ নির্দেশ, রিট বা পরোয়ানা অমান্য করা, বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর্যায়ভুক্ত কোনো বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা বা বিচার কার্যক্রমের স্বাভাবিক গতিধারা ক্ষতিগ্রস্ত করলে বিষয়টি আদালত অবমাননা হিসেবে গন্য হবে-
আমি ঠিক বুঝি না আমাদের এই অন্তর্জালিক বাদ-বিস্মবাদ আদতে আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়তে পারে কি না- তবে আদালত অবমাননার যে হাস্যকর ধারা এখানে যুক্ত হয়েছে তা নেহায়েত অসভ্য একটা ধারা- আমার ঘরের ড্রইং রুমে আমার আদালত অবমাননার বিচারও এখানে করা যাবে- যদি কোনো মহামান্য মানুষ হঠাৎ আদালতে মামলা করেন আমি এই অন্তর্জালে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছি যে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এবং সামরিক সরকারের পা চাটা বিচারকেরা শাসকদের মনোভাব বুঝেই বিভিন্ন আদালতের মামলার রায় দিচ্ছে এবং কাদের জামিন হবে এবং কাদের জামিন হবে না এটা নির্ধারণ করছে সরকারের মর্জির উপরেই-
সরকারই নেপথ্যে থেকে আদালতের কলকাঠি নাড়ছেন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আদতে বর্তমান সময়ে আদালত এবং এর সংশ্লিষ্ট মানুষদের রক্ষিতা বানিয়ে ফেলেছে- কর্তার ইচ্ছায় কর্ম এবং কর্তার মনোরঞ্জনই তাদের একমাত্র কাম্য বিষয় হয়ে গিয়েছে- এবং আমার মনে হয় এই বিষয়টা খুব ভালো ভাবেই আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়বে এবং আমার মনে হয় আমার এই বক্তব্য জরুরি বিধি লঙ্ঘনের দায়েও পড়বে-
যাই হোক আমি প্রায়শই সরকারী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বুঝতে ব্যর্থ হই এবং এতে আমি বিন্দুমাত্র লজ্জিত নই- কারণ বিধিগুলো এমনভাবে তৈরি করে হয় যেনো এতে অসংখ্য ফাঁক ফোকর থাকে এবং এর বিভিন্ন গলি উপগলি দিয়েই আইনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা যায়-
যদি হঠাৎ করেই উঠে যায় জরুরী অবস্থা তখন কি হবে? এই জরুরি বিধিমালার অন্তর্গত সকল মামলার ভবিষ্যত কি হবে? সুপ্রীম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধাচারণ আদালত অবমাননার পর্যায়েই পড়ছে এরপরও বলতে হয় প্রথমত যাদের জরুরি বিধিমালার আওতায় আটক করা হয়েছে তাদের সংঘটিত অপরাধের সময়কাল ছিলো জরুরি বিধিমালা ঘোষিত হওয়ার আগের সময়ে- এখানে যে আইনবহির্ভুত ঘটনা ঘটেছে সেটাকে আমলে না নিয়ে দুদুকের করা মামলাগুলোকে সংশোধন করবার নির্দেশ না দিয়ে সুপ্রীম কোর্ট যে নির্দেশ দিলো সেটা দেশের সর্বোচচ আলালত হিসেবে নয় বরং ক্ষমাতাসীনদের রক্ষিতা হিসেবেই দিয়েছে।
সুপ্রীম কোর্ট যা করলো সেটার ভবিষ্যত ফলাফল বিবেচনা করেই করেছে- জরুরি বিধিমালার আওতায় মামলাগুলো নেওয়া যাবে কি না এটা এখনও নিষ্পত্তি হয় নি আদালতে- বরং গ্রেফতারকৃতদের জামিনের আদেশ রদ করতে সুপ্রীম কোর্ট বিধি জারি করলো জামিন দেওয়া যাবে না কাউকেই- ঘোড়ার আগে গাড়ী লাগানোর এই বিবেচনা আদতে কতটুকু ফলপ্রসু হবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়?
সংশয় প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হলে হবে না আসলে তথাকথিত জরুরি অবস্থার গেড়োতে আমরা সবাই আটক আছি কোনো না কোনো ভাবে। আমাদের এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা হলো না কেনো দেশে জরুরী অবস্থা অব্যাহত আছে- আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কোনো ক্ষীণ সম্ভাবনা কি এখনও আছে?
দেশে খাদ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া- মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে আসছে- মানুষের জমানো অর্থ নিয়ে ফেরার হচ্ছে এনজিওগুলো আর এদের নিবন্ধনের বিষয়ে কোনো পরিস্কার ধারনা না থাকায় এমনও ঘটছে যে ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে কেউ কেউ এনজিও খুলে বসেছে- ব্যবসা করার অধিকার নিয়ে প্রশ্নটা নয় প্রশ্নটা ভোক্তা অধিকারের- আমাদের সম্পদ নিয়ে কেউ ফেরেরবাজি করলে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা নিরাপত্তার জন্য যাবো রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের কাছে- তবে সেখানে আমাদের সুবিচার পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই যদি ক্ষমতাসীনেরা না রাখেন তবে আমাদের আদালতের প্রতি- আদালতের রায়ের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবার বিধি আরোপের প্রয়োজন কি?
দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্টা সম্ভব হয় নি কারণ মানুষ আইনী প্রক্রিয়ার উপরে আস্থাবান ছিলো না- মানুষ নিজেদেরব বিবাদ মীমাংসার জন্য আদালতে নয় বরং এলাকার এমপির কাছে যাচ্ছে- পুলিশের কাছে না গিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীর কাছে যাচ্ছে তাদের কাছে নিরাপত্তা চাইছে- পঞ্চম ষষ্ট সপ্তম রাষ্ট্র কাঠামো নির্মিত হচ্ছে- আর হচ্ছে কারণ জনগণের প্রত্যাশা পুরণের ব্যর্থ হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্র-
মন্তব্য
সমস্যা সুন্দরভাবে স্পর্শ করেছেন। সমাধান কি হতে পারে?
নিরপেক্ষ আইন বলে আসলে কিছু নেই, আইন তৈরি হয় কোনো মহলের স্বার্থরক্ষায়। সেই মহলটা জনগণ হয় না প্রায়ই। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হয়তো সেজন্যই দরকার, যাতে তারা বুঝতে পারে কোথায় কিভাবে ঠকানো হচ্ছে। জনসচেতনতা বিষয়টাও আপেক্ষিক, আমাদের দেশে সেটা প্রায়শঃই গালভরা বুলি মাত্র।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এখানে একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো। রাষ্ট্র যার প্রতিনিধিত্ব করছে তার কিন্তু স্বার্থ ঠিকই রক্ষিত হচ্ছে। রাষ্ট্র কার্যত: তস্করের পক্ষে। উচিত অনুচিতের প্রশ্নের সাথে দৃশ্যমান বাস্তবতার দূরত্বকে তো আর তথ্য ছাড়া অন্য কোন ফেনোমেননে অনুবাদ সম্ভব নয়। সুতরাং রাষ্ট্রের চরিত্র একতরফাভাবেই তার গঠণ উপাদানের ফাংশন। গাঠণিক উপাদান গণবিরোধী হলে অন্যকিছু তাঁর উপরিকাঠামোতে দেখা দেওয়া মনে হয় সম্ভব নয়। সুতরাং প্রয়োগের লক্ষ্যও হতে হবে অবকাঠামো......
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
নতুন মন্তব্য করুন