গান শুনে ভালো লাগবার অবসর কি তবে শেষ? কবে এমন একটা এলব্যাম শুনবো যা শুনে মনে হবে এর কোনো গানই ফেলনা নয়- বরং সব কটাই উপভোগ্য। এমন গান বাজারে আসছে না অনেক দিন আর মাংনায় গান শুনে যে রীতি তৈরি হয়েছে তাতে আদতে একটা কিংবা দুইটা গানের জন্য একটা সম্পূর্ণ সিডি কিনে পয়সা অপচয়ের আগ্রহ হয় না।
তাই ইদানিং গান মানেই চলতি পথে কোনো একটা গানের কলি শুণে সেটাতেই যাপন- কিংবা গাদাখানেক বাংলা চ্যানেল ঘুরাঘুরির ফাঁকে কোনো একটা গানের অনুষ্ঠানে ক্ষণিক বিরতিতে যতটা শোনা যায়। অবশ্য মিউজিক্যাল প্রোগ্রাম নামের যে গর্ভস্রাব ইদানিং চ্যানেলে চ্যানেলে সমপ্রচারিত হয় তাতে আমার মন টানে না।
তথাকথিত ভিজেদের ভেজা শরীর হয়তো আকর্ষণীয় হতো তবে তাদের ভেজা ভেজা আদুরে গলা গায়ে বিছুটি পাতার জ্বলন ধরায়। তবে এর ভেতরেও হঠাৎ একদিন লালনের গান শুনে ভালো লাগলো- যদিও সুরটা অন্য কোনো একটা গানের সাথে মিলে যায় অনেকটা। তবে গানের রাগ কিংবা রাগের গানের একটা ধারা হলো কোনো একটা নির্দিষ্ট রাগের উপরে করা গান গুলোর ভেতরে সুরের মিল থাকে। এবং এমন অনেক স্বরগম মিলে গেলেও সেটাতে আপত্তির কিছু নেই- বাংলা তালের আর সুরের জগতে তেমন বেশী মাল মশলা নেই- এমনিতে যদিও সম্ভবনা অসীম- বিন্যাস সমাবেশে যতটা করা সম্ভব- এর পরও ততটা পরিশ্রম করতে নারাজ বিভ্রান্ত মানুষেরা- তারা একটা গানের সুর ধরে এগাতে আগাতে অন্য একটা গান খুঁজে পায়।
লালনের গান শুনে একটা বিষয় মনে হলো আমার এখনও ভাববাদ বেশ বড় ব্যবসার উপকরণ এখানে- সম্পূর্ণ পূঁজিবাদী সমাজে ভাববাদের ব্যবসায়িক উপযোগিতা অনেক- ধর্মের আফিম সচ্ছল মানুষকে বেশ মগ্ন রাখে- এবং আমাদের ঐতিহ্য অন্বেষণে আমরা পুরোনো লোকগীতিকে পুনর্জীবিত হতে দেখি- কেউ কেউ আনন্দিত হলেও সস্তা মানুষেরা যখন দার্শনিক প্রেক্ষাপট না বুঝেই কিংবা গানের ভেতরে না গিয়েও একটা অনুকরণ করে ফেলে সেটাতে সাবলীলতা থাকে না- লালনের গানের প্রধান দুর্বলতাও এটাই সাবলীলতার অভাব। সুমি প্রচন্ড চেষ্টা করেও তার গলার সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারে নি আর লালন সাঁইয়ের গান শুধু অন্ধ অনুকরণ নয় আরও বেশী কিছু দাবি করে। তাই লালনের যে ৩টা গান শুনলাম তা ঠিক ভালো লাগা বোধে আপ্লুত করতে পারলো না আমাকে। যদিও ব্যক্তি লালনের বহুমুখিতা ধরে রেখেছে বাছাই করা এ গানগুলো তবে সুমির যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে নি মোটেও।
বাংলা ব্যান্ডের বিপুল জনপ্রিয়তার ফলে এই নতুন ঐতিহ্য নির্মানের ব্যবসায়িক উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে নিয়মিত, তবে এসব গানের সমস্যা হলো এটা কান ভরালেও মন ভরাতে পারে না। সে আবেগ কিংবা অনুভব জাগাতে পারে না। এটাকে কেউ যদি কন্ডিশনড রিয়্যাকশন বলে বলতেই পারে- প্রতিটা গানই একটা আবহ ধরে রেখেছে- প্রথম শোনার অনুভুতি কিংবা বিকর্ষণ অনেক দিন ভেতরে রয়েই যায়- যন্ত্রানুসঙ্গ কথার তুলনায় প্রকট হয়ে কানে বাজে- বারংবার একটা আক্ষেপ থেকেই যায় যদি আরও একটু কম হতো যন্ত্রের উৎপাত হয়তো ভালো লাগতেও পারতো।
এলব্যামে গানের সংখ্যা ১০ যদি সবচেয়ে উৎকট বিবেচনা করা হয় প্রতিযোগিতায় থাকবে এ কেমন দিন, মনের মানুষ, - গুরুর চরণ এবং সে প্রতিযোগিতায় প্রথম হবে মনের মানুষ গানটাই- গানটা সর্বাংশে খারাপ এমন না তবে সুমির গলার অহেতুক শীতলতা আহত করে-
লালন সাঁইয়ের ৩টা গান আছে এখানে-
অপার হয়ে বসে আছি- জাত গেলো জাত গেলো ব্যান্ডের মানুষের প্রিয় বাছাই- তবে অন্য গানটা নেহায়েত অপ্রচলিত - আর বলি মা তোর চরণ ধরে ননী চুরি আর করবো না- আর আমাকে মারিস নে মা- লালনের বহুমুখী প্রতিভায় শিশুর অভিমান যেমনটা প্রকাশিত এ গানে তাতে তার অনুভবের সুক্ষতা প্রকাশ পায়- যদিও বলা হয় লালন ঠিক সে অর্থে সেক্যুলার নন( এর কারণটা আমার অজানা তবে যুক্তি প্রকাশে এবং বক্তব্য প্রতিষ্ঠাতে তার গানে যেভাবে উঠে আসে মনিুষের বিশ্বাসের দ্বিততা তাতে তাকে যথেষ্ট যুক্তিবাদী এবং আধুনিক মনে হয় আমার-
সুমি এবং তার সহচরদের ধন্যবাদ তারা লালনের ৩টা বাছাই করা গানের ভেতরে এতটা ব্যপ্তি তুলে দরতে পেরেছে লালনের।
আর যে গানটা শুন মাতোয়ারা হয়েছিলাম সেটা বি-প্রতিপ- যা এই সংকলনের শিরোনাম-
সব মিলিয়ে খুব একটা ভালো সংকলন নয়- তবে সস্তার বাজারে ৫০ টাকা খরচ করে এর চেয়ে ভালো বিনোদন আশা করা উচিত না।
মন্তব্য
আমি অনেকক্ষন পরে বুঝতে সমর্থ হইছি যে এই আলোচনার যে লালন সেটা লালন নামক ব্যান্ডটা আসলে। আমার এই অসমর্থতার জন্য দুঃখিত। লালন ব্যান্ডের এ্যালবামটা প্রকাশিত হওনের পর পর একবার শুনছিলাম। খুব একটা টানে নাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমিও লালন সাঁইয়ের গান ভেবে ঢুকে দেখি "লালন" ব্যান্ডের কথা বলা হয়েছে।
"লালন" ব্যান্ডের "আমি অপার হয়ে" শুনেছি। একই গান "বাংলা" ব্যান্ডের আনুশেহও করেছিলো। কোনটাই ভালো লাগে নি। আনুশেহর অন্যান্য গান ভালো লাগলেও এটা শুনে বরং মর্মাহত হয়েছি। লালন সাঁইয়ের গানের যে ভাব তা কন্ঠেই তুলে আনা যায় উপলব্ধি দিয়ে, যন্ত্রে নয়। তাই আমারও মনে হয়েছে,
তবে যন্ত্রের বিরোধী অবশ্য নই আমি ব্যক্তিগতভাবে, বরং ভালো লাগে সেই ধারার গানগুলোতে। আর ইদানিং অনেক খারাপ গানের ভীড়ে ভালো কিছু গানও কিন্তু আসলে হচ্ছে। এটা ঠিক, একই এলবামের সব গানই খুব ভালো হয়ত নয়। সেটা বোধহয় কখনই ছিলো না। তবু খুচরো কিছু হলেও তো ভালো্র প্রচলন শুরু হয়েছে, এট মন্দের ভালো। একটা পুরো এলবামের কথা বলতে পারি ইদানিংকালের যার সবগুলো গান ভালো (মানে আমার কাছে, যার যার পছন্দ তো অবশ্যই তার তার কাছে), অর্ণবের "হোক কলরব"। আরেকটা, কৃষ্ণকলির " সূর্যে বাঁধি বাসা"। যাত্রীর "ডাক"ও আমার পুরো এলবামই ভালো লেগেছিলো। আরেকটু পেছালে আছে অর্ণবের "চাই না ভাবিস"- অসাধারণ একটা এলবাম। এছাড়া অনেক এলবামেরই কিছু গান ভালো এরকম অনেক আছে। হচ্ছে, ইদানিং কিছু ভালো কাজ হচ্ছে বাংলা গান নিয়ে। অন্তত অর্ণবকে নিয়ে আমরা অনেক আশা করতে পারি।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
একমত@ তিথি আপু।
আনুশের শুধু সাঁইজির গানের সুরই বিকৃত করেননি; রিমেক করতে গিয়ে তার গানকে একেবারে চটকে ছেড়েছেন। অবশ্য বাংলা ব্যান্ডের বুনোর গলায় কিছু গান আছে।
তবে মমতাজের গলায় সাঁইজি অনেক খোলতাই। তার ফকিরি ঢংটিও চমৎকার।
...জাইকার একজন বাংলা জানা জাপানি মেয়ে একবার আমাকে হিরু সাঁইয়ের কথা বলেছিলেন। হিরু সাঁইয়ের মতে, শুধু সুর, তাল, লয়ে লালন ফকিরের গান হয় না। ...তত্ত্বকথা না বুঝলে, সাঁইজির গান হয় না।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
শুধুই কি তাই ?
আমার জানা মতে বেশ কিছু গানের কথা পর্যন্ত বিকৃত হয়ে গিয়েছে।
আমি ঠিক নিশ্চিত না, এমন বিকৃতভাবে লালনের গান পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌছুনোর এত তাগাদা কেন আমাদের ? নাহলে কি লালন কিংবা তার গান ধ্বংস হয়ে যাবে ?
------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
নতুন মন্তব্য করুন