গত ৬ মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদতে কতটুকু কাজ করেছে- তাদের নির্ধারিত দায়িত্ব একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং নির্বাচনটা সফল ভাবে সমাপ্ত করা- এই নির্ধারিত লক্ষ্যে তারা কতটুকু অগ্রসর হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হওয়া কিংবা লা হওয়া একটা ভবিষ্যতের প্রশ্ন, নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ এবং গ্রহনযোগ্য করবার স্বার্থে এটা করার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না এটাও ভেবে দেখবার বিষয়। সব সময়ই যেকোনো সিস্টেমকে নষ্ট করে দেওয়া সম্ভব। মানুষই যখন মূল যন্ত্র এবং তার ভেতরে যাবতীয় মানবীয় দুর্বলতা যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ এই সম্ভবনাটা থাকবে যে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরাও রাজনৈতিক বিশ্বাসের পক্ষে কাজ করে নির্বাচনকে যতটুকু প্রভাবিত করা সম্ভব ততটুকু প্রভাবিত করতে পারে।
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রধান দুই দলের পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং ক্ষমতার লোভ যখন ক্রিয়াশীল তখন এ বিষয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় আদৌ রাজনৈতিক সংস্কৃতি না বদলে শুধু মানুষ পরিবর্তন করে কতটুকু সংস্কার করা সম্ভব।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য এসব নিয়ে কোনো ভাবেই চিন্তিত না। রাজনৈতিক সংস্কার হয়ে নতুন নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসলে তাদের সাথে আলোচনার জন্য তারা এখন অপেক্ষা করছে । এ জায়গাটা আমার কাছে আপত্তিকর মনে হয়- তারা যখন নতুন নেতৃত্বের সামনে আসার কথা বলেন এবং তাদের সাথে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তখন একটা সন্দেহ জাগে- কোনো না কোনো স্থান থেকে তারা নিশ্চিত সংবাদ পেয়েছেন যে রাজনৈতিক সংস্কারের ফলে নতুন নেতৃত্ব আসবার একটা সমুহ সম্ভবনা আছে।
এই সংবাদ কিংবা আশ্বাস তাদের দিতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার- তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা বেশ স্পষ্ট করেই এই দাবীর বিরোধিতা করছেন- আমার কাছে যদিও এটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো মনে হয়-
যোগাযোগ উপদেষ্টা এবং আইন উপদেষ্টা তারা সম্ভবত এ বিষয়টা নিয়ে কাজ করছেন- এর আগে যখন দুই নেত্রীকে বিদেশে নির্বাসন দেওয়ার বিষয়ে একটা আলোচনা হচ্ছিলো তখন আইন উপদেষ্টা প্রাথমিক পর্যায়ে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে স্বীকার করেছেন তাদের কাছে অনুরোধ করেছিলো কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা এই দুই নেত্রীকে বাদ দেওয়ার এবং নির্বাসনে পাঠানোর-
তারা অবগত ছিলেন না বা এ লক্ষ্যে কাজ করছিলেন না এটা তখন মিথ্যা বানী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলো। এখন তারা আবার বলছেন মাইনাস টু ফর্মুলা তাদের লক্ষ্য না- রাজনৈতিক সংস্কার তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য নয়- তবে এটাও যে মিথ্যা এটা অবশ্যই প্রমাণিত হবে আগামি ১ মাসেই-
নতুন একটা রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে- তারা নতুন একটা রাজনৈতিক ধারা তৈরি করতে সক্ষম হবে কি না এটা যদি আমাকে প্রশ্ন করা হয় তবে আমি বলবো তাদের সে সম্ভবনা একেবারেই নেই- বরং যদি সামরিক বাহিনী সহায়তা করে তবেই শুধু মাত্র তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায় আসা সম্ভব।
এর ভেতরে আবার মাইনুল হোসেন বলেছেন কতিপয় রাজনৈতিক নেতা তাদের এমন অনুরোধ করছেন যেনো রাজনীতির উপরের নিষেধাঞ্জা এখনই উঠিয়ে নেওয়া না হয়। অর্থ্যাৎ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো না কোনো ভাবে কতিপয় রাজনৈতিক নেতার পরামর্শ মেনে চলছে- এমনই যদি হয় তবে এই সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
তবে এসব নিয়ে ভাববার বা চিন্তিত হওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না সামরিক সমর্থিত সরকার।
এই কতিপয় রাজনৈতিক নেতা কারা?
আরও আপত্তিকর হচ্ছে আইনের নির্দেশনা না মেনে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা তৈরির আব্দার। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে সকল তথ্য সংগ্রহ করতে হবে বাড়ী বাড়ী গিয়ে এবং পুরোনো ভোটার তালিকাকে ভিত্তি করে নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে -তারা বলছে এই রায় শুধুমাত্র ছবিছাড়া ভোটার তালিকার জন্য প্রযোগ্য হবে- তবে এটাও নির্জলা মিথ্যা- বিষয়টা দুঃখজনক। এর আগে আমরা একজন নির্বাচন কমিশনার পেয়েছিলাম যার গোয়ার্তুমিতে আমাদের বর্তামনের শোভন সামরিক শাসনে উপনীত হতে হয়েছে- এখন এই ভদ্রলোকের গোয়ার্তুমিতে আমাদের ভবিষ্যতে মইন ইউ কে সামরিক উর্দি ছেড়ে সাধারন পোশাকে রাজ্য শাসন করতে দেখা যাবে-
এ কথাও আমরা বিবেচনা করবো না- গাজীপুরের শ্রীপুর যেখানে ভোটার তালিকার পাইলট প্রকল্পের কাজ হলো- সেই নির্দিষ্ট স্থান শুধু একটা কারণেই প্রসিদ্ধ ছিলো মনে পড়ে- তবে সেখানে এত আয়োজন করে করা পাইলট প্রকল্পের সাফল্যের পরিমাণ কম- সেখানে এত আয়োজন- মাইকবাজি, মিছিল শেষেও প্রায় ১৫০০ জন ভোটারের নিবন্ধন সম্ভব হুয় নি- এবং প্রতিবন্ধিদের জন্য আলাদা তালিকা করবার ইচ্ছাটা ভালো তবে এমন এক দেশ যেখানে এখনও প্রতিবন্ধিদের প্রতিবন্ধত্ব তাকে হেয় করে- তাকে কৌতুক উপাদানে পরিনত করে সেই সংস্কৃতির বদল না করে প্রতিবন্ধি স্বীকৃতি দেওয়া কি তাদের ভালো কাজে লাগবে না কি তাদের আরও বিপন্ন করবে?
যদি এই হয় প্রচারের পরের ভোটার নিবন্ধনে অবস্থা তবে সমস্ত দেশে যখন এ প্রকল্প শুরু হবে তখন বাদ পড়া এবং নাম না উঠানো ভোটারের পরিমাণ কত হতে পারে? এবং এরপরও যেহেতু সবাইকেই সাম্ভাব্য অপরাধী ধরে নেওয়া হয়েছে তাই এই ৯ কোটি ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ ক্রস ম্যাচ করা হবে- এত বড় ডাটাবেজ আসলে কোথাও নেই- এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখনও অনেক ধনী দেশই করে উঠতে পারে নি- তবে কুঁজের চিত হয়ে শোবার সাধা জাগা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনার এ কাজটাই করতে চাইছেন-
যদিও আমার মনে হয় না তিনি যখন কোনো কথা বলেন তখন কোনো অভিজ্ঞ মানুষের সাথে আলোচনা করে কথা বলেন - তার মনে আসলো তিনি বলে দিলেন- তিনি সুন্দর করে কথা বলতে পারেন এইটাই একমাত্র যোগ্যতা তার- এ ছাড়া অন্য কোনো যোগ্যতা এখন তার দেখতে পারছি না।
আমরা গত ৬ মাসে আসলে কি পেলাম। সাংসদদের জন্য সভায় দেখলাম সামরিক বাহিনীর প্রধান সাধারন পোশাকে বক্তৃতা দিচ্ছেন- সংবাদ মাধ্যমের সামনে এভাবে সিভিল পোশাকে আসা এবং বক্তৃতা দেওয়া সামরিক বিধানে নিষিদ্ধ- এমনটাই শুনেছিলাম এক মেজর সাহেবের কাছে- তবে মেজর জেনারেল সাহেবেরা এইসব আইন থোরাই কেয়ার করেন- তাদের হাতে বন্দুক তাদের হাতে গোলাবারুদ- তারা যা ইচ্ছা হয় তাই করতে পারেন- তারা আইন ভঙ্গ করতে পারেন কারণ তারা আইনের শাসন উপহার দিচ্ছেন আমাদের।
তিনি এই সাংসদদের আলোচনা সভায় বললেন দেশে সামরিক শাসন চলছে না- তবে সমস্যা হলো তিনি সামরিক বাহিনীর প্রধান হয়ে সাংসদ এবং অসামরিক প্রশাসনের জন্য নির্ধারিত স্থানে এই সভায় বক্তৃতা দেওয়ার অধিকার পেলেন কিভাবে- অসামরিক প্রশাসনের অংশ হিসেবে সেখানে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো উপদেষ্টা বক্তৃতা রাখতেন তবে ভালো লাগতো এবং এটাই উদাহরণ হিসেবে আসতো যে সামরিক বাহিনী কোনো ভাবেই সামনে নেই-
মাননীয় উপদেষ্টা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী অনেক আগে সারের বিতরণ বিষয়ে একটা ক্যামেরা স্ট্যান্ট করেছিলেন- এখন সারা দেশে সারের সংকট- বিগত দুই নির্বাচিত সরকারের মতোই সারের জন্য আসা কৃষকের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বেধেছে- তবে বাচোয়া হলো এর আগে ৭ জন ও ১১ জন মারা গেলেও পুলিশের সাথে এই সাম্প্রতিক সার সংঘর্ষে কেউ নিহত হয় নি-
তার এখন নতুন খেয়াল বিদেশে কাজের বুয়া রপ্তানী করবার খেয়াল। বাংলাদেশ থেকে বিদেশ গৃহ পরিচারিকা রপ্তানি করা হবে- এই গৃহ পরিচারিকাদের ওয়াশিং ময়াশিন চালানো, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার চালানো সহ অত্যাবশ্যকীয় যাবতীর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে-
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ের অধিকাংশই অবশ্য পেশাজীবিদের অবদান- এবং এই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের উপার্জিত ও পাঠানো অর্থ আয়কর মুক্ত- তবে এখন নতুন কর আইনে কর ফাঁকি দেওয়া মানুষের তালিকায় এসব উপার্জন যারা সঞ্চয় করেছে তাদের নাম উঠে যেতে পারে-
রাজনৈতিক সংস্কার যা করা হচ্ছে তার মূল লক্ষ্য যেনো দুই নেত্রীকে সরানো দলীয় প্রধানের পদ থেকে-
এসবের প্রেক্ষিতে যখন শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহন করেন তখন তার এই রাজনৈতিক অবস্থানকে আমি সমর্থন করি- এবং আমার মতে আগে যখন নির্দিষ্ট মার্কা চিহ্ন দেওয়া বাস্কে ভোট ফেলাতে হতো সেরকম অবস্থা এখনও আছে-
বাংলাদেশের মানুষ এখনও প্রতীক দেখে নির্বাচন করে- এবং তাদের কাছে এখনও বি এন পি মানে খালেদা জিয়া আর আওয়ামী লিগ মানে শেখ হাসিনা-
সংস্কারপন্থীদের প্রতি সরকারে সহমর্মিতা এবং সহযোগিতা সামান্য হলেও আলোড়ন তুলেছে- এবং ৬ মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভালো কাজের তালিকায় দুর্নীতি দমনের পালক যুক্ত হলেও তাদের স্বজন বিদ্বেষ- স্বজন প্রীতি এবং তাদের রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ততটাই লজ্জাজনক । অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল উঠলেও বিশেষত সংস্কারবাদীরা একটু বেশি প্রশ্রয় পাচ্ছে এখনও তাদের কাছে-
মন্তব্য
সুন্দর লিখেছেন
কই থাকেন আপনি।
কতদিন রাজনৈতিক ভাষ্য পড়ি না।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
বরং এই ভদ্রলোকদের জলপাই বর্ণ সরকার গণেশ উল্টাতেই ভূমিকা রাখছেন । বলা যায়না, এই মহাত্ননদের কীর্তিকলাপে শেষ পর্যন্ত হাসিনা-খালেদার জনপ্রিয়তাই ফিরে আসবে ।
হাসিনা খালেদা দুজনই যদি শক্ত ভুমিকা নেয়, সেটা চমৎকার হবে । রাজনৈতিক বদমায়েশী রাজনিতিকরাই করুক ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমার ও তাই মনে হয়@হাসান মোর্শেদ
তবে বিএনপিতে বেশ কিছু ভাঙন দেখা দিবে।
গনেশ আসলে উল্টায় নাই। পিঠ খাউজাইতাছে..
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
নতুন মন্তব্য করুন