তাদের প্রতিদিন প্রমোদ ভ্রমন, তাদের প্রতিদিন চড়াইভাতি-
প্রধান উপদেষ্টা সস্ত্রীক গিয়েছিলেন মুরংদের গ্রামে, সেখানে বিষন্ন মুরং মেয়েরা নেচে তাদের মনোরঞ্জন করেছে। উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন- তাদের এলাকায় সীমিত পর্যায়ে মোবাইল ফোন সেবা দেওয়া হবে।
করুণ রসিকতা করেছেন খাদ্য উপদেষ্টা, তিনি বলেছেন-এখন একটু কম করে খান, বোরো ধান উঠলে দাম কমবে তখন বেশী খেয়ে পুষিয়ে নেবেন। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের মানুষের এমন মানবেতর রসিকতা, এমন অমানবিক নিষ্ঠুরতা দেখে মনে প্রশ্ন তৈরি হয়, তাদের দায়বদ্ধতার পরিমাণ ঠিক কতটুকু?
আমাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে দায়ী করছেন কেউ কেউ সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে, তবে হিসাবে বলছে এখন যে পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী দেশে আছে তা পর্যাপ্ত, কিন্তু সরকারী খাদ্য মজুতের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নটা উপেক্ষিত, সরকার আশা করছেন হয়তো বোরোর বাম্পার ফলন হবে। যদি না হয় তবে কি হতে পারে ? এই বিষয়ে কোনো বিকল্প ভাবনা তারা করেছেন কি না? খাদ্যমূল্য কমবে এমন আশাবাদর কোনো ভিত্তি আছে কি না? অনেক রকম প্রশ্ন করা যায়, তবে উত্তরের আশা করা বৃথা। প্রধান উপদেষ্টা নিজে একটা ইমেইল আইডি প্রকাশ করেছেন- তবে আমার মনে হয় এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে সরকারের বেতনভুক কোনো কর্মচারী, যে কি না প্রধান উপদেষ্টার ই মেইল পড়ে তাকে জানায় কি করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার তথ্যসহযোগী রয়েছে, সে ভদ্রলোক নিয়মিত পেপার দাগায়, প্রধান উপদেষ্টার কোন খবরটা পড়া প্রয়োজন কোন পোশাক পড়া প্রয়োজন, কোন মানুষের সাথে কথা বলা প্রয়োজন, এসব ঠিক করে দেওয়ার মানুষ আছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজ থেকে কিছুই বলেন না, তাকে কখন কি বলতে হবে এ বিষয়েও একজন সহযোগী আছে।
মুলত এ পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে আমাদের প্রধানের পদটি তোতাপাখী পদ। তার স্বাধীন ইচ্ছা, স্বাধীন উচ্চারণ, স্বাধীন বিবেচনা বলে কিছু নেই। সচিবালয়ের ফাঁদে আটকে পড়ে আছেন তিনি।
খাদ্যনিরাপত্তার জন্য আমাদের ক্রয়নীতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, তবে এ সংক্রান্ত উদ্যোগ নিতে গরিমসি করেছে প্রাক্তন শাসকেরা। এবং বর্তমানের সরকারের গত ১ বছরের ভুমিকা দেখে এটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে- এই বছরেও এ কাজটা হবে না। আমাদের সরকারি গোডাউনে খাদ্যমজুত থাকবে না। সিডরের সময়ে যে মজুত খাদ্য ছিলো সেটাও সম্ভবত বিএনপি সরকারের রেখে যাওয়া।
তবে বিলাসবহুল গাড়ীবহরের প্রয়োজন আছে। তাই বিলাসবহুল গাড়ী আমদানি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রয়োজন নেই, আমাদের প্রয়োজন খাদ্যের মজুত।
তিনি যা বলতে পারেন নি , তবে অনায়াসে বলতে পারতেন- প্রবাসী ভাইয়েরা- আপনারা দেশের জন্য অনেক করেছেন, এবার বিদেশ থেকে টাকা না পাঠিয়ে আপনারা প্রত্যেকে আপনাদের পরিবারের জন্য ২ বস্তা চাল পাঠাবেন বিদেশ থেকে, ডিএইচএল কিংবা ফেডেক্সে। আমাদের চালের মজুত কম, আপনার যেই ২৫ লক্ষ মানুষ নিয়মিত টাকা পাঠান তারা এক মাসে যদি ৫০ লক্ষ বস্তা চাল পাঠান আমাদের বাৎসরিক মজুত তৈরি হয়ে যাবে।
আমাদের অনির্বাচিত সরকার এ কাজটা করতে পারছে না । তাদের কেউ চাল রপ্তানী করতে চাইছে না, আপনারা বরং স্থানীয় বাজার থেকে চাল কিনে পাঠাবেন, সেটা আমাদের দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সুসংহত করবে।
আমাদের উচ্চফলনশীল ধানবীজ আমাদানি করতে হবে কিংবা আমরা নিজেরাই সেটা তৈরি করতে পারি আমাদের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে। আমাদের এজন্য সরকারী সহযোগিতা প্রয়োজন, সরকার এই কৃষি গবেষণায় অর্থ প্রদানে নারাজ, তবে সরকার উপদেষ্টাদের নিরাপত্তা বুহ্য রক্ষার জন্য ব্যয় বাড়াতে পারবে। ১১ জনের জীবনের দাম অনেক বেশী।
এ কাজটা করতে গররাজী প্রায় সকল সরকারই।
বিদেশ থেকে ধানবীজ আমদানি করা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা, চীন থেকে উচ্চফলনশীল ধানবীজ আমদানি করা, ভিটামিন সমৃদ্ধ ধানবীজ আমদানি করা- এটা একটা ব্যবসা।
যদিও একটা দাবি হচ্ছে এই বীজগুলোর নেপথ্য জেনেটিক কারসাজি উন্মুক্ত করে দেওয়া, তবে এটা করতে নারাজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
ব্যবসা করবে মানুষ, তবে ব্যবসার রীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এখন। যখন মোলায়েম ভাবে ব্যবসায়ীদের বলা হলো আপনারা একটু কম মুনাফা করেন, তখন তাদের অনুগ্রহ কামনা করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হলো না মোটেও।
আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে, মধ্যস্বত্তভোগী নির্মুলের কাজটা করতে চাইছে সরকার, তবে ফরিয়ার সাথে চালবাজি করে পার পাওয়া মুশকিল।
তাই কোল্স স্টোরেজ সবটুকু ভাড়া নিয়ে বসে আছে পাইকারেরা। তুমি কৃষক হলে আমাদের নির্ধারিত দামে বিক্রী করো পণ্য কিংবা তুমি সেই পণ্য ফিরিয়ে নিয়ে যাও। আমাদের ভীষণ স্থান সংকট।
বস্তা বস্তা আলু জমছে পথের দুই পাশে, এবং যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে হয়তো নষ্টও হয়ে যাবে। উৎপাদকদের জিম্মি করে এমন ব্যবসা করবার অধিকার বাংলাদেশে আছে। ১৫ কোটি মানুষকে জিম্মি করে ১০ হাজার মানুষ মুনাফা করছে এটা যতই অনৈতিক হোক না কেনো, এটা পূঁজিবাদ, এটা উন্মুক্ত মুক্তবাজার অর্থনীতি। এখানে বড় বড় ব্যবসায়ীদের ভেতরে অলিখিত জোট বাধবার প্রবণতা আছে। তাই একটা দ্রব্যের দাম কমে না, কেউ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবার জন্য লড়াই করছে না, তাই একটা কল্পিত স্থানে স্থির আছে দ্রব্যমূল্য- সেখান থেকে নীচে নামবে না। নামবে তখনই যখন এইসব ব্যবসায়ীর লুকানো অর্থ সামনে এনে ব্যবসা করবার সুযোগ দেওয়া হবে। তখন তারা কালো টাকা সাদা করবার প্রক্রিয়ায় কিছুটা কম লাভ করবে, কিংবা লাভ করার চেষ্টা করবে না।
আমাদের পুরো অর্থনীতির চক্রটা কতিপয় মানুষের কাছে জিম্মি। তাদের বাসনা হলেই তারা যেকোনো কিছুই করতে পারে। বাজার নিয়ন্ত্রনের প্রক্রিয়াতেও তারা সম্মিলিত ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তারা হুমকি দিতে পারছে, তারা ল্যাজে খেলাতে পারছে অনির্বাচিত সরকারকে।
এবং ক্ষমতাবিকেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়ায় সরকার সকল জেলা শহরে হয়তো উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক করতে পারবে না, তবে সরকারী পয়সায় বিবি সন্তানসহ এই প্রবীন বয়েসে হানিমুনর সুযোগটা কোনো উপদেষ্টাই ছাড়তে চাইছেন না। তারা রংপুর, বরিশাল ঘুরছেন, তাদের এই প্রমোদ ভ্রমন সফল হোক । অন্তত তাদের দেশ শাসনের স্মৃতিকথায় লিপিবদ্ধ হোক তাদের এই ভ্রমনবৃত্তান্ত।
আমরা মহারাজদের করের টাকায় সালামি দিয়ে নিজের জেলার অতিথি করি।
মন্তব্য
Lidl, ALDI তে খোঁজ নিতে হইবো, তাগো কালেকশনে চাল কেমন আছে। তয় ইউরোর দাম যে হারে বাড়ছে (ইকুয়াল টু, টাকার দাম যে হারে কমছে), ইউরোর পরিবর্তে চাউল পাঠানো প্রবলেম। আমি অর্থনীতি ভালো বুঝি না, টাকার মূল্যমান কমলে ক্ষতিটা কোথায় হয় তাও পুরা ক্লিয়ার না - সম্ভবত আমদানী নির্ভর অর্থনীতির জন্য এটা বিরাট বাঁশ - তবে যখন দেখি গত ২ মাসেই ইউরোর দাম ১২ টাকা বেড়ে গেছে, তখন নিজের কথা চিন্তা করে কিছুটা ভালো লাগে। কিন্তু দেশের মানুষগুলোর কথা চিন্তা করলে সেই ভালোলাগাটা নিমিষেই হারায়।
সরকারের কথা বলে কি হবে। নির্বাচিত সরকারই দেশের পাছায় বাঁশ ঢোকায় আর আইক্কা গোণে। এটা তো অনির্বাচিত সরকার, তাগো কোনো দায়বদ্ধতাও নেই। সো, কে কেমনে খেয়ে পরে বাঁচলো, না মরলো, তাতে তাদের মাথা নষ্ট করে লাভ কি?
তাদের প্রমোদ ভ্রমণ নিয়ে কটাক্ষ কে জেলাসি হিসেবে বিবেচনা করা হলো।
এই লোকগুলা কত তেল ব্যয় করে এই পর্যায়ে এসেছে, আর কবে সরকারী খরচে কিছু করার এমন সুযোগ পাবে, তার ঠিকঠিকানা নেই, তারা একটু ঘুরুকই না। আমাদের চোখ টাটাবে কেন? আমরা বড়োই পরশ্রীকাতর। হু!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
তাও ভালো
বোরো ধান উঠা পর্যন্ত যে তাদেরকে রোজা রাখতে বলেনি সেটাই কপাল
০২
চিম্বুকের সবগুলো বাঁশে এখন এরকম ফুল আর ফল
পাহাড়ে কিন্তু দুর্ভিক্ষের লক্ষণ দেখা দিযেছে
বাঁশে ফুল এবং ফল এসেছে এবং বাঁশের ফুলের সাথে এই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের সম্পর্ক একেবারে সরাসরি সম্পৃক্ত
কারণ বাঁশে ফুল এলেই নাকি পঙ্গপালের মতো ইঁদুর বেড়ে যায় আর সেই ইঁদুর সাবাড় করে দেয় সমস্ত ফসল
আমারদের পাহাড়ের পাশাপাশি ভারত এবং মায়ানমারে যতদূর জানি ইঁদুর এবং দুর্ভিক্ষ সামলানোর জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে
কিন্তু বাংলাদেশে এখনও কিছুই করা হয়নি
পাহাড়ে অচিরেই দুর্ভিক্ষ শুরু হবে। পাহাড়ের লোকজন বেশ কদিন থেকেই এই কথাগুলো বলছেন
কিন্তু কেউ শুনছে কি?
বাঁশের ফল নাকি ইঁদুরের প্রিয় খাবার
সাংঘাতিক ব্যাপার তো!
নতুন মন্তব্য করুন