মধ্য আয়ের বাংলাদেশ- বাস্তবতা এবং সম্ভবনা - ১

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০৬/২০০৮ - ৮:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের সরকারের নিজস্ব আয়ের উৎস নেই, জনগণের ট্যাক্সের টাকাই বর্তমানে সরকারের আয়ের প্রধান উৎস। বাংলাদেশ সরকারে অনেক উৎপাদনমুখী শিল্প ছিলো, উৎপাদনমুখী এবং সেবামূলক খাতগুলোকে প্রতিদিনও বিরাষ্ট্রীয়করণের ভুতটা কবে থেকে চেপে বসলো বাংলাদেশের সরকারে কাঁধে?

এরশাদ সরকারের সময়? জিয়ার সময়? মুজিবের সময়ে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে কল কারখানা রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ছিলো। সেবামূলক খাতের বাইরে বেসরকারী পর্যায়ে কল কারখনা থাকলেও এখনকার মতো প্রতিষ্ঠান ছিলো না কোনো। হয়তো বেসরকারী উদ্যোক্তারা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রন এবং এটাকে উৎপাদনশীল করতে অধিকতর যোগ্য, তবে যোগ্য পরিচালকের পরিচালনায় যেকোনো প্রতিষ্ঠানই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে।

বাংলাদেশ সরকার সকল উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ্যা করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে, এমন নিখুঁত লাইগেশনে সরকার নিজেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এখন রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের ঘাড়ে বোঝা। হয়তো আভ্যন্তরীণ রাজনীতি, কাঁচামালের অভাব কিংবা অব্যবস্থাপনা, কিংবা এসবের সম্মিলিত প্রভাবেই এই বেহাল অবস্থা।

সরকার নিজের খরচে একটা বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করতে পারবে না। সরকারের কর্মচারীর বেতন এবং নানাবিধ ভর্তুকি দিয়ে সরকারের হাতে তেমন উদ্বৃত্ত সম্পদ থাকে না। সরকার দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ গ্রহন করতে পারে। তবে সরকারের প্রতিষ্ঠান চালানোর অদক্ষতা এবং পরিকল্পনার অদক্ষতায় এই উদ্যোগও ব্যর্থ হতে পারে। কিন্তু এর বাইরে কোনো বিকল্প কি আছে?

সরকার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৮টি রাষ্ট্রায়ত্ব পাট কল বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দিবে। আবারও সরকারের ভেতরের বিরাষ্ট্রীয়করণের মামদোবাজি শুরু হয়েছে। এখানের ছাটাই করা শ্রমিকদের কোথায় নিয়োগ দেওয়া হবে এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। সরকার কোনো রকম দায়বদ্ধতার নিদর্শন রাখছে না। তাদের বক্তব্য এই ছাটাইকৃত শ্রমিকদের যদি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয় তবে তারা সেখানে কাজ করতে পারবে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে যা হয়েছিলো, দীর্ঘ মেয়াদে বন্ধ থাকা এবং লে অফ থাকবার ফলে সেখানের শ্রমিকদের অনেকেই অনাহারে মৃত্যুবরণ করেছিলো। চিকিৎসার অভাবে, খাদ্যের অভাবে মানবেতর জীবনযাপণে বাধ্য হয়েছিলো শ্রমিক পরিবারগুলো। এবং সেখানের শ্রমিকের স্ত্রী-কন্যারা পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য হয়েছিলো ক্ষুধার তাড়নায়। ক্ষুধা মারাত্বক মানবিক বিপর্যয় ঘটাতে পারে।

বাংলাদেশের পাটকলগুলোতে যখন পর্যাপ্ত কাঁচামাল নেই তখন বাংলাদেশ থেকে পাটজাত কাঁচামাল রপ্তানির হার বেড়েছে ৮ শতাংশের মতো, সেই পাটজাত কাঁচামাল ভারতের কল কারখানায় রপ্তানী হয়েছে এবং বাংলাদেশের পাটজাত দ্রব্যের রপ্তানীর হার কমেছে ১০ শতাংশ। আমাদের বিনিয়োগের লক্ষ্য আদতে কি?

বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে যাওয়া কোনো সুবিবেচনার কাজ নয়। বিশেষত যখন সরকার নিয়ন্ত্রনও করতে পারে না বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।