সামরিক সুশাসন- সোনার পাথর বাটি - ০১

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বুধ, ২৫/০৭/২০০৭ - ৬:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই দুটি বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় এখন অবশেষে- ছাগল দিয়ে হাল চাষ আর সামরিক বাহিনীর সহায়তায় সুশাসন এবং দুর্নীতি দমন সম্ভব না কোনো ভাবেই- যদিও ১১ই জানুয়ারীর পরের বাস্তবতায় কেউ কেউ অনুমান করেছিলো সোনার পাথর বাটির অস্তিত্ব সম্ভব তবে জিঘাংসু এবং প্রতিহিংসাপরায়ন একদল জঙ্গী মনোভাব সম্পন্ন সংঘবদ্ধ দলের সাহায্যে আসলেই কোনো ভাবেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব না।

তারা কতৃত্বপরায়ন এবং তাদের প্রতিশোধস্পৃহার কারণে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহনে নিজস্ব অনুভবকেই বেশী প্রধান্য দিয়ে থাকে- এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমাদের মইন ইউ আহমেদ এবং মাসুদ চৌধুরী সাহেব বাংলাদেশের নীরো- তাদের নীরোত্ব এবং বাংলাদেশের মানুষের নীরত্ব এবং আমাদের নীড়ের খোঁজ সব এক বিন্দুতে মিলে এখন আমাদের সামনে শুধু অন্ধকারই বয়ে নিয়ে আসছে-

নীরোর প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আমার মনে হয় গ্লাডিয়েটর ছবিটার পূনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন- সেখানে দুর্বল এবং প্রতিহিংসাপরায়ন অথর্ব একজন হঠাৎ করেই রোমান সম্রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় ছলচাতুরির মাধ্যমে অধিষ্ঠিত হয়- এবং তার নিজস্ব অগ্রহনযোগ্যতা ঢাকার জন্য সে রোমের ভেতরে যুদ্ধ বয়ে নিয়ে আসে-সাধারণ জনগণের মনোরঞ্জনের জন্য তার এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা- বর্তমাণ প্রশাসনের দুর্নীতি দমন অভিযানে এমন সব হঠকারী সিদ্ধান্ত অনেকাংশেই সাধারণ মানুষের বাহবা পাওয়ার এবং তাদের ভীত এবং অনুগত করে রাখবার প্রচেষ্টাজাত। তারা প্রথমেই চাইছে সাধারন মানুষ একটু অবাক হয়ে ভাবুক এটা করা সম্ভব, তারা এমন কুতুব যে তারা যেকোনো কাউকেই কল্পিত অভিযোগে আটক করতে পারে- অনেক সময়ই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে বাধ্য করতে পারে মানুষকে এমন কি তারা প্রয়োজনে প্ল্যান্টেড এভিডেন্সের মাধ্যমে কাউকে আটক করতে পারে- এবং যেহেতু পরিকল্পিত অভিযোগ গঠিত হচ্ছে তাই এই মামলার সাক্ষী সবুদ সবই সামরিক বাহিনীর পক্ষ্যে যাবে এবং প্ল্যান্টেড এভিডেনসের সকল সুবিধা তারা পাবে- এই ভাবে কাউকে অপরাধী প্রমাণ করা আইনের দৃষ্টিতে কতটুকু আইনানুগ এটার সিদ্ধান্ত দিতে পারবে যারা আইনজ্ঞ তারা তবে আমাদের সম্মানিত নির্বোধ আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন নিশ্চিত ভাবেই সে দলে পরেন না।

নীরো এমনই এক অঘটনের সময়ে রোমের শাসনভার গ্রহন করেন- তবে তাকে সিনেট অনুমোদন দেয় নি- বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সংসদ ব্যবস্থার একটা নমুনা ছিলো রোমে- সেই রোমে সম্রাটই সকল ক্ষমতার উৎস ছিলেন না, তাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য- তার সিদ্ধান্তকে অসমর্থনের জন্য এবং বিশ্লেষনের জন্য সিনেটররা ছিলো উপস্থিত- সেই সিনেটররা নীরোকে গ্রহন করতে পারে নি- তবে নীরোর উচ্চাভিলাষ ছিলো ভিন্ন রকমের- তাই সে রোম নগরীর প্রধান বাজারে এবং সিনেটরদের প্রসাদের কাছাকাছি অংশ আগুনে পুড়িয়ে দিলো- সম্রাটের খেয়াল- শিল্প রসিক এবং সংগীত রসিক এই সম্রাট অবশেষে এই ধ্বংসাবশেষ রোমের সবচেয়ে আলীশান প্রসাদ নির্মান করেন- মনিমানিক্য খচিত এই প্রাসাদে তিনি দীর্ঘ সময় থাকতে পারেন নি- বরং তাকে হত্যা করা হয় কিংবা মানসিক অবসাদগ্রস্থ এই সম্রাট নিজেই আত্মহত্যা করেন- এবং তার এই প্রাসাদ গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে আবারও পুরোনো ধাঁচের স্থাপনা তৈরি করেন তার মৃত্যুর পরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সেনাপতি-

নীরোর এই পারফেকশনিষ্ট মনোভাব- শুচিবাই কিংবা এই ধরণের মানসিক অবস্থার উপজাত যত বৈকল্য সবই বর্তমানের সামরিক সমর্থিত প্রসাশনের ভেতরে আছে- তারা প্রতিষ্ঠিত বাজার ব্যবস্থা কে ধ্বংস করেছে- তারা অহেতুক একটা সৌধ গড়তে চাইছে সুশাসন সৌধ এবং তাদের এই সৌধ নির্মাণের পথটাও অবৈধ- অনৈতিকতায় পরিপূর্ণ-

বাজার দরের সাথে সরকারের জনসমর্থন ব্যাস্তানুপাতিক এই সত্য উপলব্ধি করবার পরে তারা সেনাবাহিনী- সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এবং এলিট র্যাব দিয়ে বাজার দর নিয়ন্ত্ড়নের চেষ্টা করছে- তবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বাজার ব্যবস্থায় উৎপাদক এবং সাধারণ ক্রেতার মাঝে ৩ থেকে ৫টা স্তর বিদ্যমান- এই বহুস্তরের বাজার ব্যবস্থাকে যদি ২ স্তরের করা যায় তাহলে উৎপাদক এবং ক্রেতা লাভবান হবে তবে এই মাঝের যেই অংশটা তাদের জীবিকায় টান পড়বে- মজুতদার- আড়তদার দালাল এবং পাইকারের জাল থেকে উৎপাদক আর ক্রেতাকে রক্ষা করতে হলে যেমন পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত সেই যোগ্যতা আসলে নেই এই সরকারের - বিডিআর সীমিত পর্যায়ে চেষ্টা চালালেও তাদের হাতে এত মজুত অর্থ নেই যে তারা সমস্ত বাংলাদেশ থেকে এই কাঁচামাল কিংবা খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ এবং বিতরণ করতে পারে- আর এ কাজে প্রয়োজনীয় লোকবল যদি এখানেই ব্যবহার করা হয় তবে সীমান্ত প্রহরায় থাকবে কারা? আইন শৃঙখলা রক্ষা করবে কারা? বাজার ব্যবস্থা বিশেষত একটা প্রতিষ্ঠিত বাজার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাপিত করা এতটা সহজ না- আর বাংলাদেশ সরকার নিজেই নিজের পরিবহন খাতকে বেসরকারীকৃত করে নিজেদের বিতরন ব্যবস্থায় একটা দূর্বল জায়গা তৈরি করে রেখেছে- এই অবকাঠামোগত দুর্বলতাও অতিক্রম করা সম্ভব না তাদের পক্ষে রাতারাতি দাম কমানো সম্ভব না- তাদের পক্ষ্যে বাজারে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না- এই দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি িয়ন্ত্রন করা তাদের পক্ষ্যে সম্ভব না- আর বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন পানির মতোই- যেই মাত্র পেটে পাথর বাধার উপক্রম হবে এই দুর্নীতি দমন, এই অহেতুক সুশাসন প্রতিষ্ঠা এই রক্তপাত সবই ভুলে যাবে তারা- এবং তা তারা ভুলতেও শুরু করেছে- সারের দাবীতে কৃষকের বিদ্রোহের খবর আসছে- খবর আসছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অসন্তোষের- সাধারন মানুষের মুখে এখন বড় বড় দুর্নীতিবাজকে ধরার জন্য বাহবা নেই বরং তাদের চাল ডাল আলু পিয়াজের দাম বাড়ছে এই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশিত হচ্ছে-

আমাদের আমদানি নির্ভর বাজারে আমরা গম, ডাল, ভুট্টা তেল আমদানী করি-আন্তর্জাতিক বাজারে এসবের দাম বেড়েছে- অনেক খুঁজে দেখলাম সেখানে চালের দামের কোনো কথা নেই- ভালো লাগলো আমরা আদতে সে পরিমানে চাল আমদানী করি না- এটা যদি সত্য হয় তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বাড়ছে- সয়াবীনের দাম বাড়ছে এই যুক্তিতে আমি কিভাবে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়াকে সমর্থন করি- চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে তাহলে সরকাের কোনো দুর্বলতা কাজ করছে-


মন্তব্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

প্রতিবাদ করার সময় হয়ে গেছে।
অনেক সময় দেয়া গেছে এইসব কাঠিবাজদের।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

অপ বাক এর ছবি

প্রতিবাদের রাস্তাটা আসলে এখনও উন্মুক্ত না- আমি এখনও বুঝলাম না এরা ক্রমাগত পাটকল বন্ধ করতেছে কিংবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ছেড়ে দিচ্ছে- এই দিকে পরিবেশ বান্ধব বলে পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে- আরও আশ্চর্য হলো বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট রপ্তানী হচ্ছে কাঁচামাল হিসেবে কিন্তু দেশের পাটকলগুলোর জন্য পাট কেনার কোনো চাহিদা নেই সরকারের- এই পাটের মৌসুমেও পাটের দর না পেয়ে কৃষক পাট নিয়ে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না- সরকারের এক একটা দুর্বল সিদ্ধান্ত শুধু সরকারের ব্যর্থতা না বরং আরও কয়েক লক্ষ মানুষকে সরাসরি আক্রান্ত করে- এ ক্ষেত্রে খুলনার পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ করেছে মাগুরার পাটচাষী পরিবারদের-

সুমন চৌধুরী এর ছবি

একটা প্রতিবাদ...ছাগল দিয়া হালচাষ করা সম্ভব কিনা সেইটা নির্ভর করে ছাগলের সাইজ লাঙ্গলের ধার ইত্যাদি....এছাড়া ছাগল প্রকৃতিতে অনেক কিছু দেয়। আমরাও খুব শখ কইরা মাটন বিরিয়ানি/রেজালা খাই...
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এত কঠিন কইরা সহজ কথা বললে হাঁটুর মগজে ঢুকবে না।

কৃষি এবং শিল্পের সমন্বয় না ঘটিয়ে বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকরা মোবাইল যোগাযোগটাকেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির মাপকাঠি হিসেবে দেখাবেন। বাংলার কৃষকের ঘরে ঘরে ইন্টারনেট পৌঁছে দেবেন। খাইতে পায় না, পান পান করে।

সাধারণ মানুষের প্রকৃত জীবন ও চাহিদা সম্পর্কে ঔদাসীন্য দেখিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মুলা ঝুলিয়ে লাভ নেই। পরিকল্পনার দুর্বলতা বেরিয়ে আসবে একসময়; তখন হয়তো চাইলেই আর সে ভুল শোধরানো যাবে না, যেমন যাবে না পাটশিল্পকে আর পুনরুজ্জীবিত করা। বিকপ্ল একটা অধিকতর লাভজনক খাত সৃষ্টি না করেই এক্সিস্টিং প্রতিষ্ঠিত একটা খাতকে ধবংস করতে আমাদের জুড়ি মেলা ভার।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

শেষ প্যারায় যা কৈলা ঠিক ঐ উদ্দেশ্যই সামরিক শাসন হয়। সমস্যা অন্য জায়গায়। এই মুহুর্তে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার প্লাটফর্ম নাই। আগেরগুলাতে জনগণের আস্থা নাই। ভোট দেওয়ার আস্থা থাকলেও আন্দোলনে ঝাপ দেবার আস্থা নাই। মাইক্রো পর্যায়ের স্বত:স্ফুর্ত প্রতিরোধগুলারে জোড়া লাগাইতে রাজনৈতিক দল লাগে। সেই দল নাই। গইড়া উঠার সম্ভাবনা শুন্য সেই কথা কমু না। ''নাস্তি'' একধরণের ভাববাদই। তবে অভিজ্ঞতা নাস্তির দিকে ঠেলা দেয়। সবচাইতে বড় কথা আমি নিজে তো আর মাঠে না....
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হ, পিপোফিশো নীতিতে গা বাঁচানো। কাউকে না কাউকে আগাইয়া আইসা 'হই' বলতেই হয়, নাইলে 'রই রই' শুরু হয় না। শুরু হওয়াটা আবার টাইমলি না হলে কেচে যায়। সার্টিফিকেটধারী অনেক শিক্ষিতই এখনো সামরিক কায়দাকে সাপোর্ট করে যাচ্ছে তলায় হাত না দিয়েও। তবে সেই সাপোর্টের কন্ঠস্বর ধীরে ধীরে নিঁচু হবে। ইতিহাস বলে, ক্ষতি যা হওয়ার তা আগেই হয়ে যাবে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমাদের এই লেখা বা মন্তব্যগুলার যে কোন সিগনিফিকেন্স নাই এইটা পুরাপুরি ঠিক না। আছে। সেই জন্যই জানুয়ারীতে সামহোয়ারইন বন্ধ হইছিল। গণঅসন্তোষ বাড়লে ভবিষ্যতে হয়তো আরো সেন্সরশীপ দেখা যাইবো...
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

কেমিকেল আলী এর ছবি

পরের টা পড়ে পরে একসাথে কমেন্ট করুম, তয় এটুকু জোশ লাগছে।

ধন্যবাদ বস

অপালা এর ছবি

এই খানে বিশেষ সমস্যা-

১। রাজনৈতিক রা দুর্নিতিবাজ, জনসাধারন জানে এবং সাধারন মনুষ এর থেকে মুক্তি চায়।

২। এই দুর্নিতি রোধ করতে যাদের বসানো হয়েছে, তারা ানৈতিক, এবং অবিবেচকের মতো কাজ করছে, তাও মানুষ বুঝতে পারছে , এর থেকে ও মানুষ মুক্তি চায়।

৩। এর প্রতিবাদ করার জন্য আবার প্রথম দুর্নিতিবাজদের মুখাপেক্ষি হতে হচ্ছে,আর তারা বেরিয়ে আসলে আবার ওরা ই নায়ক হবে, এটা ও মানুষ চায় না।

এখানে বিশাল একটা দ্বন্দ কাজ করছে।এই দ্বন্দ থেকে বের হয়ে এসে কোন পথে হাটলে সাধারন মানুষ লাভবান হবে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষিত হবে?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।