স্বীকৃতি চাইছি না মোটেও, তবে হেভিওয়েট রাজনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা এবং সামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের বাইরে অন্ত্যজ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শনের ঘটা যদি ১৬ই ডিসেম্বর ছাড়া অন্য যেকোনো সময় বলবত থাকতো, সেটা দেখে আনন্দিত হতাম।
আজ মেজর [অবঃ] হাফিজউদ্দীনের নামে রাজধানীতে একটা সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা এবং তিনি মুজাহিদের পাশে বসে বক্তৃতা দিতে এবং রাজনৈতিক আন্দোলন করতে দ্বিধা করেন না।
তাকে সম্মানিত করে সিটি কর্পোরেশন এবং এর বর্তমান মেয়র অশেষ সম্মানের অধিকারি হয়েছেন। খবরটা দেখে বিস্মিত হই নি। হালের চালচিত্রই এমন, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন খালেদা মনোনীত দলীয় প্রধান। তিনি তার ন্যাম ফ্ল্যাটের বাসায় জামায়াতের নেতাদের কোলে বসে আদর খেলেও সেটা সবকয়টা স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখাবে।
অনেক রকম উদ্যোগ দেখা যায়, প্রাক্তন সেক্টর কমান্ডাররাও একটা ফোরাম গড়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা নিউইয়র্কে গিয়েও এই সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছেন। তাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতে হয়। তবে তারা যদি কোনো একভাবে একটা গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন যে যুদ্ধাপরাধীদের বক্তব্য প্রকাশের জন্য একটা বিশেষ নীতিমালা থাকবে গণমাধ্যমে। তারা বিশেষত যুদ্ধাপরাধীরা যতক্ষণ না তাদের অপরাধের স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন, তাদের গণমাধ্যমে বয়কট করা হবে।
বর্তমানের যুগটাই গণমাধ্যমের যুগ, যোগাযোগ এবং বক্তব্য প্রকাশের জন্য একটা না একটা মাধ্যমকে ব্যবহার করতেই হয়। যদি গণমাধ্যমের আনুকল্য না থাকে তবে তারা সমাজে জীবিত থেকেও মৃত। যদিও যুদ্ধাপরাধীদের নিজস্ব সংবাদ মাধ্যম আছে, সেখানে তাদের জন্য নিয়মিত হাহাকার করা হচ্ছে, শোকগাঁথা রচিত হচ্ছে। এবং জামায়াতের উদ্যোগে বিভিন্ন সড়কে গণসাক্ষর কর্মসূচিও শুরু হয়েছে।
তবে কোনো না কোনো ভাবে তাদের বক্তব্য প্রকাশ পাচ্ছে গণমাধ্যমে।
আমার লজ্জা লাগে এটা ভেবে , আমাদের হেভিওয়েট, প্রাক্তন সামরিকেরা, রাজনৈতিক মুক্তিযোদ্ধারা এইসব জায়গায় আপোষ করে বসে আছেন। ক্যাপ্টেন মনসুরের ছেলে মতিউর রহমানের সাথে কোলাকুলি করছেন, এইসব দৃশ্যের অপমান অন্ত্যজ মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ে লাগতো না, যদি না এসব দৃশ্য নিয়মিত দেখতো হতো আমাদের।
আমাদের বড় বড় মানুষেরা ভুলে গেছেন। তাদের দায়িত্ব ছিলো যেটা, সেটা তারা অবহেলা করেছেন। তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের দুর্দশা অবলোকন করেছেন হয়তো রঙীন চশমায়। হয়তো অপমানিত মানুষের মুখ আর চোখের পানি দেখেন নি কাছ থেকে। তাদের ক্ষমতার লোভ প্রচন্ডভাবেই তাদের অন্ধ করে রেখেছিলো তাই স্বজনের শবের উপর দিয়ে হেঁটে গিয়ে তাদের হত্যাকারীর সাথে আপোষ করতেও বাধে নি তাদের।
অথচ এইসব রাজনীতি ক্ষমতার চর্চা কিংবা এই ঘি, ননী ক্ষীরের লোভানি ভুলে অনেকেই এখনও ঘৃনা করে যুদ্ধাপরাধীদের। অথচ এখনও মৃত স্বজনের জন্য গোপনে দুঃখ বয়ে বেড়ান আমাদের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার স্বজনেরা, যুদ্ধে নিহত পিতার কথা স্মরণ করে এখনও গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মধ্যবয়সী মানুষেরা, আর আমাদের বৃদ্ধপ্রজন্ম এখনও তাদের সন্তানদের অহেতুক হত্যার সান্তনা খোঁজেন।
আমার শৈশব কেটেছে যেই ঘরে, সেই ঘরের মেঝেতে যাকে হত্যা করা হয়েছিলো, সেই মানুষটার কোনো পরিজনই বাঁচে নি যুদ্ধের আঁচর থেকে, ছেলে রাজনৈতিক সংগঠক ছিলো বিধায় তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছিলো। অথচ আমার শহরের কোনো রাস্তায় তার নাম নেই, নাম নেই ঠিক আমাদের গলির মাথায় যেই মানুষটা রিকশার উপরে গুলি খেয়ে পড়ে ছিলো ২ দিন, তাকে কবর দেওয়ার উপায় ছিলো না।
এইসব মানুষেরা স্বীকৃতি পাবে না, চালাকেরা বেঁচে থাকে , বাঁচবার কায়দা না জানলে বেঁচে থাকা কঠিন মাথা উঁচু করে, বোকারাই আবেগ পুষে রাখে বুকের গহীনে, আর দিনরাত্তি রক্তাক্ত হয় অতীত দিনের কথা ভেবে।
এইসব বস্তপঁচা অতীত ঘেঁটে কষ্ট পেয়ে লাভ নেই, আমরাও চালক হয়ে উঠতে চাই। ভুলে যেতে চাই অতীতের ক্ষতের দাগ। তাকেই স্বীকৃতি দাও রাষ্ট্র, তিনি মহান মুক্তিযোদ্ধা- তিনি আজ সেইসব অপরাধ কিংবা মহত্বের স্বীকৃতি পেলেন মেজর [অবঃ] হাফিজউদ্দীন, তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন