লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: সোম, ১১/০৬/২০০৭ - ৬:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
বাংলাদেশের রাষ্ট্র নীতিতে এখন মুক্ত বাজার অর্থনীতির গ্রহন, বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবিটা অনেক সময় অনেক ভাবেই উত্থাপিত হয়েছে, আমাদের নিজস্ব ভঙ্গুর অর্থনীতিতে বলিষ্ট না করে বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ার পন্থাটা আমার নিজের পছন্দ নয়, তবে এবারের বাজেটে আমদানি শুল্ক দিয়ে রাষ্ট্রীয় আয় বৃদ্ধির একটা প্রকল্প গৃহীত হয়েছে- এর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা শোরগোল তুলেছেন- তবে তাদের দাবিটা শুল্ক হার কমানোর দাবি- তাদের অভিমত এর জন্য দেশের ভেতরে কর্ম সংস্থান কমে যাবে- আমি এ বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না এ মুহূর্তে।
এ বছর বাজেটে তেমন অভিনবত্ব নেই- আমার নিজেরও তেমন প্রত্যাশা ছিলো না- মূলত যে প্রশ্নগুলো বাজেট সম্পর্কে উত্থাপিত হয়েছে সেগুলো বেশ আগে থেকেই প্রচলিত ছিলো।
বাজেটের সাংবিধানিক বৈধতা বিষয়ক প্রশ্নে সবচেয়ে বড় বাধা হলো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে এটাকে অনুমোদনের প্রশ্ন। রাষ্ট্রপতি অনুমতি দিলেই সব হয়ে যায় না, গণপ্রতিনিধিদের ভূমিকাটা এখানে ব্যপক- বাংলাদেশ ৩০০ সংসদীয় আসনে বিভক্ত। এই ৩০০ আসনের জনগণ প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে, এই নির্বাচিত প্রতিনিধি বাজেট অনুমোদিত করলে সেটা সে সংসদীয় এলাকার সকল মানুষের অনুমোদিত এমনটাই বিবেচিত হবে। এমন গণপ্রতিনিধিত্ব যেহেতু সাংবিধানিক তাই যতক্ষণ নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা অনুমোদন দিচ্ছে ততক্ষণ এই বাজেটের কোনো গণ গ্রহনযোগ্যতা নেই।
জনগন যদি অনোমোদন না দেয় তবে এর বিধি মানতেও তারা বাধ্য নয়। জনগনকে নিয়েই রাষ্ট্র- এই ১১ উপদেষ্টা এবং সামরিক বাহিনী এবং অর্থমন্ত্রনালয় সংযুক্ত যাবতীয় আমলার মস্তিস্কপ্রসূত এই আয় ব্যয়ের হিসাব জনগন অনুমোদন না করলে জনগনের পক্ষে যে কেউ আদালতে রাষ্ট্রীয় অর্থ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উত্থাপন করতে পারে।
যেহেতু জনপ্রতিনিদঃিরা আলোচনার মাধ্যমে কর আরোপ করেন নি তাই এই কর প্রদানে জনগণ বাধ্য নয়- জনগণ আদতে অনির্বাচিত প্রতিনিধির নির্দেশ মানতে কোনো ভাবেই বাধ্য নয়।
এই সমস্যাটার উদ্ভব হয়েছে কিছুটা সামরিক গোয়ার্তুমিতে কিছুটা নির্বাচন কমিশনের গোয়ার্তুমিতে- মাঝে ১১ জন উপদেষ্টা সামরিক প্রতিনিধি হয়ে রাষ্ট্র শাসন করছেন- রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্থগিত নয় তবে রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকার সংরক্ষিত- কেউ কেউ অনুমতি প্রপ্ত কেউ কেউ অনুমতি প্রাপ্ত নয়- এবং জরুরী অবস্থা উঠিয়ে নেওয়ার পেছনের সময়সীমাও অনির্ধারিত- যদিও অযৌক্তিক এই দাবী যে আগে সংস্কার করতে হবে- প্রত্যক্ষ নির্বাচনে দলের ভেতরের নেতা নির্বাচন করতে হবে- আবার একই জরুরী অবস্থা বিধিমতে কোনো রকম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না- আদতে তারা সংস্কার বলতে যা বুঝাতে চায় তা হলো শেখ হাসিনা এবং খেলাদা জিয়ার পদত্যাগ- এই দু'জন পদত্যাগ করলেই এক মুহূর্তেই সব অন্ধকার দুর হয়ে যাবে- সামরিক শাসন প্রত্যক্ষ নয়- সংবিধান রদ করা হয় নি- রাষ্ট্রপতি নিজেও সকল শাসন ক্ষমতা অধিগ্রহন করেন নি- সাংবিধানিক ভাবেই ১১ জন উপদেষ্টার তদারকিতে ছেড়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রকে। বকচ্ছপ একটা প্রশাসন বাজেট পেশ করেছে-তবে নতুন কোনো আদর্শ স্থাপন করতে পারে নি।
জাতীয় পরিচয়পত্র প্রসঙ্গে এবং এর দ্বারা প্রাপ্ত নানাবিধ এখনও আদৃশ্য সুবিধাদির স্বপ্ন বেচে যতটা প্রচারমাধ্যমকে তুষ্ট করার প্রচেষ্টা আছে সেই জাতীয় পরিচয় পত্র আর ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনই জাতীয় পরিচয় পত্রের কাজ করছে- তারা বলছে চাইলেই ছবি ছাড়া ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত হওয়া যাে তবে এক্ষেত্রে তাদের জতীয় পরিচয় পত্রদ্বারা প্রাপ্ত নানাবিদঃ সুবিধা তঃেকে বঞ্চিত হতে হবে।
যদিও বাজেটে বরাদ্দকৃত ব্যয় দেখে আমার মতো মানুষের পক্ষে অনুমান করা কঠিন আসলে এর প্রভচাব কেমন হবে তবে আমার ব্যক্তিগত প্রত্যাশা ছইলো মানবকল্যানমূলক খাতগুলোতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়বে- সে ঘটনা ঘটে নি বলেই আমি খানিকটা মর্মাহত। বাজেট সম্পর্কে আমার সব সময়ের দাবি এখানে মৌলিক অধিকার পূরণে রা্ট্রীয় দায়বদ্ধতা আরও স্পষ্ট হবে এবং ভর্তুকির পরিমাণ বাড়বে বছর বছর- এবং এটা লক্ষ্যনীয় হারে বাড়তে হবে-
কেউ যদি প্রশ্ন করে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশ ভর্টুকি দেওয়ার টাকা কোথায় পাবে তাবলে দুঃখিত হয়ে বলতে হয় রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার কথা যার দায়টা এখহন সীমিত ভাবে পড়ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘাড়ে। তপন চৌধুরীর ভাষ্যমতে জাতীয় কয়লা নীতি এবং বিদ্যুত উৎপাদন বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে অতি শীঘ্রই। আমাদের খনিজ সম্পদ উত্তোলন এবং এর ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তিও সম্পাদিত হবে এই তপন চৌধুরীর দপ্তরে-
বাংলাদেশ ক্রমশ রাষ্ট্রীয় ভাবে অনুৎপাদনশীল- বেসরকারীকরণের দায়টা সীমিতভাবে হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপরেও পড়ে- বন্দর ব্যবস্থাপনা বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্তটা আমার নিজের পছন্দ হয় নি- পছন্দ হয় নি পুরোনো টেন্ডার যা কোনো না কোনো ভাবে দুর্নীতির প্রভাবযুক্ত সেগুলোকে অনুমোদনের সিদ্ধান্তটা।
উৎপাদনশীল রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পগুলো- অর্থনৈতিক কৃষিপণ্য উৎপাদনে পরোক্ষ বাধা- রপ্তানী উদার করে বাড়তি দামের বোঝাটা দেশের মানুষের ঘাড়ে চাপানোর অর্থনৈতিক নীতি- এসব কিছুইঅনুসরণ করছে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
বিদ্যুতের চাহিদা আছে, রাষ্ট্র নিজেই ছোটো ছোটো বিদ্যুত উৎপাদনকেন্দ্র তৈরি করতে পারতো- রাষ্ট্র নিজেই বানিজ্যিক ও গেরোস্থালী বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা আলাদা করার পরিকল্পনা গ্রহন করতে পারতো- বানিজ্যিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রে বিদ্যুত উৎপাদন ও বিদ্যুত বন্টন ও এটা দিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ উৎপাদনের নীতি তৈরী করতে পারতো সরকার-
সরকার বিদ্যুত উটপাদন কেন্দ্র স্থাপনের উপযুক্ত জমি অধিগ্রহন করেছে- ছোটো ছোটো বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র যার উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ থেকে ১০০ মেগাওয়াট তা তৈরী করতে তেমন বড় মাপের স্থাপনা প্রয়োজন হয় না এবং ব্যপক অর্থও প্রয়োজন হয় না-এসব বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র সমাপ্ত হয়ে হয়ে উৎপাদনে যেতে ৯ থেকে ১২ মাস সময় প্রয়োজন- সরকার যদি এমন ২০টা বিদ্যুত কেন্দ্রও স্থাপন করতে পারে তাহলে আগামি বছর জুন নাগাদ অন্তত ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব- এখাতে কর্মসংস্থানও সম্ভব-
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বেসরকারী বিদ্যুত উৎপাদক সংগঠনের দাবি এ খাতটাও বেসরকারী করে রাষ্ট্রকে উৎপাদনশীলতার দিকে নিয়ে না গিয়ে বরং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধশালী করা হোক। তপন চৌধুরীর ভাষ্য মতে বেসরকারী বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য এবং তা সরবরাহের সম্পূর্ণ নীতি প্রণয়ন করবে এই বেসরকারী বানিজ্যিক সংস্থাগুলো- যদি বানিজ্যিক সংস্থা এখানে লাভের অঙ্ক খুঁজে পায় তবে সরকার কেনো নিজে এটা করে লাভবান হতে চাইছে না?
শিল্প অনুকূল পরিবেশ নেই- ভারী শিল্প নয় বরং কৃষিজাত পণ্য নির্ভর শিল্পগুলোও বেসরকারী ব্যবস্থপনায় চলে যাচ্ছে- ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠি দেশের নাগরিক যারা অর্থকরী ফসল হিসেবে আখ, পাট তামাক সরিষা উৎপাদন করে তাদের এসব পণ্যচাষে নিরূটসাহিত করছে সরকারী নীতিমালা- বরং বিদেশ থেকে প্রায় ফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানী করে এদেশের মোড়ক মুড়ে বাজারে ছাড়ার নীতিতে তারা সহায়তা করছে- লাভবান হচ্ছে কয়েকটা মানুষ এবং বৈদেশিক চাষারা-
এমন কৃষিজাত পন্য আমদানী করতে শুল্ক কমানোর দাবিও জানাচ্ছে ব্যবসায়ী সংগঠন- আমরা দর্জি দেশ, আমাদের ইলেকট্রনিক্স শিল্পটা মূলত সংযোজনভিত্তিক- আমরা বিদেশ থেকে প্রায় সমাপ্ত পণ্য এনে দেশীয় যন্ত্রে মোড়ক লাগিয়ে বাজারে ছাড়ি- আমাদের রাষ্ট্র কোনো ভাবেই উৎপাদনের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নয় বরং তদারকি আর খবরদারীতে আগ্রহী- এ বাজেটে তেমন কোনোও নির্দেশনা নেই যে আমরা এ পথ ছেড়ে অন্য কোনো পথ গ্রহন করছি অচিরেই-
শিল্পায়নে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ সংক্রান্ত বক্তব্য না থাকলেও বাজেট ঘোষণার কয়েকদিন আগেই রপ্তানী নীতি ঘোষিত হয়েছে- সেখানে রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকাতে চোখ রাখতে হবে- মাছ মাংস- ডিম- তথা পোল্ট্রী শিল্প প্রকৃত রপ্তানীমুখী শিল্প- বলতে আশ্চর্য লাগে বাংলাদেশে দৈনিক ১০ থেকে ১২ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়- অর্থ্যাৎ দৈনিক প্রায় ৪০ কোটি টাকার ডিম উৎপাদিত হচ্ছে বাংলাদেশে- তবে সমস্যা একটাই রপ্তানী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় হচ্ছে না হচ্ছে বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে -ফলে আমাদের দেশের জনগনকে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে এসব পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে-
ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য মূনাফা- তারা যদি ৩টাকার ডিমের মূল্য অন্য কোথাও ৩ টাকা ৫০ পয়সা পায় তাহলে হাজারে ৫০০ টাকা বাড়তি মুনাফার লোভ তারা ছাড়বে কেনো- তারা বরং আড়ও বেশী পণ্য সেখানে বিক্রী করবে- এর ফলে দেশের বাজারেও ডিমের দাম বাড়বে- আসলে অন্যন্য সকল পণ্যের মূল্যও এমন অসম নীতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের সমতূল হিসেবে বাড়ছে-
বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বাজারে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখা এসব কাজে রাষ্ট্রের তদারকি এজন্য প্রয়োজন।
এ বছরও সরকার ধানের মূল্য মন প্রতি ধরেছে ৪৫০ টাকারও কম- তারা চালের দাম ধরেছে ৬৫০ টাকারও কম- যদি সরকার আশা করে এই দামে তারা চাল কিনতে পারবে তবে তারা কেনো ১৮ টাকা কেজি দরে চাল বেচতে পারবে না খোলা বাজারে? বাজারে ক্রেতাদের কেনো ২৩ টাকা দিয়ে সমমানের চাল কিনতে হবে?
এই ব্যবস্থপনার গলদগুলো কিংবা রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতার কথা উঠছে না- বাজেটে ভর্তুকিপ্রসঙ্গে খাদ্যমূল্য নির্ধারণে সরকারী অংশগ্রহনের কোনো বক্তব্য নেই- প্রায় ১৪ লক্ষ্ টন খাদ্যশস্য মজুতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার-
চিকিৎসা খাতে কিংবা স্বাস্থ্য সেবা খাতে এবং শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় হয় এ অঞ্চলে কর্মরত মানুষদের বেতন ভাতাদি প্রদানের কাজে- উন্নয়নমূলক কাজে বরাদ্দ প্রায় নেই-
বাংলাদেশের এ বছরের বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১২০০০ কোটি টাকা- সরকারী তালিকাভূক্ট সকল স্কুল এবং সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও শিক্ষকদের পরিমাণটা কল্পনা করলে অনুমান করা যাবে যে এই বরাদ্দের সিংহভাগই যাবে এদের বেতন পরিশোধে-
পগত বছর ১২ লক্ষ ছাত্র মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিলো- প্রতিটা স্কুলে ৪০ জন ছাত্র ধরলেও মাধ্যমিক সমমানের স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার- এবং এই প্রতিটা স্কুলে যদি আমরা ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষক ধরি তাহলেও এই মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ, ১ লক্ষের মতো প্রাথমিক স্কুলে ১০ লক্ষ শিক্ষক- উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষাঙ্গনের সকল শিক্ষক সংখ্যা ও কর্মচারী সংখ্যা আমলে আনলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত মানুষের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ হবে-
অবস্থা এমনই যে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন মাত্র ১০০ টাকা বাড়াতে চাইলেও বাজেটে ১০০ কোটি টাকা আসবে কোথা থেকে এই নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয় বাংলাদেশকে- এমন অবস্থায় শিক্ষার গুনগত মান বাড়ানো- যেমনটা সত্য যে শহরের স্কুল কলেজগুলোতে প্রদত্ত শিক্ষার মান এবং মফস্বল কিংবা গ্রামের স্কুলগুলোর প্রদত্ত শিক্ষার মানে আকাশ পাতাল তফাত- ফলে উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষাঙ্গনে শহরের ছাত্ররাই আসছে শুধু- এছাড়াও গবেষণা খাতে বরাদ্ড প্রায় শূন্যের কোঠায়-
এভাবে আমরা কতদুর আগাতে পারবো- গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি না হলে আসলে সীমিত সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষদের ভেতর থেকে বড় মাপের কোনো উদ্ভাবক কিংবা সৃষ্টিশীল মানুষ উঠে আসবে না-
শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরণের বিষয়টা প্রত্যক্ষ করলেও এর বিপরীতে না গিয়ে তারা এটাকে রাষ্ট্রীয় আয় বৃদ্ধির একটা সমৃদ্ধশালী খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন- একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা ও মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দাবিতে সহমত থাকলেও এ বাজেটে এটা প্রতিফলিত হয় নি- কোনো রকম রাষ্ট্রনীতিতে এটা প্রত্যক্ষ নয় বলেই আশংকা করছি বাণিজ্যিকিকরণের প্রভাবে এখন শিক্ষা সবার অধিকার নয় বরং সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য বরাদ্দকৃত হয়ে যাবে- আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ের ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝড়ে যাওয়ার বিষয়টা নিয়েও সরকার চিন্তিত নয়- তবে এ খানে নারীর ক্ষমতায়নের বিষ্য়টা মূখ্য হয়ে এসেছে- তারা নারীদের অংশগ্রহন বাড়াতে চাইছে- আমারও আপত্তি নেই তবে এজন্য পুরুষ শিশুদের কোনো রকম সুবিধা থাকবে না এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়।
প্রায়শই সংবাদ শিরোণাম হয় স্বাস্থ্য সেবায় সরকারী উদাসীনতার বিষয়টি, চিকিৎসা সেবার সম্প্রসারণ ঘটে নি এম্বুলেন্স ও রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং মেরামটের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ না থাকার বিষয়টা গত ৫ বছরে সংবাদ শিরোণাম হতে হতে এখন আর গায়ে মাখার মতো বিষয় নয়- অর্থ্যাৎ স্বাস্থ্য সেবা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ যথেষ্ট ছিলো না কোনো সময়ই- সহনীয় মূল্যে চিকিৎসা সেবা গ্রহনের সুবিধাবঞ্চিত অধিকাংশ নাগরিক- সরকারী হাসপাতালগুলো রোগ উৎপাদনের কারখানা, এ বছরও চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি দিতেই ব্যয় হবে অধিকাংশ অর্থ- অন্যান্য ব্যয়গুলোর সংকুলান হবে না এ বছরের অনুমোদিত বরাদ্দে-
আমাদের বাজেটে মাথার উপরে ছাদ এবং পেটে ভাতেরর মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হওয়ার কোনো নির্দেশনা না থাকলেও স্পষ্ট ভর্তুকি হিসেবে বিবেচিত বয়স্ক বৃদ্ধ ভাতা এবং নারী শিশুদের জন্য সরকারী বরাদ্দের বিষয়টার সাথে কৃষকদের জন্য প্রদত্ত ভর্তুকি যা কৃষক কার্ডের মাধ্যমে প্রদান করা হবে- এসব মিলিয়ে সম্মিলিত বরাদ্দ বাজেটে মোট বরাদ্দের ১ শতাংশের মতো- এর বিপরীতে সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১২ শতাংশ-
আমাদের ৯০ শতাংশ মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ভর্তুকির পরিমাণ ৫১০ কোটি টাকা আর সামরিক বাহিনির জন্য বরাদ্দ ৫৫০০ কোটি টাকার হিসেব দেখে আমি বিষন্ন হতে পারি তবে এই বাস্তবতা সহসা বদলে যাওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই-
মন্তব্য
অজ্ঞাতবাস
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নতুন মন্তব্য করুন