বানিজ্যে মুক্তিযুদ্ধ ১

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: সোম, ০৯/০১/২০০৬ - ১:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিষয়টা আমার মনে হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। ইতিহাসজ্ঞান নিতান্ত অপ্রতুল তাই ভুল মন্তব্য করেও ফেলতে পারি,এই আশংকাই বেশী।

25শে মার্চের পর নির্বিচার গনহত্যাপ্রতিরোধে প্রথম প্রতিরোধ করেন পুলিশ বাহিনী,এর কয়দিন পরে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সবাইকেই যুদ্ধে জড়িয়ে পরতে হয়। কেউ স্বাধীনতার পক্ষে আর কেউ স্বাধীনতার বিপক্ষে অখন্ড পাকিস্তান রাখার জন্যে। শুধুমাত্র একটা বিষয় উল্লেখ্য --- 25শে মার্চের আগের আন্দোলনের কোথাও বিচ্ছিন্নতার দাবী ছিলো না ছিলো স্বাধীকারের দাবী আর পরিস্থিতি বিচারে যথেষ্ট ন্যায়সংগত দাবী ছিলো সেটা। বৈষম্যের সেই ইতিহাস বা পরিসংখ্যান খুব সহজেই পাওয়া যাবে আর স্বাধীকারের দাবীর যৌক্তিকতা প্রমান মুল প্রসঙ্গ না। আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এমন ছিলো যেটা নির্বাচিত সংসদে তাদের যেকোন প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্যে যথেষ্ট। তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানের জনতা নিশ্চিতভাবেই স্বাধিকারের পক্ষে ছিলেন। রাষ্ট্রিয় প্রচারনায় যতই শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী লেবাস ---এটা সত্য যে মুজিবের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তেমন ভালো ছিলো না। আমি যতটুকু পড়েছি আমার বিশ্লেষন মুজিব উগ্রপন্থী -- তবে মুজিব খুব স্পষ্ট করে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন নি যেটার উপর ভিত্তি করে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা যায়। বরং কল্পিত বিচ্ছিন্নতাবাদ আবিষ্কার করে ওটার ভিত্তিতে গনহত্যা আর গনহত্যাকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক গনহত্যা অব্যাহত রাখা--এটা রীতিমতো অপরাধ। বাংলাদেশের কিছু মানুষ এই অন্যায়কে সমর্থন করেছে। রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বিরোধিতা এটা গ্রহনযোগ্য কিন্তু যেই গনহত্যার সুচনা এক অন্যায় দাবী থেকে যেখানে রাষ্ট্র বর্বরভাবে তার জনগননিধন কর্মসূচি চালাচ্ছে এবং এই অন্যায় কাজে সহায়তা প্রদান সম্পূর্ন ভিন্ন।

পাকিস্তান ইসলামি রাষ্ট্র ছিলো না মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভিত্তিতে সৃষ্ঠ এক অদ্ভুত কৌতুক ছিলো। আর বাংলাদেশের জন্মপ্রক্রিয়ার শুরু এই মর্মান্তিক রক্তপাতে।
10ই এপ্রিল 71-মুজিবনগরে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের পর আনুষ্ঠানিক স্বাধিনতাযুদ্ধের শুরু । 26শে মার্চের ঘোষনা হয়তো বড় একটা বিষয় কিন্তু 10ই এপ্রিল বিশ্ব সমাজে গৃহযুদ্ধকে স্বাধীনতার লড়াই স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অবকাঠামো, আদর্শ সব নিয়ে একটা নতুন লক্ষ্য । আর যেসব মানুষ এই আদর্শ বাস্তবায়নে লড়াই করছে তারা মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ শেষ হলো। 21শে ডিসেম্বরের মধ্যে সবাই যে যার ঘরে ফিরে গেলেন। একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি তাইরে নাইরে না বগল বাজিয়ে অধপতনের পথে যাত্রা শুরু। 10ই জানুয়ারী শেখ মুজিব স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ফিরে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেন। তার আবেগ,দেশপ্রেম জনপ্রিয়তা সব মিলিয়ে মহানায়ক হিসেবেই ফিরলেন। অধপতনের সুচনা এই সময়েই। শাসক হিসেবে তার ব্যার্থতা তার লেজে গোবরে করে ফেলা ক্ষমাযোগ্য অপরাধ বাংলাদেশীদের কাছে। যা তার নিয়ন্ত্রন করা উচিত ছিলো শাসক হিসেবে- শাসনের প্রথম শর্ত স্থিতিশীলতা কিন্তু তিনি নৈরাজ্যের দমন না করে নৈরাজ্য উস্কে দিলেন। 1972 ডিসেম্বর-- বিজয়ের প্রথম বর্ষ - বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদর্শচ্যুতি। ধর্মনিরপেক্ষতা, সৈন্যবাহিনীবিহীন এক রাষ্ট্র যার মূল লক্ষ্য কৌশলগত মিত্রতা দিয়ে শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ। সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি মুজিব যা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আদর্শচু্যতির প্রথম ধাপ। সংবিধান আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয় 16ই ডিসেম্বর। প্রথম নির্বাচন। আওয়ামী লীগ সম্ভবত 273টি আসনে বিজয়ী।এর পর কোন এক অজানা কারনে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার উপরে প্রথম আঘাত, বঙ্গভবন থেকে জীবনানন্দ সহ বিভিন্ন হিন্দু নেতা ও মননশীল লোকের প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলানো। আশ্চর্য এই যে তখন সেখানে অবস্থান করছেন মুজিব। এটা সিম্বলিক একটা দৃশ্যের মতো।
এই সময়ে নিয়মতান্ত্রিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের শুরু। উর্দুভাষী জনগন হিন্দুজনগন সবাই নির্যাতিত আর এই ধারা এখনও চলছে। প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে গড়িমসী করা এবং মুসলিম জাতিয়তাবাদে বিশ্বাসী একদল উজবুকের কাছে চোখ-কান বেচে দিয়ে রাজ্যশাসন মুজিবকে জনবিচ্ছিন্ন করেছিলো। পা থেকে মাটি সরে যাওয়ার আগে সবার উপলব্ধিতে আসে সামথিং ইজ রং কিন্তু শোধরানোর উপায় থাকে না। মড়ার উপর খড়ার ঘা এর মতো ঘরে আরেক উজকুক যুবক যে নিজেকে রাজপুত্র ভাবে। যে প্রকাশ্যে ব্যাংকডাকাতি করে আহত হয় বাসা ফিরে এবং স্নেহশীল পিতা তাকে ক্ষমা করে দিলে তাকে আনুষ্ঠানিক বিচারের মুখোমুখি হতে হয় নি।

শাসক হিসেবে ব্যার্থ একজন মানুষ যখন ব্যার্থতা বুঝে শোধরানোর কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস পেলো তার কয়েক মাসের মধ্যেই তাকে হত্যা করা হলো। মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে প্রথম ভেজাল দিলেন মুজিব এর পরে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শমুছে বাংলাদেশকে ইসলামী মাদক দিলেন এরশাদ। মাঝে বহুদলীয় গনতন্ত্র বিকাশ করতে গিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের বৈধতা দিলেন জিয়া। মুজিব সরাসরি যুদ্ধ করেন নি তার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তেমন সহমর্মিতা নেই আর রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে কিছু মুসলিম জাতিয়তাবাদ বিশ্বাসি তার রাজনৈতিক মন্ত্রনাদাতা হয়েছিলো কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা একজন কেন 2 রাজাকার এবং যুদ্ধঅপরাধীকে মন্ত্রীবানাবে। এরপর এক লম্পট বাংলাদেশকে ইসলামি দেশ বানালো। মুক্তিযোদ্ধারা তখনও বানিজ্য পন্য হয়ে যায়নি।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।