রাজনীতির আমি

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: রবি, ১৫/০১/২০০৬ - ৫:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দেয়াললিপি রাজনীতির প্রথম সবক দেয়। চলমান মিছিলের মতো শ্লোগানে শ্লোগানে ঢাকা দেয়াল লিখন পড়তে পড়তে স্কুলে যাওয়া। প্রথম যে দেয়াল লিখন পড়লাম -সিকিম নয় ভুটান নয় এ দেশ আমার বাংলাদেশ -জাসদ। রাস্তা ঘুরে সামনে আগালে টি এন্ড টির বিশাল দেয়াল। উপড়ে কাটাতারে মাধবীলতা কমলা আগুন গেটে বাগান বিলাস , দেয়ালে সিরাজ হত্যার পরিনাম বাংলা হবে ভিয়েতনাম। একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ হাতের পাশে জাসদ-ইনু।

যেখানে থাকতাম তার সাথে শহরের যোগাযোগ একটা হেরিংবোন গলি। বা হেরিম্বোম। আড়াআড়ি ইট বিছানো রাস্তার নামটা কেন এমন এটা কাউকে বলা হয় নি। সেখান থেকে বের হলেই বাজার। রাস্তা ধরে সামনে গেলে স্টেশন । পিছনে গেল জেলখানা। একটাই রাস্তা সামনের অংশ স্টেশন রোড পিছনের অংশ জেলরোড।
গলির মাথায় জাসদ লীগের অফিস ব াসার পাশে ওয়ার্কাস পার্টি মেননের অফিস। আর তখন হেলিকপ্টারে ছড়ানো লিফলেট ধরতে ছুটাছুটি।

এর মধ্যে এরশাদের বিরুদ্ধে হরতাল। গলির মাথায় রিকশার টায়ারের কালো ধোয়া রাবার পোড়া গন্ধ আর শুনশান খা খা রাস্তা। হরতালের জোড় ছিলো 83 -84তে। এরপর নিজেদের ক্লাব তৈরি। ব্রাইট বয়েজ ক্লাব। চাদার রশিদ হাতে বাজারের দোকানে। দোকানীর বেজার মুখ। কেউ কেউ খুশী মনে 5 টাকা দেয় কেউ 5টা গালি। এভাবেই প্রত্যক্ষ রাজনীতির প্রথম শিক্ষা। ক্লাবের ক্যাপ্টেন নির্বাচন হবে। প্রার্থী দুই ভাই। এক জনের ধানের শীষ অন্যজন নৈকা। এই নিয়ে হেরিংবোন রাস্তায় মিছিল। সবার বয়েস 8 থেকে 12। জনপ্রিয় শ্লোগান নৈকার তলে ইলিশ মাছ ,................
ধানের শীষে চিটা ......................

মহা উৎসাহে মিছিল চলছে। উত্তেজনা শেষে বিকেলে মাঠে দুই ভাই দুই দলের ক্যাপ্টেন । ক্রিকেট ফুটবল হকি। আমি অনেক চেষ্টা করে নাকের জলে চোখের জলে মাখামাখি করেও ফুটবল দলে জায়গা পাই নি। আমার 6 6টা মামা সেই দলে তারপরও হ্যাংলা পাতলা আমার ফিটনেস স্কিল সমস্যা বলে বাদ দিয়ে দিলো। অভিমানে অপমানে শেষ। ক্রিকেট টীমেও জায়গা হলো না। নিজের খোলোয়ার জীবনের দুইটা পরিবর্তন করতে হলো। স্পীনার থেকে পেসার হয়ে ব্যাটিং এ উন্নতি করে যখন মোটামুটি দলে জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছি যেতে হলো হোস্টেলে। গিয়ে রাজনীতির 2য় অধ্যায় শুরু।

আমার দ্্বীতিয় বা তৃতীয় রাত হোস্টেলে ঘুম আসে না। ঘরে সিগারেট টানছে আমার বয়সী ছেলে। চোখ বড়বড় করে দেখি আর বিভিন্ন নিয়ম শিখি। ঘুম ভাঙ্গলো দেখলাম পাশের বিছানায় মারামারি। তিনজন দর্শক দুই জন লড়ছে আমি ঘুম থেকে উঠেছি কারন বিছানার পাশেই ধাক্কাধাক্কি চলতেছে। কাল সকালে মারামারি কইরো এখন ঘুমাও - বোধহয় আশ্চর্য হয়েই তারা বন্ধ করলো মারামারি। এর পর দুইজনের একজন গেলো পাশের রুম এ আর এই দুই রুমের মধ্যের সংঘাত থামলো আমরা এস এস সি দেওয়ার সময়।
তখন তিন চারজন সাংসদের ছেলে পড়ে আমাদের সাথে। তাদের বাহারী গাড়ী আসে। টেনে উঠার সময় তিন জন বহিস্কার হলো। কড়া নিয়মের মধ্যেও কিভাবে কিভাবে রাতে হোস্টেল পালিয়ে ম্যাকগাইভার দেখা। বাংলা ছবি দেখে ফেরার সময় বাস ভাড়া না দিয়ে পালিয়ে যাওয়া । আর এভাবেই সিগারেটের সাথে সখ্যতা।
রুমে রুমে সংঘাত ভিন্ন ভিন্ন হোস্টেলের দন্দ্ব। এসব সংঘাতের ভেতরে আমার হ্যাংলা পাতলা শরীরের উচ্চতা বেড়ে গেলো। ঠোটে কালো দাগ । মাকে মিথ্যা বলা। প্রথম প্রেমে পড়া। কৈশোরের সব উন্মাদনা নিয়ে এএসসি শেষ। আবার মফস্বলে ফিরে আসা। 3 বছর হোস্টেলে থাকার অভিজ্ঞতা বিশাল।

কলেজে ভর্তি হয়ে আবার নতুন সব বন্ধু বানানো। বুকের বোতাম খুলে ঘুরতে ঘুরতে মিছিলে যাওয়া। আমাদের ব্যাক বেঞ্চার বন্ধুরা বি এন পি তে তো যাও বি এন পির মিছিলে। শ্লোগান না দিয়ে গম্ভীর মুখে মিছিলে হাটি। মিছিল শেষে ক্যান্টিনে একটা বিস্কুট এক কাপ চা। লীগের মিছিল শেষে অন্য সেকশনের বন্ধুরা আসে তাদের সাথে চা সিগারেট তারপর কলেজের মাঠে বসে মেয়ে দেখা। রুটিন এমনই। কারো কারো প্রেম হয় কলেজের পিছনের বাগানে চলে যায় প্রেমিকার সাথে আমরা 16 অভাগা তাকিয়ে দেখি। কলেজের কোন রুম ফাকা পেলে বেনচী বাজিয়ে গান -এক দিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে। তনুজ নামের এক বন্ধুর গলা ভালো তার সুবাদে সেকেন্ড ইয়ারের ছেলেদের সাথে পরিচয়। মানিকের উত্তেজিত হাত মিছিলে চমকায় কিন্তু সেই হাতে হাত বাধে না কোন মেয়ে। বিজ্ঞান ক্লাশ চলে আমরা ক্লাশের সামনে দিয়ে মিছিল নিয়ে ঘুরি মেয়েদের ইমপ্রেস করার সব প্রচেষ্টা ব্যার্থ। নির্বাচনের সময় আসে।
ভিপি জি এস এ জি এস ক্রীড়া সম্পাদক আরও কি কি পদ। দলের সিদ্ধান্ত ভিপি জি এস হবে স্নাতকের ছাত্র এ জি এস নীচের পদ প্রথম বর্ষ। কে দাড়াবে কোন পদে। বি এন পির এ জি এস লীগের এজি এস স্কুলের বন্ধু। ক্রীড়া সম্পাদক দুজনও তাই। সবাই আমাদের বন্ধু কাকে সমর্থন করবো। দুজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলে সমস্যা শেষ। অবশেষে তাই হয়। আর আমি প্রথম বুঝতে পারি রাজনীতি আমার জন্যে না।
মিছিলে মুখোমুখি দুই দল আমরা ছাত্র আমরা বল জাতিয়তা বাদী ছাত্র দল করতে করতে দোতালায় উঠেছি। সামনে লীগের জয় বাংলা জয় বাংলা শ্লোগান। এই মিছিল থেকে আমি একমাত্র জয় বাংলা বলে বেকুব। কয়েক দিন লজ্জায় মিছিল করি নি। আর তখন টিটি রুম ফাকা থাকতো মিছিল টাইমে। খেলার নেশা মিছিলের নেশার বড় আর আমার পছন্দের মেয়ে কলেজে ভর্ত্তি হয়েছে তার সামনে পৌরুষ দেখাতে গেলে বিপদ। এমনিই সিগারেট নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায়আছি। বুক ফাটে মুখ ফুটে না অবস্থায় মাঠে বসে আড্ডা আর খেলা। কিন্তু রাজনীতির সংস্পর্শ ছেড়ে দিলাম যখন মিছিলে যাবো না শুনে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মারার হুমকি দিলো। যা ইচ্ছা ছিড়িস বলে রিটায়ার্ড মিছিলমুখ হয়ে গেলাম। এর আগে বাসার অজান্তে অনেকটা আমার অমতে আমার কলেজে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হলো। শর্ত ছিলো একজন নাম প্রস্তাব করবে দুজন সমর্থন করবে। নাম ডাকা হলো দাড়াতে না দাড়াতে দুজন বললো আমি সমর্থন করি। আমি আপত্তি করার আগেই সব শেষ। পার্টির গঠনতন্ত্র বলে একটা জিনিষ বললো। এখনও সে জিনিশ পড়ি নাই তাই বুঝি নি এখনও। সেখানে বর্নিত আছে যদি দল কাউকে মনোনীত করে তাকে সমর্থন করতে হবে। কিন্তু আমার মনোনয়ন প্রত্যাহাএর সুযোগ নেই এটা বিশাল কিছু একটা। জেলা কমিটির অনুমোদন আছে এ কমিটির। আমার প্রথম নির্বাচনে আমার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। গোদের উপর বিষফোড়া আব্বা চাচা মামা জেনে একটু বিরক্ত। কি ব্যাপার তুমি নির্বাচন করছো জানাবা না।

রাজনীতির পাট চুকিয়ে ফেলা হলো না। আমার বিশ্রী একটা বদভ্যাস দেয়ালের পোষ্টার ছিড়া। আমি কথা বলতে বলতে হাটতে হাটতে পোষ্টার দেখলে ছিড়ি। এমন ভাবে হাটতেহাটতে পোষ্টার দেখে টান দিলাম। একদল ছেলে চিৎকার করলো এই দাড়াও। আমি তাকিয়ে দেখলাম যে পোষ্টার ছিড়ছি ওটা লীগের আর আমি যেখানে দাড়িয়ে ওখানে লীগের মিছিলের প্রস্তুতি চলছে। ভয়ে কইলজার পানি শুকায়া কলিজা বিস্কিট হয়ে গেছে। সাথের বন্ধুরও অবস্থা করুন। বললাম ভুল হয়ে গেছে ছিড়ার আগেখেয়াল করিনি কি ছিড়ছি। লীগের বন্ধুদের সৈজন্যে একটু ভৎর্সনা শুনে ক্যান্টিনে দুই গ্লাশ পানি খেয়ে প্রান ফিরে পেলাম।
এর পর 2য় বর্ষের মাঝামাঝি আমার নতুন জীবন শুরু।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।