বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা অশিক্ষা না, প্রধান সমস্যা কুশিক্ষা। শিক্ষাবিষয়ে কিছু বলবার সামান্য যোগ্যতা হয়েছে প্রায় দুই যুগের অভিজ্ঞতা। আমি শিক্ষার অপব্যাবহারে মনোনিবেশ করবো তার আগে শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে আমার অভিমত বলি।
মানুষকে ক্রমাগত প্রচেষ্টায় মানুষ হয়ে উঠতে হয়। এই পথ সবাই পারি দিতে পারে না। এই পথে কড়ি পানসি বাহন সব শিক্ষা। শিক্ষা মানুষকে মানুষ হওয়ার চেতনা জাগায়। মানবিকতার শিক্ষা দেয়। ঐতিহ্য , বর্তমান, বাস্তবতা , পরিকল্পিত ভবিষ্যত, আর সভ্যতার নিরিখে তার অবস্থান জানতে শেখায়।
শিক্ষা অন্ধধারনা, গোড়ামি মুক্ত মানুষ তৈরি করে যারা যৌক্তিকতা বুঝে এবং ভুল হলে ধারনা সংশোধন করে। অন্তত তাদের আন্তরিক প্রয়াস থাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। শিক্ষার উদ্দেশ্য এখন উপার্জনমুখী। আর শিক্ষা প্রচুর ঠক তৈরী করছে। এই সংক্ষিপ্ত পরিসরেই নিজেক সীমিত রাখবো। কিভাবে ঠক তৈরী হচ্ছে আর তারা কিভাবে সমাজে ছড়িয়ে পরছে।
প্রায় সবাই রাস্তার পাশে স্বপ্নে পাওয়া ওষুধ বেচতে দেখেছেন। বিশ্বাসে তাদের ওষুধ কিনে অনেকেই। আমি প্রথমে এদের দেখি স্কুলে যাওয়ার পথে। তাদের সস্তা ম্যাজিক বুঝতে পারার পর আগ্রহ কমে গেছে। কিন্তু তাদের আকর্ষনী বাচনভঙ্গী অনেকেই রপ্ত করে ফেলেছে।
কম্পিউটার ম্যানিয়া শুরু হলো এবং জনগন বিশ্বাস করলো কম্পিউটার নির্ভুল। বাংলাদেশের সবাই কম্পিউটার দেবতার পুজা শুরু করলো। সবকিছুই কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে। রোগ নির্নয় শিশুর শিক্ষার অগ্রগতি মিনারেল ওয়াটার তৈরী। শুধুমাত্র মুদির দোকানে কম্পিউটারের নির্ভুল মাপে ক্রয় বিক্রয় হয় নি। আর হস্তরেখাবিদরা কম্পিউটারে নিভর্ুল ভবিষ্যত বানী দেন নি।
এটা শঠতার একটা উদাহরন। কিভাবে প্রচারনা দিয়ে অসম্ভব সব বিশ্বাস দেওয়া যায়। কম্পিউটারের আউটপুট কি হবে তা নির্ভর করে যে কম্পিউটারে ডাটা ইনপুট দিচ্ছে আর যেই প্রোগাম লিখা হয়েছে তার উপরে। কম্পিউটটার দেবতার তেমন স্বাধীনতা নেই নিভর্ুল থাকার। ওটা শেষ পর্যন্ত একটা মানুষনির্ভর যন্ত্র। এর প্রমান এস এসসির ফলাফল বিপর্যয়।
পরবতী উদাহরন বিভিন্ন শ্রেনীর তথ্যজালিয়াত। এদের একটা অংশ শেয়ারবাজারে গিয়ে এমন তুর্কি নাচন দিলো গ্রামবাংলার সবাই সহায় সম্বল বেচে মতিঝিলে বসতি গড়লো। সামান্য একটা কাগজের টুকরা নিলাম করে এমন অবস্থানে নিয়ে গেল অবশেষে প্রত্যাশিত ধ্বসে কিছু মানুষ নিঃস্ব হলো। দেশে এখন অর্থনীতিবিদদের মন্তব্য প্রথম পাতায় ছাপানোর রেওয়াজ তখন জন্ম নেয় নি, তাই তারা জ্ঞান নিয়ে চুপচাপ বসে বসে দেখলেন। সবশেষে মন্তব্য করলেন এমন আশংকা ছিলোই। কিন্তু মিডিয়া সংশ্লিষ্ট সবাই এই অপরাধটা করর পরও ক্ষমা প্রার্থনা করলো না। অন্তত অর্ধেক অপরাধ তাদের। বাকি অর্ধেক তথ্য জালিয়াতদের।
তবে সবচেয়ে ভয়াবহ কুশিক্ষা ধর্মব্যবসায়ীদের বিজ্ঞানের ব্যাবহার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় শমসের আলী যার মুখ বাংলাদেশে অনেক পরিচিত সবচেয়ে বড় ভন্ড। আমি প্রায় দশবছর যাবৎ দেখছি রোজার মাসের প্রতি সন্ধ্যায় বিজ্ঞানের অপব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হচ্ছে টিভি পর্দায়। তার সুললিত শব্দচয়নে অনেক বিজ্ঞান কম জানা মানুষ বিভ্রান্ত। বিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বিজ্ঞানের সত্য এটাকে কিভাবে প্রচারনার সাহায্যে ধ্বংস করা সম্ভব তার উদাহরন তাকে বৈজ্ঞানিক গুরুর আসনে বসানো অন্ধ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। তারা তার মন্তব্য ব্যাখ্যা ব্যবহার করছে প্রামান্য হিসেবে। এতে ধর্মব্যাবসায়ীদের সুবিধা হয়েছে। তার নিজেরও পার্থিব জীবিকার একটা অংশ আসে ধর্মের বেসাতি করে।
বিজ্ঞানের বড় সুবিধা হলো এখানে যেসব তত্ত্ব উপস্থাপিত হয় তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু তার বড় সত্যতা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিদিন এটাকে প্রমাণ করা যায়। কোন অনুমান না করেই তত্ত্ব প্রমান সম্ভব। আমি অন্ধ বিশ্বাস আর বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসের পার্থক্য করি এভাবেই। একটাকে যৌক্তিক ব্যাখ্যার একটা ধাপে প্রমান করার চেষ্টা করা যায়। যদি পরীক্ষায় প্রমানিত না হয় তবে নতুন কোন তত্ত্ব আসে। শেষ পর্যন্ত যা ব্যাখ্যা করে এবং পরীক্ষাগারে প্রমানিত হয় সেটাই বৈজ্ঞানিক সত্য। ওটাকে মানার জন্যে কাউকে প্রলুব্ধ করতে হয় না। অন্ধ বিশ্বাসের সমস্যা হলো ভুল প্রমানিত হওয়ার পরও তাকে আকড়ে উন্মত্ত আচরন করে মানুষ। ধর্ম এমন এক অন্ধবিশ্বাসী মানুষের জন্ম দিয়েছে যারা নিজেদের অন্ধত্ব ছড়াতে চায়। তারা অন্ধ এটা স্বীকার না করে তাদের অন্ধবলার অপরাধে উপকারি মানুষগুলোকে হত্যা করতে চায়। কয়েকবার তারা সফল হয়েছে।
বিজ্ঞানকে তারা ধর্মের প্রমান হিসেবে আনতে চায়। ধর্মকে পরীক্ষা করার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার অভাব। ধর্মপরীক্ষা করার উপায় নেই। ধর্মে বৈজ্ঞানিক এমন তথ্য নেই যার প্রমানের উপর ধর্মের সত্যতা নির্ভর করবে। তবে বিজ্ঞানের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মবানীকে যুগউপযোগী করে তোলার চেষ্টা করছে ধর্মব্যবসায়ীরা। সহায়ক হিসেবে আছেন কিছু শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যারা গবেষনার সাথে যুক্ত না। এমনকি অনাগত ভবিষ্যতেও তারা গবেষনা করবেন এমন সম্ভবনা নেই। কোরানের পর হাদিস। হাদিসের পর এসব ভন্ড শিক্ষকের অপব্যাখ্যা। আর সর্বশেষ প্রমান্য দলিল মরিস বুকাইলি। যারা আরও আধুনিক শক চান তাদের জন্যে ভগবত গীতার নতুন সংস্করন। ওখানে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের আলোকে গীতার ব্যাখ্যা আছে। মরিস বুকাইলি আরপ উপদ্্বীপের ধর্মবানী বিশ্লেষন করেছেন।সেখানে তিনি প্রমানের চেষ্টা করেছেন আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক তথ্য আগেই ধর্মগ্রন্থে ছিলো। গীতা উপমহাদেশীয় অকুলীন ধর্ম। সেখানেও বৈজ্ঞানিক তথ্যের সপ্রমান আনাগোনা।
আমার কথা বিশ্বাস না হলে নিজে যাচাই করতে পারেন। আর যারা উপমহাদেশের আদম হাওয়ার গল্প জানতে আগ্রহী মনুসংহিতা পড়ুন। ধর্মের অপব্যাখ্যা বিশ্বাস করার আগে যাচাই করে নেন।
আমার নিরিহ কিছু জিজ্ঞাসা ছিলো। তখন কেবল বিভিন্ন পরস্পর বিরোধী তত্ত্ব পড়ছি। পাশের বাড়ীর ধর্মজ্ঞানী মামাকে বললাম। মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। কিছুক্ষন বুঝানোর পর বললেন আমি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না তোমাকে আলেমের কাছে নিয়ে যাব। গেলাম। মামা যতটুকু ব্যাখ্যা দিয়েছিল ততটুকু বললেন এর পর প্রশ্ন করলে তার উত্তর তোমার ভিতরে শয়তান ঢুকছে। ওটাই তোমাকে দিয়ে এসব বলাচ্ছে। বেতেরের নামাজ পড়ো। যাই হোক ধর্ম বুঝে পালনের সুযোগ নেই। কোরানের বানী- তোমরা আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারো।যাচাই করতে পারে অবশেষে আমার সৃষ্টি েদখে তুমি আমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করবে। জ্ঞানের তাগিদ হাদিসে। আর জ্ঞান মানেই প্রশ্নের উত্তর খুজা। এসব ধর্মান্ধদের বুঝিয়ে লাভ নেই। ওদের জ্ঞানচর্চা নিজস্ব কল্পনায় সংগৃহীত তথ্যকে বিশ্বাসের সাথে মিলিয়ে নেওয়া।
আমার মতামতের উত্তরে আমি প্রায় 40 লাইন লিখেছি তার শেষ 3 লাইনের সমাজবৈজ্ঞানিক এবং ঐতিহাসিক প্রমান দিতে চেয়েছেন ওয়ালী এবং ভুত। অবশেষে ভুত আমাকে জ্ঞান না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওয়ালী ভাই মরগ্যানের আদিম সমাজ বইএর তথ্য দিয়েছেন। তার বিশ্বাস নতুন প্রস্তর যুগে আদমের অস্তিত্ব ছিলো। স্বেচ্ছা অন্ধকে জ্ঞানের আর যুক্তির বানী বর্ষনে লাভ নেই। মুসার জন্ম নব্য প্রস্তর যুগ বরফে ঢাকা প্রহর শেষে নতুন সভ্যতার শুরুর 6500 বছর পরে। প্রায় 2100 বছর আগেও সহোদর বিবাহ প্রচলিত ছিলো। এর পর ইসার সময়। তার পরও এই প্রথা চালু ছিলো। অজ্ঞানতা দোষের নয় দোষের হলো অজ্ঞানতাকে স্বীকার না করা। আর আপনি ওয়ালি ভাই ধর্মের সপক্ষ্যে সমাজবিজ্ঞানীর তথ্য ব্যবহার করেন অথচ সমাজবিজ্ঞানীদের অভিমত ধর্ম মানুষের সৃষ্টি এটা বিশ্বাস করেন না। আপনার ধর্মকে সাপোর্ট করা তথ্য ব্যাবহার করে সমাজবিজ্ঞানের অপব্যবহার করছেন। নিজেকে যুক্তি বিশ্বাসের প্রতিপালনকারী বললেও অযথা মনুষ্যসৃষ্ট ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন। আর আমি সত্যি সত্যি আগ্রহী আপনার সেনসরবিহীন ব্যাখ্যা জানার জন্যে।। আপনি কতটুকু কুশিক্ষিত তার একটা পরিমাপ হবে। তবে অনুরোধ একটাই কারো উক্তি চয়ন করলে নিশ্চিত হয়ে বলবেন যে সে সেটাই বলতে চেয়েছিলো। কোন পুস্তকের কথা বললে নামসহ বলবেন যেন যাচাই করা যায়।
আমরা ধর্মপালন করি। জ্ঞানীর জ্ঞানচর্চা মুর্খের হাজার রাতের ইবাদতের চেয়ে ভালো। আসুন কোরান হাদিসের আলোকে জীবনগড়ি জ্ঞানচর্চা করি।
অবশ্য এটা নিয়ে লেখার অনুপ্রেরনা ওয়ালী এবং ভুতের। তাদের অন্ধত্ব দুরীকরন প্রচেষ্টা নিয়ে লাভ নেই। এরা বিজ্ঞানের ব্যাবহার করে ব্যাবসা জমানোর জন্যে এবং যখন যুক্তিতে হারার অবস্থা তখন যাও খেলবো না বলে উলটা রওনা হয়।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন