প্রায় তিন যুগ এবং দুই প্রজন্ম পার হয়ে গেছে '71এর পর। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত হয়েছেন, যারা যুদ্ধের বিভীষিকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শিকার তাদের সম্মানিত অবস্থান যারা এই স্বাধীন ভুখন্ডে মর্যাদার সাথে বসবাস করছেন ও সুন্দর আগামির স্বপ্ন দেখছেন সবার চেতনায়।
মুক্তিযুদ্ধ একটা আদর্শ নিয়ে শুরু হয়েছিলো, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম তাদের হতাশা, লজ্জা এটাই যে আমাদের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং অনাগত সব রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেই আদর্শ ভুলে ক্ষমতালিপ্সু। আমি বেশ অনেক দিন ধরে শুনছি কথাটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- কি সেই চেতনা তা পরিস্কার কেউ বলছে না। একটা ভালো বিজ্ঞাপনের শব্দ। সবাই নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত দাবী করছেন। কিন্তু চেতনাটা তারা উপলব্ধি করেন এ বিষয়ে আমার যথেষ্ট সংশয়। আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তাদের চেতনায় গলদ আছে এমন দাবি করাটাও অসংগত হবে না। সমস্যাটা মনে হয় দুরদৃষ্টির অভাব। স্বল্পকালিন ফায়দার লোভে তারা ভবিষ্যতকে বিপদজনক করছেন।
আর মুক্তিযুদ্ধের প্রধান একটা লক্ষ্য ছিলো ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের সংস্কৃতির লালন করবে এমন একটা ভুখন্ড গড়ে তোলা। মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হবে না, ধর্মপরিচয় গোত্র সবার উধের্্ব তারা বাংলাদেশের নাগরিক এবং তারা রাষ্ট্রের কাছে সমান মর্যাদা পাবেন। কিন্তু যুদ্ধপরবর্তী সময়ে প্রথমদিকে উর্দুভাষী জনগনের উপর নিপীড়ন,এর পর হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর আক্রমন এবং খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বিদের উপর আক্রমন। রাষ্ট্র এদের অধিকার রক্ষায় কোন উদ্যোগ নেয় নি। যদি 40 লক্ষ মুক্তি যোদ্ধা থাকে তার 5 লক্ষ ছিলো সংখ্যালঘু গোত্রের। তারা নিজভূমিতে পরবাসী জীবনযাপন করছে। অতপর দেশ ত্যাগ করছে। এবং এরপর রাষ্ট্র তাদের পালটা আক্রমন করছে। যদি নিরাপত্তা না থাকে কিভাবে জীবনযাপন করবে মানুষ।
মানুষের ক্রমাগত নিরাপত্তাহীনতা তাদের মানসিক স্থিরতা নষ্ট করে ফেলেছে। হঠাৎ 90 এর পর বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের প্রবল প্রতিপত্তি। বি এন পি ,আওয়ামি লীগ ,জামায়াত ,জাতিয় পার্টি কোথায় সন্ত্রসী নেই। এদের সরাসরি শিকার সাধারন মানুষ। এর সাথে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। রাষ্ট্রশোধন করতে গেলে, মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে এমন বক্তব্য দিলে সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ। পুলিশ নির্যাতন। অর্থ্যাৎ যারা সরকার এবং যারা প্রশাসনের সাথে যুক্ত তারা ভুল করলে, অন্যায় করলে তার প্রতিবাদ করা যাবে না। গনতান্ত্রিক দেশে বিরোধী পক্ষ থাকে যারা সরকারের দূর্নীতির বিরোধিতা করবে, জনগনের অধিকার রক্ষায় সংগঘিত আন্দোলন করবে। কিন্তু বাংলাদেশের হাতে গোনা 5 থেকে 6 জনরাজনৈতিক নেতা এমন যারা দলের এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে গিয়ে জনগনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। বাকি সবাই একটা সংঘবদ্ধ অপরাধীবলয় গড়ে তুলেছেন, যেখানে বাংলাদেশের 14 কোটি মানুষের সম্পৃক্ততা নেই। হয়তো 5 লক্ষ মানুষ কোন না কোন ভাবে 330 জন সাংসদ এবং 64 জেলার প্রভাবশালি নেতৃত্বের সাথে বিভিন্ন ভাবে সংশ্লিষ্ট। মানুষের অসহায়তা বাড়লে সমাজে নৈরাজ্য বাড়লে যা হয় তাই ঘটতেছে এখন। মানুষ অতিরিক্ত ধর্মবিশ্বাসী। কোথাও আশ্রয় না পেয়ে মসজিদ মন্দির গির্জায় শরন চাচ্ছে। এমন ভয়াবহ অবস্থা কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘরে না ফিরলে বিভৎস একসার ভয় পরিবারের সবাইকে অাঁকড়ে ধরে। সড়ক দুর্ঘটনা এদের মধ্যে সবচেয়ে নিরীহ, অপহরন, খুন, বোমায় ছিন্নভিন্ন এমন সব কল্পনার শুরু। এই অবস্থায় কোন রাজনৈতিক সমাধান না পেয়ে মানুষ তার জান মালের নিরাপত্তার ভার ছেড়েছে সৃষ্টিকর্তার জিম্মায়। ধর্মবিশ্বাসি মানুষের সাথে ধর্মান্ধ মানুষ বাড়ছে। এখন আগের যেকোনে া সময়ের চেয়ে বেশী লোক ধর্মীয় উন্মাদনায় ভুগছে। এটা মানুষের ধর্মচেতনার উন্মেষ নয় এটা আমাদের রাষ্ট্রিয় ব্যার্থতার প্রকাশ।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন