হুমায়ুন আজাদ

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/০২/২০০৬ - ১০:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান নিয়ে সব সময় সরব একজন মানুষ, তাঁর লেখা আমার কখনই মহার্ঘ কিছু মনে হয় নি, তবে সাধারন একজন।
তার সাথে ব্যাক্তিগত পরিচয় ছিলো না কখনও। আমার কাছের এক বন্ধু তার ভক্তশ্রনীভুক্ত ছিলো এবং তার মতে হুমায়ুন আজাদকে ছুঁয়ে দেওয়াও পুণ্য। আমি তেমনটা বিশ্বাস করি নি তাই তেমন করে পুণ্য অর্জন করা হয় নি।
আমি পাঠক হিসেবে তার মূল্যায়ন করার একটা ক্ষুদ্্র প্রচেষ্টা করব, আশা করি তার অগনিত ভক্ত এটাকে আমার নিজস্ব অনুভব বলে ভাববেন।

আমি তার লেখার সাথে পরিচিত হই তার নিজের েশ্রষ্ঠ কাব্য সংগ্রহ পড়ে। তার সম্পাদিত বাংলাভাষার আধুনিক কবিতাও পড়ে ফেলি, নিষিদ্ধ বিধায় কৈশোরের আবেগে পড়ে ফেলি নারী। এবং এর পর তার রচিত উপন্যাসগুলো। অন্তত 2001 পর্যন্ত নিয়মিত পাঠক ছিলাম, সে সময় পর্যন্ত প্রকাশিত উপন্যাস ও কিছু কবিতা পড়েছি।
প্রবন্ধের তেমন অনুরাগি না বিধায় তার লেখা প্রবন্ধ পরি নি। শিশু কিশোর শ্রেনীভুক্ত লেখা পড়ে আমার তার লেখা পড়ার যবনিকাপাত হয়ে যায়।
কেউ যদি 100 কবিতা লিখে ফেলে এবং আন্তরিক হয় তবে সে 100 থেকে 1টা ভালো কবিতা সাহিত্যে যোগ হবেই। হুমায়ুন আজাদের এমন হয়তো 10টা কবিতা আছে যা আসলেই কাব্য বিচারে ভালো। এ মুহুর্তে হাতের কাছে কোনো কাব্য গ্রন্থ নেই বিধায় আমার তার প্রিয় কাবিতার উদ্ধৃতি দিতে সমস্যা হবে।
লিলিয়ান নামের এক চরিত্র নিয়ে তার একটা কবিতা আছে, বেশ স্বাদু।
আমার মূল আপত্তি তার লেখা উপন্যাস নিয়ে। তার লেখা উপন্যাস ,তার বিচারে বাংলাসাহিত্যে তার উজ্জল অবদান, আমার মত একেবারেই ভিন্ন। আমার মনে হয় তার লেখার প্রধান সমস্যা অনুমেয়তা। যে কেউ উপন্যাসের শেষার্ধে এসে বুঝে ফেলতে পারে ঘটনার চরিত্রগুলোর অভিমুখ কোথায়। তাদের পরিসমাপ্তি কি হবে? এবং সেই স্থির পরিনতি দেখতে কষ্ট করে পাতা উলটে শেষ পাতায় গিয়ে নিশ্চিত হওয়া আসলেই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সে সমাপ্তি মেনে নিলো কিনা।
দুঃখজনক সত্য আমার এমন অনুভুতই হয়েছে কয়েকটা উপন্যাস পড়ে। 56000 বর্গমাইল, তার এক ধর্মপ্রচারক কে নিয়ে লেখা উপন্যাস, এক সচিবকে নিয়ে লেখা উপন্যাস এসব পড়ে আমি আসলে হাল ছেড়ে দিয়েছই।
সম্ভবত প্লট ভাগ করে লেখা হয়েছে। নিয়তি নির্ধারন করেই উপন্যাসের সূচনা। আর সমস্ত উপন্যাস জুড়ে চরিত্রকে টেনে টেনে তার নিয়তিতে নিয়ে যাওয়া। এটা আমার কাছে ভালো উপন্যাসিকের কাজ মনে হয় না। হয়তও কারো দ্্বিমত থাকতে পারে আমার পর্যবেক্ষনের উপর। হয়তো এমন ভাবে লিখতেন না হুমায়ুন আজাদ, হয়তো তার লেখার ভেতরে অবশ্যই একটা বানী থাকতে হবে এমন কল্পনা থেকেই তার উপন্যাসের অধঃপতন শুরু। হয়তও তার ব্যাক্তিগত অসুয়া বর্তমান জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের প্রতি তাকে ভিন্ন কিছু করার আগ্রহ দিয়েছে। তবে অনেকাংশে ব্যার্থ সে চেষ্টা।
উপন্যাসিক হিসেবে হুমায়ুন আজাদের একমাত্র অবদান হলো তার চরিত্রগুলোর স্বাভাবিকতা। তার চরিত্রগুলো নিসপ্রান বাঙালি মানুষ, দোষ, গুন সব মিলিয়ে একেবারে সাধারন মানুষ, এি সাধারন মানুষদের উপন্যাসে নিয়ে আসার কৃতিত্ব একমাত্র তার উপন্যাসের ভালো দিক।

আমার জীবনের ক্ষুদ্্র এক ইচ্ছা ছিলো। কোনো এক বই মেলায় অনন্যার সামনে গিয়ে হুমায়ুন আহমেদ এর বইয়ে তার অটোগ্রাফ নিবো। অনেক বার আমি হুমায়ুন আজাদের সামনে এমন নিষ্পাপ বাসনা নিয়ে দাড়িয়েছি। শেষপর্যন্ত তা করা হয়ে উঠে নি, বন্ধুদের অনেক উৎসাহ, অনুপ্রেরনা এবং প্ররোচনায় পরেও সে কাজটা করা হয়ে উঠে নি আমার। বই মেলার সাথে অঙ্গাগি জড়িত একটা চরিত্র হুমায়ুন আজাদ কে খুন করার চেষ্টা হলো বই মেলা থেকে ফেরার পথে। তার পরিনতিতে অশেষে জার্মানিতে তার মৃতু্য হলো। এখনও তার হত্যার বিচার হয় নি। এমন কি যে উগ্রবাদী দলটা মৃতু্য দাবি করতে পারে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নেওয়া হয় নি।
বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা এটা নয়, শামসুর রেহমানের বাসায় গিয়ে তাকে আক্রমনের সাহস দেখানো দলের লোকেরাই এ কাজ করেছে,
লেখকসমিতিতে অনেক রাজনীতি আমার এমনই মনে হয়, এরা বুদ্ধিজীবি পর্যায়ে পৌছে কেমন জেনো স্বার্থপর নিজের আখের গোছানো টাইপ ঘৃন্য জীব হয়ে গেছে। নিজের ঝোলায় গুড় টানার নিত্য নতুন কৌশল উদ্ভাবনে এরা যত কুশলী তেমন কূশলী নয় সমাজসংস্কারের জন্য। যাই হোক এটা আমাদের জাতীয় লজ্জা যে এখানে একজন সাহিত্যিক কে তার বাকস্বাধীনতার জন্য খুন হতে হয়, রাষ্ট্র তার নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থর্ হয়েছে , আইন শৃংখলা বলতে তেমন স্পষ্ট কিছু চোখে পড়ছে না, কড়া শাসনের নামে র্যাব দিয়ে নির্বিচার মানুষ খুন করা কোনো যোগ্য শাসনের পরিচায়ক হতে পারে না। এসব অক্ষমতা নিয়ে তার 2য় মৃত্যু দিবস পার হবে, 3য়, 4র্থ সময় গরাবে, প্রতই বছর হয়তো পেপারে তার ছেলের লেখা স্মৃতিকথা ছাপানো হবে, এসব গতানুগতইক ভন্ডামি ছেড়ে কেউ যদি আন্তরিক ভাবে তার হত্যার বিচার করতো আমার ভালো লাগতো।

আমি তার লেখার ভক্ত না হতে পারি কিন্তু তার হত্যার বিচারের দাবিটাতে আমিশরিক হতে পারি। এটা একজন অগ্রজের প্রতি অনুজের দেওয়া শ্রদ্ধা।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।