এর আগে আমি বলেছিলাম শিল্পিরা সচারাচর সাম্যবাদি। ধর্মতন্ত্র এবং পুঁজিবাদের বিরোধী। কারনটা যারা শিক্ষিত তারা নিজের মতো উপলব্ধি করে ফেলে। আমি আমার একটা ব্যাখ্যা দাড়া করানোর চেষ্টা করছি মাত্র।
যারা কল্পবিজ্ঞানের বই পড়ে তারা এটা লক্ষ্য করে থাকবে যে সেখানে রাষ্ট্রিয় সীমারেখা অনুপস্থিত। ভয়ংকর তবে সাম্ভাব্য একটা ভবিষ্যত। তার সামান্য নজীর আমরা দেখছি প্রাত্য হিকতায়।
শিল্পবিপ্লবের পর কৃষিক্ষেত্র অভেলিত এমন কেউ বলবে না তবে কোনো কোনো দেশ কৃষিনির্ভরতা কটিয়ে যন্ত্রনির্ভর উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। যান্ত্রিক উৎকর্ষতার দিকে গবেষনার ক্ষেত্র বাড়ছে, এবং বাংলাদেশের মেধাবি ছাত্ররা সেসব জায়গায় প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, তারা নিত্যনতুন উৎপাদন ব্যাবস্থার সৃষ্টি করছে বা তাকে আরও উৎপাদনশীল এবং উন্নত করতে ভুমিকা রাখছে। ফলে আমরা অনেক মেধাবি মুখ পাচ্ছি , এটা অবশ্যই গর্বের বিষয়। তবে এর সাথে উপজাত হিসেবে একটা ভবিষ্যত আছে, যেটা চিন্তা করলে আমার ভয়ংকর লাগে।
যান্ত্রিক উৎপাদন এবং উৎকর্ষতা বৃদ্ধি মানে একই সময়ে ভালো মানের এবং বেশী পন্য তৈরির ক্ষমতা, কিন্তু এই নতুন উৎপাদিত পন্যের বাজার তৈরি করতে হবে , একাজে শায়ক বিপননের লোকজন, তারা চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন তৈরি করছে, পন্যের কাটতি বাড়ছে, উন্নয়ন আর উন্নয়ন, উন্নয়নের জোয়ারে মধ্যবিত্ত এবং পুজিপতি ফুলে ফেঁপে উঠছে। কিন্তু এটা একটা বৈশ্বিক চিত্র শুধু বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয় মোটেও। তাই অর্থনৈতইক উপনেবিশকতার উদ্ভব হচ্ছে, আমরা ভারতের পন্যে বাজার সয়লাব, ভারত খারাপ এসব বুলি আউরে যাচ্ছি কিন্তু এটা অর্থনীতির ফলাফল। ভারত যদি পন্য বাজার দখল না করে করবে অন্য দেশের কোম্পানি, জাপানের গাড়ি, চীনের সেলাই মেশিন, জাপানের বিদু্যতচালিত গেরস্থালির উপকরন, এসবের বাজার তৈরি হবে, হয়ে গেছে,
এর পরের চিত্র কি হবে? এসব কোম্পানিগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষমতা বাড়বে ধীরে ধীরে, একসময় এদের মুলধন দেশের বাজেটের চেয়ে বেশী হবে, এরা বাজেটে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখবে, তাই দেশের কর্নাধারদের এদের কথা শুনতে হবে, দেশের নীতিকে সামান্য অদলবদল করে তাদের চাহিদা মফিক নীতি দিতে হবে। দেশগুলো আর সার্বভৌম থাকবে না, অর্থনীতির যাতাকলে পড়ে তাদের স্বাধীন সত্তা বিসর্জন দিতে হবে, এটা খুবই সাম্ভাব্য একটা ভবিষ্যত, যে কেউ অল্প হিসেব কষে এ সমাধানে পৌছে যাবে, তাকে অর্থনীতিতে বিজ্ঞ হতে হবে এমন প্রয়োজন নেই।
এটাকে সামান্য বাড়ালে যা হবে সেটা এমন যে, বিশ্বজুড়ে বিশ্বয়নের প্রতিক্রিয়ায় বড় বড় বহুদেশিক কোম্পানিগুলো পরস্পর মিলে যাচ্ছে, এরা একটা জোট তৈরি করবে, এদের জোট শক্তিশালি হবে, এবং একটা সময় বিশ্বের সবগুলো দেশের অর্থনীতিতে এদের কথাই আইনে পরিনত হবে। এবং এর পরবর্তি ধাপে এদের একটা সংগঠন বিশ্ব শাসন করবে। বিজ্ঞানের ব্যাবহার এরা করবে নিজের পুঁজি বাড়ানোর জন্য। তাই অবশেষে বিশুদ্ধ বিজ্ঞান সাধনা হবে না, পন্যমুখী বিজ্ঞানসাধনা বাড়বে। ফলে দেশের যাবতীয় প্রকৌশলের ছাত্ররা উৎফুল্ল হয়ে যেতে পারে।
এখানে শিল্পি বা শিল্প আসলো কিভাবে?
শিল্পমূল্য অর্থনীতিতে নেই, অর্থনীতিতে শিল্প চিরুনি কলম টয়লেট পেপারের মতোই একটা পন্য, ভালো শিল্পি বলে কিছু নেই, আছে বাজারে বিকানো শিল্পি, জনপ্রিয় শিল্পি আছে, হালের ফারুকী- আনিসুল হক জুটি এমন একটা পন্য, যাদের লেখা নাটকের বাজরমুল্য বেশি। তাই এদের পিছনে বিনিয়োগ হচ্ছে প্রচুর। সাহিত্য ক্ষেত্রে একজন হুমায়ুন আহমেদের প্রতিদন্ডি কেউ নেই। হালের বাংলা ছবির রগরগে দৃশ্য এটাও অর্থনীতির মারপঁ্যাচ। শিল্পমান সম্পন্ন ছবির বাজার খারাপ তাই সেখানে বিনিয়োগ কম। সত্যকারের শিল্পি এ প্রথার বিরুদ্ধে দাড়াবে বলেই পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে শিল্পির অবস্থান।
আর ধর্মউন্মাদনার বিরুদ্ধে শিল্পি দাঁড়াবে কারন তার সৃষ্টির ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। ইরাকের কিছু কিছু শিল্পি ফিগারেটিভ আর্ট করছে, তবে ইরানের এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক শিল্পির চিত্রকর্ম ক্যালিগ্রাফি। অক্ষররাঙ্গানো শিল্প হিসেবে খারাপ এমন দাবি করছই না, তবে দেশজুড়ে সবাি বিভিন্ন ধাঁচে বর্নমালা লিখে যাচ্ছে এমনটা শিল্প হতে পারে না। তেমনি দেশজুড়ে সবাই খালি গলায় গান গাইছে এমনটাও আমি কল্পনা করতে পারি না। এখানেই শিল্পের সাথে পুঁজিবাদ আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরোধ।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন