ডারউইনের বিবর্তনবাদ একটা ব্যাখ্যা পৃথিবীর জীববৈচিত্রের। কিন্তু বেশ বিতর্কিত একটা বিষয় এটা। ইশ্বরের অভিপ্রায় ছাড়া সয়ম্ভু জীবন এটা মেনে নিতে ধর্মবিশ্বাসিদের বেশ কষ্ট লাগে।
ইশ্বরবিশ্বাস একটা সান্তনার প্রলেপ হিসেবে কাজ করে সবসময়, যখন মানুষ হতাশাগ্রস্থ এবং বিষন্ন তখনও তার আস্থা ও আশার আধার হয়ে থাকে ইশ্বর। ডারউইনের মতবাদ নিয়ে বিতর্ক অনেকটা আস্থার আধার বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা থেকেও শুরু হয়।
কোথাও নিজেকে স্থাপন করে রাখা, নিজের ভিত্তিটাকে ধরে রাখা, জীবনের একটা আদর্শ খুজে পাওয়া, জীবন যাপনে শৃংখলা আর শান্তি খুঁজে পাওয়া ধর্ম মানুষকে অনেক কিছুই দেয়, ইশ্বরচেতনা সেখানে ইশ্বরে স্বয়ংসম্পুর্নতার নিদর্শন হিসেবে তাকে সকল জীব ওজড়ের স্রষ্টা এবং প্রতিপালক হিসেবে মানুষের চেতনায় প্রতিস্থাপিত করেছে। ধর্ম অনেকটা ধারকের কাজ করে, মানুষ যেখানে নিজেকে সমর্পন করে নিশ্চন্তে বসবাস করে প্রতিকূলতার মধ্যে, ডারউইনের বিবর্তনবাদ এই ধারনার উপরে আঘাত,
ইশ্বর যখন স্বয়ং জীবের বা জড়ের স্রষ্টা নন তখন সেই বিকলাঙ্গ ইশ্বরের উপর ভক্তি কমে যায়, তাই ধার্মিকেরা সব সময় ডারউইনের মতবাদের বিরোধি,
বিবর্তন বাদ সম্পুর্ন একটা বৈজ্ঞানিক চিন্তন, ধর্মের মতোই তবে সব সময় ধর্মের সমান্তরাল নয়, যে কোনো প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এ কথা সত্য।
ধর্ম সৃষ্টিতত্ত্ব ব্যাখ্যা করে, কিভাবে মাহাবিশ্ব তৈরি হলো, কিভাবে এই পৃথিবিতে জীবনের সৃষ্টি হলো, জীবনের লক্ষ্য কি? সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে চিন্তাক্ষম মানুষের জীবনযাপনের আদর্শ কি হওয়া উচিত? মানুষ কেনো নৈরাজ্যিক না হয়ে আদর্শ নাগরিক হবে, কেনো মানুষ আইনানুগ হবে, কেনো মানুষ নীতিবোধকে উচ্চে তুলে ধরবে, সবই মানুষ সম্পর্কিত বয়ান।
প্রাকৃতিক বিজ্ঞানও একই কাজ করে, সেও তার যৌক্তিক সীমার মধ্যে থেকে প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে, কিছু স্বতসিদ্ধ ধারনা ধরে নিয়ে তার এ অগ্রযাত্রা, বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধের জায়গা এখানেই, বিজ্ঞান সব সময় ইশ্বরের অবস্থানটাকেও প্রশ্ন করে,
আমরা অনেক প্রাকৃতিক ঘটনার কার্যকরণ জানি, কেনো আগ্নেয়গিড়ির বিস্ফোরিত হয়, কেনো বন্যা হয়, কেনো খরা বা অনাবৃষ্টি হয়, কিভাবে মরুকরন হয়ে যায়, সব কিছুর গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা দিচ্ছে বিজ্ঞান, এমন কি কিছু কিছু ক্ষত্রে প্রতিকারের নিয়মও বলে দিচ্ছে,
প্রাকৃতিক বিপর্য য় এড়ানোর শিক্ষা, প্রকৃতিকে জয় করার ক্ষমতা বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে, তবে অনেক ধর্মবিশ্বাসি এ আশায় শান্তি পান যেএটাও ইশ্বরের অভিপ্রায় তিনি তার সৃষ্ট মানুষকে জড় এবং অন্য সব হীন জীবের উপরে কতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি আসলে মানুষের ক্রমউত্থানের পেছনে সহৃদয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।
ডারউইনের মতবাদ সম্পুর্ন জীবনের সৃষ্টিপ্রক্রিয়ায় ইশ্বরকেও প্রতিস্থাপিত করে দিয়েছে। এটার জন্য অনেক জায়গায় ডারউইনের মতবাদ নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে, আমেরিকার অনেক ধর্মপ্রধান জায়গায় লোকজন রীতিমতও আদালতের চৌকাঠে মাথা ঠুকছেন, পাঠ্যপুস্তকে ডারউইনিজম পড়ানো যাবে না, কিংবা যদি পড়াতেই হয় তবে এর সাথে সহায়ক হিসেবে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন মতবাদ পড়াতে হবে,
প্রথমে ডারউইনিজম বা বিবর্তন বাদ সম্পর্কে দুই একটা কথা বলে নেওয়া ভালো। এটার মূল বক্তব্য খুবই সাধারন, জীববৈচিত্র আমরা যা দেখি তা আসলে প্রাকৃতিক প্রভাবে এমন হয়েছে, জীবন একধাপ থেকে অন্য ধাপে গিয়েছে ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে।
এক কোষী প্রানী থেকে ধীরে ধীরে সব প্রানীর উৎপত্তি হয়েছে, এটা মেনে নেওয়া একটু কষ্টের , আমাদের সবার সূচনাই ছিলো কিছু ভাইরাস? কিংবা ব্যাকটেরিয়া, আমরা সবাই জীবানু বা বীজানুর বংশধর, ? তাহলে রোগ হলে আর ডাক্তার হাসপাতল কেনো ওটা তো আমাদের অতি আদিম পুর্বপুরুষের স্নেহ। এমন যুক্তি দেওয়াটা ঠিক সাযুয্য পুর্ন না,
ডারউইনের মতবাদের সপক্ষে কোনো স্পষ্ট প্রমান আছে,
জীবাশ্মজনিত প্রমান নিয়ে যারা নাক উচুঁ ভাব দেখান তাদের জন্য দুঃসংবাদ প্রকৃতি যে জীবের বিকাশের উপর ভুমিকা রাখে তার প্রমান পাওয়া গেছে।
কিছুটা বিকল্প প্রমান হলো, জীবের আচরন এবং গঠনের উপর খাদ্যের প্রতিক্রিয়া, খাদয়াভ্যাস বদলের ফলে জাপানের নতুন প্রজন্মের মানুষের গড় উচ্চতা বেড়েছে 3 থেকে 4 ইঞ্চি, অর্থাৎ আমরা নিজেরা যদি খাদয়াভ্যাস পরিবর্তন করি তাহলে আমাদের দৈহিক গঠন বদলাবে, এটাও একটা কদুদ্্র বিবর্তন, যদিও প্রজাতি বদলের মতও ভয়ানক কিছু না এটা তবে এটা বিবর্তন এবং প্রাকৃতিক উপযোগের গ্রহনের সাথে এ বিবর্তন সম্পর্কিত।
বিকল্প প্রমান হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরে একটা দ্্বীপ ছিলো, উষর , সেখানে খাদ্যসল্পতা ছিলো, বৈশ্বিক তাপমাত্রা এবং পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে গত কয়েক বছর সেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমান বেড়েছে, ফলে বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মেছে এবং সেখানে খাদ্যাধিক্য দেখা দেয়, সেখানে বসবাসড়ট প্রতিটা জীবের শাররিকগঠন বদলে গেছে এ পরিবর্তনে, বিজ্ঞানিরা সেখানে বসে আছেন, পর্যবেক্ষন করছেন এই বিবর্তন, হয়তো পৃথিবীর আবহাওয়ার পড়িবর্তন ঘটবে আবার, সেখানে আবার খাদয় সঙ্কট দেখা দিবে, তখন আবার সেখানে জীবগুলোর খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে অথবা নিজেদের বদলাতে হবে প্রকৃতির সাথে। যাই ঘটুক না কেনো এটা আসলে ডারউইনের মতবাদকেই প্রমান করবে।
অন্য যেই প্রমানটা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি অথচ অনুধাবন করছি না তা হলো আমাদের চারপাশের ুদ্ভিদজগত। বিবর্তনের সবচেয়ে সরল প্রভাব দেখতে হলে উদ্ভিদের গঠনপরিবর্তন দেখলেই চলে। উদ্ভিদের জীবনে প্রকৃতির প্রভাবের একটা নমুনা বিভিন্ন ভৌগলিক পরিমন্ডলে একই উদ্ভিদের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। তাদের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটছে, এমন কি বাংলাদেশের প্রিয় খাদ্য ভাত, তা আসে ধান গাছ থেকে , এই ধানের বিবর্তনে বাংলাদেশের কৃষককূলের অবদান অনেক। তারা অনেকটা নিজেদের অগোচরেই ডারউইনের মতবাদকে প্রমান করেছে। ধান আদতে একধরনের ঘাস, আমাদের প্রিয় বাঁশও এক ধরনের ঘাস। ধানের মধ্যে সংকরায়নে অনেক প্রজাতির ধান উৎপাদন করেছেন আমাদের দেশের কৃষকেরা। বর্ন গন্ধ স্বাদ এমন কি বিভিন্ন প্রতিকূলতায় টিকে থাকার যোগ্যতায় তারা অনন্য। আউশ আমন, উচু ডাঙ্গার ধান, বানের পানির ধান, জলাভুমির ধান, আতপ কালজিরা, কত প্রজাতির ধান যে কৃষকেরা উৎপন্ন করে তার ইয়ত্তা নেই। এবং এখানে তাদের সৃষ্টিকূশলতাও আছে, তারা বিভিন্ন ধরনের ধানের মধ্যে সংকারয়ন ঘটিয়েছেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বিজ্ঞানী তার একটা নিবণধ পড়েই এ কথা বলছি, যদিও নাম মনে পড়ছে না,
*****হাসিমুখ ভাই আপনার ওখানের লোক আপনি হয়তো সাহায্য করতে পারবেন।****
ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বলে একটা পালটা মতবাদ দাড়া হয়েছে, যার ভাষ্য এমন, ইশ্বরের ভুমিকা মহাবিষহবসৃষ্টির সময়েই শেষ, তবে তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় এর নিয়ামকগুলোকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রন করেছেন যে তার 1200 থেকে 1500 কোটি বছর পরে পৃথিবিতে মানুষের উদ্ভব হয়েছে, এখানে পৃথিববি বলে একটা গ্রহ তৈরি হয়েছে, হকিংয়ের ভাষ্য অনেকটা এরকমই, বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ধারার লোকেদের মধ্যে কিছু কিছু লোক এ মতবাদের উপর ভিত্তি করে গবেষনা করছেন, পদার্থবিজ্ঞানের লোক জন ইশ্বরকে মহাবিশ্বছাড়া করার পর এখনসেখানে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের বাস্তবতা খুজছেন এমন না, তারা একটা বিকল্প মতবাদ দিয়েছেন যেটা এ্যানথ্রোলজিক্যাল প্রিন্সিপাল বলতে চান তারা তবে এটা এমন একটা বিশ্বস যা অস্ব ীকার করতে চাইছেন সবাই। অনেকে স্পষ্ট অমান্য করেছেন এ মতবাদ তবে হকিং এর ধারা কিছু লোক এখনও এ ধারার সমর্থক।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন