অনুরূদ্ধ হয়ে বই নিয়ে সাতকাহন
প্রথম পড়া বই সম্ভবত শিশু একাডেমি বা বাংলা একাডেমির প্রকাশিত কোনো বই যা আমি বানান করে পড়তে শেখার পর সে আনন্দে আমার বাবা উপহার দিয়েছিলো, সেই থেকে শুরু, বিভিন্ন ছোটোদের বিজ্ঞান জাতিয় বই ঢেলে আমার শৈশবের দফারফা শেষ করার পর তার সর্বশেষ উপহার ছিলো চিলড্রেন্স নলেজ গাইড বলে 6 কিং 7 খন্ডের এক বই, সেটাও অনুরোধে ঢেকি গেলার মতো শেষ করতে হয়েছিলো।
এসব জ্ঞানী জ্ঞানী বইয়ের ফাঁকে ফাঁকে নবারুন আর শিশু পত্রিকা পড়ে আউট বই পড়ার শুরু, সেটা এক সময় প্রধান কাজ হয়ে যাওয়ায় শাসন বারন চোখ রাঙ্গানো, সেবা প্রকাশিনির ঐ বেশী পড়া হতও কারন আমার এক পরিচিত মামা ছিলো গ্রাহক, আমি বছরে 2 থেকে 3 বার সে বাসায় যেতাম, দুপুরে 3 ঘন্টা পুকুরে দাপানো ছাড়া বাকি 12 ঘন্টা চোখের সামনে বই খুলে বসে থাকা, দিনে 3 /4 টা করে বই শেষ করে ব্যাগে বই ভরে বাসায় প্রত্যাবর্তন, মায়ের সুটকেস খুলে নজরূলের সিন্ধু হিন্দোলের প্রথম সংস্করন পেয়েছিলাম, আমাকে টানে নি, তবে মন কেড়েছিলো মৈমনসিংহ গীতিকা, ঠাকুর মার ঝুলি বাদ দিলে প্রথম ফ্যান্টাসি, এর সাথে বিভিন্ন বাসায় গিয়ে পড়া বইয়ের তালিকায় বন্দে আলি মিয়া, সুকুমার রায়, ফয়েজ আহমেদ, নাসিরুদ্দিন, সেসব বইয়ের ছবি থাকতো পৃষ্টা জুড়ে, হয়তো যদি ছবিগুলো মুছে দেওয়া যায় তাহলে বইটা হতো 6 /7 পাতার, সেসব পড়ে পড়ে বখে গেলাম।
এভাবেই চাহিদার সাথে যোগান মিললো না, বাবার বইয়ের তাকে হানা, বাবা ছইলেন অংকের শিক্ষক, সুতরাং তার বইয়ের র্যাকে বিভিন্ন শ্রেনীর ধাপের অংকের পষ্ঠ্য পুস্তক ছিলো, যৌবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়োগিক গনিতবিদ্যায় গবেষনা করেছিলেন বিধায় সেখানে বিমুর্ত গনিতের বইও ছিলো গোটা কয়েক। সেসবের ফাঁকে দস্যু বনহুর খুজে সেই র্যাকের আড়ালে বসেই শেষ করা,
যাই হোক এমন বই পড়ায় বিরতি এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে, তখন দিনরাত আড্ডা পেটানো ছইলো মূল কাজ, পড়াশোনা গৌন হয়ে যাওয়ায় পাঠ্যপুস্তক পড়তে হতো পরীক্ষার আগে আগে, আর এক বন্ধুর মা তার খেয়ালে লাইব্রেরি বানিয়েছিলেন, সেখান থেকে বই আনা হতো, শর্ত একটাই বই মেরে দেওয়া যাবে না, এখনও সেই লাইব্রেরির গোটা কতক বই আমার কাছে আছে, ফেরত দেওয়া হয় নি,
নিজের পঠন নিয়ে বেশী বাকবাকুম না করে পছন্দের বইয়ের তালিকা দেই
1) রুশ দেশের রূপকথা
2) গ্রিম ভাইদের রূপকথা
3) দুরবীন ( শীর্ষেন্দু)
4) যাও পাখি (শীর্ষেন্দু)
5) সেই সময় 1ম এবং 2য় খন্ড( সুনীল গাঙ্গুলি)
6) পুর্বপশ্চিম( সুনীল গাঙ্গুলি)
7) অগি্নবলাকা 1ম খন্ড, ( আবুল বাশার) প্রায় 10 বছর অপেক্ষা করেছি 2য় খন্ডের জন্য লেখক এখনো লিখেন নি, আমার কৈশোর শেষ হয়ে ছেলেপুলের বাপ হয়ে গেলাম কিন্তু 2য় খন্ড পেলাম না।
অপছন্দের বই
দর্শনের যাবতিয় বই, জীবনে একটা দর্শনের বই পড়েছি, তাও অন্য কিছু ছিলো না বলে, এবং দান্দ্বক বস্তুবাদের উপর একটা বই পড়তে হয়েছইলো কারন ওটা অনুবাদের দায়িত্ব দিয়েছইলো আমাকে, পরে আমার সময় হয় নি, তাই করি নি।
পড়ে শেষ করতে পারি নি এমন একটা উপন্যাস তিস্তা পাড়ের বৃত্তান্ত বা এরকম কোনো নামের, বড় বিরক্তিকর বই তবে পুরস্কার পেয়েছিলো।
অন্য একটা বই যা শেষ করেছি বলে মনে হচ্ছে না, বুদ্ধদেব গুহ র মাধুকরি।
এখানে বাংলা বই পড়া হয় না তেমন, শেষ চালানে এসেছিলো আবুল বাশারের কয়েকটা বই, আর নাসরিন জাহানের 2টা বই, নাসরিন জাহানের বইগুলো হয় কেউ দৃষ্টি দান করেছে কিংবা আনার পথে হারিয়ে গেছে।
এখন গুটেনবার্গ প্রজেক্ট থেকে মাংনায় ইংরেজি বই নামাচ্ছি, গোপন ইচ্ছা ছোটোবেলায় পড়া বইগুলোর মুলটা পড়বো, সেবা প্রকাশনির অনুবাদ বইগুলো খারাপ না তবে ইষৎসংক্ষেপিত, এটা বুঝেছি রবিনসনক্রুশোর মুল বইটা কিনে।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন