আমার বক্তব্য পরিস্কার করে তুলে না ধরতে পারার ব্যার্থতা আমার। একটু গুছিয়ে লিখি কেনো আমার মনে হয় না ইসলামপূর্ব যুগকে অন্ধকার যুগ বলা চলে। আমি আরব ইতিহাসের কোনো বিশেষজ্ঞ নই, তাই এখানে যে কেউ ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিতে পারেন আমি যোগার করে পড়ার চেষ্টা করবো।
আরবের মেয়েদের নিয়ে কথাটা উঠেছে, আমি আরও একটু পিছিয়ে শুরু করি, পৌত্তলিক শব্দের আভিধানিক অর্থ পুতুলপূজারি, কিন্তু এরা আসলে কারা? এরা প্রাচীন আরবের , ফেরাত টাইগ্রেস এবং মিশরিয় সভ্যতার মানুষ যারা প্রথম প্রকৃতি পুজা শুরু করেছিলো, এর পর ধাপে ধাপে তারা খোলা উপাসনালয় ছেড়ে বদ্ধ প্রাঙ্গনে উপাসনা শুরু করে। এ বিষয়ে কিছু লিখবো বলেছি আমি, তা লিখবো। এখন যা না বললেই নয় তা বলি,
এরা মূলত শ্রমজীবি মানুষ, আরবের বেদুইনদের মতো দক্ষ যোদ্ধা এরা ছিলো না, এদের তস্করদের হাতে নাজেহাল হতে হয়েছে, এবং এরা এখটা উৎসব করতো, উর্বরা উৎসব, প্রকৃতির পুজা বলা যায়, সেখানে এরা উন্মুক্ত সঙ্গম করতো, আমাদের আধুনিক মানসে একটু নোংরা লাগতে পারে যে একদল মানুষ উন্মুক্ত প্রান্তরে সঙ্গম করছে , কিন্তু এটাও একটা প্রার্থনার ধাঁচ। এখনকার হিন্দুদের মতোই এদের অনেক রকম দেবতা ছিলো, গৃহদেবতা, বানিজ্য দেবতা, যত রকম পেশা কল্পনা করা যায় সব রকমের পেশাজীবিদের দেবতা ছিলো। এরাই শিল্পি এবং শ্রমজীবি মানুষ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে আরব উপদ্্ব ীপে। এদের এক দল সে প্রথাকে অনুসরন করতো তৎকালিন মককায়। নিজের ধর্মপালন এবং সংস্কৃতি চর্চাকে যারা ঘৃন্য চোখে দেখেন তারা এ মুহুর্তে এখান থেকে ফিরে যেতে পারেন কারন আমার কথা পছন্দ হবে না আপনাদের।
যাই এর আগেই সেমেটিকরা ক্ষমতা দখল করেছে, তারা এদের শ্রম কিনছে, এবং এদের কিছু কিছু দেবতাকে তাদের উপাসনালয়ে স্থান দিয়েছে, সবই রাজনীতির হিসেব, ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য অনেক জাতের আপোষ করতে হয়। এবং সেমেটিকদের মধ্যে আসলো মুসা, তার ধর্মানুসারিদের একত্রিত করে ইহুদি নাম দেওয়া হলো, এর পর আসলো ইশার অনুসারিরা।
এবং আরবে ইহুদি নাসারা এবং পৌত্তলিক এ তিন জাতের মানুষ যাদের দুই ধরনের জাতিসত্ত্বা, সেমেটিক এবং সেমেটিক নয়।
সেমেটিকরা নিজের মতো ধর্ম পালন করে পৌত্তলিকরাও নিজের মতো দঃর্ম পালন করে, একটা শান্তিপুর্ন সহাবস্থান ছিলো এমন না, যেকোনো সমাজের মতোই রেষারেষি ছিলো, ক্ষমতার লড়াই ছিলো, এর মধ্যে হাজির হলো ইসলাম, সেমেটিকদের একেশ্বরবাদী ধারনা নিয়ে, পৌত্তলিকদের বিরোধিতা ছিলো এজন্য । একদল মানুষ নিজের সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রাখার লড়াই করছে, এটাকে কেনো অন্ধকার বলা হবে? নিজের সংস্কৃতি রক্ষার কোনো অধিকার কি মানুষের নেই??
আমি আরবে ইসলামের প্রসারকে একটা নতুন সংস্কৃতির উত্থান হিসেবে দেখি। সেখানে প্রথাগত বাধা থাকবে, গ্রহন থাকবে বর্জন থাকবে, আধুনিক সমাজে যেভাবে সাংস্কৃতিক মিথষ্ক্রিয়া ঘটে তেমন সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া ঘটবে সেখানে। এখনকার সমাজের সুবিধাবাদী শ্রেনী, দলিত শ্রেনী যেভাবে ধর্ম ত্যাগ করে সেখানেও তারা একই কাজ করবে, ঘটনা মূলত সংস্কৃতি বদল আর সংস্কৃতি বজায় রাখার লড়াই। এখানে একটা সময় সাম্যবস্থা আসতে বাধ্য, হয়তও আসতোই, কিন্তু একেবারে পৌত্তলিকশুন্য করে ফেলার মানসিকতা নিয়ে কোরানের আয়াত নাজিল হয়ে গেলো। আরবভূমি থেকে পৌত্তলিকদের উৎখাত করতে হবে, তরবারির নীচে ধর্মবদল হবে অথবা হত্যা হবে, ইহুদি নাসারাদের আরব ভুমি থেকে উৎখাত করা হয় নি, হয়েছে পৌত্তলিকদের , ওদের ধর্মপালনের অধিকার দেওয়া হয় নি।
এখন এই অন্যায়কে আমি অন্যায় বলছি, তাদের সংস্কৃতি যতই উদ্ভট লাগুক এটা তাদের সংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতি রক্ষায় কোনো সহযোগিতা ছিলো না, বরং স্পষ্ট দমনমূলক আচরন করেছে তাদের সাথে সেমেটিকরা। এটাও একটা গোষ্ঠিতন্ত্র।
মেয়েদেরে কথায় আসি এবার। আরবের কাফেরদের অনেকের বৌ বেশ চমৎকার কবি ছিলো, এমন কি মুহাম্মদকে নিয়ে আজে বাজে কবিতা লেখার অভিযোগও আছে কারও কারও বিরুদ্ধে, ছিলো যোদ্ধা মেয়েরা। ইসলামেরইতিহাসে যোদ্ধা মেয়ে কোথায়, আয়েশা একবার একটা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলো, সেটাও সরাসরি যুদ্ধ নয়, সেনাপতিদের যুদ্ধ করতে হয় কম অনুগত সৈন্যরাই যুদ্ধ করে।
এবং আসলো কন্যা সন্তান পুতে ফেলার অভিযোগ। এটা একেবারে মিথ্যা তা নয়, এমন কিছু পাষন্ডতা সমাজে থাকেই, মানুষের মাংস খাওয়াও এক ধরনের পাষন্ডতা, এটাও তো বহাল ছিলো আফ্রিকায় গত শতাব্দি পর্যন্ত। দেবতার উদ্দেশ্যে সন্তান বলি দেওয়ার প্রথাও ছিলো, আমি সমর্থন করি কি করি না এটা মূল প্রশ্ন নয়, মূল প্রশ্ন হলো এটা তাদের ধর্মপালনের ধরন কি না? এটা তাদের ধর্মপালনের ধরন হলে সেটাকে মেনে নেওয়া উচিত। তারা তাদের সংস্কৃতি চর্চা করছে, সুতরাং এটাকে অনায্য বললে সেটা অনায্য কিন্তু একেবারে বিলুপ্ত করে ফেলতে হবে তরবারির কোপে এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর।
মেয়ে শিশু পুতে ফেলার হার ভয়াবহ ছিলো না কারন সবাই বিয়ে করার জন্য একটা করে মেয়ে পেতো। মেয়েরা লাস্য ময়ি, স্বাধীনচেতা ছিলো, কাব্যচর্চা করতো, যোদ্ধা ছিলো, এই যোদ্ধা হওয়ার অধিকার আধুনিক যুগে এসেছে 1900 সালের দিকে এর আগে এমন উদাহরন কম, তো সে সমাজ পিছিয়ে পড়া এমন দাবি কেনো? সে সমাজ অন্ধকারাচ্ছন্ন এমন দাবি কেনো?
আর এর পরে আরবের ইতিহাস লিখেছেন মুসলিমরা, বিজয়ির ভাষ্য সবসময় পরাজিতের বদনাম করে, ইতইহাস এমন শিক্ষাই দিয়েছে আমাদের, তাহলে ইসলামের এমন প্রচারনা শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত এমনটা দাবি করাও অসঙ্গত হবে না।
এবার আপনারা আপনাদের মতামত জানা।
আস্ত মেয়ে আপনাকে ধন্যবাদ দি, কিন্তু এই যে অবস্থান , এই যে সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করার মনোভাব এটা আমরা রক্ত দিয়ে অর্জন করেছি 52তে, সেই চেতনা নিয়েই বলছি, আমার পছন্দ না হলেও লোকাচার এবং সংস্কৃতি চর্চার অধিকার সবার সমান হওয়া উচিত। সেটা 1400 বছর আগের আরবে যেমন সত্য ছিলো, 50 বছর পরের পৃথিবীতেও তেমন সত্যি হবে।
মন্তব্য
ভাই আপনার কথা যুক্তি যুক্ত কিন্তু আমাদের কতজনার আছে সত্যকে স্বীকার করার? আমরা মুসলমানরা (বাঙ্গালী) ধর্ম নিয়ে ভাল মন্তব্য সহ্য করতে পারিনা আপনার মন্তব্য হযম করব কি ভাবে?আপনাএক অএনক ধন্যবাদ এধরনের সাহসী কথা বলার জন্য। আরও অনেক তথ্য আপনি দিতে পারতেন।
নতুন মন্তব্য করুন