রাষ্ট্র এবং ধর্মের মধ্যে সীমারেখা টানা এবং রাষ্ট্রিয় আইনপ্রনয়নের জায়গা থেকে কোরান কে বর্জন করে ফেলার ধারনা এবং আরও একটু সামনে গিয়ে কোরানের কিছু অংশকে যুগোপযোগী করে ফেলার ধারনা নিয়ে কিছু লিখেছিলাম।
ওয়ালি নিজের পোষ্টে এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছে, আমি উত্তর দিয়েছিলাম এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে আরও একটা মন্তব্য এসেছে এবং মৌলানা মুহাম্মদ কার্ল মার্কসএর একটা পোষ্টও সেই সাথে সংযুক্ত করে কিছু বলার চেষ্টা করি এখানে।
ওয়ালি কোরানের বিভিন্ন জায়গায় কোন সময়ে নামাজ পড়তে হবে এটা বলা আছে, ফজরের নামাজ আসরের নামাজ, জোহরের নামাজ এবং মাগরিবের নামাজের পরোক্ষ সময়সূচি বলে দেওয়া আছে আমার স্মৃতিতে এমনই বলে। আমি তোমার মতো আয়াত উল্লেখ করে বলতে পারবো না, সেখানে আরো একটা আয়াতে বলা আছে, বিকলাঙ্গ দের কোনো অপরাধ নেই। চুরির শাস্তি হাত কাটা এটাও সেখান থেকে নেওয়া। ফতোয়াবাজীর নামে নারী অধিকার হরণের পরোক্ষভুমিকা রাখা আয়াতটা সম্ভবত বাকারার।
সেসব আলোচনা আমরা অতিক্রম করে এসেছি।
এখন তোমার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলি।হাদিসের ভিত্তিতে অনেক কিছুই নির্ধারন করা হবে এমন প্রস্তাবও টিকবে না, পরিপ্রেক্ষিত বুঝতে হবে আমাদের, সময় এবং ইসলামের প্রসারের সাথে সাথে হাদিসেও বদল এসেছে, এখন কথা হলো আমরা কোন হাদিসটাকে মানবো। কোথাও সময়সূচি তেমন ভাবে উল্লেখিত নেই। তুমি হাদিস পড়লে দেখবে একই বিষয়ে বিভিন্ন সমাধান দেওয়া হাদিস আছে, সবগুলোই গ্রহনযোগ্য ছিলো কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে, সে সময় আইন প্রনেতা হিসেবে ছিলেন একজনই, তাই তাকে ক্রমাগত আইনের রুপান্তর করতে হয়েছে। আমি কিছু উদাহরন দিতে পারতাম কিন্তু এই মুহুর্তে আবার প্রায় 1000 হাদিস পরার ধৈর্য্য নেই তাই খুজতে ইচ্ছা করছে না।
আমি কিন্তু এ কথাটাই বলছিলাম, সময়ের সাথে ধারনার পরিবর্তনের বিষয়টা আমলে আনা। মদ্যপানের বিষয়টা এর একটা উদাহরন হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় মদয়পান নিষিদ্ধ ছইলো না, বরং প্রথম জারিকৃত আদেশটা ছিলো মদ্যপ অবস্থায় নামাজ পড়া যাবে না, এভাবেই ক্রামাগত মদ্য বর্জনে অভ্যস্থ হওয়ার পর চুড়ান্ত নির্দেশ এসেছে মদ্যপান নিষিদ্ধ করার। এটা এক অর্থে একটা সংস্কৃতির চর্চা শুরু করা। সে সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ হওয়ার পর আরও কিছু নিয়মতান্ত্রিকতা সংযুক্ত করা।
ইসলামের নীতিগুলো একেবারে খারাপ এটা কেউ বলছে না, সব ধর্মের মতোই এ ধর্মেও ভালো উপাদান আছে, কিছু উপাদান আছে যা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হবে না, আমরা ভালোটা গ্রহনের পক্ষে থাকি এবং যা কিছু যুগধর্মের প্রভাবে বর্জন করতে হবে সেটা বর্জনের সৎসাহস রাখি। এটাও একটা হাদিস এবং আমার মনে ইসলামের িতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপুর্ন একটা হাদিস
.
10 জন মুসলিম যা ভাবে তাই ইশ্বরের পছন্দনীয় আচরন।
এই মুসলিম কথাটার উপরে একটু জোড় দিলে ভালো হয়, মুসলিম শব্দটা দিয়ে ঠিক কি বোঝানো হয়, ইসলামের মূল ধারনা কিন্তু নির্শর্ত আনুগত্যের। তুমি নিজের ইশ্বরের কাছে সমর্পন করবে, ধারনাটা এ রকম, ইশ্বরের প্রভাব তোমার জীবনে সবচেয়ে বেশি হবে, তুমি ইশ্বরপ্রদত্ত নিয়মাবলি মেনে চলবে। প্রয়োজন বুঝে ব্যাবস্থা নেওয়া অধিকার কিন্তু ইসলাম হরন করে না, এমন কি মুহাম্মদ নিজেও প্রয়োজন অনুযায়ি কোনো ইসলামের নীতি বর্জনকে সমর্থন করেছেন, আবারও হাদিস ঘেটে দেখতে পারো, কিন্তু সেগুলো ক্ষুদ্্র ক্ষুদ্্র পরিবর্তন ছিলো। পরিস্থিতি বদলাচ্ছে এটা তোমাকে বুঝতে হবে, হাদিসের কোথাও ধর্ষনের ধারনা নেই। ধর্ষনের ধারনাটা আধুনিক। নারীর সম অধিকার আদায়ের দাবিটাও একটা আধুনিকদাবি, অর্থনীতিতে নারী গুরুত্বপুর্ন একটা নিয়ামক হয়ে উঠলে তাদের সমঅধিকারের দাবিটা সমাজ নিজেই মেনে নিবে, কোনো ধর্ম এমন কি স্বয়ং ইশ্বর এসেও নারীর সমঅধিকারের ধারনাটা বাতিল করতে পারবে না। কারনটা সমাজের প্রয়োজন, সমাজের অর্থনীতির প্রয়োজন। এবং সেই সমঅধিকারের দাবিতে একে একে পৈতৃক সম্পদে নারী পুরুষের সমান অধিকারের দাবি আসবে, ইসলামি দেশগুলোতে এখনও এ দাবি উঠে নি কারন এখনো এসব দেশে নারীরা অর্থনীতির একটা গুরুত্বপুর্ন চালিকা শক্তি নয়। তারা অর্থনীতিতে এখনও পর্যন্ত মূলত পরোক্ষ ভুমিকা রাখছে। কোরানের বানী আকড়ে ধরে যদি এই উত্থান রোধ করতে চাও তাহলে ভেসে যেতে হবে কোরান সমেত। কেউ রক্ষা করতে আসবে না তখন। মধ্যপ্রাচ্যে কেবল নারীর অধিকারের অ আ ক খ পর্যায় শুরু হয়েছে, আরও 60 বছর সময় দাও সেখানে পরিবর্তনের ধাককাটা দেশে বসে উপলব্ধি করতে পারবে।
সমকামিতা সম্পর্কে তোমার বয়াক্তিগত বিবমিষা থাকতে পারে, থাকতে পারে তোমার নিজস্ব ধারনা এ বিষয়ে। কিন্তু সেও একজন মানুষ এটাও একটা সত্য। তার ক্ষেত্রেও মানবাধিকারের সবগুলো নিয়ম থাকা জরূরি। শুধুমত্র নিজস্ব বিশ্বাসের বা ব্যাক্তিগত অভিরুচির জন্য রাষ্ট্র নাগরিক অধিকার হনন করার অধিকার রাখে না, এই অধিকার রক্ষার জন্য দেশে আইন আছে। বিষয়টা আইন এবং অগ্রসর সমাজের ধারনা থেকে আসা ব্যাক্তি অধিকার বোধের। সূমন বিষয়টা আরও ভালো ভাবে উপস্থাপন করতে পারবে বোধ হয়, ওর ভাষার শৈলি ভালো। ওকে এবং এ বিষয়ে আরও ব্যাপক পড়াশোনা আছে এমন সবাইকে আমি অনুরোধ করতে পারি রাষ্ট্র, আইন এবং নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত লেখা দেওয়ার জন্য, সবার ধারনাটা কি এটা পরিস্কার হওয়া দরকার, এর সাথে আরও েকটা বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার, কেনো স্বাধীন আইনব্যাবস্থা এবং আইনের সহায়ক প্রশাসনিক বিষয়গুলো সরকারের দখলদারিত্ব থকে মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। সেসব ধারনা পরিস্কার হলে তখন রাষ্ট্র এবং ধর্ম পৃথকিকরনের ধারনাটা আরও পরিস্কার হবে।
ইসলামকে আধুনিক না করে আধুনিকতাকে ঐসলামিক করে তোলার বিষয়টা নিয়ে আলোচনাটা সে পরিপ্রক্ষিতে করা ভালো হবে। ইসলাম মুসলিমদের জীবনধারনব্যাবস্থা, পৃথিবীর 25% হয়তো মুসলিম কিন্তু তাদের ধারনা কেনো 100% লোকের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে এটা একটা যৌক্তিক প্রশ্ন হতে পারে।
আর হল্যান্ড, ইংল্যান্ড, এমন কি ভারতের অগ্রসরতা বা পশ্চাতপদতার মধ্যেও সেখানে সবার আইনি অধিকার রক্ষার বিষয়টা আছে, যেসব উদাহরনের ভিত্তিতে বলছো ওরা ভালো না এমন উদাহরন ইসলামি দেশগুলোর ক্ষেত্রেও দেওয়া সম্ভব। সমকামিতা বিষয়টা মানুষএর মানসিক এবং শাররিক, এমন কি বাংলাদেশের অনেক পুরুষই সমকামি। নারীদের বিষয়টা বলতে পারছি না তবে সমকামি নারীর উপস্থিতি আছে বাংলাদেশে এটা আমি জোড় দিয়ে বলতে পারি।
মাদকাসক্তি বিষয়টার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ইসলামের মধ্যে এই দুই বিষয়ে স্পষ্ট বিরোধিতা, খুনের বদলে খুনের দাবি থাকলেও যেমন ধরো যুদ্ধঅপরাধের বিষয়টা অনুপস্থিত। যুদ্ধেও কিন্তু মানুষ নিয়মতান্ত্রিক ভাবে মানুষ হত্যা করে। মুসলিম মুসলিম হত্যা করে এটার প্রমানও ইসলামের ইতিহাসে আছে, এবং খেলাফতের উজ্জল সময়েও এটার নিদর্শন আছে, খেলাফত সময়টা উল্লেখ করলাম এ জন্য যে তখনও মুহাম্মদের সহগামী লোকজন নিশ্চিহ্ন হয় নি, তারা বহাল তবিয়তে ছিলো এবং বেশ ক্ষমতাধরও ছিলো, তাদের বোধের মধ্যে ইসলামের ধারনা তোমার চেয়ে কম ছিলো এমন দাবি করবে না নিশ্চয়? যাই হোক যুদ্ধের নিয়মতান্ত্রিক মানুষ হত্যার সময় যারা সৈন্য তাদের সবাইকে কেনো ফাঁসি দেওয়া হবে না খুনের অপরাধে?? ইসলামের বিধান সৈন্যের জন্য আলাদা নয়। সবার জন্যই একই। আর মন্তব্যে বলেছিলাম, যুদ্ধঅপরাধী এবং গনিমতের মাল ধারনায় নারী উপগত হওয়া সব কটা সাহাবাকে কিন্তু আধুনিক ধর্ষনের আইনে শাস্তি দেওয়া সম্ভব। কারন ওটা স্পষ্ট ধর্ষন। এবং মানবাধিকার লংঘন। ঐ যে বললাম সময়ের সাথে মানুষের ধারনার বদল হয়। এটা ধারনা বদলের ধারাবাহিকতা, সমাজ বদলের ধারাবাহিকতা। এই ধারাবাহিকতায় এক দিন এসব পরিমান আসবেই, কিছু অন্ধ জড়তা কিছু বাধা থাকবেই কিন্তু অবশেষে সমাজ অগ্রসরতার পথ বেছে নিবে।
মৌলানা মুহাম্মদ কার্ল মার্ক্স সাহেব, আপনার নামটা রাবি্ব মুহাম্মদ কার্ল মার্ক্স হলে আরও ভালো হতো। যাই হোক আপনার প্রশ্নের আমার উত্তর অনেকটা এ রকম।
রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রশাসনকারি লোকজন 2টা ভিন্ন সত্তা। রাষ্ট্র মোটামুটি স্থায়ী একটা সংস্থা বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে। তাই রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের লোভে ধর্ম ব্যাবহার রাজনৈতিক একটা বিষয়, যেমন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের ক্ষেতরে উগ্র জাতিয়তাবাদি রাজনৈতিক মতবাদের ব্যাবহার।
রাষ্ট্রের ধর্ম ব্যাবহার আমি নিচ্ছি প্রশাসনের নিয়মাবলিতে ধর্মের ব্যাবহার হিসাবে। সেখানে ধর্মের ব্যাবহার রাষ্ট্রের কাঠামোর জন্য হানিকর বিধায় রাষ্ট্র এ মতধারা পরিহার করবে। কারন প্রশাসনিক ধর্ম ব্যাবহার রাষ্ট্রের মানবাধিকার লুণ্ঠনের ক্ষমতা বাড়ায়।, স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকলে রাষ্ট্র ক্রমাগত বিচার বিভাগের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হবে, এর ধারাবাহিকতা হিসেবে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে, এবং আইনি সচ্ছতা না থাকলে আবারও রাষ্ট্রের মূল কার্যক্রম ব্যাহত হবে, প্রকারান্তরে আসলে ধর্মের প্রশাসনিক ব্যাবহার রাষ্ট্রের জন্য হানিকর। আব্দুল হকের যুক্তিটা একটা সময় প্রযোজ্য ছিলো যখন সমাজতান্ত্রিক মতাবাদের সাম্যবাদের ধারনাটাকে রদ করার জন্য ধর্মিয় আফিমে মোড়া সাম্যবাদী ধারনার দোহাই দেওয়া যেতো, কিন্তু বর্তমানে নাগরিক অধিকার সম্পর্কে স্পষ্ট চেতন তৈরি হয়েছে। আরঊন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে ব্যাক্তি অধিকারের প্রচারনা চলছে জোড়েশোরে সুতরাং মানুষের ড্রইংরূমেও এখন ব্যাক্তি অধিকারবোধের সপক্ষে জনমত তৈরি হচ্ছে, এই বাস্তবতায় প্রশাসনিক ধর্মব্যাবহারের ঝোঁক রাষ্ট্র নিজেই সচেতনভাবে পরিহার করবে।
বাংলাদেশের পরিপ্রক্ষিতে এ বিষয়টা কতটুকু খাটবে এটা নিয়ে প্রশ্ন তুললে প্রথমে বলবো পৃথক আইন বিভাগ না থাকায় ক্ষমতা বলয়ে আইন বন্দ ী। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ক্ষমতাবান লোকেরা নিজের স্বার্থে ব্যাবহার করার সুযোগ পাচ্ছে, এবং এখানে মানবাধিকার লংঘিত হলেও আইন বিভাগ তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে পারছে না।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন