হাদিসের ভিত্তিতে সংগ্রহ অভিযানের ইতিহাস -১

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শুক্র, ২৪/০৩/২০০৬ - ৬:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইয়ামামার যুদ্ধে প্রায় 700 জন নিহত হন, এদের অনেকেই ছিলেন কোরানের হাফেজ। এদের একজন সেলিম। তার নিহত হওয়ার খবর পেয়েই উমর যান আবু বকরের কাছে, তাকে তাগাদা দেন কোরান সংকলনের জন্য।কোরানের সংকলনে আবু বকরের ভুমিকা প্রসঙ্গে আলির বক্তব্য - আবু বকর(ইশ্বর তার উপর শান্তি বর্ষিত করুন) প্রথম ব্যাক্তি যে কোরানকে একটা স্থানে সংকলন করেছেন।
মুসলমান আসলেই মজার এক জাতি, এই কথা হাদিসে থাকলেও এমন কথাও আছে যে আবু বকর বা ওমরের সময় কোরান সম্পুর্ন সংকলিত হয় নি। একটা হাদিস যা আবু বকরকে কোরান সংকলনের কৃতিত্ব দেয় সেখান থেকেই শুরু করি।
যায়েদ এর ভাষ্য পাওয়া যাবে সাহীহ বুখারিতে , কোরান সংকলন প্রসঙ্গে তার বক্তব্য নিম্নরূপ।

ইয়ামামার যুদ্ধের পর আবু বকর আমাকে ডেকে পাঠান। আমি সেখানে পৌছালে উমর বিন আল খাত্তাবকেও দেখি তার সাথে,
আবু বকর বলেন উমর তাকে বলেছেন ইয়ামাম যুদ্ধে নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই কুরানের হাফেজ,এবং তাদের মৃতু্যর সাথে সাথে কোরানের বিলুপ্তির একটা সম্ভবনা তৈরি হয়েছে, তাই আমার মতামত আপনি কোরান সংকলনের নির্দেশ দিন।
এর উত্তরে আবু বকর বলেন, নবী যে কাজ করেন নি বেঁচে থাকতে তা এখন করা কি উচিত হবে?
উমর এর উত্তরে বলেন, তা সত্ত্বেও এটা একটা গুরুত্বপুর্ন কাজ হবে।
আবু বকর যায়েদ কে বলেন, তুমি যুবক এবং বুদ্ধিমান এবং তোমার বিপক্ষে তেমন কোনো বাজে প্রচারনা নেই, এছাড়া তুমি মুহাম্মদেরর তত্ত্বাবধানে কোরানের কিছু আয়াত লিপিবদ্ধ করেছিলে, তাই এখন সম্পুর্ন কোরান সংকলনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করো।
যায়েদ এর উত্তরে যা বলেন টা হলো, আপনি কেমন করে এমন একটা কাজের নির্দেশ দিচ্ছেন যা মহানবী নিজে কখনও করেন নি, এর উত্তরে আবু বকর তাকে আশস্ত করেন এটা অনুমোদিত।
এর পরে আমি কোরান সংগ্রহ অভিযান শুরু করি,
বৃক্ষপাতায়, প্রস্তর ফলকে এবং মানুষের স্মরণে যেখানেই পেয়েছে তা সংকলন করেছি। কোরানের সর্বশেষ আয়াত পেয়েছি , আবু খুযায়ামা আল আনসারির নিকট, যা অন্য কারো কাছে ছিলো না।

যায়েদের সংকলিত এই কোরান প্রথমে ছিলো আবু বকরের জিম্মায়, তার মৃতু্যর পর এটা যায় উমরের জিম্মায় এবং উমরকে হত্যা করার পর এটা চলে আসে তার কন্যা হাফসার জিম্মায়।
এখন আরও কিছু সহায়ক ইতিহাস জানা যাক, জায়েদ আবু বকরকে যে সংকলনটা দিয়েছিলো সেটা ছিলো চামড়া আবং খেজুর পাতার উপর লিখিত,।
যখন যায়েদ োমরকে জানান খুযায়মা আল আনসারির কাছে প্রাপ্ত 2টা আয়াতের কথা, ওমরের প্রতিক্রিয়া ছিলো যদি এটা 3টা আয়াত হতো তবে আমি ওটাকে ভিন্ন একটা সুরা হিসেবে লিপিবদ্ধ করার কথা বলতাম।
এর পরে উমরের তত্ত্ববধানে কোরানের সংগ্রহ শুরু হয়, বিষয়টা আমাকে যথেষ্ট পীড়া দিচ্ছে,ওমর একবার কোরান সংগ্রহের অনুরোধ করেন আবু বকরকে, এবং আবু বকরের উৎসাহে এবং নির্দেশে যায়েদ কোরান সংগ্রহ করেন, এর পর আবার ওমর নির্দেশ দেন জমায়েতে, তোমাদের যার যার কাছে মহানবীর মুখে শোনা কোরানের কোনো আয়াত থাকে তা আমাদের এখানে এসে জমা দাও, অবশ্য 2 জন সাক্ষী না পেলে ওমর কোনো কিছুকেই প্রামান্য মেনে নিতেন না।
এবং ওমরের মৃতু্যর পর উসমানও একই নির্দেশ দেন। এবং উসমানও 2 জন সাক্ষী না হলে কোরানের কোনো বানীকে প্রামান্য স্বীকৃতি দেন নি।
খুযাইমা বিন থাবিত Khuzaima bin thabit বলেন, কোরানের 2টা আয়াত বাদ পড়েছে, এর উত্তরে তাকে বলা হয় কোন কোন আয়াত বাদ পড়েছে, তার উত্তরে তিনি জানান, আমি স্বয়ং মুহাম্মদের কাছে এটা পেয়েছি.........। এবং তার উপদেশ অনুসারে এই 2টি আয়াতকে সুরা তওবার 128 এবং 129 আয়াত হিসেবে কোরানে লিপিবদ্ধ করা হয়।
উসমানের কোরান সংকলনের প্রেক্ষিত এর পরে বিশদ বর্নণা করা হবে। তাই সে পর্যন্ত কৌতুহল সংবরন করতে হবে আগ্রহীদের। তবে কোরান সংকলনে কোন ভাষা ব্যাবহৃত হবে এ নিয়ে বিতর্ক ছিলো। আরবের সবলোকের ভাষা এক ছিলো না, এমন কি মদিনার ভাষা এবং উচ্ছারন রীতি ছিলো মককার তুলনায় পৃথক, এমন কি মককার বিভিন্ন যাযাবরগোষ্ঠির মধ্যেও উচ্চারনের পার্থক্য ছিলো। তাই উমর নির্দেশ দেন যখন কোরান লিপিবদ্ধ করা হবে তখন মুদারের ভাষারীতি ব্যাবহৃত হবে।
সবচেয়ে মজার তথ্য হলো আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ কোরানের প্রায় 90টি সুরা মুখস্ত করেছিলেন, বাকি 14টি সুরা তিনি শিখেছেন মুয়াজ্জামি ইবন যারিয়াহর কাছে।
ক্বাতাদা একবার আনাস বিন মালিক কে প্রশ্ন করেছিলেন -
মহানবীর জিবদ্দশায় কে কে কোরান সংকলন করেছিলো?
এর উত্তরে আনাস বলেন, উবায় বিন ক্বাব, মুয়াদ বিন যাবাল, যায়েদ বিন থাবিত এবং আবু যায়েদ, সবাই আনসারি( মদিনাবাসী) ।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।