মানুষ প্রকৃতিকে জানার চেষ্টা করছে, এটাই বিজ্ঞানের জন্মের কারন, আর মানুষ জন্মের সলুকসন্ধানে দর্শনের জন্ম, প্রকৃতি এবং মানুষ অঙ্গাঙ্গি জড়িত তাই বিজ্ঞানের উপরও দর্শনের প্রভাব বিদ্যমান, এবং এই দর্শনধারা বিজ্ঞানের গতিপথ নির্ধারন করেছে। ধর্মপ্রচারকরা স্বভাবতই নতুন দর্শনের সাথে নতুন বিজ্ঞানধারনার জন্ম দিয়ে ফেলে, তবে ধর্মপ্রণেতাদের উদ্দেশ্য পুরণের পথে তাদের সর্বরোগের মহাঔষধগোছের সকল কিছুর ব্যাখ্যা দিতে হয়, তারা পার্থিব জীবনে মানুষের করনীয় কি এটাও বলেন, কিভাবে প্রকৃতি কাজ করছে এটাও বলেন, মানুষের মৃতু্যবোধ তাকে তাড়া করে সমস্তজীবন, সেই মৃতু্যর পরে কি হবে এ বিষয়েও তাদের বিজ্ঞ মতামত থাকে। যদি ধর্মপ্রণয়নকে কোনো পেশা হিসেবে দেখা হয় তবে হালের গুলিস্তানের মোড়ে পুরুষত্ববর্ধক মলম বিক্রেতার সাথে ধর্মপ্রণেতার মূলগত পার্থক্য কম। দুজনেরই চমৎকার বাক্যগঠন ক্ষমতা, দুজনেই কথার মহারাজ। এবং দুজনেই মানুষকে বিভ্রান্ত করেই পার্থিব সম্পদ লাভ করে। একেশ্বরবাদী ধর্মপ্রণেতারাও এর ব্যাতিক্রম নয়।
যাই হোক এমন সর্বজ্ঞ ভাবনার অধিকারী নয় এমন কয়েকজনের নাম আমরা বলি।
প্রথম জন গৌতম বুদ্ধ, তার অষ্ট পথের দর্শন বা অষ্টমার্গীয় দর্শন নিম্নরূপ
সঠিক বিশ্বাসঃ সত্যই মানুষের পথনির্দেশক।
সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনঃ সর্বদা শান্ত থাকা এবং কোনো জীবের ক্ষতি না করা।
সঠিক বাক্যচয়নঃ মিথ্যার্এবং কটুবাক্য বর্জন করা,
সঠিক ব্যাবহারঃ চুরি না করা, হত্যা না করা, পরবর্তিতে লজ্জার কারন হতে পারে এমন কাজ পরিহার করা।
সঠিক পেশা গ্রহনঃ
সঠিক প্রচেষ্টাঃ শুভবোধের পক্ষে কাজ করা, সত্য এবং সুভ্রতার পক্ষে পরিশ্রম করা, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা, এবং অশুভ, অন্যায় পরিহার করা,
সঠিক ধ্যানঃ সবসময় চেতনাকে শান্ত রাখা এবং চেতনাকে আবেগজনিত উত্তেজনা বর্জিত রাখা
সঠিক মনোযোগঃ যদই ুপরের সাতটা পথ কেউ অনুসরণ করে তবে সে প্রশন্তি লাভ করবে।
এর জন্য বুদ্ধ মানুষের করনীয় এবং বর্জনীয় কাজগুলোকে খুব সাধারন ভাবে বলেছেন,
হত্যা করো না
চুরি করো না
মিথ্যা বলো না
ব্যাভিচার করো না
কখনই নিজেকে কলুষিত হতে দিও না।
এই 5টা কাজ করলেই মানুষ সর্বদা শুদ্ধ থাকতে পারবে।
আশ্চর্য বিষয় হলো এখানে কোথাও বেহেশতের লোভ নেই, এমন কি কোথাও নিজস্ব সীমাবদ্ধতা দিয়ে প্রকৃতিকে ব্যাখ্যার চেষ্টা নেই, মানুষের জন্ম কেনো হলো, মানুষ মরে গেলে কি হবে এসব কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা নেই কোথাও। এবং এই ধর্মে কোনো ইশ্বর নেই। ইসাহবরের প্রত্যক্ষ তত্ত্ববধান ছাড়াই মানুষ সঠিক পথে চলতে পারে এটাই বুদ্ধের উপদেশ।
প্রথাগত ধর্মাচরন বিরোধি , শরীরকে কষ্ট দইয়ে, উপাসনা করে কেউ মোক্ষ পায় না, মোক্ষ পেতে হলে নিজের ভিতরে পরিশুদ্ধতা আনতে হয়। এই সহজ কথাগুলো বলে ফেলা সহজ নয়,
কিন্তু বুদ্ধ একাই এই জিনিষ বলেছে এমন নয়
তার সমসাময়িক আরেক জন এই একই কথা বলেছে ভারত বর্ষে, মহাবীর তার ধর্মেও ইশ্বর নেই, ইশ্বর বিহীন অন্য আরেকটা ধর্ম , জৈন ধর্ম যাদের আমরা শিখ বলি তারা জৈন ধর্মানুসারী। তাদেরও কোনো ইশ্বর নেই।
মানুষের ভক্তি শ্রদ্ধাবোধ বড় বিচিত্র, যেই ইশ্বর কে প্রতিস্থান করার লক্ষ্যে তারা কাজ করেছেন তাদের পরিনতি হলো উপাস্য হয়ে যাওয়া।
বুদ্ধের মৃতু্যর পর তার মুর্তির উপাসনা শুরু হলো।
মহাবীরের মৃতু্যর পর তার মুর্তি বানিয়ে লোকজন উপাসনা শুরু করলো।
সেই 2500 বছর আগে একটা হাওয়া এসেছিলো ইশ্বর বর্জনের হাওয়া, সেই হাওয়ায় চীনেও ইশ্বরবিহীন ধর্ম তৈরি হলো। কনফুসিয়াস একটা জীবনধারা প্রচলন করলেন, সেখানে ভালো কাগের জন্য লোক পুরস্কৃত হবে এবং খারাপ কাজের জন্য লোক শাস্তি পাবে, এই সাধারন বোধের বিষয়টা কার্যকরি ছিলো কারন, পৃথিবীর ইতিহাসে এই ধারা প্রয়োগ করে মাত্র 1 বছরে একটা রাজ্য অপরাধীশুন্য হয়ে গেলো।
এর সমসাময়িক অন্য একটা চৈনিক জীবনধারা তাও-
এখানের বক্তব্য কনফুসিয়াসের মতো না, সবাইকে ভালোবাসো এটাই এ ধর্মের ভিত্তি। কনফুসিয়াস এবং তাও জীবন ধারার প্রচারক লাওৎসে দুজনেই একবার আলোচনা করেছিলেন, খুব আশ্চর্য হলো তাদের জীবনধারার অনুসারিরা পরস্পর মারামারি করেন নি, লাওৎসে বেশ কটুভাষায় কনফুসিয়াসের মত অগ্রাহ্য করেন, কিন্তু লাওৎসের জীবনবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কনফুসিয়াস তার ছাত্রদের বললেন তার মত আমি বুঝি নি কিন্তু এটুকু বুঝছি তার ভেতরে জ্ঞানের কমতি নেই।
এই 4 জন মানুষ যাদের অনুসারি অনেক থাকা সত্ত্বেও তারা ভন্ডামি না করেই বলেছেন পৃথিবী কেনো সৃষ্টি হলো, এর বিনাশ হবে কি না এসব কোনো কিছুই আমি জানি না, আমি শুধু পার্থিব জীবনে মানুষকে কি পথে চলতে হবে এ বিষয়ে উপদেশ দিতে পারি। এই পথ অনুসরন করার জন্য কোনো পরলৌকিক লোভের প্রয়োজনীয়তা দেখেন নি তারা।
এবং গ্রীসেও এমন এখটা জীবনধারার সূচনা করার চেষ্টা করেছিলেন সক্রেটিস, তবে তাকে মৃতু্যবরন করতে হয়।
এর পরে প্রায় 500 বছর পরে যীশুর জন্ম এবং তার ধর্ম প্রচার, ইশ্বরের পুনরুত্থান এবং তারও 500 বছর পরে মুহাম্মদের ধর্মপ্রচার এবং সহিংস ইশ্বরের উত্থান, এবং এদের আদর্শিক গুরু ইহুদিদের নিধন। এই 3 একেশ্বর বাদী ধর্ম এখনও পরস্পর লড়াই করছে, এবং মানুষের অশেষ দুর্ভোগের কারন হচ্ছে। আমরা সবাই ইশ্বরকে বর্জন করি, সাধারন জ্ঞান এবং বোধে সৃষ্ট ধর্মগুলো পালন করি,
তুমি মানুষের সাথে এমন ব্যাবহার করো না যা তুমি মানুষের কাছে আশা করো না। এই মন্ত্র জপ করা শুরু করি। অন্য কোনো উপাসনার দরকার নেই, অষ্টমার্গ ধরে পার্থিব জীবনে অশেষ শান্তি হাসিল করি।
আ-মি-ন
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন