গ্যালিলিও পোষ্টে অনেক কথা বলেছি নিউটনকে নিয়ে,কিন্তু তৎকালীন ধর্মমনস্তত্ত্ব কিভাবে মানুষের ভেতরে যুক্তিকে গ্রহন করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে ছিলো তা বলা হয় নি। আমরা আধুনিক এস্ট্রোনমির জন্মের পেছনে চার্চের অবদান অস্বীকার করতে পারবো না, এমন কি শিক্ষাবিস্তারেও চার্চ অগ্রগন্য ছিলো সব সময়।
কোপার্নিকাস( সৌরজগত এবং মহাবিশ্বের একটা নক্সা তৈরি করেছিলেন প্রথম যে খানে সূর্য ছিলো মহাবিশ্বের কেন্দ্র), টাইকো ব্রাহে, কেপলার, গ্যালিলিও এরা সবাই চার্চের আর্থিক আনুকুল্যে গবেষন করেছেন। কোপার্নিকাস তার সৌরকেন্দ্রীক মহাবিশ্বের ধারনা লাভ করেন প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিকদের কাছে, কিন্তু টলেমির মতবাদ পৃথিবীকেন্দ্রীক মহাবিশ্বের পক্ষে এবং বাইবেলের পৃথিবীকেন্দ্রীকতার অনুসারি বলে টলেমির মত সবসময় চার্চের আনুকল্য পেয়েছে। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরে এই ধারনাটা প্রথম সামনে নিয়ে আসেন, ফিলোলাস( 4থ শতক খ্রিস্টপুর্বাব্দ) এবং এরিস্টোকস ওফ সামুস পৃথিবী যে নিজ অক্ষে ঘুরছে এটার বিষয়ে কিছু তত্ত্ব দাড়া করান, ভারতীয় বিজ্ঞানী আর্যভট্ট(476-550) পৃথিবীর পরিধি নির্নয় করেন, তার পরিমিত পৃথিবীর পরিধি আধুনিক ভাবে মাপা পৃথিবীর পরিধির পার্থক্য 0 .2%।
For I am not so enamored of my own opinions that I disregard what others may think of them. I am aware that a philosopher's ideas are not subject to the judgement of ordinary persons, because it is his endeavor to seek the truth in all things, to the extent permitted to human reason by God. Yet I hold that completely erroneous views should be shunned. Those who know that the consensus of many centuries has sanctioned the conception that the earth remains at rest in the middle of the heaven as its centre would, I reflected, regard it as an insane pronouncement if I made the opposite assertion that the earth moves.
কোপার্নিকাসের বক্তব্য নিজের মতের সপক্ষে।
টাইকো ব্রাহে সে যুগের এস্ট্রোনমারদের মধ্যে বিশিষ্ট একজন, তিনি নক্ষত্র এবং গ্রহদের গতি এবং সরণ পরিমাপের জন্য যন্ত্র ব্যাবহার করে সেসব তথ্য লিখে রাখতেন, বছরের পর বছর পর্যবেক্ষনের ফলে জমা তথ্য এর পর বিশ্লেষন শুরু করেন কেপলার, যিনি টাইকো ব্রাহের ছাত্র ছিলেন, তার 13 বছরের একটানা পরিশ্রম শেষে আমরা সূর্যকেন্দ্রীক সৌর জগতের একটা গানিতিক মডেল পাই, যেখানে 3টা সূত্র রয়েছে এবং সেখানে সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্র ধরা হয়েছে। যেখানে বলা আছে- গ্রহ সমুহ উপবৃত্তাকারে সূর্যকে কেন্দ্র করে পরিভ্রমনরত এবং তাদের ভ্রমনকালের বর্গ সূর্য থেকে তাদের দুরত্বের ঘনকের সমানুপাতিক।
টাইকো ব্রাহে কোপার্নিকাসের মত সমর্থন করেন নি, তিনি মেনে নিয়েছেন বাকি সকল গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরলেও সূর্য এবং চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। ছবিটা টাইকো ব্রাহে কল্পিত মহাবিশ্বের প্রতিরূপ। নীল বৃত্তে আঁকা স্থির নক্ষত্রমন্ডলী সেই বাইবেল র্নিত সপ্তম স্বর্গ ,
এই হলো মানসক বাধা, পৃথিবীকেন্দ্রীকতা থেকে বাইরে আসতে পারেন নি ব্রাহে কারন তার শিক্ষা এবং অনুভব তাকে ভিন্নটা ধারনা করতে বাধ্য করেছে।
কেপলার তার ছাত্র এই ধারনার বাইরে এসেই সূর্যকেন্দ্রীক সৌরজগতের ধারনা দেন।
কেপলারের ধর্মিয় দর্শন
I was merely thinking God's thoughts after him. Since we astronomers are priests of the highest God in regard to the book of nature," wrote Kepler, "it benefits us to be thoughtful, not of the glory of our minds, but rather, above all else, of the glory of God."
এর পর আসি নিউটনের কথায়, নিউটনের শিক্ষজীবনের একটা অংশ কেটেছে চার্চে, তার মহাকর্ষের সূত্র তার অন্যতম একটা আবিস্কার। বিজ্ঞানের অনেক শাখায় তার গুরুত্বপূর্ন অবদান রয়েছে।
কিন্তু নিউটন নিজেই নিজের মতকে অস্বীকার করেছেন অবলীলায় তার ধারনার সাথে খাপ খায় নি বলে। নিউটন বর্নালীর সাত রং য়ের ব্যাখ্যা দেন, সাদা আলো আসলে 7টা রংয়ের মিশ্রন এটা প্রমানের জন্য একটা যন্ত্র নক্সা করেছিলেন। অবশেষে এক সময় তিনি আলো সম্পর্কিত একটা ধারনা দেন, আলো কি এ নিয়ে 2টা মতবাদ প্রচলিত এখনও, একটা হলো আলো তড়িৎচুম্বকিয় তরঙ্গ, এবং অন্যটা হলো আলো কনিকা, নিউটন আলো ছোটো ছোটো বলের মতো কনিকার সমন্বয়ে গঠিত এ মত ধারন করতেন, অবশেষে একটা পরীক্ষনে এটা নির্ধারনের চেষ্টা করেন, তার নাম অনুসারে এই পরীক্ষনে প্রাপ্ত ফলাফলকে নিউটনের অঙ্গুরিয় বলা হয়ে থাকে, তবে মজার বিষয়টা হলো এই পরীক্ষা প্রমান করে আলো এক ধরনের তরঙ্গ, কিন্তু নিউটন এটা মেনে না নিয়ে আলো কনিকা এই তত্ত্বই অাঁকড়ে ধরে থাকেন। নিউটন গভীর ধর্মবিশ্বাসী এবং তার মতে বাইবেল ইশ্বরপ্রেরিত গ্রন্থ। নিউটন প্রতিদিন বাইবেল পড়তেন এবং তার অনেক কাজের অনুপ্রেরণা বাইবেল। এমন কি মহাকর্ষ সূত্র সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহদের ভ্রমনকে ব্যাখ্যা করলেও নিউটনের ধারনা ছিলো স্বয়ং ইশ্বর তাদের এই কক্ষপথে স্থাপন করেছেন।
প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ এবং এ সম্পর্কিত পূর্বানুমান সব সময় আমাদের একটা দ্্বিধার মধ্যে রাখে আমাদের পর্যবেক্ষনলব্ধ জ্ঞানের আলো কে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। আমাদের পরীক্ষণলব্ধ সিদ্ধান্তকে ভূল ব্যাখ্যা দিতে অনুপ্রানিত করে।
ধর্মবিশ্বাস এবং প্রকৃতিবিজ্ঞানের মধ্যে একটা দ্্বান্দিক সম্পর্ক বিদ্যমান। একটা প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে, এবং এখানের প্রথম চাহিদা কোনো রকম পূর্বানুমান না রেখে পর্যবেক্ষন করে যাওয়া এবং পরীক্ষার মাধ্যমে তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করা, সব সময় যেকোনো তত্ত্বের মূল ভিত্তি হবে তা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমানিত হলো কি না এটা, আমরা যা ধারনা করি এটাকে প্রতিষ্ঠা করা গবেষনার(বৈজ্ঞানিক গবেষনার লক্ষ্য নয়) কিন্তু মানুষের বিশ্বাসের ভ্রান্তি তাকে ইশ্বরসন্ধানী করেছে এবং মানুষ বিজ্ঞান দিয়ে ইশ্বর সন্ধানে নেমেছে, যদিও বিজ্ঞানের কোনো পরীক্ষায় ইশ্বরের অস্তিত্ব নিরূপন সম্ভব নয় বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কিন্তু যদি কেউ ইশ্বরকে ফাঁদে ফেলার মতো কোনো পরিক্ষা তৈরি করেই ফেলে আমি আগ্রহ নিয়ে সেই পরীক্ষার ফলাফল দেখবো এবং মেনেও নিবো। কথা হলো আমরা যা পরিমাপ করি তার সাথে পরিমাপিত বিষয়ের সরাসরি সম্পর্ক থাকে, আমরা যন্ত্রিক উৎকর্ষতা দিয়ে অনেক ভৌত গুনাবলিকে ব্যাবহার করে প্রকৃতিকে যাচাই করার চেষ্টা করছি, সেসব গুনাবলিকে যাচাই করছি এবং বৈজ্ঞানিক সত্য হলো এমন যে আমরা যতগুলো বৈজ্ঞানিক তত্ত্বপ্রদান করি না কেনো সেসব তত্ত্বকে অবশ্যই পূর্ববর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত সিদ্ধান্তগুলোকে সমর্থন করতে হবে। যদি কোনো তত্তবপূর্ববর্তি কোনো পরীক্ষনের ব্যাখ্যা দিতে ব্যার্থ হয় সেই তত্তব বাতিল ঘোষিত হবে। এখানে আমাদের মান অভিমানের কোনো সুযোগ নেই, আমাদের পক্ষপাতিত্বের কোনো সুযোগ নেই।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন