সাদিকের জন্য খারাপ লাগছে, বেচারা ইতিহাস তুলে ধরতে চেয়েছিলো, জঘন্য ইতিহাস, মানুষের গোত্র আনুগত্য কিভাবে মানুষের বিবেচনাবোধকে অন্ধ করে ফেলে।
মুহাম্মদের মৃতু্য হয় 8ই জুন, 632 খ্রিস্টাব্দ, মুসলিমহিসাবে হিজরি 12ই রবিউল আউয়াল। এখানে কিছু মত এবং ভিন্ন মত আছে, শিয়াদের মতে বিদায় হজ্জের সময় মুহাম্মদ ঘোষনা করেন তার মৃতু্য আসন্ন এবং তার উত্তরসূরি হবে আলি ইবন আবু তালিব,এবং অন্যরা দাবি করে কোনো উত্তরসূরি নির্দিষ্ট করা হয় নি।
যাই হোক ইতিহাসের এই পাতাটা খুব বিতর্কিত এবং সুনি্ন ইতিহাসবিদ এবং শিয়াদের মধ্যে সামান্য মতভেদ থাকলেও এটা সবাই স্ব ীকার করে নিয়েছে
মুহাম্মদের মৃতু্যর পর পর তার দাফন করানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলো তার কন্যা ফাতিমা এবং তার জামাই আলি, এবং তার ঘনিষ্ঠ আত্মিয়রা ঠিক একই সময়ে মদিনা অধিবাসি আনসারদের বিভিন্ন গোত্র মুসলিমদের পরবর্তি নেতা নির্বাচনের জন্য একটা সভা আয়োজন করেন, মককা থেকে হিজরত করা মুজহারিনরা এই সংবাদ পায় যে তাদের অংশগ্রহন ব্যাতীত মুসলিমদের পরবর্তি নেতা নির্বাচনের কাজ চলছে, তারা সেই সভায় উপস্থিত হয়, আবু বকর এবং উমর দ্্রুত সেই সভায় উপস্থিত হন।
আবু বকর আনসারদের উদ্দেশ্যে বলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত কথাটা ( এখানে বুঝতে হবে ইসলামের যেই ধারনার কথা আমরা বর্তমানে বলি সেটা ঐ সময়ে অনুপস্থিত ছিলো, মানুষের মানুষের সাম্য, মসজিদে ধনী গরিব ভেদাভেদ নেই এই সব কল্পনার অবস্থান ছিলো না প্রাথমিক মুসলিম মননে। এমন কি মুহাম্মদ নিজেও শুধুমাত্র মৃতু্যর কিূ দিন পূর্বে ব্যাতিত সব সময় ইমামতি করেছেন, এমনও নজীর আছে হাদিসে নামাজের ওয়াক্ত অতিক্রান্ত হওয়ার পরও, (যদিও জোহরের নামাজের ওয়াক্ত নিয়ে একটা দন্দ্ব আছে, বলা আছে জোহরের নামাজ শুরু করতে হবে যখন সূর্য সামান্য পশ্চিমে ঢলে পরে তখন, যখন এর উত্তাপ কমে যায় কারন দুপুরের রোদের প্রখর তাপ আসলে নরকের অগি্নকুন্ডের উত্তাপ, সেই আগুনে পুড়ে নামাজ পড়া উচিত নয় তাই উত্তাপ কমে আসলে জোহরের নামাজ পড়তে হবে, এটা বুখারির হাদিস এবং এই হাদিস বর্ননা করেছে অন্তত 4 জন, )কিন্তু এমনও ঘটনা ঘটেছে সবাই নামাজের জন্য মসজিদে উপস্থিত কিন্তু মুহাম্মদ নামাজের সময় পিছিয়েছে, তার গোসল ওজু প্রাতঃকৃত্যাদি সম্পন্ন হওয়ার পর নামাজ শুরু হয়েছে। আমার আপত্তি এই জায়গায় যে ইসলামের মূল নীতিতে আছে ইশ্বর আনুগত্য, একদল মানুষ ইশ্বরের উপাসনা করতে মসজিদে উপস্থিত এবং তাদের নেতা হিসেবে সাম্য বাদের বানী প্রচার কারি মুহাম্মদের উচিত ছিলো নিজের স্বেচ্ছাচারিতা না দেখিয়ে অন্য কাউকে ইমাম করে নামাজ শুরু করতে বলা, অন্য সব মুসলিমদের জন্য এই নিয়ম বরাদ্দ কারো জন্যই নামাজের ওয়াক্ত থেমে থাকে না বরং নামাজ শুরুর সময়ে নামাজ শুরু হবে এবং যারা এই সময়ে উপস্থিত হবে না তাদের জামাতের সাথে নামাজ পড়ে বাকি অংশটা একা একা পড়তে হবে, মুহাম্মদ নিজেই এই নিয়ম মানে নি, তার অনুসারিরা নিয়মানুবর্তি হবে এমনটা আমি আশা করি না, নেতার দেখানো পথেই অনুসারিরা গমন করে এমনটাই দস্তুর। যাই হোক আবু বকরের কথায় ফিরে আসি, তার উদ্ধত্যপূর্ন উচ্চারন ছিলো, কুরাইশ বংশই মুসলিমদের নেতৃত্ব দিতে পারবে, এটাই স্ব ীকৃত যে কুরাইশরাই সম্ভ্রান্ত বংশভুক্ত। তার অভিমত অনুসারে উমর কিংবা আবু উবায়া এই দু জনের মধ্যে এক জনকে বেছে নিতে হবে পরবর্তি নেতা হিসেবে,
এক দল আনসারের মতে আনসারদের মধ্য থেকে একটা নেতা তৈরি করা হোক এবং মককার অধিবাসিরা একটা নেতার নাম বলুক, এবং এই নিয়ে প্রচন্ড বাকবিতন্ডা হয়, এই সময় উমরের ভাষ্য মতে তার মনে হয়েছিলো মুসলিম উম্মাহ বিভক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে তাই তিনি আবু বকরকে নেতা হিসেবে স্ব ীকৃতি দেন এবং মককার বাকি অধিবাসিরা এই মতের সপক্ষে শ্লোগান দেয়।
অন্য দিকে একদল মুসলমান আলিকে তাদের নেতা হিসেবে মেনে নেন, এবং তারা আবু বকরের আনুগত্য মেনে নিতে অস্ব ীকার করেন, তাদের আলীর অনুসারি এবং কখনও কখনও প্রাথমিক ইসলামের ইতিহাসে বিদ্্রোহী বা অস্ব ীকার কারি বলা হয়, আলী নিজেও এই আষনুগত্য মেনে নেন নি প্রথম দিকে।
এই ঘটনার পরের দিন উমর একটা সভা ডেকে সবার সামনে আবু বকরকে মুসলিমদের নেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। যদিও আলি পরবর্তিতে আবু বকরেরআনুগত্য মেনে নেন কিন্তু আলীর অনুসারিদের মধ্যে একটা বঞ্চনার অনুভুতি শেষ পর্যন্ত ছিলোই। এই বিভেদ সমস্ত ইসলামের ইতিহাসে বিদ্যমান। পরবর্তিতে শিয়া'তে আলি বা আলীর অনুসারিদের সংক্ষেপে শিয়া বলা হয়, এবং তাদের বিদ্্রোহি বা আনুগত্য অস্ব ীকারকারি হিসেবে চিহি্নত করা হয়ে থাকে।
যাই হোক আবু বকরের নেতৃত্ব মেনে নিতে যারা অস্ব ীকার করেছিলো তাদের সবাইকে আবু বকর বুঝানোর চেষ্টা করেন কয়েক মাস এবং অবশেষে সবাই আবু বকরের আনুগত্য মেনে নেয়।
অন্য একটা দন্দ্ব আছে এর মধ্যে , মুহাম্মদ গনিমতের এক পঞ্চমাংশ পেতেন প্রতিটা যুদ্ধ জয়ের পর পর, এবং এই কথার সত্যতা কোরান এবং হাদিসে রয়েছে যে যুদ্ধলব্ধ ধনের এক পঞ্চমাংশ মুহাম্মদের , এবং মুহাম্মদের মৃতু্যর পর এই সম্পদ দাবি করেন ফাতিমা, তাকে এই সম্পদ দিতে অস্ব ীকার করেন আবু বকর। ফাতিমার মৃতু্যর ইতিহাস অন্ধকারে ঢাকা। কেউ কেউ দাবি করে উমরের অনুসারিদের প্রহারে গর্ভবতি ফাতিমার গর্ভপাত হয় এবং এই জনিত অসুস্থতায় তার মৃতু্য হয়, এবং তাকে গোপনে দাফন করা হয়। কিন্তু সুনি্ন ইতিহাসবিদরা এই দাবিকে মেনে নেন না যদিও তাদের ভাষ্য মতে ফাতিমাকে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছিলো তা তারাও নিশ্চিত নয়, বিভিন্ন মানুষের মতভেদ দেখে একটা বিষয় অনুমান করা যায় এই ঘটনাতে কিছু গোপনীয়তার বিষয় আছে। হয়তো শিয়াদের দাবি অনুযায়ি আয়েশার চক্রান্ত, আবু বকরের নেতা হয়ে যাওয়া এবং সম্পদের অধিকার নিয়ে দন্দ্ব এই নির্মম হত্যা ঘটেছে তার সবটাই সঠিক নয় তবে ফাতিমা যে এই সম্পদের দাবি নিয়ে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন এবং উমর এবং আবু বকরের সাথে তার মতভেদ ছিলো এই সম্পদের উত্তরাধিকার নিয়ে এইটা বুখারি ঘাটলেই বুঝা যায়।
ফাতিমার মৃতু্যরপ র আলি উমরের কাছে এই সম্পদের দাবি নিয়ে যান, এবং তাকেও এই সম্পদের উত্তরাধিকার বঞ্চিত করা হয়।
মুহাম্মদের মৃতু্যর পর পর একটা বিশৃংখলা দেয়া দেয়, অনেক গোত্রই মুসলিমদের আনুগত্য মেন নিতে অস্ব ীকৃতি জানায় এবং আইু বকরকে এসব গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়।
তার মৃতু্যর আগে আগে আবু বকর জনতাকে অনুরোধ করেন তার পরবর্তি নেতা হিসেবে উমরকে মেনে নেওয়ার জন্য। 634 ক্রিস্টাব্দের 23শে আগস্ট আবু বকর মৃতু্য বরন করেন এবং এর পরে উমর মুসলিমদের নেতা হন।
তার খেলাফতের সময় মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয় বহুগুন, তিনি জেরুজালেম দখল করেন, এবং আততায়ির ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তিনি একদল উত্তরসূরি নির্দিষ্ট করে যান( যারা সুনি্নদের প্রথম দাবিটা পড়েছেন মুহাম্মদ শুরা বা জন মতের ভিত্তিতে নেতা বাছাইয়ের কথা বলেছেন যেমনটা সুনি্ন ইতিহাসবিদেরা দাবি করেন, তাহলে আবু বকর কেনো তার উত্তরসূরি নির্দিষ্ট করলেন, এটা সুন্নাহ র বিরোধি কাজ, উমরও একই কাজ করেছেন, তার অনুমোদনপ্রাপ্ত নেতৃত্ব হলো ।
আবদ আল রহমান ইবন আওফ
সাদ ইবন আবি ওয়াককাস
উসমান ইবন আফফান
আলি ইবন আবু তালিব
যুবাইর ইবন আল আওয়াম
তালহা ইবন উবায়েদ আল্লাহ
আলী আবু বকরের নেত্বরত্ব গ্রহনের পর থেকেই জনবিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করেন, এবং নেতা নির্বাচনের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, তাই উমরের উত্তরসূরি হিসেবে ছিলো 5 জন , এবং এদের মধ্যে থেকে উসমানকে বাছাই করার কারন হলো সবার ধারনা ছিলো উমরের গৃহীত নীতির অনুসরন করবে উসমান।
আল তাবেরির বক্তব্যটা গুরুত্বপূর্ন যেহেতু এই মানুষটা প্রাথমিক ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম এক স্তম্ভ- তার ভাষ্য মতে উমরের বক্তব্য ছিলো
আমি এই ছয়জনকে ভবিষ্যত নেতা হিসেবে স্ব ীকৃতি দিলাম, তোমরা ছয়জন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একজনকে নেতা হিসেবে মেনে নিবে, এবং বাকি 5 জন তার আনুগত্য স্ব ীকার করবে, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ স্ব ীকৃত নেতার বিরোধিতা করে তবে তাকে হত্যা করো। যদি 4 জন এক নেতার পক্ষে ভোট দেয় এবং বাকি 2 জন অন্য নেতার পক্ষে তবে বাকি 2জনকে হত্য করো। যদি 3জন 3জন হয় তবে এই ক্ষেত্রে বাছাই করার অধিকার আছে আবদুর রহমান ইবন আউফের। তোমরা আনসারিদের নেতাদের এখানে আমন্ত্রন জানাতে পারো তবে মুসলিমদের নেতা হবে মককাবাসিদের কেউ আনসারিদের কেউ মুসলিমদের নেতা হবে না।
(আল তারাবির ইতিহাস 3য় খন্ড )
উমরের মৃতু্যর আগে আগে উমর আবু তালহা আনসারিকে ডেকে পাঠান এবং বলেন তুমি 50 জন সৈন্য বাছাই করে নেতা নির্বাচনের কাজটা তদারকি করবে, অবশ্যই খেয়াল রাখবে এই 6 জনের মধ্যে থেকে আগামি 3 দিনের মধ্যে যেনো একজনকে খলিফা মনোনিত করা হয়। স্বজনপ্র ীতির অভিযোগ আছে উসমানের বিরুদ্ধে উমরের খেলাফতের সময় মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি এর বিভিন্ন অংশের মধ্যে দন্দ্ব তৈরি করেছিলো, এবং উসমান তার নিকটজনদের বিভিন্ন প্রদেশের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। তার নিয়োগকৃত শাসকদের বিরুদ্ধে দূর্নিতীর অভিযোগ বিস্তর, এবং এদের একজন আবু বকরের সন্তানকে হত্যা করেন, এই জন্য আয়েশা উসমানের সাথে বিরোধে জড়িয়ে যান।
যাই হোক উসমান বিদ্্রোহি মুসলিম সৈন্যের হাতে নিজগৃহে কোরানপাঠরত অবস্থায় নিহত হন এবং আলি খলিফা হন। আলির বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো উসমানের মৃতু্যর তদন্ত কার্যে তিনি অনিহা দেখান, এবং এই সময়ে আয়েশা প্রত্যক্ষ্য বিরুদ্ধে যান আলির। আয়েশা 2জনকে খলিফা হিসেবে মনোনিত করেন এবং এই 2 জন আলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। এই বিদ্্রোহি গোষ্ঠি যুদ্ধে পরাজিত হয়, তালহা যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন এবং আয জুবায়ের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান এবং পরবর্তিতে নিহত হন। এই 2জনকে প্ররোচনা দেন আয়েশা।
খারেয়াজি বলে মুসলিমদের একটা অংশ বিদ্্রোহি হয়ে উঠে এবং তাদের ভাষ্য মতে আর কোনো খলিফার প্রয়োজন নেই, মুসলিমরা কোরানের আলোকে নিজেদের শাসন নিজেরাই করতে সক্ষম এবং এই বিদ্্রোহি গোষ্ঠি আলি , মুয়াইয়াহ এবং আমরের বিরুদ্ধে হত্য প্রচেষ্টা চালায়, মুবাইয়া এবং আমর বেঁচে গেলেও আলির বিরুদ্ধে করা হত্য প্রচেষ্টা সফল হয় এবং আলি মস্তিষ্কে আঘাত জনিত কারনে মৃতু্য বরন করেন। তাকে কুফায় তরিঘড়ি দাফন করা হয়।
যাই হোক ইতিহাসের এই পাতাগুলো দেখে এই বিশ্বাস আসে যে 4 জন খলিফার মনোনয়ন নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। এমন কি এই যে সিদ্ধান্ত মদিনাবাসিরা কেউই মুসলিমদের প্রকৃত নেতা হওয়ার যোগ্য নন এটাও ইসলামের শিক্ষার সাথে সাযুজ্য পূর্ন নয়। এবং এদের 3জন আততায়ির হাতে নিহত হন। আবু বকর বার্ধক্য জনিত কারনে মৃতু্য বরন করেন। এবং এই সব ইতিহাস পাওয়া যায় প্রাথমিক মুসলিম িতিহাসবিদদের কাছ থেকে, এদের সত্যতা নিয়ে সামা্য সংশয় যাদের আছে তারা প্রথমিক মুসলিম ইতিহাসবিদদের বই ঘাটতে পারেন।
আল বালাধুরি
ইবন ইসহাক
আল তাবেরি
আল ওয়াকিদি
একেবারে প্রাথমিক মুসলিম ইতিহাসবিদ।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন