সভ্যতা

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শুক্র, ১৯/০৫/২০০৬ - ৪:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সভ্যতার বিকাশ য়েছে নদীর আশে পাশে, অন্তত আমরা যেসব সভ্যতার সাথে পরিচিত সবগুলোর উৎসই নদীকূলবর্তি অঞ্চল, তবে সভ্যতার বিকাশে অন্য একটা বিষয় চোখ এড়িয়ে যায়,যেই ফাঁক দিয়ে হারুন ইয়াহিয়ার মতো চালিয়াতেরা বলতে পারে পৃথিবীতে সভ্যতার বিভিন্ন স্তর এখনও বর্তমান সুতরাং এই একই রেখা অতীতে টেনে নিয়ে গেলে দেখা যাবে সভ্যতার অসম বিস্তার সব সময়ই ছিলো পৃথিবীতে।
সভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে অন্য একটা নিয়ামক হলো অন্য সব সভ্যতার সংস্পর্শ, কথাটা বর্তমানের প্রেক্ষিতে যেমন সত্য অতীতের সময়ও একই ভাবে সত্য ছিলো, মানুষের মেধাপাচারের ইতিহাস সহস্রাব্দ প্রাচীন। ভারত থেকে জ্ঞান পাচার হয়ে গেছে গ্র ীসে, গ্র ীসের জ্ঞান গেছে নীলনদ অববাহিকায়, আবার মিশর থেকে জ্ঞানের প্রবাহ গেছে ভূমধ্য সাগর হয়ে ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলে, আবার তুরস্ক হয়ে একটা ধারা গেছে রাশিয়ায়, অন্য একটা ইরান হয়ে আফগানিস্তান হয়ে প্রবেশ করেছে ভারতে। এই ছড়িয়ে পড়ার জগতে অনেক অংশই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে তাই সভ্যতার সব আলো খুব সীমিত কিছু ভূখন্ডে বিকশিত হয়েছে বাকি সব অঞ্চল সহজগম্য নয় বিধায় পিছিয়ে থেকেছে সভ্যতার রিলে রেসে।
ইন্দোনেশিয়ার আদিবাসি, আফ্রিকার আদিবাসি, এমন কি আমাজান বনভূমিতে বেড়ে ওঠা সভ্যতাগুলো সবাই সভ্যতার একই পর্যায় থেকে শুরু করেছে, কিন্তু পর্যাপ্ত উপযোগ ছিলো না বিদঃায়, অনেক সভ্যতাই এখনও প্রাথমিক স্তরে থেকে গেছে, কিন্তু মানবপ্রজাতির বিলিপ্তি হয় নি, খাদ্য এবং পানির সংস্থান ছিলো তাই তারা টিকে থেকেছে, কিন্তু সভ্যতার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের মানুষগুলোর সংঘবদ্ধ জ্ঞান আসে নি বলেই কিছু সভ্যতা এখনও প্রস্তরযুগেই থেকে গেলো।
অন্য আরেকটা বিষয় হলো উপকরনের প্রাপ্যতা-
যেখানে ধাতব আকড় নেই সেখানে ধাতুভিত্তিক সভ্যতা শুরু হওয়ার সম্ভবনা নেই, অর্থ্যাৎ সভ্যতার জন্য প্রয়োজনীয় উপযোগ এবং চাহিদা না থাকলে সভ্যতা ধাপে ধাপে বিকশিত হবে না।
সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায় প্রস্তর যুগ, পাথরের তৈজস, পাথরের অস্ত্র, এবং এই থেকে তাম্র যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ, লোহা যুগ, এসব ধারাবাহিক ধাপের অনেক অংশই অনেক সভ্যতা পারি দিতে পারে নি,
সভ্যতার বা মানবের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ ছিলো বিষুবীয় অঞ্চলে, অন্তত এই একটা অঞ্চল জীব বৈচিত্রে পরিপূর্ন তাছাড়া, মানবের প্রাথমিক পাশুবত লোমশ শরীর থেকে আগুনের আবিস্কারের পর লোম ঝড়ে গেলেও সন্তান লালন পালনের জন্য প্রয়োজনীয় উত্তাপের ব্যাবস্থা বা জীবনবিকাশের সহায়ক অবস্থা বিষুবীয় অঞ্চলে অঢেল।
সে খানে কোন এক নদীর উপত্যকায় সভ্যতার শুরু, মানুষ যাযাবর জীবন থেকে স্থিতু, কৃষিজীবি জীবনে বিবর্তিত হওয়ার সময়ও শিকারের এবং শিকারিপুরুষের যুগ ছিলো, মানুষ পশুপালন করলো, মানুষ নদীতে চলাচলা উপযোগি যান তৈরি করলো, অনেক কিছুই ঘটছে সভ্যতায়। কিন্তু এই ধারাবাহিকতাটা একই রকম। হয়তো অন্তে গিয়ে সামান্য পরিবর্তন হয়েছে এসব সভ্যতার গতিপথে, যেমন মরুচারী যাযাবরেরা যুদ্ধবাজ জাতি, নদীঅববাহিকার মানুষের শান্তিপ্রিয় সৃষ্টিশীল জাতি, পাহাড়ের মানুষ পরিশ্রমি এবং কঠোর, এসব প্রাকৃতিক গুনাবলী এখনও খানিকটা টিকে আছে,
একটা কথাই বলা যায় প্রয়োজন মানুষকে সৃষ্টিশীল করে, এবং বিভিন্ন যন্ত্র আবিস্কার হয় সামাজিক প্রয়োজনে, মানুষ পাশুপালন শুরু করার পর মানুষের আসলে খাদ্য সংকট ছিলো না, এই পর্যায়ে সমাজের গঠন বদলানো শুরু করলো, সমাজের গঠন বদলানোর সাথে সাথে সামজে পেশাজীবি শ্রেনী বিভাজন শুরু হলো।
এখনকার মতো পুস্তক বা প্রথাগত শিক্ষাব্যাবস্থার অনুপস্থিতি এই বিষয়টার জন্ম দেয়। তখন মানুষের পেশা তার যাবজ্জিবন অভিজ্ঞতার মিশেল। যেই পরিবারে যেই কাজের প্রচলন ছিলো সেই কাজ করেই বেড়ে উঠতো সেই পরিবারের শিশুরা এবং তাদের অনায়াস দক্ষতা তাদের জীবিকার পথ সুগম করে দিতো। অন্য শ্রেনীর মানুষ কখনই ভিন্ন পেশা গ্রহন করে নি এমন না, সবাই সব পেশা বেছে নিতও তবে পেশাজীবিদের ক্ষেত্রে বংশতালিকার ভুমিকা ছিলো বেশী। কামারের ছেলা কামার না হয়ে নৃপতি হতে পারে কোনো সমস্যা নেই তবে বেশীর ভাগ সময় কামারের ছেলের ভবিষ্যত পেশা ছিলো কামার। এই কথাটাই বিবেচ্য।
এবং সমাজের সাথে রাষ্ট্রকাঠোমো শাসনব্যাবস্থার উদ্ভব। প্রশাসনিক শ্রেনীবিভাগ, শাসন কাঠানো, দখল সাম্রাজ্যবিস্তার, এবং অর্থনীতির বিস্তার। কথাগুলো মার্ক্সবাদি লাগলেও সভ্যতার বিকাশ নির্ণয়ে এই ধাঁচের বিকল্প কিছু নেই,
এবং এই একটা পর্যায়ে বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে সংমিশ্রন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় শুরু, অস্ত্র এবং গেরোস্থালী জিনিষপত্র বিনিময়, নির্মান কৌশল বিনিময়, এবং পারস্পরিক গ্রহন বর্জনে একটা নির্দিষ্ট ধাপে উত্তরন, এবং এভাবে বিভিন্ন ছড়ানো ছিটানো সভ্যতা থেকে ডিফিউশনের মাধ্যমে সভ্যতার বিভিন্ন উপকরন এবং জ্ঞান একটা সামগ্র ীক সাম্যাবস্থায় পৌছায়।
ভৌগলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন বা দূর্গম সভ্যতাগুলো এই বিনিময় প্রথার বাইরে থেকে যায় স্বভাবতই। এবং তাদের সভ্যতার বিকাশ একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে গিয়ে থেমে যায়।
প্রাথমিক সভ্যতায় দঃর্ম বলে কোনো আলাদা অস্তিত্ব ছিলো না, বরং লোকায়ত বিশ্বাস এবং জীবনযাপনধারা বলে একটা বিষয় ছিলো, ধর্মের উদ্ভব সভ্যতা বিকশিত হওয়ার একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের বিষয়। যখন মানুষ সভ্যতার পর্যায়ে এমন ধাপে উপনীত হয়েছে যেখানে রূপকের ব্যাবহার এবং মানুষের বিশ্লেষনী ক্ষমতার প্রয়োগে মানুষ প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো ব্যাখ্যার চেষ্টা করে কিছুটা সফল, কিছুটা অজ্ঞাত পরিনতি সম্পর্কে, এই না জানার বিষয়টা অধিবিদ্যা দিয়ে পূর্ন করা, প্রথার বিবর্তন, মানুষের বোধে বিমুর্ততা সৃষ্টি অনেক রকম মিথস্ক্রিয়ার বিষয় এটা। যারা নৃতত্ত্ব নিয়ে বেশ অনেক দিন পড়ছে তারা এর সলুক সন্ধান দিতে পারবে সঠিক ভাবে। সভ্যতার কোন পর্যায়ে ধর্মের আবির্ভাব হলো।
আমার বক্তব্য যেখানে ছিলো সেখানে ফিরে যাই।
কেনোস ভ্যতা গুলোর মধ্যে এমন অসাম্য বিদ্যমান, কারন জ্ঞানের অবাধ প্রবাহ ছিলো না, আমাজানের ঝঙ্গলের অর্থনৈতিক উপযোগিতা সীমিত, সেখানে সভ্যতার বিনিময় করতে যাওয়া হ্যাপা সামলাবে কে, তাই এখনও সেখানে গেলে কাঠের তীর ধনূক দেখা যায়, প্রাকৃতিক বিষের ব্যাবহার করে তারা পশুশিকার করে, সময়ের সাথে অন্ন সংস্থানের পরিমান বাড়ায় তারা একটা আদিম সমাজ তৈরি করেছে, বহুদিনের সহঅবস্থানে কিছু সামাজিক নিয়মনীতি তৈরি হয়েছে, কিন্তু প্রথাগত ধর্ম বা উপাসনার ধাঁচ তৈরি হয় নি,
এবং যাযাবর মানুষের যেসব অংশ ঘুরতে ঘুরতে একেবারে দূর্গম অঞ্চলে গিয়া আবাস গড়েছে সেখানে পৌছানোর মতো তথ্য কারো ছিলো না, যখন বিভিন্ন সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করেছে, সেই ভুখন্ডের অনেক মানুষেরই এই সব রাষ্ট্রিয় পরিবর্তন অজানা থেকে গেছে, মানুষ বিভিন্ন উপকথার জন্ম দিয়েছে, মানুষের অজ্ঞাত বিষয়ের ভীতি মানুষের রূপকথার রাক্ষস- মৎস্যকুমারি সহ নানা লোককথার জন্ম দিয়েছে, এসবের উৎস সেই সব দূর্গম প্রদেশের মানুষ যাদের সাথে সংস্কৃতিগত বিচ্ছিন্নতায় সভ্যতার মূল অংশের মানুষের কোনো যোগাযোগ ছিলো না।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।