মুসলিম বিজ্ঞানী বলে এক গরূরের ছানার কথা শুনছি আমি, সেই বিজ্ঞানীরা কারা এবং তাদের অবদান কি বিজ্ঞানে এ বিষয়টা নিয়ে আমার একটু কৌতুহল তৈরি হয়েছিলো, যদিও তেমন বিশেষ কিছু পেলাম না তবে একেবারে তাক লাগানো কোনো তত্ত্ব তারা তৈরি করতে পারে নি বোধ হয়, যাই হোক পরিচিত কিছু নাম যাদের কথা মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবে চলে আসে তাদের সবার ধর্ম যে ইসলাম তাও নয়, বরং এটা বলা ভালো হবে যে যখন ইসলামি সাম্রাজ্যবাদের শুরু তখন বিশাল একটা ভূখন্ড মুসলিমদের শাসনে ছিলো, এই বিশাল ভূখন্ড আরব উপদ্্ব ীপ থেকে রাশিয়ার কিছু অংশ, অন্য দিকে ইরান হয়ে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত, এবং অন্য দিকে তুরস্ক, স্পেন, এবং আফ্রিকার ভূমধ্য সাগরের তীরবর্তি অংশ, মিশর, সুদান, এসব অঞ্চলও মুসলিম শাসনাধীন ছিলো,
বর্তমানের ইরাক, প্রাচীন 3টা সভ্যতার জন্ম দিয়েছে, মিশরের প্রায় 5000 বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, অন্য দিকে গ্র ীক সভ্যতার 3000 বছরের পুরোনো ঐতিহ্য, রোমান সভ্যতা, এ দিকে পারস্যের সভ্যতা, আরব উপদ্্ব ীপের ভৌগলিক অবস্থানটা বিবেচনা করলে দেখা যাবে এই অঞ্চলে প্রাচীন সভ্যতার রমরমা অবস্থা ছিলো, আমরা যেটাকে মুসলিম সভ্যতার বিজ্ঞানে অবদান বলছি তার জন্য ইসলামের কোনো অবদান নেই, ইসলামী দর্শন এই চর্চাকে গতিশীল করেছে এই প্রশ্নটার উত্তর যারা এ কথা বলছে তাদের খুঁজতে হবে, আমার নিজস্ব অভিমত সে সময়টায় এই অঞ্চল মুসলিম শাসনাধীন ছিলো এবং বেশ কিছু মুসলিম শাসক এদের পর্যাপ্ত অর্থ সাহায্য এবং সহযোগিতা দিয়েছেন, বেশ কিছু শাসন নিজেই বিজ্ঞানচর্চা করেছেন, কিন্তু এমন প্রমান পাওয়া যায় না যে তারা ইসলামের দর্শনের অনুপ্রেরণায় এই কাজগুলো করেছেন, বা তাদের প্রেষণা ছিলো ইসলামি দর্শন।
একটা জনপ্রিয় হাদিস আছে, দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানের সন্ধান করো, প্রয়োজনে চীন দেশে যাও। ভালো উপদেশ কিন্তু এই উপদেশ বাস্তবায়নের জন্য কি শাসকেরা এই কাজ করেছে?
উমাইয়া বংশের এক রগচটা শাসক নীল নদের উজানে বাঁধ দিতে চেয়েছিলেন, যাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়, সে বাঁধের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে আসে যে তার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়, কিন্তু শাসকের রোষ থেকে বাঁচার জন্য তাকে আরও 12 বছর পাগল সেজে থাকতে হয়েছিলো। ব্যাক্তি জীবনে সে ধর্ম পালন করতো না, কিন্তু সে বেশ বিখ্যাত একজন বিজ্ঞানী।
আমরা এই শব্দগুচ্ছের অর্থ করবো এমন যে, মুসলিম শাসনাধীন ভূখন্ড যেসব বিজ্ঞানীরা ছিলো তাদের সবাইকেই মুসলিম বিজ্ঞানী বলা হবে, তাদের ধর্ম বিশ্বাস যাই হোক না কেনো যেহেতু তারা মুসলিম শাসনাধীন এলাকা থেকে এসেছে তাই তারা মুসলিম।
এই বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ ইহুদি, কেউ কেউ খ্রিষ্টান, কেউ কেউ পার্সি হতে পারে, এটা বিবেচনা না করেই তাদের মুসলিম করে ফেলা হবে।
খ্রিষ্টান বিজ্ঞানি যারা সে সময় মুসলিম শাসকদের সহায়তায় বিজ্ঞান চর্চা করেছেন-
ঐতিহাসিক এবং চিকিৎসক আবুল ফারায,ইসহাক ইবন হুনায়ন, হুনায়ন ইবন ইসহাক, আলী ইবন রিজওয়ান, ইসা ইবন আলী,
ইয়াকুত আল হামায়ি, আল খাজিন এর পূর্বপূরূষ গ্র ীক,
ইহুদি বিজ্ঞানী হাসদাই ইবন শাপরুত, মাইমোনিদেজ,
মজার বিষয় হলো অন্য সব বিজ্ঞানীদের মধ্যেও আরব বংশভূত বিজ্ঞানী হাতে গোনা, বরং ইরানি, তুর্কি,কূর্দি সহ বিভিন্ন জতিসত্ত্বার মানুষ মুসলিম শাসনআমলে বিজ্ঞান চর্চা করেছে। যাই হোক আমরা এরপর ও এদের মুসলিম বিজ্ঞানি বলবো এবং এদের অবদানকে মুসলিমদের অবদান বলবো, এই অনুমানের পরবর্তি অংশ হলো তারা বিজ্ঞানে কি অবদান রেখেছিলো- যে জন্য আমাদের হন্যে হয়ে ভাবতে হবে তারা এমন একটা উজ্জল যুগ এনেছিলো,
ইতিহাস ঘাটলে যেই সত্যটা সামনে আসে, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে অবদানটা এসব মানুষেরা রেখেছে তার বেশীর ভাগই আরবের লোকজন নয়, আরবের লোকজনের ভেতরে বিজ্ঞানবোধ কম এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে, বরং যেসব বিজ্ঞানির কথা আসছে তাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বিবেচনা করে দেখা যাক, মেসোপটোমিয়া সভ্যতা, পার্সিয়ান সভ্যতা । মিশরীয় সভ্যতা, এবং অন্য যারা তারা বেশীর ভাগই পরে মুসলিম হয়েছে, ধর্মান্তরিত মানুষের অবদান বেশী।
প্রথম যেই ভালো কাজটা হয়েছে এই মুসলিম শাসনাধীন ভূখন্ডে সেটা হলো অনুবাদের কাজ, ভারত- পারস্য, গ্র ীক, পুস্তকের আরবি অনুবাদ হয়েছে, ভারতিয় অংক শাস্ত্রের সামান্য উন্নতি করা হয়েছে, দ্্বিঘাত সমীকরনের সমাধান, ত্রিঘাত সমীকরনের সমাধান হয়েছে, আমরা বীজ গনিত বলে গনিতের যে শাখার কথা বলি তার উৎসভূমি ভারত, সেখান থেকে আল জাবেরীর হাতে অনুদিত হয়ে তারা ইউরোপে প্রবেশ করে, তবে গণিতের কিছু সমাধান মুসলিম শাসনাধীন আমলে হয়েছে, এটা সত্য কথা, যেকোনো জ্ঞানের চর্চার ধারাবাহিকতা থাকে, সমস্যার সমাধান হয় কালানুক্রমিক ভাবে, এটাই সভ্যতার মূল শক্তি, এখানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা কথা ভাবা হয়, সবাই মিলে জ্ঞানের মশাল সামনে নিয়ে যায়।
পরবর্তি যে অংশটা এসেছে তা হলো জ্যোতির্বিজ্ঞান, টলেমির তালিকাভূক্ত তারকাদের অবস্থান নিরূপন করা, তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার জন্য বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়, গ্রন্থিত তারার সংখ্যা বেড়েছে, মুসলিমদের হাতে, কিন্তু মূলগত কোনো নতুন আবিস্কার বা দর্শন তারা দিতে পারে নাই। ধারনা বা জনশ্রুতি যেহেতু কোনো স্পষ্ট প্রমান নেই তবে মুহাম্মদের ধারনা ভূল প্রমানিত করেছিলো আল বিরূনি, পৃথিবীর নিজ অক্ষে ঘুরপাক খাওয়া হলো দিন রাত্রির পেছনের কারন, মুহাম্মদ তার এক বিখ্যাত হাদিসে বয়ান করেছেন সূর্যদেব পূর্বাকাশে উদিত হয়ে সারাদিন চলে ফিরে পশ্চিমাকাশে গিয়ে অবকাশ যাপন করেন এবং পরম করূনাময়ের আসনের নীচে গিয়ে পরবর্তি দিনে উঠবার অনুমতি চান, কিন্তু কেয়ামতের দিন তাকে সেই অনুমতি দেওয়া হবে না।
আমি খুব খুশি ছিলাম কিন্তু কেয়ামতের ভয়াবহ বর্ণনা পড়ে আবারও খটকা লেগে গেলো সেদিন সূর্য উদিত হবে, আবার পড়লাম এক হাতে সূর্য আর অন্য হাতে চাঁদ নিয়ে মানুষের মহাবিচার সভা পর্যবেক্ষন করবেন ইশ্বর, বড়ই গোলমেলে বিষয়, আমরা আল বিরূনীর কথা ফিরে আসি, যে কিনা ,দাবি করা হয়, বলেছিলো পথীবীর আহি্নক গতি দিবারাত্রির কারন।
এবং মুসলিম বিজ্ঞানীরা একটা বিশাল আবিস্কার করেছে, তারকার অবস্থান নির্নয় যন্ত্র, যা দ্্বারা ুত্তর গোলার্ধের সব জায়গা থেকেই যেকোনো তারার অবস্থান নির্নয় করা যেতো, এমন কি তারার অবস্থান থেকে অক্ষাংশ দ্্রাঘিমাংশ নির্ণয় করা যেতো, বিশদ বুঝি নি, কিভাবে যন্ত্রটা কাজ করতো, কিন্তু এ একটা যন্ত্র বেশ ভালো উদ্ভাবিত হয়েছিলো সে সময়ে।
রসায়নে মুসলিম বিজ্ঞানিদের অবদান হলো বিভিন্ন যৌগকে তালিকাভুক্ত করা, যদিও আধুনিক রসায়নের জন্ম মাত্র 2 শতাব্দি আগে, কিন্তু এর আগের সব কাজই ছিলো তালিকাভুক্ত করা,
এবং সবচেয়ে বড় অবদান আলোকবিজ্ঞানে, যে এই বিষয়ে কাজ করেছে তার গুরুত্ব বিবেচনায় তাকে নিয়ে আলাদা একটা পোষ্ট দিবো যদি কখনও ইচ্ছা হয়, তবে তার বৈজ্ঞানিক মনন এবং তার পর্যবেক্ষণ পরবর্তিতে ইউরোপে অনুদিত হয়ে আসে, এবং ধারনা করা হয়, প্রতইসরনের সূত্রটা সে আগেই লিপিবদ্ধ করেছিলো, লেন্সের সূত্র, গোলীয় দর্পনের সূত্র, এসব বিষয়ে মুসলিম বিজ্ঞানিদের কাজ ভালো।
আমার যা মনে হয়, মুসলিমদের মূল অবদান হলো এই পুস্তকগুলোকে ভবিষ্যতের হাতে পৌছে দেওয়া, এবং তত্তাবধান করা। বস্তুত ইসলামি শাসনব্যাবস্থার কারনেই দূর প্রাচ্য থেকে গ্রিস পর্যন্ত সঞ্চিত জ্ঞান ইউরোপে এসেছে, এবং সেখানে উপযুক্ত চর্চায় তা থেকে যেই জ্ঞানের বিপ্লব হয় তাতে অবদান রেখেছে এই অনুবাদগুলো।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন