পুরোহিত তন্ত্রের উদ্ভব এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যাবহার।

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৫/০৫/২০০৬ - ১০:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রায় 5000 বছর আগে প্রথম ধর্মের রাজনৈতিক ব্যাবহার এবং পুরোহিত তন্ত্রের উদ্ভব হয় মিশরে।এর আগের সভ্যতায় ধর্ম এসেছিলো শাসনের অনুষঙ্গ হয়ে যেমন প্রাচীন ব্যাবিলনিয় সভ্যতা যেখানে সম্রাটরা ইশ্বরের প্রতিনিধি হয়ে রাজ্য শাসন করতো, কিন্তু মিশরের অনন্যতা এখানেই যে ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা এড়াতেই সম্ভবত এখানের প্রথম এবং 2য় রাজত্নত্রের সময়ে সাধারন মানুষকে ধারনা দেওয়া হয় সম্রাট স্বয়ং ইশ্বর যার নাম হোরাস, এবং মিশর যেহেতু ভৌগলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন 2টো অংশে জুড়ে তৈরি, তাই সম্রাটেরও নিরংকুশ আধিপত্য 2টো দেবীর উপরে একটা মিশরের উপরের অংশের পরিচায়ক অন্যটা মিশরের নীচের অংশের পরিচায়ক।
মিশরের সভ্যতার পালাবদলের সূচনা আরও আগে, অনুমান করা হয় প্রায় 2000 বছরের ধারাবাহিকতায় মিশরে রাজতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে, যার প্রথম 1800 বছর হয়তো এর পটভূমি তৈরিতে নষ্ট হয়েছে, এই সময়টাতে মিশরের মানুষের চেতনার বিবর্তন ঘটছে এবং মিশর ভিন্ন ভিন্ন সভ্যতা থেকে বিভিন্ন বিষয় গ্রহন করছে। নীল নদের জলে ভাসছে বিভিন্ন পন্যবাহী নৈকা, বিভিন্ন এলাকা থেকে পন্য এবং সংস্কৃতির আগমন ঘটছে এখানে, মিশর সেসব সংস্কৃতইকে অন্ধভাবে গ্রহন করছে এমন না বরং সেসব সংস্কৃতিট মিশরিয় একটা প্রতিরূপ তৈরি করে তার পর গ্রহন করছে, বেশ গতিশীল একটা সভ্যতা যেখানে মানুষ নতুনকে গ্রহন করতে ভয় পায় না বরং সব সংস্কৃতিকেই সহজে প্রবেশ করতে দিচ্ছে এবং সেসবকে মিশরের উপযোগি করে তুলছে, করে তুলছে অনন্য, সেসব সংস্কৃতির উৎপত্তিস্থল থেকে এখানে তার ব্যাবহার এবং উপযোগিতা ভিন্ন। এই পরিবর্তনের স্বরূপ খুঁজতে হলে দেখতে মিশরের বিবর্তনের ধাপগুলো। মিশরীয়রা খর্বকায় জাতি, পুরুষের গড় উচ্চতা 5 ফুট 6, মেয়েদের গড় উচ্চতা 5 ফুট তবে তারা যুদ্ধংদেহী, সমাধিক্ষেত্র থেকে পাওয়া শবাবশেষ দেখে এটাই অনুমান করা যায় কারন উদ্ধারকৃত শবের হাড়ে অনেক ক্ষত এবং ভাংচুরের ইতিহাস।
প্রাচীন মিশর একেবারে কৃষিভিত্তিক সভ্যতা, কৃষিই প্রধান ঊৎপাদন ব্যাবস্থা, কৃষক সভ্যতার প্রান। এই কৃষিপ্রধান সভ্যতায় রাজতন্ত্র কিভাবে আসে এটা নিয়ে গবেষকদের বিভিন্ন মতবাদ,একটা মতবাদ এমন-
কৃষক ছিলো উৎপাদনের কেন্দ্র, কৃষক বহুমাত্রিক, সে একাধারে উৎপাদক, সেই কারিগর, সেই শ্রমিক, সেই সৈনিক, সেই তাঁতি- ফলে তাদের আবাসস্থল স্বয়ংসম্পুর্ন। এই পর্যায়ে তার অনেকগুলো যন্ত্রের সাথে পরিচয়, সে লাঙল আবিস্কার করেছে, সীমিত মাপে সে সেচ ব্যাবস্থার প্রয়োগ করতে শিখেছে, এবং এই 2এর মিলিত শক্তি তার উৎপাদন ক্ষমতা এবং কর্ষনযোগ্য ভূমির পরিমান বর্ধিত করেছে। এবং একটা পর্যায়ে সে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্নতা অর্জন করেছে, এবং এর পরে খাদ্যউদ্ধৃতি ঘটেছে। বেশী শস্য উৎপাদন এবং বেশী খাদ্য সঞ্চয়ের পরবর্তি প্রভাব পড়েছে তাদের জীবন যাপনে, খাদ্য থাকার অর্থ তার মননশীলতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতার পেছনে মেধা খরচের অবসর আছে, এই সময়টায় মানুষের সামাজিক জীবনের বিনোদনের আগমন, আগমন ঘটে বিভিন্ন বোর্ডভিত্তিক খেলার, আগমন ঘটে ধর্মাচারনের।
অবশ্য উৎসব,শবসৎকার এসব বিষয়ে সামাজিক চেতনাটাই পড়ে ধর্মাচার হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
উৎসবের সময় ফসলের সমৃদ্ধি কামনায় পশু উৎসর্গ করা, ফসল কাটার উৎসব, এবং উর্বরতার প্রার্থনা এবং কাজে সহায়ক উপাস্য কল্পনা যার অনেকেগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিলো ইরাক।
এবং এই উদ্ভাবনের হাত ধরে আসে অস্ত্র উন্নয়ন, এবং এভাবেই একটা পর্যায়ে জনসংখ্যা বেড়ে যায়, অধিক জনসম্পদের সুফল আছে, এতে কর্মঠ লোকের সংখ্যা বাড়ে, তবে এর সাথে বর্ধিত জনবলের জন্য খাদ্য লাগে বেশী, বেশী খাদ্যের জন্য ভূমির প্রয়োজন, এবং যেহেতু মিশরীয় সভ্যতার সূচনাই নদীর উপকূলে তাই এই নদী উপকূলে বসবাসরত বিভিন্ন গোত্র বা জনগোষ্ঠির ভূমি দখল করার মাধ্যমে একটা গোত্র সমৃদ্ধশালী হয়েছে, এবং এভাবেই একটা পর্যায়ে রাজ্য গড়ে উঠে, পড়ে এই রাজ্যগুলো একিভূত হয়ে একটা সম্রাজ্য গড়ে তুলে।
অন্য একটা মত এই ব্যাবস্থার আগেই নগর ব্যাবস্থার পত্তন হয়েছিলো, খুব অসম্ভব কিছু নয়, পৃথিবীর প্রথম নগরের বয়েস প্রায় 9000 বছর। 7000 বছর আগে মিশরে এমন নগর ব্যাবস্থা তৈরি হতেই পারে। এই নগরে শ্রমভিত্তিক বিভাজন ছিলো, এবং তারা পরস্পরের উপর নির্ভরশীল একটা জন গোষ্ঠি, এরা পেশাগত উৎকর্ষ লাভ করে এবং এমন একটা পেশাজীবি ছিলো ভাড়ারে সৈন্যরা, তাদের সহায়তায় রাজ্য বিস্তার সম্ভব হয়েছে অনেকের মতামত এমন বিচ্ছিন্ন 2টো ধারায় নয় বরং এদের মিশ্র এক ধারায় মিশরে রাজতন্ত্রের উদ্ভব হয়। যেভাবেইখোক একটা পর্যায়ে এসে মিশরে ইশ্বরে আবির্ভাব হয় শাসন করার জন্য। এবং সেই সম্রাট ক্ষমতা লাভের পর বিশাল বিশাল সব প্রকল্প হাতে নেন এবং পরিবর্তনের একটা গতিশীল ধারা তৈরি হয়, সভ্যতার তৎকালীন অবস্থায় মিশরীয় সভ্যতা অনন্য, কারন হঠাৎ করেই দেখা যায় সমাজটা বদলে যাচ্ছে, নতুন নতুন ভাবধারার তৈরি হচ্ছে, এই পরিবর্তনমুখিনতা হঠাৎ পাওয়া কোনো প্রভাব নয়, এর একটা ধারাবাহিকতা থাকে।
অনুমান মিশরের লোক পরকালে বিশ্বাস করতো, কারন তাদের সমাধিক্ষেত্রে নিত্যব্যাবহার্য তৈজসপত্র পাওয়া গেছে, অন্য একটা অনুমান আমার যে এটা হয়তো এমন কোনো ধারনার প্রভাব যে মৃতব্যাক্তির আত্মার অংশ তার ব্যাবহৃত বস্তুগুলো তাই মালিকের মৃতু্যর সাথে এসবেরও মৃতু্য হয়, এদের সৎকার করা দরকার, অনুমানটা একেবারে ভিত্তিহীন মনে হয় না আমার, কারন প্রাচীন এবং আদিম সভয়তায় আত্মার ধারনাটাই ছিলো এমন, কোনো কোনো উপজাতই তাদের মৃতদের খেয়ে ফেলে কারন তাদের ধারনা এভাবেই মৃত ব্যাক্তির আত্মা তাদের দেহে প্রবেশ করে , এমন কি হিংস্র প্রানী শিকার করে তারা তাদের আত্মাকেও নিজেদের দেহের অংশ করে ফেলে।

সাংস্কৃতিক বিবর্তনের চিত্রিত ইতিহাস হচ্ছে এসব তৈজসপত্রের অলংকরন, সেখানে প্রথমের মাটির তৈজসের পরিমান কমেছে সময়ের সাথে, ধাতুর ব্যাবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, ধাতু দিয়ে সুক্ষ কাজ করা সম্ভব তাই একটা পর্যায়ে তারা অত্যন্ত দক্ষ হয়ে উঠে এসবে। তারা এসব বস্তুর গায়ে অলংকরন করতো, এই অলংকরনের ধারা বদলের কারন হয়তও শান্তিপূর্ন বিবর্তন, যেমন বানিজ্য তরীগুলোতে পাওয়া তৈজসের অলংকরন অনুকরন করে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে তোলা, কিংবা এসব তৈজস এবং জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরা। অন্যটা সহিংস, সেখানে দখলদারিত্ব আছে, এই দখলের পর তাদের ব্যাবহৃত টোটেমের প্রসারের জন্য বাধ্য করা এসব তৈজসে তাদের টোটেম এবং তাদের ধারার অনুকরন করা, এবং সময়ের সাথে একটা মিশ্র ধারার উদ্ভব।
মিশর তার পার্শবতি সভয়তাগুলো থেকে অনেক কিছুই গ্রহন করেছে, ইটের ব্যাবহার শিখেছে, শিখেছে কুমারের চাকার ব্যাবহার, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যা শিখেছে তা হলো লিখিত ভাষা।
চিত্রের সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশের ধারাটা শুরু হয় মেসোপটোমিয়ায়। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন 2টো ছবি জুড়ে একটা নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো আগেই। মিশরে এসে তা একটা শৈল্পিক মাত্রা পায়, এখানে চিত্রলিপি এই ধারনাটা গ্রহন করেছে কিন্তু ব্যাবহৃত চিহ্নগুলো একেবারে মিশরের নিজস্ব।
তাই অন্য সভ্যতায় যখন এসব চিহ্ন বদল হয়ে অক্ষরে রূপান্তরিত হচ্ছে তখন মিশরের ভাষার চিত্রপ্রবনতা অক্ষত। অন্য একটা ভাষার কথা বলা যায় এর সম্পুরক হিসেবে চীনের ভাষা। যেখানে এখনও বর্নমালা নেই, একেকটা অংকন একেটা শব্দ প্রকাশ করে,এখান থেকেই ভাষা গেছে জাপানে এবং সেখানে একটা বর্নমালার উদ্ভব হয়েছে।
এই লাঙলের আবিস্কার, সেচব্যাবস্থা পশুপালন, কৃষিপন্যের মানউন্নয়ন,খাদ্য সঞ্চয়ের কৌশল উদ্ভাবন, অনেক কিছুমিলেই সমাজের একদল মানুষকে সৃষ্টিশীলতার অবসর দেওয়া হয়েছে, এবং সমাজ তাদের ভরনপোষনের দায়িত্ব পালন করেছে,
যুদ্ধ করে ভূমি দখল, এবং দাসব্যাবস্থার সূচনাও এসময়ে।
তবে মিশরের অনন্যতা এর পুরোহিত তন্ত্র এবং রাজার ইশ্বর হয়ে যাওয়া। এবং এই ধারনাটা স্থায়ি করতে প্রায় 300 বছর সময় লেগেছে, কিন্তু অবশেষে সবাই মিশরের রাজাকে ইশ্বর মেনে নিয়েছেন, এই ধারনার প্রভাব আমরা দেখবো প্রায় 1500 বছর পরে, যখন মুসার আগমন ঘটবে এই সমাজে, এবং এর আগেই অনেক অনেক গল্প এবং উপকথার সৃষ্টি হবে এই সম্রাটদের নিয়ে।
ইব্রাহিমের আগমন বা এই গোত্রের সূচনা এখনও 1000 বছর পরের ঘটনা।
মূলত যেসব বিষয় প্রধান ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যখন প্রাচীন সভ্যতা নিয়ে কথা বলা হয়, এটা পরিবারতন্ত্রের সমপ্রসারন, একটা পরিবার একটা নদিকুলে আবাস গঠন করে, এবং এদের কয়েক জন মিলে এখটা বসতি, এবং এরাই একটা সময় সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় এবং এরাই একটা সময় একটা গ্রামের তৈরি করে , এবং এরাই একটা সময় নগর পত্তন করে, কিন্তু মূলত একটা পরিবার থেকে সূচনা হয় বলে এদের জেনেটিক ধারাটা খুঁজলে বের করা সম্ভব।
তেমন ভাবেই দেখা গেছে ইহূদেদের জেনেটিক বিশুদ্ধতার অতীত প্রায় 4000 বছর। এরা মূলত একটা পরিবার বা একটা গোত্র থেকে এসেছে, এর আগে এদের জেনেটিক গঠনে মিশরিয়, সুমেরিয় বিভিন্ন এলাকার মিশ্রন দেখা যায়, তবে 4000 বছর ধরে ধারাটা প্রায় একটাই উৎস সমর=থন করে। হয়তো বাইবেল বর্নিত 5000 বছর আগের সৃষ্টিতত্তব খুব একটা ভুল ব্যাখ্যা নয়, সেই সময়ে হয়তো এই গোত্রের পূর্বপূরুষের আগমন। এবং এর পর ইব্রাহিমের হাত ধরে ক্ষমতা তার 2 ছেলের এবং এর পর তাদের মিশরে গমন এবং সেখানে দাস হয়ে যাওয়া, এবং এর পর কোনো এক পর্যায়ে মুসার আগমন এবং সেখানে নিজের গোত্রকে মুক্ত করা এবং তাদের নিয়ে হিজরত, পয়ালেস্টাইনে আসা, এবং এর পর দাউদ, সলেমান, হয়ে মতপার্থক্য এবং ইহুদ বলে একজনের হাতে একটা সম্রাজ্য স্থাপন।
এভাবে দেখলে একটা সহজবোধ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।