ব্যাক্তিপূজা

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বুধ, ২৮/০৬/২০০৬ - ২:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষের ভেতরে পূজা করার একটা প্রবনতা বিদ্যমান এবং মানুষ সুযোগ পেলেই পূজা শুরু করে।
অতীতে সুযোগ ছিলো তাই বড়মাপের মানুষকে দেবতা বানিয়ে পূজা করতো বর্তমানে তেমনটা সম্ভব হয় না তাই বর্তমানে মানুষ ব্যাক্তিপূজা করে। এবং পূজনীয় ব্যাক্তিত্ব খুঁজে বের করে। অনেক ধরনের এবং ধাঁচের পূজনীয় ব্যাক্তি আবিস্কার করেছে সভ্যতা। বড় মাপের শিল্পি, বড় মাপের রাজনৈতিক নেতা, জনসেবক, বিজ্ঞানী এবং এই ধারায় সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায় গায়ক, নায়ক, এমন কি মানুষ মানুষের নৃশংসতার জন্য মানুষকে পূজা করে।
হালের চিত্র জগতের সেলিব্রেটিরাও পূজনীয় ব্যাক্তিত্ব- জাতীয় দলের খেলোয়াররাও পূজনীয় ব্যাক্তিত্ব। মানুষ পূজা করছে তাদের।
কিন্তু এই পূজার উৎস কি? মানুষ কেনো অন্য একজন মানুষকে পূজা করবে? মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়- কিন্তু মানুষ আসলে ভীতু- কারো কারো স্বপ্ন পূরনের সাহস থাকে না- অনেকগুলো ব্যার্থমানুষের দীর্ঘশ্বাস মিশে থাকে এই পূজায়।
10 মাইল 20 মাইল হেঁটে দেশের প্রেসিডেন্টকে দেখতে আসাও একধরনের অর্ঘ্যনিবেদন।আমরা যতই ঘৃনা করি, মতিউর রহমান নিজাামি, গোলাম আজমও কারো কারো কাছে পূজনীয় ব্যাক্তিত্ব- কেউ কেউ হলিউডের নায়কদের ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে পূজা করছে অজান্তে। মানুষ বড় মাপের মানুষের সহচার্য চায়, নিজের অপূর্ন স্বপ্নকে খুঁজে পায় তাদের ভিতরে-
মানুষ ডেইটি খুঁঝছে কাউকে কাউকে ডেমিগড বানাচ্ছে এসবে কোনো দোষ দেখি না আমি। মানুষের স্বাভাবেই এই হীনতা বিদ্যমান। মানুষ নিজের ক্ষমতা জানে না তাই মানুষ সমাজে বসবাস করে নিজের ক্ষুদ্্রাতিক্ষুদ্্র ভাবে- প্রবাসী মানুষের উদ্ভট চেতনাকে সত্য ভাবে ভাবে তারাই সব কিছুর নিয়ন্তা ও নিয়ামক- কারনটা অনেকের ব্যার্থস্বপ্ন যা পূরন হয় নাই-এই সব কুখ্যাত এবং খ্যাতিমান মানুষের সারিতে চলে যাওয়ার একটা খারাপ দিক হলো ব্যাক্তিজীবন বলে যা ছিলো তা উধাও হয়ে যাওয়া- তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো আমার জন ম্যাকনরোর কথা- বিখ্যাত হওয়াটা অনেকটা ধর্ষিত হওয়ার মতো, প্রতিদিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাজার চোখ তোমাকে ধর্ষণ করবে-

একটা সময় নোবেল পাওয়ার পর আমাদের একমাত্র সাহিত্যিক রবি বাবুকে পূজা শুরু করলো বাঙালিরা। বেচারা শান্তিনিকেতনে গিয়ে গুরুদেব হয়ে গেলেন। আর্যসমাজের চিন্তা ধারা নিয়ে একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেন। তার ধর্মভাবনা সমাজ ভাবনা কৃষিভাবনা সব মিলে তার সব বিষয়ে কোনো না কোনো মতামত আছে এবং পূজা করা মানুষগুলো সেই মতবাদ ধারন করে তা প্রসার করছেন-
সমস্যা হলো অন্য সবারও সমাজ ভাবনা থাকে, সমাজ চেতনা থাকে, কিন্তু তাদের এইসব ভাবনা হালে পানি পায় না যতক্ষণ না তারা পূজনীয় ব্যাক্তিত্ব হয়ে উঠতে পারছে- আমরা পূজনীয় ব্যাক্তিত্বের মতের মাপে নিজের জীবন সাজানোর চেষ্টা করি। অনেক অন্ধ অনুকরন করে- কেউ কেউ পোশাকের ধাঁচ, চুলের ছাঁট- এমন কি হাতের লেখা, সাহিত্যের ধাঁচ সবই অনুকরন করে- যে যার সাধ্যমতো ব্যক্তিগত অর্ঘ্য প্রদান করে যায় গুরুদেব সমীপে।
সূর্যগ্রহণের মতো রবি বাবুর গ্রহণে আক্রান্ত হয়েছিলো একবার বাংলা সাহিত্য- তিনি নোবেল পাওয়ার পরে পরে এই গ্রহন শুরু হয় এবং অব্যাহত থাকে আরও অনেক দিন। তার সাহিত্যপ্রতিভা নিয়ে সংশয় নেই। বাঙালি মনস্তত্ত্ব তৈরিতে টার ভূমিকাও অস্ব ীকার করা যাচ্ছে না- ঠাকুর বাড়ীর প্রচলিত সেমিজ পেটিকোট এখন বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পরেছে- ঠাকুর বাড়ীর মেয়েরা স্বদেশী আন্দোলন করছে । সেখানে বাংলার স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে- সবই ঠিক ছিলো কিন্তু নোবেল পাওয়ার পর থেকে রবি বাবুর সর্বগ্রাসী গ্রহণের বিষয়টাই মুখ্য হয়ে উঠলো- অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে রবি বাবুর উপরে সবটুকু আলো পড়ার পর রবি বাবুর নিজেরও কিঞ্চিত মতিভ্রম হয়েছিলো হয়তো।
নীরোদ বাবুর আত্মঘাতি বাঙ্গালি পড়লে মালুম হয় তিনি যেমন কঠোর ভাবে শুরু করেছিলেন তেমন কঠোরতা অক্ষুন্ন রাখতে পারেন নি শেষ পর্যন্ত। তিনিও খানিকটা ছাড় দিয়েছেন বা তার তথ্যসূত্র যেখানে সেই মানুষগুলো পূজা শুরু করার ফলে কিছু তথ্য বেমালুম গায়েবও হয়ে যেতে পারে- বলা যায় না। মানুষের পূজা করার অশেষ ক্ষমতা তাকে সমস্ত নেতিবাচকতাকে আড়ালে রাখতে বলে- আলোকিত অংশকে সামনে আনতে বলে ফলে একটা পর্যায়ে সেই মানুষটা মানুষ থাকে না-
আইনস্টাইন বিখ্যাত বিজ্ঞানী তার অবদান আমি স্বরণ করি- তার উদ্ভট ভাবনাকে সমর্থন না করলেও তার নিজের ক্ষেত্রে তার কাজই তার পরিচয়। এই আইনস্টাইন শুধু তার ভাবনার সাথে খাপ খায় না বলে একটা প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক মতধারাকে অস্ব ীকার করে গেলে নসারাজীবন- এমন কি যখন তার সমীকরনের সমাধান করে একজন জানালো তার সমীকরনে লিপিবদ্ধ আছে মহাবিশ্ব কখনই অপরিবর্তনীয় নয়।তার পরিবর্তন সম্ভব এবং মহাবিশ্ব প্রসারিত হবে কিংবা সংকুচিত হবে- এটাই তার সমীকরনের সমাধান দাবী করে। তিনি হুট করে একটা মহাজাগতিক ধ্রুবকের আমদানি করলেন- মহাবিশ্বের প্রসারন বন্ধ করে তাকে চিরস্থায়িত্ব দিতে- অনেকটা সময় পর তার উপলব্ধি ছিলো সেই মহাজাগতিক ধ্রুবক আমদানি করাটা তার বড় একটা ভুল ছিলো- কিন্তু সমস্যা হলো এখনও আইনস্টাইন মেনে না নিলেও অনেকেই এই ধ্রুবকের নতুন ব্যাবহার তৈরির চেষ্টা করছে-
এমন বিখ্যাত আইনস্টাইন যাকে সম্মান করে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট পদ দেওয়ার চিন্তা করেছিলো তিনি জীবন যাপন করবেন এবং ধর্ম রাজনীতি সমাজ নিয়ে তার কোনো ভাবন া থাকবে না তা হয় না- তাই আইনস্টাইনের ধর্মভাবনা নিয়েও তাকে লিখতে হয়েছে- তাকে সাক্ষাৎকার দিতে হয়েছে, তার ধর্মবিশ্বাস নিয়ে লিখিত প্রবন্ধের অনুবাদে ভুল করা হয়েছে-
আইনস্টাইনের ভাবনার অনুবাদের যেই জায়গাটা ভালো লাগলো তা হলো বিজ্ঞান আর ধর্মকে আলাদা রাখার ভাবনাটা- তাদের প্রয়োগক্ষেত্র আলাদা তাদের ভাবধারা আলাদা। ধর্ম আর বিজ্ঞানের সংঘাত লাগে যখন তাদের একই ভাবে একই জায়গায় স্থাপনের চেষ্টা করা হয়- তবে তার অন্য একটা ভাবনা যা আমার পছন্দ না সেটা হলো ধর্মবিহীন বিজ্ঞান পঙ্গু আর বিঞ্জানবিহীন ধর্ম অন্ধ।
যাই হোক পরবর্তিতে হয়তো অনুবাদ করেও ফেলতে পারি আইনস্টাইনের ধর্মভাবনা- এবার তার চিঠি থেকে নেওয়া কিছু ভাবনা লিখি।
একজন আইনস্টাইনকে চিঠি লিখেছিলোঃ বিজ্ঞানীরা কি প্রার্থনা করে? যদি করে তাহলে তারা কিসের জন্য প্রার্থনা করে-
6ষ্ঠ শ্রেনীর একজনকে এই উত্তর দেওয়াটা তেমন সহজ না- তার পরও আইনস্টাইনের উত্তর ছিলো
বৈজ্ঞানিক গবেষণা একটা ধারনার উপর ভিত্তি করে অগ্রসর হয়, সেই ভিত্তিটা হলো প্রকৃতিতে যা ঘটে সবই প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলে।এই একই কথা প্রযোজ্য মানুষের বিষয়েও।এ জন্যই একজন গবেষক কখনই বিশ্বাস করেন না যে প্রার্থনা ঘটনার গতিপথ বদলাতে পারে- অর্থ্যাৎ কোনো অদৃশ্য শক্তির কাছে প্রার্থনা করলে সে অদৃশ্য শক্তি ঘটনার উপর কোনো রকম প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
আইনস্টাইনের ভাবনা নিয়ে গ্রন্থরচিত হচ্ছে, লোকজন এই জীবনি চিঠিপত্রের সংকলনে পূঁজি বিনিয়োগ করছে। এসবই সম্ভব হচ্ছে কারন মানুষ পূজা করতে চায়- আইনস্টাইনের গবেষণানিবন্ধের বাইরে তার ব্যাক্তিজীবন নিয়ে উন্মাদনার কারন হলো আমাদের পূজা করতে চাওয়ার প্রবনতা-
এমন কথা সব বিখ্যাত মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য- হুমায়ুন আহমেদ লিখছেন- কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবনযাপন নিয়েও মানুষ আগ্রহী। তিনি কি খান, তিনি কোন মিলের লুঙ্গি পড়েন, তিনি কোন ব্রান্ডের সিগারাটে খান, তিনি কোন দোকানের মিষ্টি পছন্দ করেন- সব মিলিয়ে ভক্তরা পূজার অর্ঘ্য নিবেদনের জন্য যেকোনো ক্ষুদ্্র এবং বৃহৎ চাহিদা পূরনের ভার নিয়ে নেন- হুমায়ুন আজাদও পূজনীয় হয়ে গেলেন মৃতু্যর কাছাকাছি সময়ে- সবাই দলবেধে ছুটলো তার কাছে - তসলিমা নাসরিনও বিখ্যাত তার ব্যক্তিজীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেছিলো মোল্লা প্রজাতিরা এবং পরবর্তিতে নিজেই ঢাকঢোল বাজিয়ে ব্যাক্তিজীবন জানাচ্ছে সে-
সবাই জানাতে চায় কিন্তু মানুষ জানতে চায় শুধু বিখ্যাত আর কুখ্যাতদের ব্যাক্তিজীবন। সেলিনার গোপন কথা নিষিদ্ধ গ্রন্থ হিসেবে লাইব্রেরীর উপরে নির্বাসনে যায় আর বিখ্যাতদের গোপন জীবনের গল্প গবেষণা নিবন্ধ বা প্রবন্ধ হিসেবে ছাপা হয় দৈনিকে- গ্রান্থাকারে শোভা পায় লাইব্রেরির তাকে- অবশ্যই প্রকাশ্যে- সেলিনার গোপন কথা পড়লে মানুষ হয় বিকৃত মানসিকতার কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের বয়াক্তিঘট কিস্যা কাহিনী যখন দৈনিকে ছাপা হয় সেটা হয় স্কুপ নিউজ, আমরা ভন্ড, কিন্তু কি পর্যায়ে ভন্ড এটা প্রমান করে এই সব ঘটনা-
কবির পদাঙ্ক অনুসরন করে কেউ বেশ্যাগমন করলে সেটা ঘৃনিত কাজ হতে পারে তবে নবীর পদাঙ্ক অনুসরন করে যুদ্ধলব্ধ নারী ধর্ষন ধর্মের কাজ।

*******একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে আমার ক্ষেত্রেও তাই ব্লগে লিখে রাখছি আমার ভাবনা যেনো লোকজন বলতে পারে অপ বাক বলেছেন---


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।