হুমায়ুন আহমেদ -অনেক দিন পরের পাঠ

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বুধ, ০৫/০৭/২০০৬ - ১২:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেক অনেক দিন পর হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস পড়া হলো, হলুদ হিমু কালো র্যাব,এই শুভ্র, এই আর আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি।

হুমায়ুন আহমেদের লেখার ভঙ্গি নিয়ে কিছু বলার নেই, ঘটনার বর্ননা আর সহজ ভাষা, সহজপাঠ্য বই, পড়া শেষ হয়- ঘন্টাব্যাপি বিনোদন শেষ। এর পর আর কিছু মনে থাকে না, কোনো ছাপ পড়ে না। অবশ্য অতীতের কিছু উপন্যাস বাদ দিলে হুমায়ুন আহমেদের সব লেখাই ঘন্টাবিনোদনী লেখা।
তবে আমি যেটা মনে করার চেষ্টা করছি তা হলো হুমায়ুন আহমেদের চরিত্রের রা কর্মবিমুখ কেনো?
সবাই মানে চরিত্র যতগুলো থাকে তারা কেউই সেই অর্থে কর্মরত নয়- আমি এবং কয়েকটা প্রজাপতির চরিত্রগুলোর প্রধান চরিত্রের বিলাসের ব্যামো- তার অঢেল টাকা অঢেল অবসর, এবং তার মাথাভর্তি ফ্যান্টাসি, খ্যাপাটে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা- কিন্তু অখন্ড অবসরের মাঝে উদ্ভট ভাবনা করা ছাড়া অন্য কোনো কাজ তাকে করতে দেখা যায় না।
তার মামা- তারও কোনো কাজ নেই, মাঝে মাঝে উপন্যাসের মাঝে এসে সত্যবাদীতার বক্তব্য দেওয়া ছাড়া - নায়কের শ্বশুর অবসরে- তারও কোনো কাজ নেই। অলস লোকের মাথায় উদ্ভট ভাবনা কাজ করে- তারও একই সমস্যা। এটা সেই অর্থে অন্ধকার একটা উপন্যাস হতে পারে- হুমায়ুন আহমেদের নতুন একটা দিক হলো এইসব অধিভৌতিক অন্ধকার উপন্যাস লেখা- তেলাপোকা বিষয়ক একটা লেখা দিয়ে বোধ হয় শুরু হয়েছিলো, কিংবা এক্স ফাইলস দেখে শুরু করেছিলো- অনুপ্রেরণা যাই হোক না কেনো ঘটনা ঘটতে থাকে, চরিত্র বুঝে তার জন্যই ঘটনাগুলো ঘটছে এবং তার অসীম নির্বিকারত্ব দিয়ে ঘটনা শেষ হয়।
আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি নিয়ে এর বেশী আলোচনার কিছু নেই-

হিমুর অন্য সবগুলো লেখা মতো এটাও অলৌকিকত্ব দিয়ে ভরপুর। তবে এই উপন্যাসের লোকজনও কর্মবিমুখ। একমাত্র কর্মতৎপরতা দেখা গেলো মুরগি ছাদেককে ক্রস ফায়ার করে ফেলা। এ ছাড়া তারা সবাই বসে বসে মাছি মারে এমনটাই মনে হয়। হিমুর উপর গোয়েন্দাগিরি করতে আসা র্যাবের লোক হারুনুর রশিদ হিমুর ঘরে দিবানিদ্্রা দিচ্ছে, হিমুর খালুর অফিসে কোনো কাজ নেই- কোনো উপন্যাসেই ছিলো না, সেও ফফ্লাওয়ার নামের একজনকে নিয়ে ব্যাস্ত- হিমুর খালাদের কাজ আহ্লাদ করে যাওয়া- হিমু চিরবেকার। এই বার অবশ্য তাকে কফি বিক্রি করতে দেখা গেছে- তবে সেটাও রোমান্টিকধাঁচের বেচাকেনা।
হুমায়ুন আহমেদের জীবন বোধ হয় জনবিচ্ছিন্ন, কতিপয় স্তাবক এবং কতিপয় কড়া সমালোচক ছাড়া তার জীবনে এখন অন্য কিছুর অস্তিত্ব নেই।
এই শুভ্র এই বোধ হয় শুভ্র কে নিয়ে লেখা 5ম কিংবা 6ষ্ঠ বই। দারুচিনি দ্্ব ীপ রূপালি দ্্ব ীপ, শুভ্র, এর পর বোধ হয় আরও একটা কিংবা 2টা লেখা হয়েছে- এখানেও ঘটনার পরিবর্তন নেই, হুমায়ুন আহমেদ এখা পরীক্ষা করে দেখছেন হয়তো, একই চরিত্র নিয়ে বিভিন্ন ধাঁচে লিখে, ঘটনার অদল বদল করে, নিশ্চিত নন কোনটা আসলে তার বক্তব্য- শুভ্র চরিত্রটার প্রধান অংশগুলো ঠিক ঠাক আছে- অসম্ভব রূপবান এক যুবক তার শিশুসুলভ সারল্য নিয়ে পৃথিবীতে আছে- এই অসম্ভব শব্দটা বিশেষন হিসেবে হুমায়ুন আহমেদীয় রূপ গ্রহন করেছে, অসম্ভব রূপবতি, মায়াবতি, গুনবতি, এই সকল শব্দগুচ্ছের ক্রমাগত ব্যাবহার আমার মাত্রজ্ঞানকে আহত করছে নিয়মিত- তবে শুভ্রর বাবা বদল হয়, হচ্ছে, নতুন মেধাবী শুভ্রের বাবা বদলে যাচ্ছে তবে শুভ্রের পালক বাবাদের মৌলিক চরিত্র ঠিক আছে, ভীষন বড়লোক, চাইলেই হাতি ঘোড়া এরোপ্লেন কিনে ফেলার ক্ষমতা রাখে, তবে পুরুষ মানুষ হিসেবে তারা মেধাবি ও সফল হলেও মেয়েদের মানে তাদের বৌয়েরা, সেই অর্থে শুভ্রের মায়েদের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন হয় না, তারা তাদের সুশিল হাই সোসাইটি স্বামীদের থেকে সাংস্কৃতিক হিসেবে ভিন্ন গোলার্ধে বসবাস করে। এবং তাদের শব্দচয়ন এবং চেতনার মান দরিদ্্র অবস্থা থেকে উন্ন ীত হয় না। এটা হয়তো হুমায়ুন আহমেদ নারী বিশ্লেষণের প্রধান দিক, ূরুষতান্ত্রিকতা, কিংবা নারীরা ছল চাতুরি করতে চায়, সংসারের কতৃত্ব রাখতে চায়। মূল বিষয়টা হলো সেই সব মায়েদের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন হয় না।
এবং শ্রনী চরিত্র নির্ধারন করে দেওয়া। একদল মানুষ যাদের কোনো কাজ নেই( আবারও বলতে হচ্ছে কথাটা, হুমায়ুন আহমেদ আলস্যের জয়গান গাচ্ছেন, স্বাপি্নক একদল মানুষের সন্ধান করছেন হয়তো হিমালয়ের সাধুদের মতো, যাদের অলৌকিকত্ব দেখে তাদের জীবন সুন্দর চলে যায়, যাদের খাওয়ার এবং পড়ার ব্যাবস্থা করে প্রকৃতি।)
চাকর শ্রেনীর মানুষদের জন্য বরাদ্দ গৃহকোণে তাদের বিভিন্ন অলস আলাপন চলছে- এদের সাথে কর্তাদের যোগাযোগ নেই- মাস গেলে বেতন পাচ্ছে এবং যথারিতী নানা রকম ইতর ভাবনায় মাথা ঘামাচ্ছে- চরিত্রচিত্রনে এমন দূর্বলতা যে চরিত্রগুলোর মধ্যে মানুষ হয়ে উঠার কোনো সম্ভবনা নেই। আমরা হুমায়ুন আহমেদের বিকলাঙ্গ মানবের কথা পড়ে পড়ে কৌশোর শেষ করে আসলাম এখন তুন একদল কিশোর বিকলাঙ্গ মানুষদের কথা পড়ে পড়ে বড় হয়ে উঠছে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।