প্রশ্নটা চলে আসলো আবারও মওদুদিকে নিয়ে শুভর পোষ্ট পড়ার পর- প্রশ্নটা সাধারন- মানুষের হৃদয়ের ইসলাম আর কোরানের ইসলাম একই নাকি ভিন্ন?
সাদিকের পোষ্টে ইসলামের একটা মানবিক রূপ চলে আসে-সেটা সাদিকের হৃদয়বৃত্তি, সাদিক কোরানের সেইসব আদর্শকে সমর্থন করছে যা তার হৃদয়ে সাড়া দেয়, সেইসব কথাকে সামনে নিয়ে আসছে যার সাদিকের হৃদয়বৃত্তি অনুসরন করতে চায়, সাদিকের ইসলাম যতটা কোরানভিত্তিক ধর্ম তারও বেশী একজন মানুষের ধর্মিয় পরিচয়কে সমর্থন করার জন্য ঐশী গ্রন্থের শরনাপন্ন হওয়া , সেটাকে ইসলাম বলাটা উচিত না বরং এটা সাদিকের নিজস্ব ধর্মভাবনা, যা শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত অর্জিত সাংস্কৃতিক চেতনা দ্্বারা সংশোধিত।
আস্ত মেয়ের ধর্মবোধের জায়গাটাতেও একই রকম ভাবে বলা যায় বিভিন্ন স্কলারের ধ্যানধারনার যতটা তার পছন্দ ততটা গ্রহন করে সেটাকে ইসলাম নামে চালানোর চেষ্টা। যেসব অপছন্দ তাকে তার ইসলাম মনে হয় না। এই ভাবে ধর্মের ভেতরে একটা সংস্কার কার্যক্রম চলে। প্রতিটা ব্যাক্তিমানুষ নিজস্ব জায়গা থেকে ধর্মকে অনুভব করে, ঐশী অনুপ্রেরণার চেয়ে তার উপলব্ধি সেখানে মুখ্য একটা অংশ- এসব ব্যক্তিগত ধর্মবোধের জায়গা থেকে ধর্মকে দেখলে পারস্পরিক সংঘাত এড়ানো যায়-
আরও মজার বিষয় হলো ধর্ম বর্তমানে পপি গাইডের মতো বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা।
কারো ইহকালীয় বিবরন ভালো,সুতরাং ঐ গাইড বুক থেকে ইহকালীয় সংস্করন নাও, কারো পরকালীয় ব্যাখ্যান ভালো তাই পরকালীয় ব্যাখ্যানের জন্য তার উৎস থেকে সংগ্রহ করো।
মওদুদি কোরানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ভালো কি খারাপ এটার বিবেচনায় না যেয়ে বলি তার কোরান সম্পর্কে কিছু ধারনা ছিলো তার ভিত্তিতে তিনি বিশাল একটা গ্রন্থ ফেঁদেছেন- তবে সব আয়াতের ব্যাখ্যা যদি তার বই থেকে গ্রহন করা হয় তাহলে আবার বিশাল একটা সমস্যা হবে- তখন বিজ্ঞ মানুষেরা বলবে তার সব আয়াতের ব্যাখ্যা ঠিক সঠিক নয়, কোরানের অনুসরন করা ব্যাখ্যা কিন্তু সঠিক বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন নাই।
কোরান বিজ্ঞান সিরিজ নিয়ে একটা ঝামেলা শুরু হয়েছিলো, সেখানে সমস্যা ছিলো অনুবাদ ভিত্তিক- অনুবাদে সঠিক ধারনাটা আসে নাই, অনুবাদের শব্দের ম্যারপ্যাঁচে অনেকেই কোরানকে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মিলাতে চেয়েছিলো- তাদের বলবো সেইসব আয়াতের জন্য মওদুদির ব্যাখ্যা পড়তে- তারা বলবেন মওদুদি এই ক্ষেত্রে সঠিক বিজ্ঞানটা তুলে ধরতে ব্যার্থ-
আমার কাছে ব্যক্তিগত অনুভবের বিষয়টা নিয়ে সংশয় নেই, মানুষের দর্শনের জায়গায় সে কিভাবে জীবনযাপনের নীতি তৈরি করবে, কোন ধর্ম অনুসরন করবে এটা তার বিবেচনা দিয়ে ঠিক করবে সে, আমার বিবেচনায় আমি দর্শনটাকে নির্ধারন করি যেহেতু তাই সবারই সেই স্বাধীনতা বিদ্যমান, তবে ধর্ম ব্যাখ্যাকারিরা এই স্বাধীনতায় বিশ্বাসি না, তারা নিজেদের মনমতো ব্যাখ্যা দ্্বারা করাবেন এবং তাদের ব্যাখ্যাকে সমর্থন করার জন্য আরও মানুষ চলে আসবে- এবং যেহেতু মানুষের চেতনার এবং চিন্তার একটা সীমাবদ্ধতা থাকে তাই অনেকগুলো মানুষের ব্যাখ্যাকে মিলিয়ে একটা ধারনা তৈরির চেষ্টা- পরিশেষে যেটাকে বলা যায় ব্যক্তিঅনুভবের ধর্ম
কিন্তু কোরানকে অন্ধ অনুসরন করলে আমাদের অনেক বিষয়েই অমানবিকতার আশ্রয় নিতে হবে- এখন ন্যায়বোধের সংজ্ঞা বদল হয়েছে- যুদ্ধবন্দি মাত্রই দাস পর্যায়ভুক্ত নয় অথচ এমনটাই কোরান সুন্নাহর বিধান-
দাসপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর সুন্নাহ ভিত্তিক যেই সংশোধনের প্রয়োজন বা যুগোপযোগী করে তোলার বিষয়টা চলে আসার প্রয়োজন ছিলো সেটা আসে নাই- আমি মাঝে একটা জায়গায় গিয়েছিলাম, সেখানের ইতিহাস ফলকে লেখা এখানে এককালে দাসব্রিডিংএর জন্য খামার ছিলো। আমি বিমর্ষ হয়েছি, তবে আশ্চর্য হই নাই, কারন এই মার্কিন মুল্লুকে গরু ঘোড়ার মতো দাস প্রজননের ব্যাবস্থা বিদ্যমান ছইলো, স্প্যানিশরাও দাস ব্যাবসা করেছে, আরবেও প্রচলিত ছিলো সুদেহী দাসের কদর ছিলো কারন তারা ব্রিডার হিসেবে ভালো। তেমন সুঠাম দেহি দাসিদেরও কদর ছিলো, এই দুই মাতাপিতার মিলনে যেই দক্সাসের জন্ম হবে তার মুল্য দাস বাজারে বেশী হবে- অর্থনীতির সূত্র এমনটাই বলে। এখন যেমন রেসজয়ী ঘোড়ার কদর আছে ব্রিডার হিসাবে সেসব দাসকারখানায় এমন ভাবেই প্রজনননিমিত্তে বয়াবহৃত হতো মানুষ-, পশু থেকে মানুষে রূপান্তরিত করার চেষ্টায় লিংকনের সময়ে গৃহযুদ্ধ বাধলো, দাস ব্যাবসা নির্ভর ধর্মনিয়ন্ত্রিত দক্ষিন ও লিবারেল উত্তরে, উত্তরের লিবারেলরা জয়ি হলো তাই দাসব্যাবস্থা নির্মুল হলো, এমন কি কৃষ্ণাজ্ঞদের সমঅধিকার সম্পুর্ন প্রতিষ্ঠা না হলেও এখন এই রেসিয়াল বিষয়টা কমে গেছে- কালোদের আলাদা চার্চ আলাদা ইসলাম- আলাদা মসজিদ, যারা এখানে ধর্মচর্চা করে তাদের জন্য অপ্রিয় হলেও এটাও একটা সত্য যে কালোদের জন্য আলাদা মসজিদ এখনও আছে খোদ আমেরিকাতে-
যাই হোক সাম্যবাদের ধারনাটা সব সময় সব পরিবেশে আসে না। দাসব্যাবস্থা নির্মুল করার জন্য মুহাম্মদ কোনো কাজ করে নাই কারন অর্থনৈতিক কার্যে দাসদের ব্যাবহার ছিলো, মৃতু্যকালে অনেক দাসই মুহাম্মদের আওতায় ছিলো, এমন মানবতাবাদী একজন মানুষ কিন্তু মহাকালরে মানবতাবোধকে লুণ্ঠিত করেই দাসপ্রথা সমর্থন করে গেছেন।
তার বোধ হয় ধারনাও ছিলো না কোথাকার কোন লিংকন এসে এই দাস ব্যাবস্থাকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলবে, কিংবা ইশ্বরও বা আল্লাহও এই ভবিষ্যতটা দেখতে পারেন নাই, তাই কোরানেও দাসের ব্যাবহারবিধি রয়ে গেলো- আমরা যারা কোরানের অন্ধ অনুসরন করবো তারা কি অবচেতনে দাসপ্রথা সমর্থন করবো? কোরান তাই করতে বলেছে- দাস পাওয়ার উপায়টাও বলেছে, সাদ্দাম কুয়েত দখল করার পর কুয়েতের সকল অধিবাসী তার দাস হয়ে যাওয়ার কথা, ইরান যখন ইরাকের সৈন্য আটক করে তখন তাদেরও ইরান সরকারের দাসত্ব করার কথা, বলিষ্ঠ সৈন্যেরা ব্রিডার হিসেবে ভালোই হতো-
কিন্তু ইসলামের অনুসরন করলেও তারা এই কাজটা করে নাই। এখন ইরাকে যুদ্ধ চলছে, ইরাকের কেউ কেু ব্রিটশ সৈন্যও জিম্মি করছে কিন্তু তারা তাদের দাস এ কথাটা বলছে না- এটাও কি কোরানের বিরোধিতা না?
যাই হোক আমরা অনেক অনেক সংশোধন করে আমাদের নতুন ব্যক্তিগত বিশ্বাস তৈরি করেছি, বৃহত্তর ঐক্যের জন্য আমরা যতই দাবি করি আমাদের ইসলাম কোরান নির্ভর, কথাটা সর্বাংশে সত্য নয়, এটা এই যুগের মাপে তৈরি করা কিছু অনুভব, যা প্রতিটা ব্যাক্তি ভেদে ভিন্ন-
সুতরাং প্রশ্নটা ঝুলিয়ে রাখি-
আমাদের ইসলাম কি কোরানের ইসলাম না কি এটা আমাদের তৈরি ইসলাম।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন