প্রত্নতত্ত্ব মূলত আমার কাছে সামান্য বস্তুগত উপাদানের ভিত্তিতে লেখা রোমাঞ্চ উপন্যাসের মতোই। রাজ্যজয় আর রক্তপাতের গল্প,সম্রাট আর সম্রাটের অনুগত সৈনিকদের গল্প, আরও একটু সামনে গেলে তাদের ঘরনীদের ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার লড়াই, এবং একজন রানীই অবশেষে টিকে থাকতে পারে এবং বাকীরা গৌন প্রজনন যন্ত্র হয়ে যায়।
মিশরের ইতিহাস পড়তে গিয়েও একই রকম ধারনা জন্ম নিচ্ছে, প্রাসাদষড়যন্ত্র এবং ক্ষমতার লড়াই ইতিহাসের চাকা ঘোরায়। তুতেনখামেন যদিও তেমন বড় মাপের ফারাও ছিলো না এর পরও সেই সবচেয়ে পরিচিত ফারাও। কেবি 62 নামক সাইট যখন খনন করা হয় তখন মানুষের ধারনাও ছিলো না এই সাধারন মাপের খনন শেষে সেখানে কোনো ফারাওকে পাওয়া যাবে। প্রথম এমন একটা সমাধিস্থল খুঁজে পাওয়া যেখানে গবেষকরা প্রথম হানা দিয়েছে, রত্নশিকারীরা যেখানে থাবা বসাতে পারে নি।
ভ্যালি ওফ কিংস মুলত ফারাওদের সমাধিক্ষেত্র, সেখানে প্রায় 60 থেকে 100 জন ফারাও সমাহিত, তাদের প্রত্যেক্যের জন্য আলাদা করে প্রাসাদ বানানো হয়েছে, তাদের সুবিধার জন্য কবর সাওয়ালের সবকটা উত্তরই লেখা আছে দেয়ালে। মূল সমাধি থেকে ধাপে ধাপে কড়িডোর ঘুরে ঘুরে পৌঁছাতে হয় সেই স্থানে যেখানে পুনরুত্থানের কথা জানানো হবে। এবং প্রতিটা বাঁকেই একজন প্রহরী পরিচয় নিশ্চিত হে পরবর্তি বাঁকে পৌঁছানোর অনুমতি দিবে, বুক ওফ ডেড এ এসবের বিস্তারিত বর্ননা দেওয়া আছে, কিভাবে মৃতু্যর পর পূনরায় জীবিত করা হবে মানুষকে, এবং কি প্রক্রিয়ায় তা করা হবে। কিন্তুএকটা ছোটো জায়গায় সবার সমাধি বানাটে গেলে একটার উপর অন্যটা চলে আসারো সম্ভবনা আছে, রাজাদের সমাধিস্থল রাজাদের মতোই জাঁকজমকপূর্ন ফুটবল মাঠের মতো বিশাল, 500 গজ লম্বা, কয়েকটা আলাদা অংশ, কখনও একেবারে ধাপে ধাপে নীচে নেমে গেছে, কখনও বাঁক ঘুরে ঘুরে , সবচেয়ে বড় সমাধিক্ষেত্রের কক্ষসংখ্যা এখনও অনির্নিত, সে রাজা তার সম্পুর্ন পরিবারের জন্য একটা মিলনস্থল তৈরি করেছইলো মাটির নীচে, তার সন্তানের সংখ্যা অনধিক 50, তার পরিচিত সেবাদাস, রানী মিলে সংখ্যাটা নেহায়েত কম না, তাদের সবার জন্য আলাদা আলাদা করে সাওয়াল জবাব লিখিত হয়েছে দেয়ালে, প্রত্যেক্যের প্রহরীদের জন্য আলাদা করে জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, মাটির নীচে আলাদা একটা মৃতের শহর বানানো একবারে আদিম যন্ত্র দিয়ে এটা বিশাল সময়সাপেক্ষ বিষয়।
ধারনা করা হয় ফারাও ক্ষমতায় আরহোনের সাথে সাথেই সমাধিস্থলের জায়গা খুঁজে বের করে সমাধি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতেন। যৌবনে নিজের পরকালের কথা চিন্তা করার মহান কাজটা শুরু করেছিলো এই ফারাওরা।
এই সমাধিস্থল বানঅর প্রক্রিয়াটা চলমান ছিলো তাই ভ্যালি ওফ কিংসে সমাধিশ্রমিকদের বসতি পাওয়া যায়, সেখানে অন্তত 500 বছর ধরে বসবাস করেছিলো শ্রমিকেরা। তারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাদের সমাধি বানানোর প্রক্রিয়া শিখিয়ে গিয়েছে, টাদের সম্বল ছিলো ছেনী, হাতুরি ,গাঁইতি, এবং এই আদিম যন্ত্র দিয়ে শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা আর সাহসে ভর করে তারা মাটিরর 40 হাত নীচে সুরঙ্গ খুঁড়ে সেখানে মৃতের শহর বানিয়েছে। এবং এমনও প্রমান আছে মাঝে মাঝে রাজ্য বদলের সময় সমাধিতে হানা দিতো রত্নচোরেরা, কখনও তারা সম্রাটের অনুচর ছিলো কখনও তারা স্বাধীন ব্যাবসায়ী, মাঝে মাঝে তহবলে টান পড়লেই সম্রাট সমাধি খুঁড়ে সম্পদ নিয়ে আসতেন। যেহেতু সে সময়ে কোনো প্রেস ছিলো না, তাই কোথাও দৈনন্দিনভিত্তিতে এসব ছাপা হয় নি, বরং এটাও একটা অনুমান,
সত্য হতেও পারে, মানুষের লোভ কবরচুরিতে কখনও বাধার কারন হয় নি।
মাঝে মাঝে রত্নচোরদের আক্রমনে সমাধির দরজা খুলে গেলে টারা গোপনে সেখান থেকে মৃত সম্রাটকে সরিয়ে অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছে। এভািেব অচিহি্নত সমাধিতে একসাথে কয়েকপ্রজন্মের ফারাওদের পাশা খেলার সূচনা।
এবং সাংস্কৃতিক বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সমস্ত মিশর, তাদের চেতনা এবং দক্ষতা পরিনত পরিবর্ধিত হওয়ার সাথে সাথে সমাধি ক্ষেত্রের অলংকরনেও পার্থক্য আসছে, আর্কিটেকচারাল ডিটেইল বদলে যাচ্ছে। প্রথমে যেমন ঘোরানো প্যাঁচান ছিলো তা না থেকে একেবারে সিরাতুল মুস্তাকিম সরল সমাধিও তৈরি হচ্ছে।
মোটিফে পরিবর্তন হচ্ছে, পরিবর্তন হচ্ছে মুদ্্রা আর মোহরে।পানপাত্র, তৈজস, মুদ্্রা সবাই সমাধিস্থ করা হতো সম্রাটের সাথে, নতুন সম্রাটের নামাঙ্কিত মোহর প্রচলিত হতো।
18তম ডাইন্যাস্টির সময়ে আচমকা তৈরি হওয় া ধর্মিয় সংঘাতের ফলে যেই হানাহানির সূচনা হয়েছিলো তা বেশী দীর্ঘ হতে পারে নি। মাত্র 3 জন সম্রাটের আমলে এই আতেনের পূজা সম্ভব হয়েছে,
তবে এই ঐতিহাসিক সংঘাতের সময়ে পুরোহিতকূল বেশ রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ছিলো বোঝাই যায়। তাদের নিত্য আলোচনা বসবাস ছিলো ফারাওদের সাথে, তারাও নীতিনির্ধারক, তারাই প্রচলন করছে নতুন উপাসনা রীতির।
তুতেনখামেনের গল্প কেমন হতে পারে, খূবই সাধারন একজন যে 9 বছর বয়েসে মিশরের সম্রাট, তার রাজত্বকালের সমসয়সীমা 10বছর, এবং তার সমাধি তৈরির কাজটা সে নিজে শুরু করেনি বোধ হয়। টার মমি পরীক্ষা করে এখন বলা হচ্ছে তুতেনখামেনকে হত্যা করাও হতে পারে, তার মৃতু্য হয়েছে মস্তিস্কের পেছনে শক্ত কিছুর আঘাতে, এবং সম্ভবত তার মস্তিস্কে আঘাত করার আগে তাক হাত পা ভেঙে ফেলা হয়।
সন্দেহ করতে হলে কাকে করা যাবে, এই খানে প্রত্নতত্ত্বের ফিকশনাল ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠে। যেহেতু আমরা এখন বসে বিচার করছি সব কিছুই তাই ডিটেইল জানা যাবে না। আমরা উলটো পথে বৈশিষ্ঠ দেখে ঘটনা অনুমানের চেষ্টা করতে পারি। তার আঘাতের ব্যাখ্যা হলো তাকে কেউ হত্যা করতে চেয়েছে, কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের হোতা কারা, তার মরতু্যর পর ক্ষমতায় আরোহন কারী পুরোহিত প্রধান আঈ? তার নিজের স্ত্রি? অন্য কোনো ধর্মান্ধ সৈনিক, ভাড়াটে খুনি, কে মিশরের সর্বেশ্বরের হত্যা করার সাহস পেলো?
অনেক রকম ব্যাখ্যা করা সম্ভব, অনেক রকম মানসিকতার পরিচয় আষনানো সম্ভব।
আমিও একটা কল্পনা দিয়ে যাই,
\হয়তো তুতেনখামেনের হত্যা হয়েছিলো পরকীয়া প্রেমের কারনে। তার বিবাহিত স্ত্রিছিলো তার নিজের বোন, যে পরবর্তিতে আঈ কে বিবাহ করে, মূল ঘটনা এইটুকুই,
হয়তো আঈ এবং নিজের বিবির পরকীয়া পছন্দ করে নাই বলে তুতেনখামেন বাধা দিচ্ছিলো, এবং পথের কাঁটা সরানোর জনয় তারা 2 জন মিলে তুতেনখামেনকে হতয়া করে, এবং আঈ নিজেকে ফারাও ঘোষনা দেওয়ার আগেই গোপনে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। এবং হয়তো মৃতু্যকালীন সময়ে তুতেনখামেনের একটা অনুরোধই রেখেছিলো খুনীরা,তাকে তার মায়ের সমাধির পাশেই সমাহিত করা হয়।যে সাইৎার নাম কেবি 63। এখানেই পাওয়া গেছে আখেনাতেননের গৌন রানীর সমাধি, ধারনা করা হয় সন্তানজন্মকালীন সময়ে জটিলতায় তার মৃতু্য হয়। তাকে একেবারে গোপনে সমাধিস্থ করা হয়, এই ধারনাও করা যেতে পারে, তার প্রতিদন্ডি রানী, তুতেনখামেনের সৎ মা, বা তুতেনখামেনের স্ত্রি নিজেই কোনো না কোনো ভাবে এই হত্যা সংঘটিত করেছে। এবং তার সমাধিতে পরিচয় মূছে ফেলা হয়েছে সতর্কতার সাথে।
আমি এ বিষয় নিয়ে একটা ফিকশনও লিখে ফেলতে পারি। যেখানে এইসব প্রেমজনিত জটিলতা থাকবে।
মানুষ পরকীয়ার কারনে হাতের মুঠোয় প্রান নিয়ে ঘুরাঘুরি করছে সেই আদিম সময় থেকেই।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন