কতিপয় স্বেচ্ছান্ধকে আদর করে ইতিহাসবিভ্রান্ত প্রজন্ম নাম দিয়ে তাদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার প্রবনতা শুরু হয়েছে অনেক দিন ধরে, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষন প্রকল্পের আওতায় 15 খন্ডের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংকলিত হয়, সেখানে বর্নিত স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান নয়, জিয়াউর রহমান নিজের নামে একবার স্বাধীনতার ঘোষনা দেন, এই ঘোষনাকে সংশোধন করে পরবর্তি ঘোষনায় মুজিবর রহমানকে প্রধান মেনে নিয়ে তার পক্ষ থেকে 2য় বার স্বাধীনতার ঘোষনা দেন, এই খানে ইতিহাসের বিভ্রান্তি নেই, এর পরও রাজনৈতিক ইসু্য হিসেবে ঘোষক বিতর্ক শুরু হয়। বিকল্প ধারার প্রধান এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এটার সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ ভাবেই জড়িত ছিলেন। মানুষের ইমেজ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরন হাতের কাছে পাওয়ার পর এই বিষয়ে নানাবিধ রংচং চড়িয়ে তা পেশ করা হয় পাঠ্যপুস্তকে। যাই হোক ইতিহাস এই ঘোষক বিতর্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে না, 1969এর 5ই ডিসেম্বর মুজিবের ঘোষনা ছিলো পূর্ব পাকিস্তনকে বাংলাদেশ বলা হবে, এবং সেই সময় মুজিবের তৈরি করা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবি দল যা মুজিব তৈরি করেছিলেন আইয়ুব ক্ষমতায় আসার পর, এর সাথে আদর্শিক সখ্যতা আছে এমন কিছু ছোটো খাটো দল বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবী জানিয়ে আসছিলো।শেখ মুজিব ফেডারেশন চেয়েছিলেন, 70এর নির্বাচনে জেতার পর বাংলাদেশের স্বায়ত্বশাসন চেয়েছিলেন,এবং7ই মার্চের ভাষনে যেকোনো বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত থাকা এবং স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশগ্রহনের কথাও বলেছিলেন, তবে স্বাধীনতার সংগ্রামের স্পষ্ট ঘোষনা দেওয়া হয় নি সেই ভাষনে।এসব ইতিহাস মিথ্যা নয়, এসাব ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই, বিভ্রান্তির সুযোগ নেই জামাতের ভুমিকা নিয়ে, মুজিব নগর প্রবাসী সরকারের ঘোষনায় বর্নিত ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি হয়েছিলো আগেই, মুজিবের ছাত্র নেতৃত্বের সাথে ঘনিষ্ঠ সংযোগের সময়েই সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি মুজিবের সমর্থন গড়ে ওঠা। এর প্রভবােই 1963তে সোহওয়ার্দির মৃতু্যর পর আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রধান হওয়ার পরপরই মুজিব আওয়ামি লীগের নাম সংশোধন করেন, এবং তার অসামপ্রদায়িক রূপটা সামনে নিয়ে আসেন, বামপণথি দলগুলোর হাতে ছাত্ররাজনীতি থাকায় সেখানে অসামপ্রদায়িক মনোভাব বর্তমান ছিলোই, জামায়তে ইসলামের অঙ্গ সংগঠন, মুসলীম লীগের অঙ্গ সংগঠনের হাতে অস্ত্রের দাপট থাকলেও তাদের সমর্থক সেই হিসেবে ততটা বেশী ছিলো না, তবে এন এস এফের তান্ডব ছিলো, হল দখলের কালচারও ছিলো বর্তমান।বলা যায় আন্দোলন দানা বাধার সময়েই অসামপ্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের প্রতি সমর্থন প্রবল ছিলো, 70 এর নির্বাচনে এই অসামপ্রদায়িক শক্তিকেই বিজয়ী ঘোষনা করেছিলো জনগন। ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করা আওয়ামী লিগের আসন সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক নেই, মাত্র 1টা আসনে জামাতে ইসলামী জয়ি হয়।যাই হোক দেশের রাজনীতিতে স্পষ্ট অসামপ্রদায়িকতার জয়জয়কার থাকলেও জামাতের সামপ্রদায়িক মনোভাবের কোনো সংশোধন হয় নি। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমের দেশ হিসেবে পাকিস্তানের জন্ম হওয়ার পরও তাদের দাবি ছিলো এখানে ইসলামি শাসনব্যাবস্থা কায়েম করতে হবে।এই ইতিহাস নিয়েও বিভ্রান্তি নেই।71 এ জামাতের ভুমিকা, রাজাকার বাহিনীতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহন, আল বদর- আল শামস বাহিনি তৈরিতে তাদের নেতৃত্বের ভুমিকা নিয়েও কোনো সংশয় নেই, বুদ্ধিজীবি নিধনের সাথে তাদের সংশ্লিষ্ঠতার বিষয়টা নিয়েও কোনো সংশয় নেই। অযথা কেনো তাদের বিভ্রান্ত বলা?বিভ্রান্তি আসে যদি তথ্য বিভ্রাট সামনে আসে, জামাতের ভুমিকা বাংলাদেশের সপক্ষে ছিলো এমন কোনো বর্ননা খোদ গোলাম আজম সাহেবও দেন নাই, এই জায়গাটায় বিভ্রান্তির কি আছে।জামাতের ইসলামী শাসনব্যাবস্থা কায়েমের ঘোড়ারোগ এবং সামপ্রদায়িকতার প্রতি তাদের পুরোনো প্রেম এই অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশের বিরোধিতার মূল কারন। ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের বিরোধিতার জায়গা এখানে। জামাতের ভেতরের সামপ্রদায়িকতার বিষয়টা নিয়েও বিতর্ক নেই কোথাও, জামাতের কর্মিরাও জানে তারা সামপ্রদায়িক, সুতরাং জেনে শুনে যারা নিজেদের সামপ্রদায়িকতার চর্চা করতে দেখছে, যাদের পারিবারিক পরিমন্ডলের অহর্নিশ সামপ্রদায়িকতার চর্চা চলে, যাদের ইচ্ছা করলেই ইতিহাস জানার সুযোগ আছে, তাদের স্বেচ্ছা অন্ধত্বের কথাকে আদর করে বিভ্রান্তি বলার বিলাস কেনো?তারা বিভ্রান্ত নয় মোটেও, তারা নিজেরাই বিকৃত ইতিহাস চর্চা করে, কামরুজ্জামান সাহেব শুনেছি সম্পাদক ছিলেন, তিনি শিক্ষিত মানুষ, তার ঘরে কেনো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একজন ,যার বাসা থেকে হাঁটা দুরত্বে বাংলা একাডেমী, তার বাসায় এই সংকলন নেই, নীলিমা ইব্রাহিমের বই 600 মাইল দুরে গিয়েও বিকোচ্ছে অথচ তিনি ঘর হতে শুধু 2 পা ফেলিয়া একটা কিনে আনতে পারলেন না, 71এর দিনগুলো সমস্ত বাংলাদেশে পাওয়া যায়, নিউ মার্কেট নীলক্ষেত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশে বইয়ের দোকানের কমতি নেই, আজিজ মার্কেট তৈরি হয়েছে শুধুমাত্র বইয়ের মার্কেট হিসেবে, সেখান থেকে কিনে আনা যায় আরও অনেকগুলো সৃতিচারনমুলক গ্রন্থ, এসবের নাম ছাপা হয়েছে দৈনিকে।অথচ কিছু বললেই একটা সাইনবোর্ড সামনে চলে আসে, আমরা ইতিহাস বিভ্রান্ত প্রজন্ম, আমাদের সঠিক ইতিহাস জানাও। এই ভন্ডামিটা করেও কোনো সুবিধা হয় না, দিব্যি তারা বিভিন্ন মানুষের উপাত্ত সামনে নিয়ে আসে, পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহত মানুষের তুলনায় বেশী মানুষ মারা গেছে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে(!!!) এই ইতিহাস বলে যাওয়া মানুষগুলোকে ইতিহাস বিভ্রান্ত বলার মতো সম্মান দেখানো সেই সব কোমলহৃদয় মানুষের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ।যদি 1000 জন, 1000 ভাবেও বলে এর পরও রাজাকার বাহিনির সাথে জামাতের সংশ্লিষ্ঠতা দুর হবে না, বুদ্ধিজীবি নিধনের সাথে জড়িত মানুষগুলো আল বদর বাহিনীর কর্মি ছিলো এই সত্যও মিথ্যা হবে না। এসব সত্যকে যারা স্ব ীকার করে না তারা ইতিহাস বিভ্রান্ত না তারা ইতিহাসকে বিকৃত করার চর্চায় নিয়োজিত।আমাদের মেনে নিতে হবে সহজ সত্যটাকে সামপ্রদায়িকতার চর্চা করা জামাতের সমর্থকদের বাড়ীতে মুক্তিযুদ্ধের সাঠিক ইতিহাস জানানো হবে না, তারা নিজেরাই নিজেদের চোখে ঠুলি পড়ে বসে আছে, অথচ সেই সব কোমল হৃদয় ভন্ডদের অন্য কোনো শব্দ বাছাই করা উচিত, তারা সংগঠিত ভাবে ইতিহাস বিকৃত করন অভিযান শুরু করেছে, তাদের বিভ্রান্ত প্রজন্ম বলে অযথা সম্মানহানী করা উচিত না।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন