যৌনতা খুবই স্পর্শকাতর একটা বিষয়, শব্দচয়ন, উপস্থাপন এবং বিশ্লেষনের জায়গাটাতে সচেতন না হলে কিংবা সেই অনুপাতটা ঠিক না হলে সস্তা ,কদর্য হয়ে যায় উপস্থাপনটা। বিষয়টাকে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়াটাও সমান রকমের গুরুত্বপূর্ন।বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যৌনতাভারাক্রান্ত গল্প-কবিতা-উপন্যাস তেমন করে নেই। আমার প্রথম পড়া শক্তির একটা কবিতায় হঠাৎ দেখলাম কবিতাসম্মেলনের হাতমারার উপস্থাপন, তখন আমরা বন্ধু মহলে হাত মারার বিষয়টাকে আলোচনা করলেও এটা কবিতায় একই ভাবে চলে আসবে এমনটা ধারনা ছিলো না, এর পর পড়তে পড়তে আআলজি্বভ চুম্বনের কবিতা পড়লাম, তবে শক্তির কবিতায় শরীরঘনিষ্ঠতার বিষয়টা বাস্তব এবং ভীষনরকম সচেতন নির্মান। কখনই মনে হয় না এটা ইরোটিকা- যার সংজ্ঞায় বলছে এটা এমন ধরনের চিত্রায়ন যার মুল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের ভেতরে যৌন কামনার উদ্্রেক করা।পর্নোগ্রাফি তা হার্ড কোর কিংবা সফট যেমনই হোক তার একটা লক্ষ্য এবং অভিন্ন লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের ভেতরে যৌন কামনা জাগানো। নগ্নতার উপস্থাপন এবং যৌনকামনা জাগরুক হওয়ার ভেতরে পার্থক্য নিশ্চিত ভাবেই আছে- আমি চমৎকার একটা ছবি দেখেছিলাম, পাকা গম ক্ষেতের মাঝে গম রঙা তরুনি দাঁড়িয়ে আছে- এখানে সেই তরুনীর নগ্নতা তেমন ভাবে আকর্ষন করে না, কিংবা ভাবনায় তার নগ্নতাকে কখনই সঙ্গম করার বাসনা জাগে না- ভিন্ন ভাবে বলা যায় সেই ছবিটা এবং পরিপার্শ দেখে কামভাব জাগ্রত হয় না, এই একই ছবি যদি কাউকে কামার্ত করে তোলে তাহলে এটাকে পর্নোগ্রাফির মর্যাদা দিতেই হয়।যদিও মধ্য যুগের গীর্যার অলংকরনে অনেক নগ্ন মূর্তি চিত্রায়িত হয়েছে তবে সেখানের নগ্ন নারীমুর্তিগুলোকে কেউ পর্নোগ্রাফি বলছে না, অনেক বেশী উন্মুক্ত হলেও কিছু কিছু ছবিকে কখনই পর্নোগ্রাফি মনে হয় না, আবার ভিন্ন ধরনের বিষয়ও আছে- হিন্দি ছবির বৃষ্টিভেজা গানের দৃশ্য- সেখানের দেহ ভঙ্গি- সেখানের চিত্রায়ন যেমনই হোক তাদের সেই গান অনেক আবরন সত্ত্বেও যৌন উত্তেজনা জাগানায়িা বিষয়। বিষয়টা এমন সাধারন ভাবেই ভাবতে হবে- ইরোটিকা, পর্নোগ্রাফি সব সময়ই একেবারে কাপড় ছাড়া হতে হবে এমন না, দেহ ভঙ্গি, চোখের কটাক্ষ, ঠোঁটের আক্ষেপেও অনেক বেশি উত্তেজন ছড়িয়ে দেওয়া যায়।এখানে একজনের লেখা পড়ে আবারও মনে হলো কথাগুলো, আরও বেশী মনে হলো মন্তব্যগুলো পড়ে, মানুষের যৌনকাতরতা এমন হীন কেনো? একটু সুরুচির চর্চা করলেই হতো। বাঙ্কিম বাবুর উপন্যাসেও দেহজ প্রেমের বিবরন আছে, শাররীক সৈন্দর্যের বর্ননা আছে, আছে রবি বাবুর লেখায়, মানিক বাবুও লিখেছেন এমন ঘটনা। 1950 এর পর কিংবা 1960 এর পর থেকে সেসব আড়াল আবডাল খুলে ফেলে সরাসরি যৌনতাকে উপস্থাপন করা হয়েছে, শক্তির প্রথম প্রকাশিত কবিতা -যম- একেবারে নিখাদ শাররীক সম্পর্ককে বয়ান করা কবিতা, তবে সেই কবিতা পড়েও কেউ যৌনউত্তেজনা পাবে না।বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সরাসরি যৌনতার বর্ননা পড়েছি সৈয়দ হক সাহেবের লেখায়, এখনও অবশ্য বাংলাদেশের মানুষেরা এসব চিত্রায়নে যথেষ্ট সংযত, তারা কোনো রকম ডিটেইলে যেতে চান না, তবে আখতারুজ্জামান সাহেবের একটা গল্পে পুরুষের আগ্রাসনের চিত্রায়ন ও ক্ষোভমুক্তির উপায় হিসাবে নারী দেহের ব্যাবহারের বিষয়টা এসেছিলো, সেখানেও খুবই সহজ ভাবেই দৈহিক সম্পর্কের বর্ননা আছে কিছুটা। তবে ঐ উপস্থাপনের গুন যার জন্যে সেটা পড়েও কখনও ইরোটিকার পর্যায়ভুক্ত মনে হয় না।এখানে কেউ কেউ যৌনকামনানিবৃতির উপায় হিসাবে হাতকে ব্যাবহার করতেই পারে, মানুষের ফ্যান্টাসির সীমা পরিসীমা নেই, সে ইচ্ছা করলেই জীবিত বা মৃত যেকোনো কিছুকেই যৌন উত্তেজক হিসেবে কল্পনা করতে পারে, আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধুর মন্তব্য ছিলোবোতলজাত যেকোনো পানীয় এবং নারী জাতীয় যেকোনো প্রাণীই তাকে আকৃষ্ট করে- এটা তার নিজস্ব বিশ্লেষণ, তাই ইরোটিকার সংজ্ঞা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বলা যায়, যা কিছু পড়ার পর অপ্রয়োজনীয় মনে হয়, এমন উপস্তরহাপন যা ভেতরে কদর্যতার অনুভুতি আনে সেসবই অশালীন উপস্থাপন-সেসবকে পর্নোগ্রাফি বলা যায় না, বরং বলা যায় অসুস্থ চিত্রায়ন। এমন অসুস্থ চিত=রায়ন দেখে মন্তব্যে কামরসের ছড়াছড়ি দেখে আবারও মনে পড়লো কথাটা,মানুষের ভেতরে সৈন্দর্য্যবোধ কমেছে, তবে বাংলাদেশের যুবসমাজের যৌনকাতরতা এতই প্রবল যে তারা সৈন্দর্য্যবোধ ,জীবনের একটা সুন্দর অনুভব, সব কিছুই বর্জন করে নিজস্ব খেয়ালে কদর্যতার চর্চা করে যাচ্ছে, এবং তাদের ভাবনায় এটা আসছেও না যে তারা যা করছে সেটা তারা পরবর্তি পর্যায়ে দেখলে আর যৌনকাতরতার প্রকাশ না করে বরং বিবমিষা নিয়ে ফিরে যাবে মন্তব্যের পাতা থেকে।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন